নীলের_পরি (৮

0
211

#নীলের_পরি (৮)

নীল পরি কে নিয়ে ছাদের এক কোণে বসে আছে। এই মূহুর্তে তারা দুজন ই চন্দ্র বিলাস করছে। আজকের চাঁদ টা পরিপূর্ণ। প্রতিটা সুখের মুহূর্তে ই চাঁদ তার পরিপূর্ণ রূপ দেখায়। আসলে কি কাকতালীয় ভাবে ঘটে এসব? এত শত ভাবার সময় নেই নীলের কাছে। নীল তার পরির জন্য সাথে বসে চন্দ্র বিলাসে মেতে আছে। চাঁদের আশে পাশে ছোট ছোট তারা রা আলো ছড়াতে ব্যস্ত। আকাশের নক্ষত্রের দিকে তাকালে পুরো পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে যায় নীলের।
কিন্তু তার আকাশের সব থেকে মূল্যবান নক্ষত্র যে পাশেই বসে আছে। যার জন্য কিছুতেই আকাশের নক্ষত্ররা তাকে আকর্ষণ করতে পারছে না। বার বার নীল তার আকাশের নক্ষত্রের দিকে তাকাচ্ছে। হিসেব মোতাবেক আজ তাদের বাসর রাত। কিন্তু এই বাসরে কোনো ফুল নেই। নেই কোনো বিশেষ আয়োজন। আছে শুধু নিস্তব্ধতা আর ক্লান্তি ডিঙিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা। হাজারো ক্লান্তি যখন নীল কে ঘুমে আচ্ছন্ন করতে পারে নি আজ তার আকাশের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র তাকে বার বার ঘুমোতে বলছে। এক রাশ ক্লান্তি যেন ওর উপর জেকে বসেছে। কারণ আজ নীলের আকাশ পরিপূর্ণ, নেই কোনো খামতি। তাই নীল আজ তার
পরির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে হারাবে। নীল ক্লান্তি ভরা চোখ নিয়ে পরির দিকে তাকাল। ঘুমু ঘুমু স্বরে বলল
“পরি আমি তোমার কাঁধে মাথা রাখতে পারি?”

নীলের কথাতে পরি চমকে উঠল। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে, হালকা ভাবে মাথা নাড়াল। নীল সম্মতি পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি করল না। সোজা পরির কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে দিল।
ওর কান্ডে এমন মনে হচ্ছে যে যদি কোনো ভাবে এক সেকেন্ড এর হের ফের ও হয় তো নীল পরির কাঁধে মাথা রাখতে পারবে না। পরি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই সব স্বপ্ন ই তো বুনেছিল সে। কিন্তু সব কিছু আষাঢ়ের মেঘে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল কেন? কোনো এক ম্যাজিশিয়ান বুঝি ম্যাজিক করে আজ সমস্ত কালো মেঘ সরিয়ে দিল!
নীলের মাথা তে হাত ছুঁইয়ে দিতে গিয়ে ও পরি হাত নামিয়ে নিল। নীল তো তার স্বামী তবু এত কেন সংকোচ,তাকে ছোঁয়ার মাঝে? একটা সময় তো স্বপ্নে তাকে কত শত বার কত ভাবে জড়িয়ে ধরেছে। আজ এতটা কাছে পেয়ে ও কেন এত সংকোচ? পরি নিজের ভাবনাকে বদলে নিয়ে ডুবে গেল অতীতের স্মৃতি স্মরণে।

অতীত
“আম্মু আম্মু কোথায় গেলে তুমি।”

মিসেস রাহেলা খুন্তি হাতে মেয়ের ডাকে হনহনিয়ে আসলেন।
“কি হয়েছে কি?”

আম্মু দেখো বাজে কয়টা! ৯ টা বাজে আমি কখন রেডি হব আর কখন স্কুল যাব? মিসেস রাহেলা বিরক্তি নিয়ে বললেন
“আপনাকে আর ও এক ঘন্টা আগে ডেকে গিয়েছি।
আপনি উঠছি বলে আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন।”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”তার জন্য কি আর ডাকবে না? তাছাড়া টেনে উঠাতে পারলে না আমায়?”

মিসেস রাহেলা স্পেশাল কুকারের সিটির শব্দে হন হনহনিয়ে পরির রুম থেকে যেতে যেতে বললেন,”আপনাকে ডাকা ছাড়া কি আর কোনো কাজ নেই? এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, না হলে স্কুলে যেতেই পারবি না।”

পরি মায়ের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লাফ দিয়ে উঠে যায় ওয়াসরুমে। কোনো রকমে ফ্রেস হয়ে এসে একটা রুটি কোনো মতে শেষ করেই দৌড় লাগায় স্কুলের উদ্দেশ্যে। মিসেস রাহেলা গলা ফাটিয়ে বললেন,”ধীরে ধীরে যা। না হলে পড়ে যাবি তো।”

পরি আসছি বলেই পা বাড়াল। স্কুল সড়ক থেকে এক কিলোমিটার দূরে। বাসা থেকে সড়কে যেতে ও দশ মিনিট প্রয়োজন হয়। ভাগ্য ভালো থাকাতে সড়কে যেতেই রিক্সা পেয়ে যায়। পরি রিক্সা তে উঠে বলে,”মামা তাড়াতাড়ি যান।”

কয়েক মিনিটের মধ্যেই রিক্সা স্কুল গেটের কাছে পৌছে যায়।
পরি ভাড়া মিটিয়েই দৌড় লাগায়। স্কুল গ্রাউনে পৌছাতেই দেখে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। পরি কোনো মতে ব্যাগ কাঁধে নিয়েই সারির পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।

পিটি শেষ হলে যখন সারি বদ্ধ হয়ে ক্লাসে যাচ্ছিল তখন ইংরেজি স্যার আটকিয়ে দেন। ইংরেজি স্যার পরি কে অনেক আদর করেন। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে ওকে। ওনার মেয়ে ও পরির সাথে ই এবার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।

স্যার কে সালাম জানাতেই স্যার সালামের জবাব নিয়ে বললেন,”মামনি আজ এতো দেরি কেন?”

পরি মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলল,”স্যার আম্মু ডেকে দিয়েছিল। কিন্তু আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

পরির কথাতে স্যার হাসতে লাগলেন। তারপর টুকিটাকি কথা বলে পরি কে ক্লাসে যেতে বললেন। পরি স্যার কে বিদায় জানিয়ে চলে আসল। ক্লাস রুমে এসেই দেখল পরির বান্ধবী হাফসা ওর জন্য সিট ধরে রেখেছে। পরি হালকা হেসে বেঞ্চে বসে পড়ল। হাফসা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।
“কি রে আজ এত লেট কেন? আমি তো ভেবেছিলাম আজ আসবি ই না বোধহয়।”

পরি বই বের করতে করতে বলল,”আরে না আসব না কেন?
ঘুমের জন্য লেট হয়ে গেছে।”

হাফসা পরির গালে দুটো টেনে বলল,”ঘুম কুমারী রে।”

পরি হেসে বলল,”হয়েছে হয়েছে আজ পড়া কমপ্লিট করেছিস তো?”

হাফসা মাথা ঝাঁকাল। স্যার ক্লাসে আসতেই ওরা চুপ হয়ে গেল। প্রথম ক্লাসের স্যার চলে যেতেই ওরা ফের গল্প শুরু করে দিল। হাফসা তো দুঃখের খবর শুরু করে দিয়েছে।
কারণ ওর ভাই নাকি আজ টিভির রিমোর্ট নিয়ে ওর সাথে মা রামা রি করেছে। মাথায় আচ্ছা করে গা ট্টা মে রেছে ওকে। পরি হাসতে হাসতে বলল,
“আমার ভাই টা ও রে এক নম্বর বজ্জাত। শুধু মা রা মা রি করে আমার সাথে। ছোট দেখে কিছু বলতে ও পারি না।”

হাফসা হতাশ হয়ে বলল,”সব ভাইয়া রাই বজ্জাত। তোর তো তা ও ছোট ভাই আর আমার তো বড়ো ভাই।”

হাফসার কথায় পরি ভ্রু কুঁচকে বলল,”তোর বড়ো ভাই? আমি তো জানতাম ই না। অবশ্য তোর সাথে তো আমার কিছুদিন ধরে ফ্রেন্সশিপ জমে উঠেছে।”

হাফসা হালকা হেসে বলল,”হুমমম তা ও ঠিক।”

পরি মুচকি হেসে বলল,”তোর ভাইয়ের নাম কি রে?”

হাফসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”বজ্জাত ভাইয়ের নাম নীল।”

পরি ভ্রু কুঁচকে বলল,”নীল বাবব্বা আমার নামের সাথে এতো মিল।”

হাফসা হেসে বলল,”হ্যাঁ তোর পুরো নাম তো জান্নাতুল পরিনীল।”

পরি হেসে বলল,”হুম। ডাকনাম পরিনীল থেকে পরি হয়ে গেছে এখন।”

হাফসা হালকা হেসে বলল,”ভাইয়ার পুরো নাম রাফসান আহমেদ নীল।”

রাফসান নাম টা শুনে পরি আঁতকে উঠল। তারপর বলল
“রাফসান?”

হাফসা মাথা ঝাঁকাল। পরি কিছু ভেবে বলল,”তারমানে রূপা আপুদের এক ব্যাচ সিনিয়র রাফসান আহমেদ নীল?”

হাফসা হালকা হেসে বলল,”আরে হ্যাঁ । কিন্তু কেন কি হয়েছে?”

পরি মুখ কুঁচকে বলল,”তোর ভাই তো একটা জিনিস মাইরি।
আমাদের পাশের বাসার রূপা আপু কে নাকি প্রপোজ ও করেছিল। রূপা আপু নাকি রিজেক্ট করে দিয়েছে। কিন্তু তা ও রূপা আপুর পেছনে পেছনে ঘোরে। রূপা আপু তো বলল রাফসান ভাইয়া নাকি নাম্বার ওয়ান লু চু। অবশ্য আমার নিরাজ মামার মুখে শুনেছি রূপা আপু ও নাকি রাফসান ভাইয়ার সাথে প্রেম করত।”

পরির কথাতে হাফসা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”মোটে ও না। আমার ভাই রূপা আপু কে পছন্দ করত না। উল্টো রূপা আপু ই পছন্দ করত। হ্যাঁ রুপা আপুর সাথে ফাজলামি করত ঠিক ই। কিন্তু এক টা ঘটনাতে রূপা আপু ভেবেছে ভাইয়া ওনাকে পছন্দ করে।”

পরি আগ্রহ নিয়ে বলল,”কি ঘটনা?”

হাফসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”আরে আর বলিস না।
আমার ডাফার ভাইয়া বর্ষা আপু কে পছন্দ করত। একদিন রূপা আপু আর বর্ষা আপু স্কুল গ্রাউন দিয়ে আসছিল। দোতলা থেকে ভাইয়া বর্ষা আপু কে ফ্লাইং কিস দেয়।
আর সেটা বর্ষা আপুর বদলে দেখে নেয় রূপা আপু।
যার ফলে গন্ডগোল লেগে যায়। ইনফেক্ট ওদের দুই বান্ধবীর মধ্যে ঝগড়া ও হয়,যে রাফসান ভাইয়া কাকে কিস দেখিয়েছে।”

হাফসার কথা তে পরি হাসতে হাসতে গলে যায় যেন। নিজে কে স্থির করে বলল,”তার মানে তোর ভাইয়ার কিস দেখাতে গিয়ে মিস হয়ে গেছে। তাহলে বলা যায় আঙুর থেকে শুকিয়ে কিসমিস এ পরিনত হয়ে গেছে।”

পরির কথাতে হাফসা কিছুক্ষণ পরির দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। তারপর হাফসা ও জোরে হাসা শুরু করে।
স্যার আসাতেই দুজন মুখ চেপে হাসে। কিছুক্ষণ পর হাসা থামিয়ে পড়াতে মন দেয় ।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#চলো_রোদ্দুরে গল্পটা পড়েছেন? না পড়ে থাকলে পড়ে আসুন।
https://www.facebook.com/110123584545542/posts/273331908224708/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here