নীলের_পরি (৯)

0
13

#নীলের_পরি (৯)

স্কুল থেকে সেই কখন ফিরেছে পরি। কিন্তু খাওয়া দাওয়া তে একদম ই মন নেই তার। সে কারো বিষয়ে তেমন কৌতূহলী না হলে ও এই নীলের বিষয়ে বেশ কৌতূহলী। প্রথম দিন থেকেই এই মানুষটার প্রতি তার আগ্রহ বেশি। এই মানুষটাকে এক মুহূর্তে র জন্য সহ্য করতে পারে না পরি। কিন্তু এক অদৃশ্য কৌতূহল রয়ে ই যায়। যার কারণে পাশের বাসার রূপা আপুর কাছে ছুটে যাওয়া। কথায় কথায় নীলের বেশ কিছু গল্প শোনা যাবে সেই আশায়। বেশ কিছুক্ষণ পর রূপার বাসা থেকে বের হয়ে আসে পরি। মন টা তার বড্ড খারাপ । এই নীল ছেলে টা এত বাজে! ছিইই রূপা আপুর কলেজে পিছু নিয়েছে। আবার রূপা আপু কে বলে কি না, রূপা চলো আমরা রিলেশনে যাই। এত বার এত মেয়ের সাথে রিলেশনে জরিয়েছে এই ছেলে! এক্কেবারে লু চু পোলা যত্তসব! পরি বাসা তে ঢুকতেই পরির মা বলল,
“গোসল না করেই এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরতে শুরু করে দিয়েছিস।”

পরি কিছু না বলেই কাপড় হাতে ওয়াসরুমে ঢুকে যায়।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফিরে আসে। তারপর হালকা খাবার খেয়ে ই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
_____________________

পরদিন সকাল সকাল প্রাইভেট পড়তে যায় পরি। তাই বাসা থেকে ৬’৩০ এ বেরিয়ে পড়েছে। পরিদের গ্রামে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই। আর আশে পাশের ছোট ছোট ছয় সাত গ্রামের জন্য একটাই উচ্চ বিদ্যালয়। পরি হন্তদন্ত হয়ে সড়কে আসে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল রিকশার জন্য। কিন্তু রিকশা আসার যেন নাম ই নেই। তাই পরি কোনো কিছু না ভেবেই হেঁটে ই স্কুলের দিকে রওনা হলো। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাইভেট এ চলে আসল। ইংরেজি প্রাইভেট পড়ে কিছুক্ষণ স্যারের সাথে গল্প করে নিল। কথায় কথায় হাফসার ভাইয়ের কথা ও উঠল।
স্যার বললেন,”নীল তো নীল ই, বজ্জাতের সেরা। কিন্তু এমনিতে আমার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক। একটু ফাজিল হলে ও নীল এমনিতে বেশ ভালো।”

স্যার পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”মামনি এইবার কিন্তু ভালো রেজাল্ট করতে হবে। আর জে এস সি তে প্লাস কিন্তু পেতেই হবে।”

স্যারের কথা তে পরি মুচকি হেসে বলল,”আমি চেষ্টা করব স্যার।”

এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটা মাস। অবশেষে স্কুলের এনাউল এক্সাম শুরু হয়ে যাবে। সবাই বেশ চিন্তিত প্লাস বছরের শেষের দিকের একটা চাপা আনন্দ ও কাজ করছে।
সবার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে স্কুল ছুটি হলে বের হয়ে গেল পরি। নিচে নামতে নামতে হাফসা কে বলল,”হাফসা তোর আর আমার সিট তো পাশাপাশি হবে। ভালো করে পড়ে আসতে হবে কিন্তু। হাফসা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। তার স্কুল গ্রাউন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দুজন ই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা গাড়ি পেয়ে গেল। আর দুজন হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে দু দিকে চলে গেল।
__________________

পরিরা নানা বাসাতেই থাকে। ওর কোনো মামা, খালা নেই।
তবে এস এস সি পরীক্ষার পর ওরা নিজের বাসা ঢাকা তে চলে যাবে। গ্রামে ওর নানা বাড়ি আর দাদা বাড়ির মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটারের দূরত্ব। পরির দাদা দাদু গত হয়েছেন বহু বছর আগে। আর তাই গ্রামের বাসা তে পরির বড় কাকা ছাড়া আর কেউ থাকেন না। পরির বাবাকে নিয়ে তারা তিন ভাই দুই বোন। এক ভাই ঢাকা তে সেটেল আর দু বোনের বাড়ি ও ওর দাদা বাড়ির পাশেই। পরি বাসাতে ফিরেই বেডে ব্যাগ রেখে সোফা তে গা এলিয়ে দিল। সেই সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে সারাদিন ক্লাস করে বিকেল ৪’৩০ টায় বাসায় এসেছে। শরীর তো বড্ড ক্লান্ত। এই মুহূর্তে গোসল করার জন্য পা বাড়াতে ও ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে না বললে ভুল হবে পরির শরীর আগাতে পারছে না। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে কোনো রকমে গা ঠেলে শাওয়ার নিতে গেল।
শাওয়ার শেষে এখন নিজেকে ফ্রেস লাগছে। তাই আশে পাশে চক্কর লাগাল,সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে পড়তে বসল। কালকে থেকে পরীক্ষা কি না।

দেখতে দেখতে সময় পার হলো। আজ কে পরির লাস্ট এক্সাম। তাই মনে বেশ ফুর্তি, প্রতি টা এক্সাম ই বেশ ভালো দিয়েছে ও আর হাফসা। পাশাপাশি সিট হওয়াতে একে অপরের বেশ সাহায্য ও পেয়েছে। কিন্তু চার পাশে যে টেলেন্ট এর ছড়াছড়ি। তাই রেজাল্ট পাওয়ার আগে পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলা ও যায় না। হালকা চিন্তিত হলে ও শেষ পরীক্ষার একটা বিশেষ আনন্দ রয়েছে। যার ফলে পরীক্ষা ভালো হোক কিংবা খারাপ তাতে পরীক্ষা শেষের আনন্দে কোনো এফেক্ট পড়ে না। পরীক্ষা শেষ হতেই সবাই হৈ হুল্লোড় করা শুরু করে দিয়েছে। সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। হল থেকে বের হয়ে স্যার দের সাথে দেখা করে নিল কারণ পনেরো দিন তো স্যার দের সাথে কোনো যোগাযোগ ই থাকবে না। সবাই মিলে ঠিক করল আইসক্রিম খেতে যাবে।
পরির আইসক্রিমের ওপর বিশেষ দূর্বলতা। যার কারণে এই ঠান্ডার মাঝে ও পরির বান্ধবী রা আইসক্রিম খেতে রাজি হলো। সবাই যে যার পছন্দের ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে নিল। পরির সব ফ্লেবার ই ফেবরেট তাই ওর চুজ করতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এটা সেটা ভাবতে লাগলহ হঠাৎ করেই পরির বান্ধবী সীমা বলল
“আরে ঐ দেখ দেখ নীল ভাইয়া যাচ্ছে।”

সীমার কথা তে পরি সহ সবাই সড়কে তাকাল। বাইক দিয়ে যাচ্ছিল নীল। কারো সাথে কথা বলার জন্য মাঝ পথে বাইক থামিয়েছে। হাফসা বলল,”একবার ও ভাইয়ার বাইকে উঠার কপাল হয় নি আমার। বজ্জাতের সেরা। আমি উঠলে কি হয়?”

নীল কে দেখে পরির বেশ রাগ হচ্ছে। তাই সামনে যে ফ্লেবার পেল সেই আইসক্রিম নিয়েই বিল পে করে চলে আসল।
আইসক্রিম গলে যাচ্ছে কিন্তু পরির খাওয়ার কোনো নাম ই নেই। হাফসা কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,”খাচ্ছিস না কেন?পরি কিছু না বলে আইসক্রিম খেতে লাগল। আইসক্রিম শেষ করে হালকা কথা বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

যারা রাদ আর ভোর জুটির গল্পটি পড়েন নি। পড়ে আসুন।
https://www.facebook.com/110123584545542/posts/273331908224708/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here