নীলের_পরি (২০)

0
11

#নীলের_পরি (২০)

“কিছু কথা জানার ছিল। আপনার কাছে সময় হবে?”

এই টুকু লিখেই ম্যাসেজটা নীল কে পাঠিয়ে দিল পরি।
কিছুক্ষণ পর নীল রিপ্লে দিল,”হুম বলো পরি।”

নীলের লেখা পরি নাম দেখেই পরির রাগ আর অভিমান অর্ধেক হয়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”আমি একটা ভয়ঙ্কর কথা শুনেছি। তাই মনে হলো আপনাকে বলা জরুরি।”

“বলো শুনছি আমি।”

পরি বেশ কিছুক্ষণ অস্বস্তি বোধ করল। তারপর বলেই দিল।
“আমি জানতে পেরেছি আপনার সাথে নাকি চিনির রিলেশন ছিল। চিনির সাথে সন্ধ্যার পর নাকি দুই তিন ঘন্টা আলাদা সময় কাটিয়েছেন।”

পরি এই টুকু লিখেই কোনো মতে ম্যাসেজ টা সেন্ড করল।
লেখার সময় পরির হাত কাঁপছিল। শ্বাসরুদ্ধ কর অবস্থা! এই ধরনের কথা জিঙেস করা টা কতটা ভয়ঙ্কর তা পরি এখন অনুভব করল। নীল ম্যাসেজ টা দেখে মৃদু হাসল
তারপর বলল,”এই সব বিষয় কে বলেছে তোমায়?”

পরি কাঁচুমাচু হয়ে তারপর রিপলে দিল,”বলেছে কেউ।
এটা সত্যি?”

“তোমার কি মনে হয়?”

“আমি জানি না। আপনি বলুন।”

“না বলো তোমার কি মনে হয়?”

“আমার মিথ্যে মনে হয়েছে তাই আপনাকে জিঙ্গাসা করলাম।”

“তাহলে আর কি প্রয়োজন আছে আমার উত্তর দেওয়ার?”

“অবশ্যই আছে। আমি আপনার থেকে জানতে চাই।”

“কেন জানতে চাও পরি?”

“এমনি,আপনি বলুন তো।”

“পরি এতো কথা ম্যাসেজ এ বলা সম্ভব নয়। আর না তুমি বুঝতে পারবে। বাদ দাও এটা।”

নীলের এই কথাতে পরির ভ্রু আপনা আপনি ই কুঁচকে গেল।
পরি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,”না,না বাদ কেন দিব? আচ্ছা তাহলে কি ফোনে বলবেন?”

ন”তোমার অসুবিধা হবে না?”

-“আপনি বলবেন আমি শুধু শুনব।”

নীল সম্মতি জানাতেই পরি নীল কে কল দিয়ে দিল।

“হ্যালো।”

পরি মৌন। নীল ই বলল,”পরি কিছু বল,না হলে বুঝব কি করে এটা তুমি নাকি অন্যকেউ?”

পরি গলা পরিষ্কার করে মৃদু স্বরে বলল,”হ্যাঁ বলুন।”

নীল হালকা হেসে বলল,”হুম বলছি। কিন্তু তার আগে বলো আমার কথা বিশ্বাস হবে তো তোমার?”

পরি ঝটপট উত্তর দিল,”অবশ্যই হবে। আপনি শুধু বলুন তাহলেই হবে। বাকিদের কথা আমি অন্তত বিশ্বাস করছি না।
শুধু সত্যি টা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি।”

নীল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”পরি তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে। এই কুৎসিত বিষয় গুলো তোমার কাছে বলা মানে ও অন্যায়। কিন্তু তুমি বাকি পাঁচ জনের মতো বুঝদার নও।
যা মাথায় চেপেছে তা জেনেই তোমার শান্তি তাই তোমাকে বলছি আমি। আমি জানি তুমি আমার কথার উপর ভিত্তি করেই সমস্ত টা বিশ্বাস করে নিবে।”

নীলের কথা তে পরির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারল না। ফোনের ওপাশ থেকে পরি নীলের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেল। তারপর নীল আবার বলল,”আর তাছাড়া তুমি তো আমার জন্য জিএফ খুঁজে দিবে। তাই তোমাকে বলছি তুমি শুনছো তো।”

নীলের এই বিরক্তিকর কথা গুলো শুনে পরির ইচ্ছে করছে নীলের মাথা টা ফা টি য়ে দিতে। কেন রে এত জি এফ দিয়ে তোর কি হবে? ফালতু ছেলে। পরি মৃদু স্বরে বলল,”হুম শুনছি।”

নীল বলল,”হুম,শুনো। আচ্ছা পরি তুমি তো জানোই চিনি একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে। নিশ্চয়ই আমি কোনো হিন্দু মেয়ের সাথে মানে তোমার মতে একলা সময় কাটাব না? আর তাছাড়া আমি কোনো হিন্দু মেয়ের সাথে রিলেশন করতে রাজি নই। সেই হিসেবে আমি ওর সাথে কোনো রিলেশনে জড়াই ও নিই। তোমার কি মনে হয়, আমি একটি মেয়ের সাথে খালি বাসাতে দুই তিন ঘন্টা আলাদা সময় কাটাব? তা ও টানা সাত দিন। এতটা লেইম আমি নই।
পরি তুমি ছোট হলে ও নিতান্ত বাচ্চা নও যে আলাদা সময় বোঝাতে কি বোঝানো হয়েছে সেটা বুঝো নি। আর রাতে আলাদা সময় কাটিয়ে আমি নিজের ভার্জিনিটি নষ্ট করব বলে তোমার মনে হয়? যে কোনো সম্পর্কে একটি মেয়ের সাথে সাথে ছেলের ও সেইম প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমরা সবাই মেয়েদের দিকে আঙুল তুলি। আমি বাজে হলে ও আলাদা সময় কাটানোর মতো বাজে নই। তার উপর একটি হিন্দু মেয়ের সাথে, যার সাথে আমার কোনো কালেই কোনো রিলেশন ছিল না। ফাইনালি আমি আমার কথার শেষের দিকে এসেছি। চিনি আমাকে পছন্দ করে। আমার পেছনে ঘুরঘুর করে।কিন্তু আমি ওকে পাত্তা দেই না। একদিন আমার সমস্ত বন্ধুদের সামনে এসে আমার হাতে দুটো গিফট বক্স ধরিয়ে দেয়। তখন যদি আমি ওর ঐ গিফট বক্স ফিরিয়ে দিতাম তাহলে এত গুলো মানুষের সামনে ওর অপমান হত। আর তাছাড়া এই নিয়ে ও হাজারো কাহিনী বানিয়ে ফেলত। তাই চুপ চাপ বক্স টা নিয়ে নেই। গিফট বক্স খোলার কোনো ইন্টারেস্ট ই আমার ছিল না। বেডের সাইটের এক কোণে ফেলে রেখেছিলাম। হাফসা আমাকে কফি দিতে এসে বেডের পাশে বক্স দুটো দেখে। আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই আমি সমস্তটা বলে দিই। হাফসা আমার কথার উপেক্ষা করে বক্স দুটো খুলে ফেলে। বক্স দুটোর মধ্যে এক টা তে ছিল শার্ট আর অন্য টিতে ছিল শো পিস। শো পিস টা হাফসা নিয়ে যায় আর আমি শার্ট টা একজন দরিদ্রকে দিয়ে দিই। মোট এই হলো কাহিনী। আমি জানি পরি এই সমস্ত টা তে তোমার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। আমি এত কিছু না বললে ও তুমি বিশ্বাস করে নিতে। কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর যে আমি ঐ মেয়ের সাথে আলাদা করে সময় কাটিয়েছি তা ও রাতের বেলা। আর এই সমস্ত কিছু নিশ্চয় ই চিনির থেকে ই ওর ফেন্ড রা বা অন্য কেউ শুনেছে।
তো ফাইনালি যা দাঁড়ালো। মেয়েটা অত্যন্ত বেহায়া আর লজ্জাহীন। যদি এমন টি ঘটে ও থাকত তাহলে,ও এই সমস্ত টা সবার কাছে ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মানে বিয়ে না হয়েই চিনি কুমারী রইল না। বিষয়টা কি দাঁড়ায় তা বুঝেছো তো পরি? তুমি একটা ছোট মেয়ে কিন্তু তবু ও তোমার সামনে খারাপ ভাষা ব্যবহার করছি। চিনি নিজেকে বেশ্যা প্রুফ করে দিল। এত টা লেইম মাইন্ড এর হবে তা ভাবি নি আমি।
সেইদিন যদি ওকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে দিতাম তাহলে হয়ত এমন করত না। আর তাছাড়া একটা মেয়ে নিজের সম্মানের কথা না ভেবে শুধু মাত্র কাউকে বাজে প্রুফ করার জন্য কতটা নিচে নামতে পারে তা সত্যি ই অবিশ্বাস্য। আমি কখনো কাউকে ঠকাই নি পরি। রিলেশন বলতে জীবনে অনেকেই এসেছে কিন্তু কখনো তাদের সাথে আলাদা সময় তো দূরে থাক কখনো চুমু ও দিই নি। আমি মুসলিম ঘরের সন্তান। সম্পর্কে জড়িয়ে থাকলে ও কখনো সর্বোচ্চ হারাম দিকে যাই নি আমি। বন্ধুর মতোই সময় কাটিয়েছি সেটা ও সবাই মিলে। আমি ১০০% ভালো না হলে ও ১০০% খারাপ নই। আমার নিজের বোন আছে। আমি জানি একটি মেয়ে তার পরিবারের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি কখনোই কারো সম্মান এ আ ঘা ত করতে রাজি নই। আল্লাহ্ অন্তরের সমস্ত কথা জানেন। ওনার কাছ থেকে কিছু লুকানোর সাধ্য আমাদের নেই পরি। অনেকেই অনেক কথা বলে কিন্তু আমি তাতে পাত্তা দেই না। কারণ মানুষের মুখ আছে বলার জন্য তাই বলে,সেই সমস্ত কথা ধরে আমি বসে থাকব এমন টা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি কখনো কোনো মেয়ের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজে দৃষ্টিতে তাকাই নি। আর না কোনো রিলেশনে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছি। অনেকের সাথে রিলেশন ছিল এটা মানছি। তবে কখনো হাত ধরে রাস্তা পার করেছি কিংবা ফ্লাইং চুমু দেখিয়েছি। এর থেকে বেশি কিছু নয়। স্বভাবে দুষ্টুমি থাকলেও চরিত্রহীন নই। তুমি এত কিছু ভেবো না। ছোট একটা মানুষ তুমি পড়াশুনা তে মনোযোগী হও। অনেক অনেক দোয়া রইল। জীবনে উন্নতি কর। কখনো পিছিয়ে যেও না। আর খুব ভালো থেকো। এখন রাখছি কেমন?”

নীলের প্রতি টা কথা পরি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।
প্রতিটা শব্দ পরির বুকের ভেতর আ ঘা ত করেছে। না চাইতে ও অঝোরে চোখ দিয়ে অশ্রু বর্ষন হয়েছে। পরির ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসি সাথে চোখে পানির বর্ষন। এই দৃশ্য টা কতটা মায়াবি আর পবিত্র তা না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়।
নীলের প্রতি টা কথা পরির কানের কাছে সুর তুলে যাচ্ছে।
কতটা স্নিগ্ধ ছিল নীলের বচনভঙ্গি। এই মানুষটার নামে কেউ কি করে অভিযোগ তুলতে পারে? নীল অসভ্য নয়। নীল অপবিত্র নয়। নীল দুষ্ট হলে ও যথেষ্ট মার্জিত। এই পৃথিবী কেন ওর নীল কে কালো করতে চাইছে? পরির ইচ্ছে করছে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে বাজে মানসিকতার মানুষ গুলো কে ভস্ম করে দিতে। মেঘাচ্ছন আকাশের দিকে চেয়ে রইল সে। নীলের কথা গুলো মনে পড়তেই পরির মনে অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে। সে কিছুক্ষণ মেঘের গর্জন শুনে ফোন হাতে বসে পড়ল। লম্বা একটা ম্যাসেজ দিয়ে নীলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিল। আজ নীল কে অফলাইন দেখে ও পরির শান্তি অনুভব হচ্ছে। মনের ভেতর যে ঘন কালো মেঘ বাস করছিল তা আজ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। পরি হাস্যউজ্জ্বল মুখ নিয়ে অফলাইন হতেই বিকট গর্জন করে নেমে এল বর্ষন। পরি এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে জানালা দিয়ে বৃষ্টি কে অনুভব করতে লাগল।
সাথে ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা স্নিগ্ধ সেই হাসি। নীলের কথা মনে পড়তেই পরির হাসির রেখা টা টেনে দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির সামান্য কিছু ফোঁটা তে পরির মনের তৃষ্ণা মিটছে না।পরি বারান্দা তে চলে গেল। খোলা বারান্দা তে দাঁড়াতেই চারিদিক থেকে এক ঝাঁক মেঘেরা এসে পরি কে রাঙিয়ে দিল। পরি আনমনে হাসতে লাগল। দু হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা কে আঁকড়ে ধরল। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো কে নীল হিসেবে কল্পনা করতেই পরি লজ্জায় লাল হয়ে পড়ল। পরির সুরসুরি লাগা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে নীল ই তাকে স্পর্শ করছে। পরির চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে
নীল আমি আপনাকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি, আমার আকাশ জুড়ে শুধু আপনার ছবি,আমি আপনাকে ভালোবেসে প্রতি মুহূর্ত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পাগল হচ্ছি।
ভালোবাসার এ কি রূপ দেখালেন আপনি? সর্বাংশে ভালোবাসার দহনে ঝলসে যাচ্ছে তবু ও তাতে এত কেন সুখ?

|মানুষের মনে ভালোবাসা জাগে তার কৈশোর বা কিশোরী জীবনে। পরির মনে ও সেই অনুভূতি গুলো জেকে বসেছে।
অনেক এর কাছে মনে হতে পারে পরি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তোতখনি নীলের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়েছিল। এটা কি বাস্তব জীবনে আদৌ সম্ভব? নীল আর পরির যে অতীত টা রয়েছে এটা কোনো একজনের বাস্তব জীবন কাহিনী থেকে নেওয়া। আমি নাম উল্লেখ করতে পারব না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমি শুধু তার জীবন থেকে কিছু অংশ মডিফাই করে লিখছি। বাস্তব জীবনের সম্পূর্ণ টা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না হলে ও খানিকটা অবশ্যই সম্ভব। তাই আমি ও চেষ্টা করেছি একজনের জীবনের কিছু অংশ ফুটিয়ে তোলার জন্য। কিশোরী জীবনে প্রথম প্রেমে পড়া সেই মেয়েটির
জীবনের কিছু অংশ আমি আমার গল্পের রূপ দিলাম। পাঠক নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন।|

চলবে….
ফাতেমা তুজ নৌশি

**আগামীকাল বিকেল ৪’৩০ এ #বৃষ্টিভেজা_আলাপন সমাপ্তি পর্ব আসতে চলেছে ইনশাআল্লাহ। আর ৫ টায় বইটই অ্যাপে ই-বই হয়ে আসতে চলেছে #বৃষ্টিভেজা_আলাপন
গল্পের ঠিক পর থেকে লেখা #রেইন গল্পটি।**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here