নীলের_পরি (৩০)

0
164

#নীলের_পরি (৩০)

পরি নীলের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রুম লক করা হাতে খাবার থাকায় নক ও করতে পারছে না। উপায় অন্তর না পেয়ে নীল কে ডাকতে লাগল। কিন্তু নীল দরজা খুলছে না। পরি আবার ডাকল কিন্তু নীল সাড়া দিল না।সপরি বিরক্ত হয়ে বলল,”নীল ভাইয়া শুনছেন না নাকি?”

ভাইয়া বলার পর পরি নিজের জিহ্বা তে কামড় দিল।
ইস ছোট বেলা থেকে ভাইয়া বলে ঢং করেছে। তাই খানিকটা অভ্যাস এখনো আছে। নীল এবার দরজা খুলে দিল। ওকে দেখে পরি মেকি হাসি দিল। নীল ভ্রু কুঁচকে বলল,”আমি তোমার কোন কালের ভাই?”

পরি আমতা আমতা করে বলল,”আসলে আপনি দরজা খুলছিলেন না। তাই আপনার নাম নিতে মুখ ফসকে ভাইয়া চলে এসেছে।”

জবাবে খুশি হলো না নীল। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”তার জন্য ভাইয়া ডেকে হার্ট ব্রেক করে দিলে।
একবার তো অন্য কিছু ও ডাকতে পারো।”

পরি মুখ কুঁচকে বলল,”আর কি ডাকব?”

নীল মুখ গোমড়া করে ফেলল। মেয়েটা এমন কেন?
“এটা কেমন কথা পরি। মানুষ বি এফ কে কত কিছু বলে আর তুমি হাসবেন্ড কে কি ডাকবে সেটা জানো না। ওকে তোমায় আমি প্রেম শিখিয়ে দিব। এখন তাড়াতাড়ি আসো ক্ষিধে পেয়েছে।”

পরি রুমে ঢুকে সাইড টেবিলে খাবার টা রেখে দাঁড়িয়ে রইল।
নীল বেডে আধসোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল,”দরজা টা লক করে দাও।”

পরি চোখ বড়ো করে বলল,”কেন?”

নীল বিরক্তি মাখা স্বর নিয়ে বলল,”তোমার কি মনে হয় এই সকাল বেলা আমি কিছু করব? এমন বাচ্চাদের মতো কথা বল কেন?এই মুহূর্তে হাজার টা ইচ্ছে থাকলে ও আমি কিছু করছি না ম্যাডাম। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার হাসবেন্ডের পাশে বসতে পারেন। ওনি কোনো ভুল কাজ করবেন না।”

পরি নীলের কথা তে বোকা হয়ে গেল। কতটা সহজ করে বলে ফেলল কথা গুলো। সেই সাথে সামান্য একটা কথা কে কি থেকে কি বানিয়ে দিল। কি আজব ছেলেটা! পরি মাথা নিচু করে দরজা লক করে দিল। নীল পরি কে আড়চোখে দেখছে আর মুখ চেপে হাসছে। মেয়েটি যেন মুখ তুলতেই পারছে না।

নীল ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করে ফোনটা বেডের পাশে রাখল। তারপর বেডে উপর হয়ে শুয়ে পড়ল। পরি নীলের মতি গতি কিছু বুঝতে পারছে না। নীল হাত নাড়িয়ে ডাকল।
“পরি হাতটা প্রচন্ড ব্যথা তুমি কি আমার হাত টা টিপে দিতে পারো?”

পরি সামান্য আর্তনাদের স্বরে বলল,” হাতে ব্যথা কেন? কি করে হলো এমন? খুব বেশি ব্যথা করছে? ইস কখন হলো এটা? ব্যথা করছে খুব?”

পরি কে এমন ব্যস্ত হতে দেখে নীল নিঃশব্দে হাসল।
মেয়েটার ব্যাকুলতা ই বুঝিয়ে দিচ্ছে নীল কে কত টা ভালোবাসে। নীল কে কিছু বলতে না দিয়েই পরি নীলের পাশে এসে বসে পড়ল। নীলের হাত নাড়িয়ে দেখতে লাগল হাত কি কোনো ভাবে মচকে গেছে কী না।

নীল আড়চোখে পরির চোখ দেখতে লাগল। পরির চোখ বলে দিচ্ছে নীলের জন্য কতটা ব্যথিত হচ্ছে তার হৃদয়।
নীল মুচকি হেসে বলল,”শার্ট এর উপর দিয়ে হাত কীভাবে টিপে দিবে? আমি শার্ট টা খুলে নেই। নীলের কথাতে পরি খানিকটা থতমত খেয়ে গেল। কিন্তু কিছু বলল না। নীল শার্ট টা খুলে নিল। শার্ট এর নিচে পাতলা গেঞ্জি পরা ছিল। কিন্তু তবু ও পরি চোখ বন্ধ করে নিল। পরির এমন আচরণে নীল ভ্যাবাচ্যাকা খেল। তার জানা ছিল না হাসবেন্ড এর শরীরের দিকে যেন না তাকাতে হয় তার জন্য কোনো স্ত্রী চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে। আল্লাহ এই মেয়েটা তো এখানে শেষ। পরবর্তীতে এর যে কি হবে! পরি চোখ বন্ধ করেই নীলের হাত অতি যত্নে টিপে দিতে লাগল। আর নীল পরির চোখ বন্ধ করা মুখের দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। মেয়েটা যতটা না সুন্দরী তার থেকে ও হাজার গুন বেশি মায়াবী। এই মায়াবিনীর মায়া যে অতি ভয়ঙ্কর। নীল এই মায়াবিনীর জালে আটকে গেছে। কি স্নিগ্ধ মেয়েটা। সাত সাত টা বছর ধরে মেয়েটা নীলের হৃদয়ের উপর আধিপত্য বিস্তার করে বসেছে। কোনো মুহূর্তে ও নীল পরি কে ভুলতে পারে নি। কখনো মাথায় আসে নি এই মেয়েটা কে ভুলে যাওয়ার কথা। এই পিচ্চি মেয়েটা যে কি করে সেই নীল কেই ভালোবেসে বিলীন হয়ে গেল নীল ভেবে পায় না। হয়ত মহান আল্লাহ নীল আর পরির জুটি এইভাবেই বেঁধে রেখেছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া তার জীবনে পরির মতো কাউকে পাঠানোর জন্য। নীল পরির কাঁপা কাঁপা চোখের পাপড়ি গুলো খুঁটিয়ে দেখছে। ইচ্ছে করছে পরির চোখের পাপড়ি তে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিতে। নীল নীলের এই অবাধ্য ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারল না।
হঠাৎ করেই নীলের উষ্ণ ঠোঁট পরির চোখের পাপড়ি কে ছুঁয়ে দিল।

নীলের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে পরি চোখ মেলে তাকাল।
পরি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীল হ্যাঁচকা টানে মেয়েটি কে বুকে ফেলে দিল। পরি শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়াতে নিলেই নীল পরি কে এক হাতে জড়িয়ে নেয়। নীলের হাত কোমর জড়িয়ে খানিকটা পেটের কাছে লাগতেই পরি কেঁপে উঠে। পরি ধীর কণ্ঠে বলে।
“ছাড়ুন প্লিজ।”

নীলের সহজ জবাব।
“কেন ছাড়ব? আমি কি তোমাকে ধরেছি?”

পরি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,”তাহলে?”

“আমি আমার বউ কে ধরেছি। তোমার কি তাতে?”

পরি নীলের হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে লাগল।
পরির ছুটোছুটি তে নীল পরি কে বেডের উপর শুয়ে দিয়ে পরির দু হাত চেপে ধরে পরির উপর ঝুঁকে নিল। পরির শরীর কেঁপে উঠছে। নীল খানিকটা কাছে গিয়ে পরির মুখে ফু দিয়ে দিল। পরি চোখ বন্ধ করে নিলে নীল পরির গলাতে চুমু দিয়ে দেয়।

পরির শরীর অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠে। বুকের ভেতর ধীম ধীম আওয়াজ। পরি চোখ মেলে বলে,”প্লিজ।”

নীল মৃদু হেসে বলল,”আমি তো পারছি না পরি। তোমাকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। অবাধ্য সব ইচ্ছে জাগছে। বুকের ভেতর দ হ ন চলছে। তুমি জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি। সব ছেলেরাই চায় তার প্রিয় মানুষটি কে একটু ভালোবাসা দিতে কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল করেছি। আমি কখনো অন্য কিছু ভাবি নি শুধু তোমার ভালোবাসায় বিলীন হয়েছি। তুমি যেন ভুল করে না বসো তার জন্য দূরে থেকেছি। পরি এই পরি, আমি কি তোমায় খুব বেশি কষ্ট দিয়েছি? আচ্ছা আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে কি সেই কষ্ট টা লাঘব করতে পারব না?
তোমায় সুখে রাখতে পারব না? আমি এতো তুচ্ছ কেন পরি। এক নিমিষে কেন পারছি না তোমার কষ্ট দূর করে দিতে।
আমি কি ব্যর্থ প্রেমিক? আমি হতে চাই না ব্যর্থ প্রেমিক হতে। আমি আমার ছোট্ট পৃথিবীতে তোমায় নিয়ে থাকতে চাই পরি। যেই পৃথিবীতে সমস্ত সুখ আমি উজাড় করে দিব।
আমি কি পারব না? বলো, বলো প্লিজ।”

কথা গুলো বলার সময় নীলের গলা ধরে আসছিল। যদি পরির পরিবার কে মানাতে অক্ষম হয় নীল, তাহলে পরি তার কাছে থাকতে পারবে না। নীল কি করবে তখন? কাল রাতের সমস্ত ঘটনা নীল সচক্ষে দেখেছে। সে পরির রুমে আগে থেকেই ছোট একটা ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিল।
পরি অস্বাভাবিক অবস্থাতে আছে যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলে তাই এই ব্যবস্থা। কাল রাতে যখন ফুটেজ অন করে তখন পরির কান্না আর্তনাদ সমস্তটা দেখে নেয় নীল।
নীলের বুকে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল পরির কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু মানুষ কে কান্না করার ও সুযোগ দেওয়া উচিত তাই আর যায় নি। নীল খুব মনোযোগ দিয়ে পরি কে দেখে নিয়েছিল। পরির প্রতি টা কথা বুকে বার বার বাজছিল। পরি কখনোই পরিবার কে ছাড়া থাকতে পারবে না। ছোট থেকেই পরিবার কে খুব ভালোবাসে মেয়েটা। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার সে। গতরাতে নীল ও পরির মতো সারা রাত ঘুমোয় নি। জেগে ছিল এক বুক ব্যথা নিয়ে।

পরির হিচকির শব্দে নীলের ধ্যান কাটল। পরি কাঁদছে। নীল পরি গালে বেয়ে পড়া পানি টুকু ঠোঁট দিয়ে শুষে নিল। নীল মুচকি হেসে বলল,”এই মেয়ে কাঁদছ কেন?”

পরি হিচকি রত অবস্থাতেই বলল,”আই এম সরি নীল।
আই এম সরি। আমি হয়ত….।”

পরি কে আর কিছু বলতে দিল না নীল। তার আগেই পরির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। খানিক বাদে পরির কপালে চুমু খেয়ে বলল,”একদম আজে বাজে চিন্তা করবে না। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আর পরি তুমি ভুলে যাচ্ছ কি করে,আমি যে তোমার স্বামী। আমরা আবদ্ধ আছি, আমাদের এই জোড় ভাঙবে না।”

নীল মলিন হেসে উঠে বসল। তারপর পরি কে টেনে উঠিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। মেয়েটা এখন চুপ। তাই মাথায় চুমু দিয়ে বলল,”আমাকে খাইয়ে দিবে?”

এ কথা মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকাল মেয়েটি। মুখের সামনে খাবার তুলতেই নীল বলল,”উহুম আগে তুমি। তুমি আর আমি এক সাথে খাব।”

পরি মুচকি হাসল আর নীল পরি কে খাইয়ে দিল। পরির চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। এত ভালোবাসা যদি হারিয়ে যায় তবে পৃথিবীর প্রতি সত্যিই ঘৃণা হবে ওর।
নীল দু হাতে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল,”আমার ও তো ক্ষিধে পেয়েছে। এভাবে কাঁদলে আমি খাবো কখন?আমি কিন্তু রাগ করেছি তোমার সাথে।”

নীলের বাচ্চা দের মতো কথা বলাতে পরি ফিক করে হেসে উঠল। তারপর খাবার নিয়ে নীল কে খাইয়ে দিল। নীল মুচকি হেসে পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”বউ,আমার বউ।”

পরির বুকে ঢোল বাজতে লাগল। হার্ট বিট গুলো কেমন থেমে থেমে যাচ্ছে। এদিকে ওর অবস্থা দেখে মুচকি হাসছে শ্যাম রাঙা সুদর্শন পুরুষটি।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here