নীলের_পরি (২৭)

0
10

#নীলের_পরি (২৭)

সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুই। সবাই মিলে নীলের বাসার পেছনে বাগানে বসে আছে। বাগান টা বেশ বড়ো হওয়াতে কেমন যেন জঙ্গল জঙ্গল অনুভূতি আসে। সবাই হাসি ঠাট্টা তে মেতে উঠেছে।

শুরুতেই রিহান হাসতে হাসতেই বলল,”আচ্ছা দাদা ভাই আজকে রাতের প্ল্যান কি”?

নীল মুখ গোমড়া করে বলল,”আমার পকেট খালি করার ধান্দা করিস না আবার।”

নীলের কথা তে সবাই হাসতে লাগল। অনিক মাথার পেছনটায় হাত রেখে বলল,”আচ্ছা যেহেতু বাসাতে থিয়েটার রুম আছে। তো সিনেমা দেখলে কেমন হয়? এভরি ওয়ান কি মত?”

হাফসা উৎসাহ দিয়ে বলল,”সেই আইডিয়া। এই ভাইয়া শোন না প্লিজ আমাকে কালারফুল পপকর্ন এনে দিবি আজকে।
সেই হবে সিনেমার সাথে পপকর্ন উফ। সাথে সফট ড্রিঙ্কস হলে তো উড়ে ই যাব।”

নীল হাসতে হাসতে বলল,”একটু কম খা বোন আমার। যে গন্ডার এর মতো শরীর ছিল। অনেক কষ্ট করে এই চিকনি চামেলি হয়েছিস। আবার না ফুলে যাস।”

সবাই এক যোগে হাসতে লাগল। হাফসা মুখ গোমড়া করে ফেলল।
“ভাইয়া, আমি একা না পরি ও মোটু ছিল।”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”এই আমি মোটে ও মোটা ছিলাম না। আমি তো গুলুমুলু ছিলাম।”

হাফসা চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল চুপ থাকতে। কিন্তু পরি চুপ হলো না। ভাই রে ভাই একটু গুলুমুলু ছিল বলে ও সবাই মোটা নামক উপাধি ঝুলিয়ে দিয়েছিল! এখন এতো গুলো মানুষের সামনে মানসম্মান খোয়ানো যাবে না। হাফসা বেচারা মুখ গোমড়া করে রইল। অনিক হাফসা কে এক নজরে দেখে বলল,”হাফসা ইউ নো যারা মোটা তাদের কি বলা হয়?”

হাফসা কিছু বলল না। এই অনিক আবার কোন উপাধি দিতে যাচ্ছে কে জানে। অনিক ভ্রু নাচিয়ে বলল,”যারা মোটা তাদের কে এক্সট্রা কিউট বলা হয়।”

হাফসা অনিকের দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকাল। ইস কেউ তো একজন হাফসা কে সাপোর্ট দিল। হাফসা নীল কে ভেংচি কেটে দিল। নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছু সময় পর হাসি থামিয়ে বোনের কাছে গিয়ে বসল সে। তারপর বলল,”হাফসা বাবু রাগ করে না। অনিক ই রাইট তুমি এক্সট্রা কিউট ই ছিলে। তো আবার এক্সট্রা কিউট হয়ে যাও তো।”

এই কথা বলতেই সবাই হাসতে লাগল। হাফসা রাগি চোখে তাকাতেই সবাই দমে গেল। এক পর্যায়ে নিশাত বলল,”তো ফাইনাল তো রাতে সিনেমা দেখব?”

সবাই সম্মতি জানাল। রনি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে চেয়ে বলল
“তো কি মুভি দেখা হবে?”

সবাই ভাবতে লাগল। নীল পরির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,”অবশ্যই হরর মুভি।”

হরর মুভি শুনতেই পরির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। পরি শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল,”কেনন, অন্য মুভি নয় কেন? হরর মুভি ক্যানসেল।”

অনিক ভেবে বলল,”ওকে তাহলে কি দেখা যায়।”

পরির চোখ মুখে খুশির ঝলকানি ফুটে। নীল নাক কুঁচকে বলে,”ক্যানসেল কেন হবে? অবশ্যই আমরা হরর মুভি দেখব।”

পরি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”না,অন্য মুভি।”

নীল পরির দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবোচক সুরে বলল,”কেন পরি? তুমি বুঝি ভয় পাও!”

পরি শুকনো ঢোক গিলে নিল। তার দৃষ্টিতে অসহায় প্রকাশ পাচ্ছে। তবু সে বিপরীত উত্তর দিল।

“মোটে ও না। আমার ভালো লাগে না তাই বলছি।’

নীল বাঁকা হাসল। মেয়েটাকে জ্বালাতে চাচ্ছে সে।

“বুঝেছি ভয় পাও কিন্তু বলবে না। এই এই সবাই শোন হরর মুভি বাদ, পরি ভয় পায়।”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”আমি ভয় কেন পাব?”

নীল মুখ টিপে হাসছে। ভালোই চটেছে পরি।

“তো বলছো ভয় পাও না?”

পরি একটু ভাব নিয়ে বলল,”না ভয় পাই না।”

এবার নীল মুচকি হাসল। তারপর বলল,”তো আর কি হরর মুভি ই ডান। পরি তো ভয় পায় না।”

পরি অসহায় দৃষ্টি তে নীলের দিকে তাকিয়ে রইল। নীল বাঁকা হাসছে। পরির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। এই হালকা শীতের মধ্য ও! পরি তো বার বার করে চাইছে যাতে কোনো ভাবে হরর মুভি দেখা বাদ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ যা চায় তা পায় না। পরির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি হলো।

সন্ধ্যার নাস্তা বানাতে ব্যস্ত রোজিনা বেগম। বাড়িতে এত গুলো মানুষ সবার জন্য হালকা পাতলা নাস্তা তো বানাতেই হবে। আবার রাতে নাকি মুভি দেখবে তাই ডিনার করবে কি করবে না তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। একটু ভারী নাস্তাই বানাচ্ছেন ওনি। কাজে সাহায্য করছে বাসার সার্ভেন্ট। চপ ভাজতে ভাজতে রোজিনা বেগম বললেন,”কলি শোন আমি তোর ভাইজান কে কফি দিতে যাচ্ছি। একটু চপ গুলো দেখ তো।”

কলি বলল,”আসছি আপা।”

রোজিনা বেগম কফি হাতে নিয়ে বলল,”পারবি তো?”

কলি সম্মতি জানিয়ে বলল,”হো আপা পারুম। আপনি চিন্তা কইরেন না। কাম তো প্রায় শেষ ই।”

রোজিনা বেগম কফি হাতে যেতে যেতে বললেন,”আচ্ছা আমি যাচ্ছি তুই খাবার গুলো সাজিয়ে রাখিস।”

কলি সম্মতি জানাতেই রোজিনা বেগম উপরে উঠে গেলেন।
হানিফ আহমেদ রুমে বসে কাজ করছেন। বাংলাদেশেই তার ছোট খাটো বিজনেস আছে। মাঝে মাঝে দেশের বাইরে ও যেতে হয়। রোজিনা বেগম কফি দিতেই হানিফ আহমেদ মৃদু হেসে বললেন,”বসো।”

রোজিনা বেগম হানিফ আহমেদের পাশে বসলেন। হানিফ আহমেদ কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,”ছেলে মেয়েরা ভালো থাকলেই আমাদের শান্তি। ওদের মুখের হাসি দেখলে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”

রোজিনা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,”হুম।এখন সব ভালোই ভালোই হলেই হয়।”

হানিফ আহমেদ কফি টা অর্ধেক শেষ করে কফি কাপ সাইডে রেখে আবার ল্যাপটপের কাজে মজে গেলেন।
রোজিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,”একি কফি শেষ করে কাজ করো।”

হানিফ আহমেদ কাজ করতে করতে বললেন,”না কাজ টা
শেষ করতে হবে। তোমার ছেলে বিজনেস এর কিছু শেয়ার দেশে সেট করবে। আর তাই এত কাজ। তাছাড়া নীল তো এখন আর বছরের পর বছর ধরে লন্ডনে থাকবে না।
লন্ডন এ মেইন বিজনেস থাকবে,যখন দরকার হবে যাওয়া আসা করবে।”

রোজিনা বেগম হেসে বললেন,”হুম। আচ্ছা তুমি কাজ করো আমি সবাই কে ডেকে নিয়ে নাস্তা দেই। আর তুমি তো তেল মসলা খাবে না। তো একটু স্যুপ বানিয়ে দেই?”

হানিফ আহমেদ সম্মতি জানাতেই রোজিনা বেগম নিচে চলে গেলেন। আফজাল হোসেন সহ পরিবারের সবাই এক সাথে জড় হয়ে আছে। আমান আর নিশা দুজনেই কাঁদছে। আমান বলল,”আব্বু আপু যখন কাঁদছিল তখন অনেক বলেছিলাম এভাবে জোর কোরো না কিন্তু তোমরা শুনলে না।”

নিশার কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। কথা বলতে পারছে না। ভাই বোনের সাথে ঝগড়া মারামারি হলে ও দিন শেষে একে অপর কে খুব ভালোবাসে ওরা। নিশা আধৌ আধৌ বুলি তে বলল,”আমি নীল ভাইয়া কে আগে দেখেছি।
আপু আমাকে একবার দেখিয়েছিল কিন্তু কিছু বলে নি।”

নিশার কথাতে আফজাল হোসেন থমকে গেলেন। তবে কি নীলের সাথে পরির সম্পর্ক ছিল? নাকি অন্য কিছু। পরি কেন বলে নি তাদের? আফজাল হোসেন চিন্তা তে পড়ে গেলেন। যত ই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। বার বার চিন্তা এসে মাথায় হানা দিচ্ছে।

হাফসা করিডরে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে।
অনিক এসেই হাফসা র পাশে বসে পড়ল। হাফসা অনিক কে একবার দেখে মিষ্টি হাসি দিল। অনিক ও মিষ্টি হেসে বলল
“গান শুনছ?”

হাফসা মাথা ঝাঁকাল। অনিক মৃদু হেসে বলল,”কি গান?”

হাফসা কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে বলল,”আমার সব থেকে ফেবরেট সং জাস্টিন বিবার এর বেবি সং। উফ জাস্ট অসাম।”

অনিক অবাক হয়ে বলল,”ওহ রিয়্যালি?”

হাফসা মাথা ঝাঁকাল। অনিক হেসে বলল,”আমার ও।”

হাফসা ভ্রু কুঁচকাতেই অনিক বলল,”রিয়েলি আমি এই সং টা খুব ভালো গাইতে ও পারি।”

হাফসা অবিশ্বাসী চোখ নিয়ে তাকিয়ে বলল,”মজা করছেন?”

অনিক মৃদু হেসে বলল,”মজা কেন করব? সত্যি আমি এটা খুব ভালো গাইতে পারি। ওকে তোমাকে শুনাব নে তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে।”

হাফসা সম্মতি জানাল। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করল। হাফসা ফোনে টাইম দেখে বলল ৯.৩০ বাজে ভাইয়া এখনো আসে না কেন? সব কিছু ঠিক ঠাক করতে ও তো এক ঘন্টা লাগবে। অনিক চিন্তিত স্বরে বলল,”দেখছি নীল কোথায়।”

নীল কে ফোন লাগাতে ই নীল এসে হাজির। হাতে এক গাদা জিনিসপত্র। হাফসা র উপর ফেলে দিয়ে অনিকের পাশে বসে পড়ল নীল। নীল কে দেখেই অনিক পিঠ চাপরে বলল,”বাজে কয়টা? এখনি তো ফোন দিচ্ছিলাম।”

নীল রাগী ভঙ্গিতে বলল,”চুপ কর বেটা। এত সব আনতে গিয়েই তো লেট হলো। কোথায় একটু আপ্যায়ন করবি তা না উল্টো প্রশ্ন করিস!”

অনিক বাঁকা হেসে বলল,”কেন ভাই ভাবি কি আদর যত্ন করে না?”

নীল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,”ছোট বোন আমার সামনে, আর তুই।”

হাফসা চোখ নাচিয়ে বলল,”এমন ভাব ধরছো মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কিছু বল না। পিচ্চি কাল থেকেই সব বলো আর এখন তো আমার বান্ধবী কেই বিয়ে করেছতোমার ফাউ প্যাঁচাল শোনার মতো সময় আমার নেই। আমি গেলাম।”

এই বলেই হাফসা ভেংচি কেটে দিল। তারপর ব্যাগ গুলো নিয়ে চলে গেল। নীল আর অনিক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। অনিক হাসি থামিয়ে বলল,”কোন মুভি দেখব আমরা?”

নীল শান্ত স্বরে বলল,”দ্য রং হাউস।”

অনিক চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,”ইংলিশ হরর মুভি।
ভাই ওরা তো ভয়েই শেষ হয়ে যাবে!”

নীল বাঁকা হেসে বলল,”এটাই তো চাই ।”

অনিক মৃদু হাসল। সাথে নীল ও।

চলবে……
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here