ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ #part_18

0
57

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_18

কফি হাতে ফিরে এলো অভিনব। কেবিনে ঢুকে দেখলো ঝিল আনমনেই বসে আছে।আশে পাশে কি হচ্ছে তাতে কোনো ধ্যান ই নেই।ঝিলের মনোযোগ পেতে খ্যাক করে কাশলো। ঝিল ঘুরে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করলো। অভিনব ও মৃদু হাসলো।ঝিলের হাতে কফি দিতেই ঝিল দারুন অনুভূতি নিয়ে চুমুক দিলো। লা জাওয়াব , সত্যি ই অভিনব খুব ভালো কফি বানায়। ঝিল পা টা নাড়িয়ে দেখলো ব্যথা টা কমে গেছে। অভিনবর দিকে তাকিয়ে কৃতঙ্গতার হাসি দিলো। তবে অভিনবর মনোযোগ কফি কাঁপে। ঝিলের মনে পরলো অভিনব বলেছিলো রাতে ছাঁদে নিয়ে আসবে।ঝিল চকচকে চোখে তাকালো।কিন্তু অভিনব এখনো কফি কাঁপে মুখ গুঁজে আছে। ঝিলের মুখ টা একটু খানি হয়ে গেল।

_ অভিনব শুনেন।
_ হু
_ একটা কথা বলার ছিলো।
_ হ্যাঁ বলুন। এতো ফরমালিটি করছেন কেন ?
_ না মানে
_ নির্দ্বিধায় বলুন। আমি বাঘ নই যে আমাকে এভাবে ভয় পাবেন।

ঝিল অপ্রস্তুত হাসলো। কাঠ হয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটো জ্বিভের আগা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো। অভিনব সেটা আড়চোখে দেখলো, ঝিল কেমন কাঁচুমাচু করছে।
যার দরুন ঝিলের মুখ টা একটু খানি হয়ে আছে।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ বলুন সমস্যা নেই।

_ ইয়ে না মানে আপনি বলেছিলেন রাতে লঞ্চের ছাঁদে নিয়ে যাবেন।

অভিনব গরম শ্বাস ফেললো। ঝিলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল
_ কিন্তু আপনার পায়ে তো ব্যথা।

ঝিল বোকা বোকা হেসে বলল
_ আরে না। ব্যথা আপনার স্প্রে তে পালিয়ে গেছে। প্লিজ প্লিজ

অভিনব খানিকটা ভেবে নিলো। ঘড়িতে টাইম দেখে নিয়ে বলল
_ আচ্ছা চলুন। তবে আধ ঘন্টা পর ডিনার করতে হবে।

_ ওকে।

ঝিল অভিনবর সাথে হাঁটা লাগালো। ঝিলের দিকে তাকিয়ে অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঝিল অবাক হয়ে তাকালো।

_ কি হলো থেমে গেলেন কেন? প্লিজ প্লিজ আমরা যাই একটু খানি ই তো থাকবো প্লিজ।

অভিনব কোনো কথা না বলে কাবাড থেকে একটা চাঁদর বের করে ঝিলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

_ কিই?
_ চাদর টা গায়ে জড়িয়ে নিন।
_ আরে লাগবে না।
_ বেশি কথা বলছেন আপনি। না হলে কিন্তু ছাঁদে নিয়ে যাবো না।

ঝিল মাথা কাত করে চাদর টা নিয়ে নিলো। ভালো করে গায়ে জড়িয়ে অভিনবর সাথে হাঁটা লাগালো।

*

ছাঁদে কেউ ই নেই। সবাই যে যার মতো ক্লান্ত হয়ে আছে তাই কেবিনে রেস্ট নিচ্ছে। অভিনব আর ঝিল রেলিং ধরে পাশা পাশি দাড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে ঝিলের বেবি হেয়ার গুলো উড়ছে যেন। ঝিলের লম্বা চুল থেকে কয়েক গাছি চুল এসে অভিনবর গাঁয়ে বারি খায়। ঝিল লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে হাতে কফি কাপ টা।দুজনের মনে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। এক অদ্ভুত অনুভূতি আর শিহরনে ছেয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গ। অন্যমনস্ক ঝিলের হাত টা অভিনবর হাতে লাগতেই ঝিল শিউরে উঠলো।
অভিনবর দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল
_ সরি।

অভিনব কোনো উত্তর করলো না। ঝিল ভারী এক নিশ্বাস ফেলল। অভিনব ক্যামেরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে কিছু ছবি বের করলো।
ঝিলের দিকে ক্যামেরা বারিয়ে দিলো।
_ দেখুন আর বলুন তো এগুলো কোথায়।

ঝিল ভ্রু নাচিয়ে হাসলো। ক্যামেরা নিয়ে একের পর এক ছবি দেখতে লাগলো। বিস্ময়ে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে ওর।
অভিনব লক্ষ্য করলো ঝিল খুশি তে আপ্লুত হয়ে পরেছে। অভিনব ক্ষীন হাসলো। মেয়েটা অল্পতেই কেমন সুখ খুঁজে নেয়।

_ কোথায় এটা বলতে পারেন?

_ এটা কি ইউরোপের কোনো দেশে? ওয়াও এতো সুন্দর? আমার তো মনে হচ্ছে ছবি তেই ঢুকে যাই।

অভিনব মিষ্টি হাসলো তারপর বলল
_ যাবেন আপনি?

ঝিল মৃদু হাসলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনি ইচ্ছে হলেই যেতে পারেন।

ঝিল অবিশ্বাসের চোখে তাকালো। অভিনব আকাশের দিকে তাকালো। চাঁদ টা কুয়াশার মাঝে ডুবে গেছে।

_ অভিনব
_ হুম
_ কিছু বলছেন না যে?
_ আপনি যাবেন এখানে?
_ অভিনব এটা
_ সম্ভব , আপনি চাইলেই সম্ভব। জানেন এটা কোথায় ?

ঝিল মাথা কাত করে বোঝালো সে জানে না। অভিনব মৃদু হাসলো। কুয়াশা ভরা বাতাসের মাঝে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল
_ বাংলাদেশ এটা বাংলাদেশেই।

ঝিলের ছোট ছোট চোখ গুলো বড় হয়ে গেল। অভিনব ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ হ্যাঁ এটা আপনার দেশের ই একটা স্থান। ফরেন ট্যুরে যেতে হবে না আপনাকে। আপনি এখানে স্বাচ্ছন্দ ভাবে যেতে পারেন।

_ অভিনব সত্যি এটা?

_ হুমম

_ আপনি আমার সাথে মজা করছেন?

_ উহহুহ একটু ও না। আমি একটু ও মজা করছি না। দেখাচ্ছি আপনাকে

অভিনব ঝিলের থেকে ক্যামেরা নিয়ে একটা ছবি বের করলো। ঝিল বিস্ময় নিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো।অভিনব বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ঝিল কে বলল
_ এই যে দেখুন এটা টাঙ্গুয়ার হাওর। আপনার ই দেশের অপরূপ সৌন্দর্য ভরা এক স্থান।

_ সত্যি বলছেন তো আপনি?

কথা টা ঝিল বিস্ময় নিয়েই বলল। অভিনব ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। ঝিলের চোখ চকচক করে উঠলো।

_ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা বাংলাদেশেই আছে? ওয়াও। এটা বাংলাদেশের কোথায়?

_ সুনামগঞ্জ।

_ ওয়াও। তাহলে তো যাওয়া যেতেই পারে?

_ আপনি চাইলে এখনি যেতে পারেন। তবে এর আসল সম্পূর্ন সৌন্দর্য তো ফুটে উঠে বর্ষা কালে। এখন তো ফেব্রুয়ারি মাস।

ঝিল মুখ টা ছোট করে নিলো। আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছে ওর মন। প্রকৃতির প্রতি গভীর এক টান অনুভব করছে।চোখ দুটো ছলছল করছে।অভিনবর ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে একটু জড়িয়ে ধরে বলতে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো।
কিন্তু নিজের ইচ্ছের প্রশ্রয় দিলো না অভিনব। দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠলো চারপাশ। ঝিল ছলছল নয়নে ছবি টা দেখে যাচ্ছে। কি সুন্দর সৃষ্টি , হঠাৎ ই অভিনবর মাথায় এক ভাবনা চড়াও হলো।কেন পারবে না যেতে? নিশ্চয়ই পারবে। এই যে ঝিল তো আজ ওর সাথেই ঘুরে যাচ্ছে। তাহলে সমস্যা কোথায়। অভিনব উৎকন্ঠা হয়ে বলল
_ ঝিল

অন্যমনস্কা ঝিল অভিনবর ডাক শুনতে পেল না।অভিনব আবার ডাক দিলো। ঝিল ক্যামেরাতেই চোখ রেখে ছোট্ট করে উচ্চারন করলো
_ হুমম
_ আমি নিয়ে যাবো আপনাকে।
_ সত্যি?
_ হ্যাঁ তবে এখন নয়। আমরা পূর্ন তিথি তেই যাবো।
_ মানে?
_ বর্ষাকালে।
_ কিন্তু আপনি কি করে যাবেন? আপনি তো আমেরিকা তে ফিরে যাবেন।

মুহূর্তেই অভিনবর মুখ টা ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল। ঝিল মৃদু হেসে বলল
_ সমস্যা নেই আপনি বলেছেন আমি তাতেই খুশি।

_ ঝিল শুনেন না ।

_ হুমম

_ যদি আমি আমেরিকা থেকে ফিরে এসে নিয়ে যাই । যাবেন আমার সাথে?

বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে হতবাক ঝিল। দ্বিধা নিয়ে বলে ফেলল
_ যাবো আমি।

এই একটি কথা যেন মুহূর্তেই অভিনবর বুকে বৃষ্টি নামিয়ে দিলো। অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে গেল অভিনবর হৃদয়।
অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ তাহলে যাবো আমরা। তবে তার জন্য আপনাকে সুইম শিখতে হবে ।

ঝিল হাসলো। হ্যাঁ সত্যি ওহ যাবে অভিনবর সাথে আর সুইম ও শিখবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের গাঁ ভেজাবে অভিনবর হাতে হাত রেখে।
অনেক টা পথ চলবে অভিনবর পাশা পাশি হয়ে। এক সাথে পারি দিবে ভালোবাসার সমুদ্রে। হ্যাঁ যাবে হারিয়ে অভিনবর ভালোবাসাতে।

অভিনবর ডাকে ঝিল চমকে তাকালো।
_ চলুন ডিনারের জন্য সবাই এসে পরেছে

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। ঝিলের চিত্ত এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে। একি ভাবনাতে মজে ছিলো ওহ। অভিনবর ভালোবাসাতে ডুবে যাবে।এই অপ্রস্তুত ভাবনার কারন কি? ওহ কি অভিনবর প্রতি নুইয়ে যাচ্ছে?এটা কি হচ্ছে ওর? হৃদস্পন্দন গুলো এতো বেড়ে যাচ্ছে কেন?

_ চমকাচ্ছেন কেন ঝিল? আপনার চোখ মুখ এমন অপ্রস্তুত লাগছে কেন?

ঝিল সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। অভিনব ধীর হস্তে ঝিলের হাত টা ধরলো। চমকে তাকালো ঝিল, অভিনবর ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। যেই হাসি তে বিনা দ্বিধায় ঝিল হারাতে রাজি সহস্র জনম।

*

রাতের খাবারে ছিলো এগ ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই , চিংড়ী , মিক্সিং ভেজিটেবল, রূপচাঁদা ফ্রাই।সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর ফ্রুটস।

অভিনবর পাশে বসে আছে মাহের , অমিত আর শাকীল। অভিনব আলোচনা করছে কাল যখন জামতলা সৈকত অর্থাৎ কটকা সি বিচ যাবে তখনি আস্ত খাসি বারবি কিউ করা হবে। যেহেতু বিচে পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা আছে। তাই সবাই সেখানেই বার বি কিউ করবে বলে ঠিক করলো।

পাপড়ির ঘাড়ে মাথা রেখে আছে ঝিল। তার পাশেই বসে আছে অমিতের গার্লফ্রেন্ড অনিতা।অনিতা মেয়েটা দেখতে শুনতে বেশ ভালো। কিছু দিন হয়েছে পড়া শোনা কমপ্লিট করেছে। এই ট্রিপের পর ই ওদের বিয়ে।
পাপড়ি হাসতে হাসতে ঝিল কে বলল
_ আমাদের মাঝের সব থেকে পিচ্ছি সদস্য হলো ঝিল।

_ হ্যাঁ। আমরা যখন ট্রিপে বের হই , তখন ভেবেছিলাম আফরাই সব থেকে ছোট অথচ দেখো আরেক জন পিচ্ছি পেয়ে গেলাম।

অনিতার কথায় ঝিল মৃদু হাসলো। তারপর প্রশ্ন করলো
_ আফরা আপি আর মাহেরা আপি কি সেম ব্যাচ?

_ উহুহহ মাহেরা এক ব্যাচ সিনিয়র।

_ ওহহ তাহলে তো মাহেরা আপি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র আর আফরা আপি এক ব্যাচ।

_ হুমমম তুমি সেকেন্ড ইয়ারে না?

_ হ্যাঁ।

অনিতা মৃদু হাসলো। অমিত ওদের সামনে এসে বসলো। অনিতার সাথে নানা খুনসুটি তে মেতে উঠেছে ওহহ। তা দেখে পাপড়ি আর ঝিল হেসে কুটিকুটি।
কিছুক্ষণ পর পাপড়ির হাসবেন্ড আসলো। পাপড়ি প্রশস্ত হেসে বলল
_ আমি যাই। তোমরা গসিপ করো। না হলে আমার ওনি রেগে যাবেন।

পাপড়ি কে অমিত বেস্ট অফ লাক জানালো। পাপড়ি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে অনিতা কে ইশারা করলো।
মুহূর্তেই অমিত লাল টুকটুকে হয়ে গেল। তা দেখে ঝিলের গগন কাঁপিয়ে হাসি। এতো হাসা হাসির শব্দে অভিনব ঘুরে তাকালো। ঝিলের মোহনীয় হাসিতে আটকে গেল ওহহ। ঘোর ভাঙ্গলো মাহের এর ডাকে। মাহের হাই ফাইফ করে বলল
_ তাহলে রইলো কথা। দুটো আস্ত খাসি বার বি কিউ হচ্ছে। আমি chef এর সাথে কথা বলে আসি।

_ আচ্ছা যাও।

মাহের শাকীল কে নিয়ে কিচেনে গেল কথা বলতে। আস্ত বারবিকিউ করার জন্য যা যা লাগবে তা এখনি গুছিয়ে নিবে। কারন কাল খুব ভোরে উঠে কটকা ঘুরবে ওরা।

অভিনব আকাশে চাঁদ খুঁজতে লাগলো। নাহহ কুয়াশা টা চাঁদ কে আড়াল করে রেখেছে। তাই চোখ ফিরিয়ে নিলো। পেছন ঘুরে তাকালো। সামনে ঝিল কে দেখেই বুক ধুকপুক করে উঠলো।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করুন।

হ্যাপি জার্নি

কমেন্টে টাঙ্গুয়ার হাওরের ছবি আমি দিয়ে দিবো।

জয়েন করুন Fatema’s story discussion

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here