ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ #part_28

0
140

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_28

ঝিল নিরব হয়ে আছে। অভিনব ঝিলের রেসপন্স না পেয়ে তাকালো। ঝিল চোখ মুখ এমন ভাবে খিচে আছে যে তার কানে অভিনবর বলা শব্দ গুলো পৌছে নি।
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। নিজের অনুভূতি গুলো বলে ও কোনো লাভ হলো না। ফোঁস করে দম ফেললো।আলতো স্বরে ঝিল কে ডাকলো । কিন্তু ঝিলের কান আপাততো বন্ধ হয়ে আছে। সে কিছুই শুনতে পেল না।
অভিনবর কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো। উপায় না পেয়ে শক্ত করে ঝিলের কোমর জড়িয়ে ধরলো।
তারপর ই পানি তে ডুব দিয়ে নিলো। হঠাৎ আক্রমনে ঝিল পানি খেয়ে ফেললো। অভিনব দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ ধ্যান কোথায় থাকে হুহহ ?

_ আপনি এটা কি করলেন ? এভাবে কেউ না জানিয়ে ডুব দেয় ? একটুর জন্য আমার প্রান টা যাচ্ছিলো। আর বকছেন কেন ?

অভিনব কিছু বললো না। মেজাজ টা প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে। এতো কষ্ট করে মেয়েটা কে ভালোবাসি বললো। অথচ এই মেয়েটা কিছু ই শুনে নি।
অভিনব ঝিলের দিকে তাকাতেই কেমন নুইয়ে গেল। ঝিল কেমন বোকা বোকা হয়ে তাকিয়ে আছে। অভিনবর বেশ মায়া হলো। শুধু শুধু মেয়েটার উপর রাগ দেখালো। ঝিল হঠাৎ করেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো। অভিনব কেন তার উপর রেগে গেল?
কখনো তো রেগে যায় নি। খুব কষ্ট হচ্ছে। অভিনব খানিকটা পানি নিয়ে ঝিলের মুখে ছিটিয়ে দিলো। ঝিল তাকালো না। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ এই ঝিল রাগ করেছেন ? নাকি অভিমান করেছেন ? আমার দিকে তাকান না একুট।

ঝিল কিছু বললো না। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো। অভিনব ফিক করে হেসে বলল
_ বাচ্চা বাচ্চা লাগছে না তো। এতো আল্লাদ কেন করছেন ?

_ অভিনব।

_ ঝিল।

_ আপনি

_ আপনি

ঝিল মুখ ফুলিয়ে নিলো। এটার কোনো মানে হয় ? ওর সাথে সাথে কথার রিপিট করছে। অভিনব এক হাত উঁচু করে দিয়ে বলল
_ ওকে ওকে আর কিছু বলছি না। বাট গোমড়া মুখ করবেন না প্লিজ। একদম বিদঘুটে লাগে।

ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। তারপর ই ফিক করে হেসে দিলো। অভিনব ও হাসির তালে তাল মেলালো। অভিনব লাইফ জ্যাকেট টা ঝিল কে পরিয়ে দিলো। ঝিল তখন চোখ বুঝে নিয়েছে। অভিনবর স্পর্শ লাগতেই কেমন শিউরে উঠছে। ঝিল চোখ মেলে তাকালো।
ঝিলের এক হাত শক্ত করে ধরে মৃদু হাসলো অভিনব। ঝিল এক দৃষ্টি তে অভিনবর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার এতোটা কাছাকাছি ভাবতেই ঝিলের অন্তরআত্মা ধুকপুক ধুকপুক করছে। অভিনব মৃদু হাসি ফুটিয়ে ঝিলের মুখে ফু দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ঝিল। অভিনবর ভারী নিশ্বাসে ঝিল কেঁপে কেঁপে উঠলো। চোখ খোলার অবকাশ পেল না। তার আগেই ঝিল কে নিয়ে সাঁতার কাটতে লাগলো অভিনব। ঝিল ঝরা হাসলো । ছেলেটার আর কতো গুন দেখবে ওহ ?

অভিনব কে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই ঝিল কে লজ্জা দিতে অভিনব বলল
_ আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন না ভালোই লাগছে।

ঝিল মৃদু হাসলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে অভিনবর বুকে মাথা রাখলো। অভিনব এক হাতে সাঁতার কেটে যাচ্ছে। ঝিল সে দিকে পাত্তা দিলো না। অভিনবর বুকে মাথা রেখেই পানির এলোমেলো ঢেউ উপভোগ করতে লাগলো। জীবনে প্রথম সাঁতার কাটছে ওহহ। ছোট সময়ে ভাইয়া রা সাঁতার কাটতো আর ওহহ পাড়ে বসে থাকতো। কারন পানিতে নামতে বেশ ভয় হতো। ধীরে ধীরে ভয় টা অনেক টাই কেঁটে গেছে।

অভিনব প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ঝিল কে নিয়ে উঠে আসলো। সবাই ভিজে একাকার। ট্রাভেল এজেন্সি র লোকে রা আস্ত খাসির বারবিকিউ কেটেঅ সবাই কে প্লেটে করে দিয়ে দিলো। শীতের মাঝে গরম গরম বারবিকিউ । সবাই বেশ তৃপ্তি করেই খেল। একটু দূরে চেঞ্জিং সেন্টার এর মতো জায়গা তে গিয়ে একে একে চেঞ্জ করে নিলো। ( এটা আমার সঠিক জানা নেই )

ঝিল চেঞ্জ করছে দেখে অভিনব বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেই সুযোগেই মাহেরা এসে অভিনবর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। অভিনব ভদ্রতার খাতিরে হাসলো। এবার সত্যি ই খুব বিরক্ত হচ্ছে ওহ। তবু ও মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখলো।

_ ওয়াও অভিনব ইউ লুকিং সো কুল। ভেজা চুল গুলো আই কান্ট এক্সপ্লেইন।

অভিনব বিরক্তি টি ঠেলে অপ্রস্তুত হাসলো। ঝিল বের হতেই অভিনব সে দিকে পা বাড়ালো। মাহেরা খানিকটা মন খারাপ করে নিলো।
অভিনব তাকে একবার দেখলো ওহ না ? এতো সুন্দরী হওয়ার পর ও কি অভিনব তাকে পছন্দ করবে না ?

মাহেরার মুখ টা মলিন হয়ে গেল। মুহুর্তেই হাসি খুশি মুখে কালো মেঘ নেমে আসলো। কপালে পারলো দুটো সূক্ষ্ম ভাঁজ। অভিনব ঝিলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে । মাহেরা রাগ হলো খুব। নিজেকে সামলে নিয়ে চলে গেল। কোনো কিছু করতে হবে। না হলে অভিনব কখনোই তার হবে না।

_ অভিনব আমরা কি বাঘ দেখতে পাবো না ?

_ কেন পাবো না ? অবশ্যই পাবো। টাইগার হিলে বাঘ দেখার চান্স আছে।

_ সত্যি ?

_ হুমমম। একটু এদিকে আসুন তো।

ঝিল অভিনবর দিকে এগিয়ে গেল। অভিনব মৃদু হাসি ফুটিয়ে ডান হাতের আঙুল দিয়ে ঝিলের কপালের পানি মুছে দিলো। ঝিল লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
_ থ্যাংকস।

_ থ্যাংকস? এটা তো আমার চাই না।

_ তাহলে ?

_ আমার একটা মিষ্টি বউ চাই। একটা বিয়ে করবো। আপনার চেনা জানা কেউ আছে নাকি ?

ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো। অভিনব বহু কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে। ঝিলের চোখ দুটো কেমন চিন্তিত লাগছে। অভিনব ভাবলো এই বুঝি ঝিল তাকে কিল ঘুষি মেরে দিবে। কিন্তু ঝিল অভিনব কে অবাক করে দিয়ে শুধু হাসলো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অন্য বাহু বুলিয়ে বলল
_ আছে তো। তবে তার আগে আমাদের ডিভোর্স টা হয়ে যাক ?

অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো। ঝিল কি কোনো ভাবে চাচ্ছে না সম্পর্ক টা রাখতে ? তাহলে ঝিলের চোখে যে ভালোবাসা সেটা কি করে মিথ্যে হতে পারে ? চিন্তায় চোখ দুটো কেমন দেখাচ্ছে। ঝিল হালকা হাতে অভিনব কে ধাক্কা মেরে দিলো।
হঠাৎ আক্রমনে অভিনব তব্ধা খেল। তবে যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা হাসলো । তবে সে হাসি টা প্রশস্ত হলো না। ঠোঁটের কোন থেকেই উবে গেল। ঝিলের মনের ভেতর ভাঙচুর হচ্ছে। অভিনব সত্যি বিদেশী দের মতো দেখতে একটা মেয়ে কে ডিজার্ভ করে। কিন্তু ঝিল কি করবে ?
অভিনব যে তার সাথে থাকতে চায় না। ঝিলের চোখ দুটো ভিজে গেল। ভেজা পাপড়ি মেলে লম্বা হাসলো।
_ মাহেরা আপু কে কেমন লাগে ? আই থিংক সি লাভস ইউ। দেখতে পারেন , আপি তো খুব সুন্দরী।

এই মুহুর্তে অভিনবর মুখ টা হলো দেখার মতো। ঝিল যদি একটু আঁচ করতে পারতো তাহলে কখনোই এমন কথা বলতো না। অভিনবর চোখ দুটো ঝিল কে ভস্ম্য করে দিতে চাইছে। এই মেয়ে নিজের বর কে অন্যের বর বানানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে।
ঝিলের গালে ঠাস ঠাস দুটো বসিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো।
কতো বড় সাহস মেয়েটার। আজকাল ঝিলের আচারন তো আকাশচুম্বি । আর আলোর থেকে ও অধিক গতিসম্পন্ন তার সাহস।
অভিনব বিরক্তি তে নাক কুঁচকে নিলো । ঝিলের দিকে একবার ফিরে বলল
_ আসুন।

ঝিল মাথা ঝাকিয়ে হাঁটা লাগালো। সময় গুলো থমকে কেন যাচ্ছে না । সূর্য্যি মামা কি পারে না সময় টা কে থমকে দিতে। তাহলে ঝিল এক দৃষ্টি তে শুধু অভিনব কে দেখতো। কিন্তু চিরন্তন সত্য গুলো বোধহয় বদলানো সম্ভব নয়।
ঝিল মলিন হাসলো। ভাগ্য বিড়ম্বনা নিয়ে বেশ চিন্তিত সে।

মাহের তার বউ কে জড়িয়ে পোজ নিচ্ছে। তা দেখে সবাই হো হো করে হাসছে। কারন পোজ টা হয়ে গেছে উল্টো।
মাহের মেকি হাসি দিয়ে ঠিক জায়গায় চলে আসলো। সবাই কে হাসানোর জন্য ই এমন টা করেছিলো সে।

আমরিন মাহের এর পেটে গুঁতো মেরে দিলো। মাস পাঁচেক হয়েছে বিয়ে হয়েছে। ছেলেটা এখনো উল্টো পাল্টা কাজ করে। আগে না হয় বয়েফ্রন্ড ছিলো এখন তো হাসবেন্ড। সব বিষয়ে মজা করা টা কি ঠিক ?

আমরিন এর মুখ দেখেই মাহের দমে গেল। আমরিন কে জড়িয়ে আরো কিছু ছবি তুলে নিলো। ছবি গুলো অমিত তুলে দিচ্ছে আর শিষ বাজাচ্ছে। দুজনের জুটি টা অসাধারন। কলেজে সবাই বলতো এরা বেস্ট কাপল। কারন এরা ঝগড়া করতো ঠিকি তবে কখনো রেগে রাখতো না। আর তার জন্য ই ছয় বছরে রিলেশন পূর্নতা পেয়েছে ।

অভিনব স্মিত হাসি রেখে ঝিলের দিকে তাকালো। ঝিল ও তাকালো। যে চোখে ঘাড়েল হলো অভিনব। এতো এতো আকর্ষন কেন মেয়ে টার মাঝে । এই রহস্য ময় অনুভূতি গুলো যেমন কষ্টের । ঠিক তেমনি দারুন সুখের। প্রিয় মানুষটাকে পুরোপুরি নিজের করে নিতেই পারলেই এর সার্থকতা ।
অভিনব চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো। কিছু তেই ঝিলের হাত ছাড়বে না ওহ।

** মাস দুয়েক বাদেই আমার এস এস সি পরীক্ষা । তাহলেই ভাবুন সব কিছু মিলিয়ে কতোটা চাপে আছি।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here