ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ #part_8

0
118

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_8

অভিনব ঝিলের হাত ধরে কিছুদূরে একটা বাসের সামনে চলে আসলো। ঝিলের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো ” দেখি কিছু করতে পারি কি না। ”
ঝিল অধরে হাসি রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। বাস থেকে প্রায় 40 জনের মতো নেমে হৈ হুল্লর করছে। ঝিল ভ্রু কুঁচকে রইলো। অভিনব ঝিল কে বলল
_ আপনি আমার পেছনেই থাকুন। আর হ্যাঁ অন্যদিকে যাবেন না।

ঝিল বিনা শব্দে মাথা ঝাঁকালো।অভিনব বাসের কিছু ছেলের সামনে গেল। মনোযোগ পেতে বলল ” হ্যালো ডুড। ক্যান আই টক টু ইউ গাইজ?

ছেলে গুলো ঘুরে তাকালো। অভিনবর মাথা থেকে পা অব্দি দেখে নিলো একবার।অভিনব আদৌ কি বাঙালি নাকি বিদেশি তা নিয়ে বেশ কনফিউশনে ও পরে গেল।
অভিনব কোনো উত্তর না পেয়ে অনুনয়ের স্বরে বলল
_ কিছু কথা ছিলো।

ছেলে গুলো চমকালো , তার ই সাথে প্রশস্ত হাসলো । অভিনব বাঙালি হওয়াতে তাঁরা বোধহয় খুশি ই হলো।

একটা ছেলে হাত বাড়িয়ে বলল
_ আম মাহের আহমেদ ।

অভিনব আলতো হেসে হাত মিলিয়ে বলল
_ অভিনব সরকার ইহান।

শাকীল আর অমিত ও হাত বাড়িয়ে কুশল বিনিময় করলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনারা ট্যুর এ এসেছেন?
_ হুমম
_ সবাই কি বন্ধু?
_ হ্যাঁ , বন্ধু , বন্ধু দের বউ / হাসবেন্ড, ভাই , বোন কিংবা লাভ কাপল সবাই আছি।

অভিনব ঝরা হাসলো। ছেলে তিনটে চকচকে চোখে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। অভিনবর সাথে কথা বলতে পেরে যেন ওরা গর্বিত।

অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আমরা ও ট্যুর এই এসেছি।কিন্তু ট্যুর কোম্পানি ফ্রর্ট, টাকা নিয়ে লাপাত্তা। তো সেই কারনে এখন আমরা ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম না। যদি কোনো ভাবে আপনারা হেল্প করতেন , আই মিন যদি আপানদের সমস্যা না হয় তো।

ছেলে তিনটে বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। শাকীল বলল
_ আপনারা কয়জন?

_ দুজন।

_ আচ্ছা তাহলে তো যেতে পারবেন। আমাদের একটা কেবিন খালি আছে।

অভিনব প্রশস্ত হাসলো। পরক্ষণেই মুখ টা খানিক টা চুপসে গেল। এখানে যেহেতু সবাই কাপল তাই ঝিলের জন্য আলাদা ব্যবস্থা চাইতে ও পারবে না। কিন্তু ঝিল কি ওর সাথে এক কেবিনে থাকতে রাজি হবে?

মাহের অভিনব কে উদ্দেশ্যে করে বলল
_ অভিনব আপনি কি কিছু ভাবছেন?

_ নাহহ এক্সচুয়ালি আমার সাথে একটা মেয়ে যাচ্ছে তো তাই আর কি।

মাহের লম্বা করে হাসলো। তারপর বলল
_ চিল ব্রো , শেয়ার তো নিশ্চয়ই শুধু কেবিন ই হবে বেড তো নয়।

অভিনব ভদ্রতার খাতিরে হালকা হাসলো। এরা তো আর জানে না ঝিল ওর জি এফ নয়।

অভিনব ঝিলের কাছে গিয়ে বলল
_ ম্যানেজ করতে পেরেছি।

ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ রিয়েলি? তার মানে আমরা সুন্দরবন যাচ্ছি।

_ ঝিল একটা সমস্যা আছে।

ঝিল ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ কি? আমরা কি যেতে পারবো না আজ ?

_ নাহহ নাহ যেতে পারবো। তবে

অভিনবর অস্বস্তি হচ্ছে কি করে বলবে এটা তাছাড়া ঝিল ই বা কি রিয়েক্ট করবে?

_ কোনো সমস্যা। আচ্ছা আপনি ব্যস্ত হবেন না সমস্যা নেই আমরা ফিরে যাই চলুন।

_ আমাদের কেবিন শেয়ার করে থাকতে হবে।

ঝিল ভ্রু কুঁচকালো। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ কেবিনে দুটো বেড আছে হয়তো তবে আপনি কি

_ ইটস ওকে। আমার কোনো অসুবিধা নেই।

অভিনব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মেয়েটা যেভাবে সন্দেহ করে সেই দিক থেকে এক কথাতেই রাজি হয়ে যাবে তা ওহ ভাবতে পারে নি।
ইমপ্রেসিব

_ হে ব্রো । হারি আপ , কিছু ফরমালিটিস আছে।

অভিনব পেছন ঘুরে বলল
_ আসছি জাস্ট আ মিনিট। ঝিল চলুন আমাদের যেতে হবে। না হলে লেট হয়ে যাবে। বাই দ্যা ওয়ে আমাদের তিন রাত পাঁচ দিনের ট্যুর এটা।

ঝিল খোঁস মেজাজে বলল
_ তাহলে তো ভালোই হয়েছে ঐ টা তে তিন দিনের ছিলো।

অভিনব মৃদু হেসে আগাতে লাগলো। ঝিল বেশ খুশি আজ। অবশেষে সুন্দরবন যেতে পারবে ওহহ।

অভিনব সবার সাথে কথা বলছে। ঝিলের সাথে দুটো মেয়ে লেপ্টে আছে। ঝিল কে বেশ ভালো লেগেছে ওদের। ঝিল একটু পর পর ই খিল খিল করে হাঁসছে। অভিনব এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। অভিনব ঝিল আর ওর পরিচয় সহ টাকা সব কিছু জমা দিয়ে দিলো।ওরা সবাই যেহেতু ফ্রেন্ড সার্কেল তাই ট্যুর টা একটু বেশি ই মজার হবে। অভিনব সবার সাথে সহজ হয়ে গেল। ওরা তিনজন ই অভিনবর থেকে ছোট তাই তুমি করেই বলা শুরু করলো। অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ অমিত দুটো আস্ত খাসি নিয়ে নাও।

_ আস্ত খাসি দিয়ে কি হবে?

_ এটা দিয়ে বারবিকিউ করবো। যেহেতু কসাই মামা আমাদের সাথেই যাচ্ছেন তাই তাজা খাসি ই নিয়ে নাও।
তড়তাজা বারবিকিউ করবো। শাকীল লম্বা হেসে বলল
_ কি আইডিয়া ব্রো। আমাদের ট্যুর তোমার জন্য ই স্পেশাল হতে চলেছে।

অভিনব হালকা হেসে সবাই কে সাহায্য করতে লাগলো। ওহহ একজন খাঁটি ভ্রমনপ্রেমিক হওয়াতে ট্যুর সম্পর্কে ইউনিক আইডিয়া আছে।

ঝিল কথার ফাঁকে ফাঁকে আসে পাশে তাকাচ্ছে।
অভিনব কে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।
সকাল নয়টা বেজে গেছে কারো ই নাস্তা করা হয় নি।
ঝিলের বেশ খিদে পেয়েছে তাই ব্যাগ থেকে সফট কেক বের করে খেতে লাগলো। আর্ধেক টা খাওয়া হতেই অভিনব এসে বলল
_ আরে আপনি দেখি এখনি খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ঝিল আরেক টা পিস কেকে কামড় বসিয়ে বলল
_ আর এক পিস আছে এটা আপনি খেয়ে নিন।

অভিনব কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না। কেক টা নিয়ে খেতে খেতে বলল
_ এই দু ইঞ্চি ওয়ালা কেক কোথায় পেলেন। এই রকম কুড়ি পিস খেলে ও তো পেট ভরবে না।

_ আমি ঢাকা থেকে চকলেট হাবি জাবি প্যাক করে এনেছি। আমার ছোট ছোট খিদে পায় তাই।

অভিনব থতমত খেয়ে বলল
_ ছোট ছোট খিদে মানে?

_ মানে হয় না দু ঘন্টা ধরে লাঞ্চ করেছি। কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছে করছে ঐ রকম খিদের জন্য আর কি।

অভিনব উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। ঝিল লোলুপ দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।অভিনবর হাসি টা অসাধারন। অভিনব যখন হাসে ওর ভ্রু দুটো সামান্য বেঁকে যায়। আর তখন ওর মুখে আলাদা একটা ভাব চলে আসে।
হঠাৎ ই ঝিলের মনে হলো অভিনব এতো ফর্সা না হয়ে উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন হলে ভালো হতো। কেন মনে হলো ওহ সেটা জানে না। অভিনব ঝিলের হাতে তিনটে দু লিটারের মিনারেল ওয়াটার বোতল ধরিয়ে দিলো।
ঝিল বোতল গুলো ধরে বলল
_ এতো ভারী কেন?
_ 6000 মি:লি ওয়াটার একটু ভারী তো হবেই।
_ এই এতো পানি দিয়ে কি হবে?
_ খাবেন। আমি আর ও পাঁচ টা বোতল নিয়ে নিয়েছি।

_ কেন এরা খাওয়ার জন্য পানি দেয় না নাকি?

ঝিলের কথাতে অভিনব হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। ঝিলের এই বাচ্চামো কথা তে অভিনবর মাথা খোলসা হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ পানির ব্যবস্থা অবশ্যই আছে। তবে আমি সবাই কে পার্সোনালি এক্সট্রা পানি নিতে বলেছি। যেহেতু আমরা সাধারনের থেকে বেশি সময়ের জন্য যাচ্ছি তাই আমাদের বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে।

_ ওহহহ। আচ্ছা আমরা বাঘ দেখতে পাবো ?

_ সেটা তো বনে গেলেই বুঝতে পারবো।তাড়াতাড়ি আসুন

ঝিল আর অভিনব ঘাটে চলে আসলো। ঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে উঠা যায় না। তাই সবাই ঘাট থেকে বোর্ট এ চড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা বিশাল ট্রাভেল লঞ্চের সামনে বোর্ট এসে থামলো। সবাই একে একে বোর্ট থেকে লঞ্চে যেতে লাগলো। অভিনব লঞ্চে উঠে দেখলো ঝিল লঞ্চে আসতে ভয় পাচ্ছে। অভিনব হাত বাড়িয়ে ঝিল কে লঞ্চে তুলে নিলো। ঝিল মৃদু হেসে কৃতজ্ঞতার সুরে বলল
_ থ্যাংকস।

প্রতি উত্তরে অভিনব অধরে হাসি ফোটালো মাত্র।
সবাই কে নাম অনুযায়ী কেবিনের চাবি দেওয়া হলো।
তার আগে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলো। ট্রাভেলার নির্দেশক মাইক হাতে দাড়িয়ে বলা শুরু করলেন

” ধন্যবাদ সবাই কে। আমরা সবাই জানি আমরা কোথায় যাচ্ছি। তবে প্রায় ই জেনে ও না জানার মতো অনেক কান্ড করে বসি। মনে রাখবেন আপনি পানি পথে ভ্রমন করছেন। আর যেহেতু আমরা তিন রাত পাঁচ দিনের ট্যুর এ যাচ্ছি তাই আমাদের সবাই কে একে অপরের সহযোগিতা করতে হবে। কেউ লঞ্চের কর্নারে গিয়ে দাঁড়াবেন না। যারা সাঁতার জানেন না তারা তো একদম ই নয়। আর হ্যাঁ আপনারা সবাই বন্ধু তাই সদআচারনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া লাগবে না নিশ্চয়ই। সবাই আমাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। পরিশেষে আমরা এক সুন্দর সময় কাটাতে যাচ্ছি
হ্যাপি জার্নি টু অল ( অলসো অল রিডার্স )
আশা করি আমরা এক সুন্দর ভ্রমনের সাক্ষী হবো।

লঞ্চ টা বেশ বিলাসবহুল। অভিনব আর ঝিল নিজেদের কেবিনে চলে আসলো।কিন্তু কেবিনে এসে দেখলো দুটো সিঙ্গেল বেড নেই। ডাবল সিটের এক টা বেড। অভিনব মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রইলো।ঝিল কিছুক্ষণ ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ ইটস ওকে। আমার বেড শেয়ার করতে অসুবিধা নেই।

অভিনব ও আর কিছু বলল না। কেবিন টা মোটামুটি আকারের। একটা বেড আর কাবাডের মতো করে এটার্চ করা রেক।আর সামনে খানিক টা খোলা জায়গা আর একটা জানালা। যেটা দিয়ে সুন্দর করে খোলা পৃথিবী দেখা যাবে। সাথে ছোট একটা ওয়াসরুম। অভিনব আর ঝিল যে যার জিনিসপত্র রেকে রেখে দিলো। অভিনব টাইম দেখে বলল
_ নাস্তা করতে যাবো আসুন।

ঝিল আর অভিনব নাস্তা করতে চলে গেল। নাস্তা তে রুটি, মাংস ভাজি আর জুস দেওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে যে যার কেবিনে চলে গেল।
অভিনব ফোন চার্জ দিতে দিতে বলল
_ ফোনের চার্জ ফুল করে রাখুন। আর যাদের যাদের সাথে কথা বলার কথা বলুন। আপনি কিন্তু নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে যাচ্ছেন। কমপক্ষে 24 ঘন্টা সম্পূর্ন নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।

ঝিলের মসৃন কপাল টাতে ছোট ছোট ভাঁজ পরলো।
অভিনব ফোন হাতে ব্যস্ত। ঝিল ফোঁস করে দম ফেলে আহনাফ কে আর রোহন কে কল করলো। তারপর মৌনতার সাথে বেশ অনেকক্ষণ কথা বলল।মৌনতা বেশ এক্সাইটেড এখন। ঝিলের কাছে যাত্রার এই টুকু শুনেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরছে। অবশ্য অভিনবর বিষয় টি স্কিপ করে নিল। ঝিল বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলো তবে। অভিনব ফোন স্ক্রল করতে করতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

** গল্পের জন্য আমি সুন্দরবন ট্যুর এর খরচ এড করি নি। আর ওদের ট্যুর টা ,সাধারন প্যাকেজের হচ্ছে না।
তবে যতো বেশি বিলাসবহুল লঞ্চ আর সুবিধা ততো বেশি টাকা লাগবে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here