#নীলের_পরি (৩৩)
৩ দিন আগের কথা। নীলের আর্জেন্ট কল আসায় নীলের মুখে বেশ খানিকটা প্রাপ্তির রেখা জেগে উঠল। হয়ত এমন কিছু যার জন্য নীল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। পরি নীলের দিকে তাকিয়ে ভাবছে মানুষটা একটা ফোন কলে এত খুশি কেন? নীল পরির দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিল। মিষ্টি হেসে বলল,”পরি আমাকে একটা জায়গায় যেতে হবে। ফিরতে কয়েকদিন লাগতে পারে। আর নেটওয়ার্ক না থাকলে হয়ত ফোন দিতে পারব না। তুমি চিন্তা কোরো না।”
নীলের যাওয়ার কথা শুনে পরির চোখ বেয়ে আপনা আপনি স্রোত নেমে গেল। নীল স্তব্ধ হয়ে পরির দিকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটা কেন যে একটু তেই কেঁদে ফেলে। যদি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদের কে আলাদা হয়ে যেতে হয় তখন পরি কি করে থাকবে? পরি যে শেষ হয়ে যাবে।
পরির শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই নীলের শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠল। এ কি ভাবল সে? পরি কেন শেষ হবে? না এমন টা হতে পারে না। পরির কিছু হলে নীল নামের এই মানুষ টা নিজেকে শেষ করে দিবে। নীলের বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগল। মন টা পু ড় ছে খুব। কিন্তু পরির সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না কিছুতেই। নীল কোনো মতে নিজেকে সামলে নিল। তারপর মুচকি হেসে পরি কে জড়িয়ে বলল,”এই বোকা মেয়ে আমি তো কয়েকটা দিনের জন্য যাচ্ছি। এমন কাঁদলে আমি কি ঠিক ঠাক যেতে পারব?
আল্লাহ না করুক যদি কিছু একটা হয়ে যায়।”
নীলের এই কথাটা শুনে পরি আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে কেঁদে উঠল। প্রিয় পুরুষটিকে দু হাতে আঁকড়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলল,”আপনি এত বাজে কেন? কেন এইসব বাজে কথা বলেন? আমাকে কাঁদিয়ে মজা পান আপনি?”
পরির কথা শুনে নীল মুচকি হাসল। মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”তাহলে তুমি কান্না করছো কেন?
তুমি কাঁদলে আমি বুঝি মন দিয়ে কাজ করতে পারব?আমার কষ্ট হবে না?”
নীলের কথাতে পরি চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছে নিল।
তারপর মলিন হেসে বলল,”আর কাঁদব না আমি। আপনি আর ঐ সব বাজে কথা বলবেন না।”
নীল মুচকি হেসে বলল,”ওকে বিবি জান বলব না। হ্যাপি?”
এবার পরি ফিক করে হেসে বলল,”হুম হ্যাপি।”
নীল মুচকি হেসে পরির দিকি স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
নীল কে এভাবে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে পরি অপ্রস্তুত বোধ করছে। কাঁচুমাচু করছে যা নীলের চোখ এড়াতে পারে নি। নীলের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। নীল ঠোঁটের কোণে ডেবিল মার্কা হাসি ঝুলিয়ে পরির দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বলল,”পরি আমার না এখন, এই মুহূর্তে, তোমাকে….”
নীলের এমন খাপছাড়া কথা শুনে আর কাহিনী তে পরির শুকনো ঢোক গিলে নিল। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”কি বলছেন?”
নীল পরির আরো কাছে এসে বলল,”কেন তুমি বুঝতে পারছো না আমি কি বলতে চাচ্ছি? আমি তোমাকে,এই মুহূর্তে….”
পরি শুকনো ঢোক গিলে বলল,”কি বলছেন কি?”
নীল পরির একদম কাছে এসে ডেবিল হাসি দিতেই পরি চোখ খিচে বন্ধ করে নিল। পরির এমন কান্ডে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে যেন। নীলের হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে পরি চোখ খুলে নিল। নীলকে খাম খেয়ালি ভাবে হাসতে দেখে পরি চোখ মুখ কুঁচকে নিল। নীল হাসতে হাসতে বলল,”তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন?”
পরি গোমড়া মুখ করে বলল,”আপনি ই তো…”
পরি কে বলতে না দিয়ে নীল বলল,”আমি তো বলছিলাম এই মুহূর্তে তোমাকে দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে তুমি স্টার জলসার নায়িকা গুলো কে ও হার মানাবে। যখন তখন কান্না করে বসছো। ভাবছি ফিডার কিনে দিতে হবে।”
এই টুকু বলেই নীল হাসতে লাগল। পরি কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,”ফাজিল,আমি আপনার সাথে আর কথাই বলব না।”
পরি কে রাগ করে উঠে যেতে দেখে নীল পরির হাত ধরে নিল। টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,”আমার সাথে কথা বলবে না? বললেই হলো? একদম বেঁধে রেখে দিব।
নিজের অন্তরে মিশিয়ে নিব।”
নীলের কথাতে পরির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। নীল কে জড়িয়ে বলল,”আমি ও আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।
শেষ হয়ে যাব,একদম শেষ যাব।”
নীল মুচকি হেসে বলল,”পাগলি মেয়ে আমাকে ছাড়তে বলেছে কে?.আমরা তো একে অন্যের অস্তিত্ব, অস্তিত্ব ছাড়া কি কেউ থাকতে পারে? পারে না। তো আমরা ও থাকতে পারব না। আর দেখে নিও আল্লাহ তায়লা ও আমাদের এক সঙ্গে বেঁধে রাখবেন। আমরা ইহকাল পরকাল দু জনমেই একে অন্যের হয়ে থাকব।”
কথা গুলো শুনে নীল কে আরো শক্ত হাতে জড়িয়ে নিল পরি। এই বুকের মাঝেই পরির সমস্ত সুখ নিহীত। দুজনের ই প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের এক সাথেই বেঁধে রাখেন।
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
গল্প গুলো পড়েছেন?
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/313727227854845/?app=fbl