#নীলের_পরি (৩৫)
দুদিন পরের কথা। বিকাল পাঁচটা বাজে। নীল রেডি হচ্ছে।পরি দরজার কাছে হেলান দিয়ে নীল কে দেখছে। এই অসময়ে লোক টা যাচ্ছে কোথায়? তা ও আবার অসুস্থ শরীর নিয়ে। নীল আয়নাতে পরি কে দেখে মুচকি হাসল। সেদিন আবারো জ্ঞান হারিয়েছিল মেয়েটি। নীলের কিছু হলেই যেন অচেতন হয়ে পড়ে সে। চুল গুলো সেট করে পেছন ঘুরে তাকাল নীল। কিন্তু পরির কোনো ধ্যান নেই। নিজের ভাবনাতে মগ্ন সে। নীল পরির কাছে গিয়ে বাম হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে বলল,”ম্যাডাম এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন?”
পরি খানিকটা চমকে বলল,”আপনার হাতের ব্যাথা তো এখনো আছে। এই শরীর নিয়ে এতো সেজে গুঁজে কোথায় যাচ্ছেন?”
নীল ব্লেজারের হাতা ঠিক করতে করতে বলল,”শ্বশুরবাড়ি।”
নীলের কথাতে পরির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
শুকনো ঢোক গিলে নিল সে।
“মানে?”
নীল হাসল। তারপর পরির দুই বাহুতে হাত রেখে বলল
“মানে কিছুই না মিসেস। এই দুটো দিন আপনি আমার যে কেয়ার করেছেন তার ফলে আমি পুরো ফিট। এখন ম্যাডাম আপনি একটু রেস্ট নিন। আমার আসতে রাত হবে। এসে যেন না শুনি তুমি রেস্ট কর নি।”
পরি গোমড়া মুখ করে বলল,”আরে তা না হয় নিব। কিন্তু আপনি এখন যাচ্ছেন কোথায়? সঠিক করে বলেন তো।”
নীল বেড থেকে ওয়ালেট টা পকেটে পুরে বলল,”সারপ্রাইজ ম্যাডাম।”
পরি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে। মানুষটা অসুস্থ শরীরে কি এমন কাজে যাচ্ছে?
“আপনার মতলব টা কি বলুন তো?”
নীল ভ্রু কুঁচকে বলল,”কি ভাবছ তোমার সতীন আনতে যাচ্ছি?”
পরির চোখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠল। মেয়েটি সমস্ত মজা সয়ে নিলেও কেন যেন এ কথাটা সহ্য হয় না। নীল পরি কে শান্ত করার জন্য বলল,”আরে বউ এভাবে রেগে গেলে তো আমি এখনি অক্কা যাব।”
পরি অভিমানী কণ্ঠটা এবার বেজে উঠল।
“আপনার সাথে কোনো কথা বলব না।”
পরি কে অভিমান করতে দেখে নীলের খুব খারাপ লাগল।
আজ ই হয়ত নীল পরির শেষ দিন হতে পারে।পরি কে কষ্ট দিতে চায় না নীল। নীল নিজের আবেগ যথাসম্ভব লুকিয়ে পরির দিকে এগিয়ে গেল। পরির দু গালে হাত রেখে বলল
“এই পিচ্চি, এভাবে মন খারাপ করে না। তুমি তো আমার পৃথিবীর একমাত্র অক্সিজেন। তুমি কষ্ট পেলে যে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।”
পরির অভিমান গুলো গলে গিয়ে চোখের কোণে পানি সৃষ্টি করল। এর অশ্রু সিক্ত মুখটা হাতের মুঠো নিয়ে নীল। তার পর একটু ধমকের স্বরে বলল,”এই একদম না। চোখের কোণে পানি দেখতে চাই না। ঠোঁটের কোণে হাসি দেখতে চাই।”
নীলের কথাতে মুহূর্তেই পরির ঠোঁটের কোণে প্রশস্ত এক হাসি চলে এল। ওর হাসি মাখা মুখটা বড়ো সুন্দর দেখায়। মেয়েটিকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল নীল। ওমন সময় দরজার কাছে এসে থমকে গেছে দুটো মানুষ। দুজোড়া চোখ একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। হঠাৎ করেই দুজন ই বলে উঠল ‘এই আমরা কিছু দেখি নি।’
অনিক আর হাফসার কণ্ঠ পেয়ে নীল আর পরি একজন আরেকজন কে ছেড়ে দিয়েছে। পরি বেশ লজ্জা পেয়েছে তাই পেছন ঘুরে রইল। নীল বিরক্তিকর স্বরে বলল,”তোরা আসার আর সময় পেলি না?”
হাফসা ভেংচি কেটে বলল,”আমরা কি করে জানব তোমরা রোমান্স এ ব্যস্ত।”
নীল কে কিছু বলতে না দিয়েই অনিক বলল,”সেটাই তো।
আর তাছাড়া দরজা খুলে রেখে রোমান্স করলে তো যে কেউ এসে পড়বেই।”
নীল চোখ ছোট ছোট করে বলল,”এই যে মিস্টার অনিক আর মিস হাফসা। আপনারা যখন প্রেম করেন আমরা কি তখন দেখতে যাই? তো তোদের ও উচিত না, এভাবে আসা।”
নীলের কথাতে পরি ঘুরে তাকাল। অনিক আর হাফসা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
নীল ডেভিল হাসি দিয়ে বলল,”কি ভাবেন আমি কিছু জানি না? এত সহজ?”
জবাবে মেকি হাসি দিল অনিক। এদিকে হাফসা বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে। কয়েক সেকেন্ড পর ই হাফসা ভান শুরু করল।
“হ্যাঁ আম্মু এখনি আসছি।”
তারপর অনিক ও একই কাজে নামল। টাইম দেখে বলল
“আমি তো ভুলেই গেছি আমার মিটিং আছে।”
ওদের উদ্ভট কান্ডে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
দুজন ই অপ্রস্তুত ছিল। তাই ব্যস্ততা দেখিয়ে পালিয়ে গেল।
নীলের হাসি দেখে পরি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। কি সুন্দর এ হাসি। অথচ এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না মানুষটাকে পেয়ে গেছে সে। তার শত সাধনার ভালোবাসা নীল।
সন্ধ্যা ছয় টা বাজে। শীত কাল হওয়াতে সূর্য বেশ কিছুক্ষণ আগেই অস্ত গিয়েছে। হাফসা ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর অনিক ছাদের কোণে রাখা টেবিলের উপর হাত গুজে বসে আছে। সে তার উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা করছে আর হাফসা কি উত্তর দিবে তা ভাবছে। নীলের রুম থেকে হাফসা ছুটে সোজা ছাদে চলে আসে। তার মাথা কাজ করছে না। নীল কি বলল?
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হাফসা। পরন্তু বিকেল। রোদ নেই। থেকে থেকে বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ হাফসা দাঁড়িয়ে রইল। তারপর পেছন ঘুরতেই দেখতে পেল অনিক ও দাঁড়িয়ে আছে। অনিক কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাফসা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। হাফসা খানিকটা তুতলিয়ে বলল,
“আপনি?”
অনিক মৃদু হাসল। মেয়েটির ভয়ার্ত, অপস্তুত মুখ খানা বড়ো সৌন্দর্য দেখায়।
“ভাবলাম একটু ছাদে আসি । কিন্তু এসে দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছ। কিছু একটা ভাবছ তাই আর ডিস্টার্ব করি নি।”
হাফসা ছোট করে উত্তর দিল।
“ও।”
হাফসা একটু পাশে তাকাতেই দেখল দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাখা গিটার। হাফসা মুখ কুঁচকে বলল
“গিটার!”
অনিক মৃদু হাসল। তারপর বলল,”হুম। আমি ই এনেছি।
তুমি দাঁড়িয়ে আছ দেখে ভাবলাম গিটার টা নিয়ে আসি। তোমার ভাবনা শেষ হলে না হয় একটা গান শুনিয়ে দিব।
তুমি তো সেদিন প্রুফ চেয়েছিলে।”
হাফসা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম এতটা লজ্জা পাচ্ছে সে। এদিকে অনিক মুচকি হেসে গিটার নিয়ে আসল। গিটার এ টুং টাং আওয়াজ করে তারপর সুর তুলল
Oh woooah, oh
Woooooah , oh
Wooooah , oh
You know you love
me, I know you care ,
Just shout whenever
And I’ll be there
You are my love,
You are my heart
And we will never
ever ever be apart
Are we an item?
Girl quit playing,
We’re just friends,
What are you saying
Said there’s another,
Look right in my eyes,
My fast love broke my
heart for the fast time
And I was like
Baby , baby , baby oooh
Like baby , baby, baby noo
Like baby , baby, baby ooh
Thought you’d always be mine , mine
Baby , baby , baby oooh
Like baby , baby, baby noo
Like baby , baby, baby ooh
Thought you’d always be mine , mine
Oh, for you I would have
Done whatever
and I just can’t believe we aint together
and I wanna play it cool but I ‘m losing you
I ‘ll buy you anything, I ‘ll buy you any ring,
And I ‘m in pieces baby fix me and you shake me till’
গান গাওয়া শেষ হতেই অনিক এক বক্স চকলেট এগিয়ে দিয়ে হাফসা কে বলল,”উত্তর টা দিয়ে দিও। আমি অপেক্ষা করব। সময় নাও।”
অনিকের দিকে তাকাতে পারছে না হাফসা। পড়ন্ত বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে গেলে ও হাফসা উত্তর দিতে পারছে না।
দেখতে দেখতে এশার আজান ও পড়ে গেল। হাফসা ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রইল। আজান শেষ হতেই হাফসা অনিকের কাছে এসে দাঁড়াল। তার মুখ টা নত করা।
“আই অলসো লাভ ইউ।”
এই কয়েক শব্দ উচ্চারণ করে হাফসা আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়াল না। চকলেট বক্স হাতে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নেমে গেল। হাফসার বলা কথাটা বুঝতে অনিকের কিছুক্ষণ সময় লাগল। যখন পুরোপুরি ভাবে মাথায় ঢুকে গেল তখন অনিকের ঠোঁটের কোণের হাসি প্রশস্ত হয়ে গেল। অনিক মৃদু স্বরে বলতে লাগল।
“ইয়াহ ইউ আর মাইন। অনলি মাইন। মাই কুইন,আই লাভ ইউ।”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
দেখে আসুন
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/316189427608625/?app=fbl