নীলের_পরি (৪০)

0
8

#নীলের_পরি (৪০)

এত খাবার খেতে খেতে নীলের অবস্থা খারাপ। বাবার জন্মে এত খাবার এক সাথে খেয়েছে বলে নীলের মনে পড়ছে না।
নীলদের বনানী তে পৌছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। সকালে নাস্তা করার পর আর খাওয়া হয় নি ওদের। তাই ক্ষিধে টা বেশ ভালো ই পেয়েছিল কিন্তু আটত্রিশ ভোজন খাওয়ার মতো রাক্ষুসে ক্ষিধে নীলের পায় নি বোধহয়। লোকে বলে শ্বশুর বাড়িতে নাকি জামাই আদর করা হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে জামাই আদর কে নীলের কাছে রাক্ষুসে আদর বলে মনে হচ্ছে। পরিদের বংশের নিয়ম নতুন জামাই কে আটত্রিশ ভোজন করাতে হবে। নীল মনে প্রানে ভাবছে কে এই আটত্রিশ ভোজন করার মতো রাক্ষুসে নিয়ম করন করেছিল! সেই লোকটি কে কয়েক শ রকমের গা লি দেওয়া হলে ও কম হয়ে যাবে। কেন রে তুই রাক্ষস বলে কি আমি ও রাক্ষস নাকি। তুই না হয় রাক্ষুসে খাবার খেতে পারিস কিন্তু আমার মতো অবলা প্রাণীর কথা টা ও তো ভাবা উচিত ছিল তাই না। নীল মনে মনে ঐ ব্যাক্তি কে কয়েক রকমের গা লি ও দিয়ে দিল। নীল পরির দিকে অসহায় দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। কিন্তু পরি নীল কে পাত্তাই দিচ্ছে না। উল্টো মায়ের সাথে মিলে আটত্রিশ ভোজন সম্পূর্ণ করানোর জোড়ালো চেষ্টা করছে। নীল এই প্রথম এতটা অসহায় বোধ করছে। তার নিজের বউ ও ইজ পাল্টি খেল! নীলের পেটে আর একটু জায়গা আছে কি না সন্দেহ।
কিন্তু এখনো আট পদ খাওয়া বাকি। নীলের মাথা ঘুরছে। খাবার গলা অবধি এসে পড়েছে। আরে এত খাবার একসাথে খাওয়া যায় নাকি! নীলের এমন করুণ কান্ডে আমান খিলখিল করে হাসছে। নীল ভ্রু কুঁচকে বলল,”শালা বাবু চিন্তা কোরো না। তোমরা তো আটত্রিশ ভোজন করাচ্ছ।তোমাকে এমন জায়গায় বিয়ে দিবে যেখানে আটান্ন ভোজন করানো হবে।”

আমান হাসতে হাসতে বলল,”আরে ভাইয়া আগে নিজে তো এই আটত্রিশ ভোজন এর থেকে বাঁচুন।”

নীল অসহায় হয়ে ভাবছে, তুলে নিয়ে বিয়ে করার জন্য এত বড় শাস্তি! পরি নীলের কান্ডে এবার না হেসে পারল না।
এতক্ষণ হাসি চেপে রাখতে পারলে ও এখন আর তা সম্ভব হয় নি। পরি রুম কাঁপিয়ে হাসছে। নীলের এই রাক্ষুসে ভোজনের অসহায়ত্ব ছাপিয়ে ও ঠোটের কোণে প্রশস্ত এক হাসি চলে এল। পরি কত দিন পর মন খুলে হাসছে। বেশ কিছুক্ষণ নীল পরির হাসি উপভোগ করল।

পরি হাসতে হাসতে চেয়ারে বসে পড়েছে। নীল ভ্রু কুঁচকে বলল,”এভাবে না হেসে পারলে আমায় সাহায্য কর।”

পরি হাসি থামিয়ে মুখ গোমড়া করে বলল,”আমি কি করে করব? আর আমার ইচ্ছে ও নেই আপনাকে সাহায্য করার।”

পরির কথাতে নীল আহত হলো। পরক্ষণেই বাঁকা হেসে মৃদু স্বরে বলল,”ওকে সাহায্য করা লাগবে না। তবে আমি ও আজ ছাড়ব না কিন্তু,পুরো মাস খানেক জালিয়ে খাব। পরে বোলো না আমি তোমাকে বলি নি কিংবা ছাড় দেই নি।”

নীলের কথাতে পরি থতমত খেয়ে গেল। এই নীলের মাথাতেই এই রকম ফাজলামি বুদ্ধি ঘুরঘুর করে। পরি শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল,”না না আমি এখন ই আপনাকে সাহায্য করছি।”

নীল মৃদু হেসে বলল,”ভালো কথা শুনতে চাও না তুমি তাই আমাকে এই রকম পরিস্থিতি ক্রিয়েট করতে হয়।”

পরি বিরক্তি মাখা দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল,”যত্তসব।”

নীল মৃদু হেসে বলল,”উহু,আমি নীল।”

পরি চোখ রাঙিয়ে বলল,”আজববব তো।”

নীল হাসতে হাসতে বলল,”আজবের বউ তুমি।”

নীলের কথাতে পরি ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইল। নীল আজকাল বেশ দুষ্টু হয়ে গেছে। আগে তো পরি দুষ্টুমি করত আর এখন নীল তা শুধে আসলে পুষিয়ে নিচ্ছে।

পরি চটজলদি বুদ্ধি আটতে লাগল। মুহূর্তে ই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,”নিয়ম রক্ষার্থে আপনি এক চামচ করে নিন তাহলেই তো হয়।”

পরির কথাতে নীল স্বস্তি পেল। নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
“উফফ বাঁচালে। এই আটত্রিশ ভোজনের চক্করে সাধারণ বুদ্ধি ও হারিয়ে ফেলেছিলাম। এর জন্য কালকে ট্রিট দিব তোমায়।”

পরি চকচকে চোখ নিয়ে বলল,”সত্যি?”

নীল মুচকি হেসে বলল,”100% সত্যি।”

পরি অতিরিক্ত খুশিতে নীলের গলা জড়িয়ে ধরল। ঘটনা টা এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে নীল সহ নিশা আর আমান ও থতমত খেয়ে গেল। যখন পরি বুঝতে পারল কি করেছে তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল। ইস ছোট ভাই বোনদের সামনে এ কি কাজ করে বসল পরি! পরি কে আরো ও লজ্জা দেওয়ার জন্য নীল গলা ঝেরে বলল,”পরি তুমি এটা।

এই টুকু বলতেই পরি বলে উঠল,”আম্মু আমাকে ডাকছে আমি যাই।”

কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে পরি স্থান ত্যাগ করে নিল।

পরির যাওয়ার দিকে নীল , নিশা আর আমান চেয়ে রইল।
পরি চলে যেতেই নীল সহ আমান আর নিশা অট্টহাসি তে ফেটে পড়ল। নীল ভাবছে বউ এর সাথে সাথে শ্যালক আর শ্যালিকা দুটো ও সেই রকমের ফা জি ল।

গত দু ঘন্টা ধরে নীল আর পরি কে গেস্ট রুমে বসিয়ে রেখেছে আমান আর নিশা। দু ঘন্টা ধরে ঘর বন্দি ওরা। নীল পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে নিল এগারোটা বাজে।
নিশা আর আমানের উপর পরি বেশ বিরক্ত হচ্ছে। একে তো এই রুমটাতে ব্যালকনি ও নেই। জানালা টা ও খোলা মুশকিল কারণ অপর পাশের বিল্ডিংয়ের জানালা টা একদম বরাবরজানালা খুলে বাইরে তাকানোর ও কোনো স্কোপ নেই। পরি ফোন বের করে ফেসবুক লগ ইন করে নিল।গত দশদিনে ফেসবুক নামক আইডি তো দূরে থাক হোয়াটস আপ, ইমো , টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম কোনো কিছুই ইউস করে নি। ফেসবুক ওপেন করতেই কয়েক শ ম্যাসেজ ভেসে উঠল। পরির চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। নীল সোফাতে বসেই ফোন স্ক্রল করছিল। পরি কে এমন হা হয়ে তাকাতে দেখে নীল পরির কাছে এগিয়ে আসে। নীল পরির কাছে এসে পরিকে হালকা ঝাঁকিয়ে বলল,”পরি আর ইউ ওকে?”

পরি কিছু না বলে ফোন টা নীলের কাছে এগিয়ে দিল।
নীল ভ্রু কুঁচকে ফোন টা হাতে নিল। ম্যাসেজ অপশনে শত ম্যাসেজর লাইন দেখে নীল ও বেশ চমকাল। নীল একে একে ম্যাসেজ গুলো ওপেন করল। ম্যাসেজ গুলো পড়তে পড়তে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। এত হেসেছে যে নীলের পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। এক চতুর্থাংশ ম্যাসেজ ই পরির বান্ধবীদের ম্যাসেজ। ম্যাসেজ গুলো এমন

“এই পরি বিয়ে করে নিলি জানালি ও না। এটা কিন্তু ঠিক না ইয়ার, হানিমুনে একাই মজা নিচ্ছিস? আমাদের কথা ভাবলিও না।”

“জানু দুলাভাই কে নিয়ে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছো। আমাদের ও তো একটা হক আছে তাই না?”

“বইন খালামনি কবে হমু খবর দিছ। তোর বিয়ে আর খালামনি হওয়ার ট্রিট এক সাথেই নিমু।”

“দোস্ত এমনটা কেমনে করলি জিজুর পকেট খালি করার একটা সুযোগ ও দিলি না।”

“বাসর রাতের ফুটেজ পাঠাইস বইন আমাদের ও কাজে লাগবে।”

“সুখে থেকো ভালো থেকো,সারা বছর নিরামিষ ভাব ধইরা তুই ই দেখি কেল্লাফতে করে দিলি।”

“ঐ তোর বরের কোনো ভাই নাই ? ভাই না থাকলে বিয়ে ক্যানসেল। আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে।”

“জীবনটা পুরাই তেজপাতা ভাবলাম আমি আমার বাচ্চা কাচ্চা নিয়া তোর বিয়ে তে আসুম। আর তুই আমার স্বপ্নে পানি ঢেলে দিলি।”

“কিরে হানিমুন ও কমপ্লিট নাকি? জামাই তোর হইলে ও জিজু কিন্তু আমাদের।”

“আমারে একটু বুদ্ধি দিস তো। পুরো সিনেমার মতো পালাব। যদি ঐ বেটা না পালায় তো ওরে ফালায় ওর ভাইরে নিয়া পালাব।”

“মিস পরি আমাদের সাথে অন্যায় করেছেন আপনি। এত বড় শুভ কার্য সম্পূর্ণ করে ফেললি আমাদের জানালি ও না।”

“ঐ বাসর রাতের গল্প শুনাবি। নইলে তোর বরের কাছ থেকে শুনব কিন্তু। তখন দোষ দিতে পারবি না।-

“আমার সারা জীবনের একটাই স্বপ্ন ছিল তোর বিয়ের দিন তোর বর রে নিয়ে পালামো আর তুই এটা কি করলি।
সমস্যা নাই তোর মাইয়ার সাথে আমার পোলার প্রেম করায় দিমু। তারপর তরে না জানাইয়া ছেলে ছেলের বউ নিয়ে চলে আসুম। তখন দেখবি আর জ্বলবি লুচির মতো ফুলবি।”

এমন শত ম্যাসেজ দেখার পর নীলের অবস্থা বেহাল। পরি ও যে কি রকমের ফাজিল তা পরির রিপলে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নীল হাসি থামিয়ে বলল,”তুমি যেমন তোমার বান্ধবীরা ও তেমন।”

পরি চোখ রাঙিয়ে বলল,”এই একদম আমার বান্ধবীদের নিয়ে কথা বলবেন না।”

নীল হাসি চেপে বলল,”ওকে ওকে মিসেস নীল আপনার কথাই রইল।”

পরি ভেংচি কাটতেই নীল বলল,”মিসেস নীল আমার শ্যালিকাদের ম্যাসেজ এ বলে দিন কালকে ওনাদের ও ট্রিট দিব।”

পরি উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে বলল,”রিয়েলি?”

নীল চোখ মে রে বলল,”ইয়াহ বেবি।”

পরি মুখ কুঁচকে ফেলল। “অসভ্য।”

নীল পরির কাছে এসে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল
“হুম তোমারই জন্য।”

পরি নীল কে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,”কি করছেন কি?ছাড়ুন।”

নীল পরির ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল,”উহুম আমার প্রেম করতে ইচ্ছে হচ্ছে তো আমি ছাড়ব না।”

ঘাড়ে নীলের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই পরি জমে গেল। পরির পা দুটো অষাঢ় হয়ে গেল।

হঠাৎ ই দরজা খুলে গেল। নীল আর পরি ছিটকে দূরে সরে গেল। আমান আর নিশা মুখ চেপে হাসছে। পরি নীলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আর নীল বোকা হাসি দিচ্ছে। কি একটা পরিস্থিতি!

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here