ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ #part_24

0
1

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_24

লঞ্চে এসেছে বেশ অনেকক্ষণ। সবাই সাওয়ার নিতে গেলে ও ঝিল এখনো যায় নি। রেলিং ধরে এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। আজ কে মনটা বেশ ফুরফুরে । বোর্টে বলা অভিনবর কথা গুলো এখনো কানে বেজে চলেছে। আচ্ছা ঝিলের মতো কি অভিনবর মনে ও অনুভূতি কাজ করছে ?
নাম না জানা অনুভূতি টা কি একটু একটু করে গাঢ় হচ্ছে ?
নাকি অভিনব শুধু ই তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে । আদৌ কি অভিনবর ছোট ছোট কেয়াল গুলো কে কোনো নাম দেওয়া যায় ? নাকি বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব বোধ ধরা যায়। ঝিলের উত্তর মিললো না। তবু ও মনের গহীনে ঠান্ডা হীম শীতল বাতাস বয়ে চলেছে। মেঘ ছাপিয়ে যেমন রঙধনু উঠে ঠিক তেমনি এক অনুভূতি।
ঝিল জানে না কেন তার এতো সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। খোলা আকাশে ধূসর রঙের প্রজাপতি হয়ে হারাতে চাইছে। আচ্ছা ওহ হারালে অভিনব কি ওকে খুঁজবে ?
নাকি মাহেরার সাথে তলপি তপলা গুটিয়ে সংসার করবে। ঝিল আনমনেই হেসে উঠলো। অভিনব তাকে ধরে বলেছিলো সে অন্য কাউকে স্পর্শ করবে না। অদ্ভুত ভালো লাগায় সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ চমকে গেল। কেন যেন অভিনবর জন্য দু এক লাইন প্রেম বাক্য গাইতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা ওহ কি গাইবে দু এক লাইন ?
মতিষ্কের সাথে কিছু টা স্নায়ুযুদ্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করলো দু এক লাইন গাইবে।
কিন্তু কারো পদশব্দ শুনে হৃদয় বাকানো অনুভূতি গুলো ঠুস করে ভেঙে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
_ কে ?

_ আমি অভিনব।

_ ওহহ। হঠাৎ এখানে চলে আসলেন যে ?

_ কেন আসতে পারি না ?

ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে বলতে উহহু আসতে পারেন না। এই যে আপনি আমার হৃদয় বাঁকানো অনুভূতি গুলো ফিকে করে দিলেন। মনের কোনে জমিয়ে রাখা সুখ টুকু কেড়ে নিলেন। এর জন্য আপনাকে কঠিন তম শাস্তি দেওয়া হবে। সে শাস্তি টা হলো , ঝিলের মন শাস্তি টা খুঁজে পেল না। ফোঁস করে ভারী নিশ্বাস ফেলে বলল
_ না মানে অবশ্য ই আসতে পারেন।

_ আচ্ছা সে যাই হোক। আজ কি প্ল্যান করেছেন ?

_ আমি তো কোনো প্ল্যান করি নি।

_ তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকা হাওয়া গিলছেন কেন ? পেটে কি ক্ষিদে নেই নাকি ?

_ আসলেই তো আমার তো বেশ ক্ষিদে পেয়েছে।

অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো। এই মেয়ের ক্ষিদে পেয়েছে তা ওর ই খেয়াল নেই। কি ভয়ঙ্কর বিষয়। অতি শোকে পাগল হয়ে গেল নাকি ? কিন্তু শোক টা কিসের ?
অভিনবর ভাবনা তে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ঝিল চলে গেল ।
কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল
_ অভিনব আমি সাওয়ার নিতে যাচ্ছি। আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ। ক্ষিদে পেলে পেটে বালিশ চেপে রাখুন।

ঝিলের শেষ কথাটা অভিনবর কানের পাশ দিয়ে গেল। ক্ষিদে পেলে মানুষ সর্বোচ্চ খেতে পারে। তাই বলে পেটে বালিশ ধরে রাখা যায় ?

*

ঝিল সাওয়ার নিয়ে এসে চুল ঝারা দিতেই সমস্ত চুলের পানি গিয়ে পরলো অভিনবর মুখে।
অভিনব বেডে আধসোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো। ঝিল এতো বড় অন্যায় করে ও চুল মুছে যাচ্ছে। অভিনবর হাত থেকে ফোন টা পরে গেল। এক দৃষ্টি তে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। সদ্য সাওয়ার নেওয়া ঝিলের চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পরছে। ঘাড়ের এক অংশ তে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। অভিনবর খুব হিংসে হলো। পানি কনা গুলো কেন ঝিলের গায়ে লেপ্টে আছে ?
এটা মহা অন্যায়। কারন ঝিলের গায়ে লেপ্টে থাকার অধিকার এই পানি কনার নেই। অভিনবর চোখ গেল ঝিলের কোমল অধরের দিকে। সদ্য ভেজা গোলাপের পাপড়ির মতো লাগছে। অভিনবর চিত্ত কেঁপে উঠলো। ভেতর থেকে টান অনুভব করছে। অধিকার বোধ টা খুব করে টানছে। অভিনব লম্বা দম ফেলে বের হতে নিলো। কিন্তু ঝিলের কন্ঠ যেন মাদকতা ছড়িয়ে দিলো।
_ এই যে শুনুন।

ঠিক যেন সদ্য বিবাহিতা নারী তাঁর স্বামী কে ডাকছে। বুকের ভেতর ধিম ধিম আওয়াজ হতে লাগলো। সব কিছু ছাপিয়ে অভিনব এক অন্যায় করে ফেললো। ঝিলের কাছে এসে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কোমল ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিলো। ঝিলের কি হলো তা বলা দায়। ঝিল খামচে ধরলো অভিনব শার্ট। চোখ দুটো আবেশে বন্ধ করে নিলো। অভিনব ও যেন নিজের মাঝে নেই। ঝিল কে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটের দিকে আগালো। হঠাৎ অভিনবর মাথায় আসলো সে কি করতে যাচ্ছে। ঝিল কে ছেড়ে দিয়ে বড় বড় পায়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে অভিনব। একি অন্যায় করে ফেললো ওহ। ঝিল ওকে বিশ্বাস করেছে। আর ওহ কি না , অভিনব আর ভাবতে পারছে না। অজানা আশংকা তে বুক টা ভারী হয়ে আসলো। কেউ যেন একের পর এক পাথর চেপে ধরেছে। অভিনবর চোখ দুটো লাল হয়ে গেল। ভীষন রাগ হতে লাগলো। এখনি ঝিলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে বড় কোনো ঝড় বয়ে যাবে।

ঝিলের ভারী নিশ্বাসের শব্দ কেমন যেন নিস্তব্ধতার সুর তুলে যাচ্ছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। একটু আগের ঘটনা টা মনে হতেই ঝিল লজ্জা পেয়ে গেল।
কিন্তু লজ্জা কেন পাচ্ছে ওহ ? ওর তো উচিত ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে অভিনব কে ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু কেন এমন অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে হিম শীতল করা অনুভূতি। ঝিলের ভাবনার সুতো কাটলো কেবিনের দরজায় খটখট আওয়াজে। ঝিল পেছন ঘুরে তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে রইলো।
অভিনব এসেছে , ঝিল লজ্জা তে নিচু হয়ে রইলো। ওর এই লজ্জা মাখা মুখ কিছুতেই অভিনব কে দেখানো যাবে না।
না হলে সর্বনাশা অনুভূতি গুলো অভিনব ধরে ফেলবে।

_ ঝিল।

অভিনবর আকুতি ভরা ডাক। ঝিলের পিলে চমকে উঠলো। এ ডাক কেন কাছে ডাকছে ?
এ কেমন মাতাল করা অনুভূতি। যার শব্দে হৃদপিন্ড বুক চিরে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।

অভিনব আবার ডাকলো। বেড শিট খামচে ধরলো ঝিল। অভিনব কোমল হাতে ঝিলের হাত স্পর্শ করলো। ঝিলের যেন সম্মোহন জেগে উঠলো। অভিনবর দিকে নেশাক্ত দৃষ্টি তে তাকালো। তবে অভিনবর দৃষ্টি তখন মেঝে তে।
_ আম স্যরি। আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি । আমি জানি না তখন আমার কি হয়েছিলো। আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তখন।

_ অভিনব।

অভিনব মাথা উঁচু করে তাকালো। অভিনবর দৃষ্টি দেখে ঝিলের চোখ বিচলিত হয়ে পরলো। এ কোন অভিনব কে দেখছে ঝিল ?
সুন্দর মুখ খানি কেমন লাল হয়ে আছে। চোখে অনুতাপের গাঢ় ছাপ। বিষাক্ত নীল বেদনা যেন ভর করেছে। ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে অভিনব কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু ঝিল তা করলো না। এক গাঢ় অনুভূতি নিয়ে বলল
_ আপনি এমন বিচলিত কেন ? আমি বিষয় টা বুঝতে পেরেছি। আপনি স্বাভাবিক হোন। দয়া করে এমন করে তাকাবেন না । আমার খারাপ লাগে।

ঝিল আর কিছু বলতে পারলো না। কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল
_ ক্ষিদে পেয়েছে অভিনব দয়া করে আসুন। না হলে আপনাকে রেখেই গ্রোগাসে গিলে নিবো। তখন আমাকে দোষ দিলে হবে না কিন্তু।

অভিনব কোনো উত্তর দিলো। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে স্মিত হাসলো। মেয়েটা তাকে পাগল করে দিবে। বুকের ভেতর পাথর টা যেন সরে গেল। বিষাক্ত নীল বেদনা নিমেষেই উধাও। ক্যামেরা থেকে ঝিলের দারুন একটা ছবি বের করলো।
ঘুমন্ত ঝিলের বাচ্চা দের মতো ঠোঁট উল্টানো মায়া ভরা মুখ।
ঝরা হাসলো অভিনব। মেয়েটাকে আগলে রাখতে চায় ওহ। খুব করে চায় বিচ্ছেদের নীল ছায়া কাঁটিয়ে দিতে।

*

” অতিরক্ত খাওয়া হয়ে গেছে অভিনব। এখন মনে হচ্ছে আমি উঠতেই পারবো না”

_ অনেক বেশি খেয়েছেন এটা কি সত্যি ?

_ অবশ্যই অনেক বেশি খেয়েছি খিচুড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ভাঁজা, ফাইস্যা মাছ, রাশিয়ান সালাত আর তারপর আবার কোল্ড ড্রিঙ্কস।
ওহহ হো ডিমের কারি ও তো খেয়েছি।

_ বেশি বকছেন। প্রতি টা আইটেম নিয়েছন কতোটুকু করে তার খেয়াল আছে ?
হ্যাঁ তুলনা মূলক ভাবে আজ খেয়েছেন বেশি। তাই বলে এতো টা ও খাওয়া হয় নি যার জন্য হাঁটতে পারবেন না। চলুন, রোদ বেড়েছে কেবিনে যাবো।

_ একটু পরে যাই ?

_ উহুহহহ। হাঁটা চলা করলে খাবার হজম হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চলুন , তাছাড়া আজ কে আবার আস্ত খাসির বারবিকিউ হবে । পেট পুরে খেতে হবে না ?

_ আমার মনে হয় না খেতে পারবো।

_ কানের নিচে খাবেন। চলুন তাড়াতাড়ি, টাকা গুলো দিচ্ছি কি খাবার না খাওয়ার জন্য ?

_ তো খেতে না পারলে কি করবো ? আমি তো আর আপনার মতো খাদক না যে এক বেলায় তিন বেলার খাবার খেয়ে আবার খেতে বসবো।

_ প্রচন্ড কথা বলছেন আপনি। আসবেন নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো।

ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ তাহলে তো কোনো কথা ই নেই। নিন কোলে তুলে নিয়ে যান। আসলেই হাত পা ব্যথা হয়ে আছে।

অভিনব দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। মেয়েটা এতো অলস যা ধারনার বাইরে। অভিনব চরম এক বুদ্ধি বের করলো।

_ ওহহ হো ঝিল আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম মাহেরা আর আফরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা কি ভাববে বলুন তো ?
ইসস একদম ই মনে নেই।

অভিনব কপালে হাত দিতে দিতে চলে গেল। ঝিল হা হয়ে বসে রইলো। ব্যপার টা কি হলো ?
অভিনব কি সত্যি ই মাহেরার সাথে ঢলাঢলি করতে যাবে। হায় হায় কপাল পুরলো তাহলে। ঝিল কোনো মতে চেয়ার থেকে উঠে ভো দৌড় দিলো।
অভিনব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ এভাবে হাফাচ্ছেন কেন ?

_ না মানে রোদ বেড়ে গেছে তো তাই।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। ঝিল বির বির করতে করতে হাঁটা লাগালো।

অভিনব, মাহের , শাকীল আর অমিত কে নিয়ে কিচেনে চলে আসলো। সেইফ এর সাথে কথা বলে সমস্ত মসলা পাতি নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো। আসলে বারবিকিউ টা ওরা সবাই মিলে করতে চায়। এতে করে ভ্রমনের আলাদা এক স্বাদ পাওয়া যাবে। সুন্দরবনে আস্ত খাসির বারবিকিউ ভাবা যায় ?
অভিনব মৃদু হাসলো। কারন ঝিল তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। অভিনব কে দেখে বোঝার উপায় নেই সে আমেরিকান। তার কাজে কর্মে তাকে ভেতো বাঙালি বলা যায়। গ্রামের সবাই এক সঙ্গে হয়ে পিকনিক খেললে যেমন মজা হয় । ঠিক তেমনি আমেজে ভরপুর লঞ্চ টা। সবাই হৈ হুল্লরে মেতে উঠেছে।মাহেরা তো গালে হাত দিয়ে শুধু অভিনব কেই দেখে যাচ্ছে। ফর্সা মুখ টা দেখেই তার মায়া হলো। কেমন লাল হয়ে আছে। ইসস সে যদি শাড়ি পরে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই আঁচল দিয়ে অভিনবর মুখ টা মুছে দিতো।
আফরা মাহেরার হাত ঝাকাচ্ছে বার বার। কিন্তু মাহেরার তো সে দিকে ধ্যান ই নেই।
_ হ্যাঁ রে আফরা । একটা মানুষ কি করে এতো সুন্দর হয় ?

_ তুই পাগল হয়ে গেছিস ? অভিনব ভাইয়ার সাথে ঝিলের নিশ্চয়ই কোনো সম্পর্ক আছে।

_ চুপ ফাজিল মেয়ে। অভিনব কে দেখেছিস ঝিলের সাথে ঢলাঢলি করতে? ওরা শুধুই বন্ধু ।

_ তুই দেখিস নি ঝিলের কতোটা কেয়ার করে ওহ ?

_ দেখ আফরা আমি অত শত বুঝি না। অভিনব একজন আমেরিকান । ওহ নিশ্চয়ই ঝিলের মতো কাউকে পছন্দ করবে না ?

_ মাহেরা ঝিল বিদেশী দের মতো স্মার্ট নয় ঠিক ই তবে এটা ওহ সত্য ওহ কিন্তু ক্ষেত নয়।

মাহেরা উঠে দাঁড়ালো। গলায় সামান্য কাঠিন্য এনে বলল
_ তুই কি বলতে চাস আমি ঝিলের থেকে কম সুন্দরী ?

আফরা ফোঁস করে দম ফেললো। এটা সত্যি যে ঝিলের থেকে মাহেরা বেশি সুন্দরী। তাই বলে ঝিল ও কোনো ফেলনা সুন্দরী নয়। আর ভালোবাসার ক্ষেত্রে আদৌ কি সৌন্দর্য মূল্য পায় ?

_ আমি মানছি যে তুই ঝিলের থেকে অধিক সুন্দরী । তবে

_ তুই তোর কথাতেই পরে থাক । অভিনব নিশ্চয় ই আমাকে পছন্দ করবে। দেখিস নি কেমন হেসে হেসে কথা বলে। আর আমি ও আট বছর আমেরিকা তে ছিলাম। একটু হলেও বুঝি এইসব।

_ কিন্তু

_ স্টপ তুই এটাই বলবি তো ওরা এক কেবিনে আছে ? আমার তাতে যায় আসে না। আজকাল লিভিং তো ফ্যাশন হয়ে গেছে। তাছাড়া ঝিল যে ধাচের মেয়ে ওহ এইসব লিভিং করবে না।
আমি ড্যাম সিউর ওদের মাঝে তেমন কোনো রিলেশন নেই।

আফরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মাহেরা আফরার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
_ আরে গাঁধা , লঞ্চে বসে কেউ সর্বোচ্চ ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খাবে।
তুই অনেক বেশি ভাবিস। আমার সুন্দর মন টাকে মুহূর্তেই বিষিয়ে দিলো।
ধ্যাত

মাহেরা চলে গেল। আফরা ও নিজেকে দু চারটে গালি মেরে স্থান ত্যাগ করলো।

অভিনব নাইফের বেশ ভালো ব্যবহার পারে। খাসির উপরের অংশ টাকে বেশ সুন্দর করে কাঁটলো । যাতে করে মসলা ভেতরে প্রবেশ করে। ঝিল অবাক হয়ে একটা প্রশ্ন করলো।
_ আপনি এটা ও পারেন ?

_ কেন ? নাইফ ইউস করতে বুঝি শুধু আপনি ই পারেন ?

_ তাহ নয় তবে

_ চিন্তা মুক্ত থাকুন। আমি শুধু মাত্র ট্যুরে ই কাজ করি। বাসাতে এক গ্লাস পানি ঢেলে ও খাই না।

অভিনবর কথাটা ঝিল বুঝলো না। মাদুরে পা দুটো মেলে দিয়ে বসলো। অভিনব মাহেরের দিকে এগিয়ে গেল। বেচারা মসলা নিয়ে বেশ ঝামেলা তে পরেছে। অমিত শ্বাস ফেলে বলল
_ আমি মিক্স করছি। তোরা শুধু পরিমাপ করে মসলা দে।

মাহের মেকি হাসি দিয়ে অভিনবর দিকে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ অনিয়ন পেস্ট , গার্লিক পেস্ট , জিনজার পেস্ট , জিরা পাউডার , ধনিয়া পাউডার দিয়ে একটু মিক্স করো।

অমিত অভিনবর কথা মতো সব দিয়ে একটা চামচ দিয়ে মিক্স করলো। কিন্তু চামচ দিয়ে ঠিক ঠাক মিক্স হচ্ছে না। এ দিকে এই সবে হাত ডুবালে জ্বালা করবে।অভিনব পকেট থেকে গ্লাভস বের করে দিলো। অমিত গ্লাভস হাতে দিয়ে মিক্সড করলো।

_ আচ্ছা এবার চিলি ফ্লেক্স দাও। আর হলুদ গুড়ো দাও।

অমিত মসলা মাখাতে লাগলো। অভিনব সরিষার তেল দিয়ে দিলো। তারপর লেবুর রস , তন্দুরি মসলা , টক দই , সস , গরম মসলা , লবন দিয়ে মিক্সড করতে বললো।

অমিত সমস্ত মসলা খুব ভালো করে মিক্সড করলো। তারপর আস্ত খাসির উপর সুন্দর করে মাখিয়ে দিলো।

তারপর দুটো খাসি নিয়ে গেল কিচেনে। এটা কটকা তে নিয়ে বারবি কিউ করা হবে।
ঝিল মৃদু হেসে অভিনবর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। অভিনব গলায় রসিকতা এনে বলল
_ আপনাকে রান্না শিখতে হবে ঝিল।

_ কেন ?

_ না হলে শশুর বাড়ি যাবেন কি রে ?

ঝিল চোখ পিট পিট করে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে ঝিলের দিকে তাকালো। ঝিলের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল
_ আপনি খুব বাজে ঝিল। বরের একদম সেবা করেন না।
মানছি আমাদের বিয়ে টা এক্সিডেন। কিন্তু এখন অব্দি তো আপনি আমার ই বউ।

ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। অভিনব কি বোঝাতে চাইছে তাকে ?
অভিনব খানিক টা ঝুঁকে নিয়ে বলল
_ আপনি যা ভাবছেন তা বোঝাতে চাচ্ছি না আমি।
আপনি যে জেলাস ফিল করেন সেটাই বলতে চাচ্ছি।
তবে জেলাস ফিল পর্যন্ত ই থেমে আছেন নাকি অন্য কিছু ওহ ?

ঝিল উত্তর দিলো না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। অভিনব মৃদু হেসে দু এক লাইন গানের সুর আওরালো। মানসিক শান্তি থাকলে জীবনে অন্য কিছুর প্রয়োজন হয় না।

**লেট করার জন্য দুঃখিত । আজ আমাদের এলাকায় সারা দিন কারেন্ট ছিলো না । তাই ওয়াই ফাই ও ছিলো না। সকালে স্কুলে গিয়েছিলাম দুপুরে ফিরেছি । সব মিলিয়ে লিখা হয়ে উঠে নি। এই মাত্র শেষ করলাম।

** আস্ত খাসির বারবিকিউ করার আগের ছবি টা কমেন্টে দিয়ে দিবো।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here