নীলের_পরি (৩১)

0
8

#নীলের_পরি (৩১)

সুলতানা বেগম একটা পঁচিশ বছর বয়সী ছেলেকে জোরে থা প্প ড় লাগিয়ে দিলেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা কি শখ করে দিয়েছেন? তবু ও নীলের কোনো খোঁজ খবর এনে দিতে পারে নি! সোশ্যাল মিডিয়াতে নীল নাম দিয়ে খোঁজা খুঁজি করে ও কিছু পায় নি। কারণ নীলের পুরো নাম তো রাফসান আহমেদ নীল যা এরা কেউ জানে না। সোফা তে বসে বেশ আয়েশে আপেল কামড়াচ্ছে প্রান্ত। বিরক্ত সে পরির জন্য, মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার। এই মেয়েকে হাতের মুঠোয় আনার জন্য গত দুদিন ধরে কোনো রকম মেয়ে বা মদ ছুঁতে পারে নি সে। আজ সে কিছুতেই বাসায় বসে থাকবে না।
সুলতানা বেগমের কোনো কথাই কানে নিবে না। সুলতানা বেগম পলাশ এর দিকে বর্জ্য কণ্ঠ ছুড়ে বললেন,”তোকে কিসের জন্য টাকা দেই আমি। কোনো কাজ ই তো করিস না। এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা।”

পলাশ মাথা নিচু করে সমস্ত টা শুনে নিল। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে স্থান ত্যাগ করল। সুলতানা বেগম টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস টা ছুড়ে ফেলে দিলেন। গ্লাস টা মেঝে তে পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তারপর বললেন,”উফ এই নীল নামক অভিশাপ আমার সমস্ত পরিকল্পনাতে পানি ঢেলে দিয়েছে।”

প্রান্ত বিরক্তি ঠেলে সোফা থেকে উঠে গিয়ে বলল,”হোয়াট রাবিস আম্মু। আমি পরির জন্য দিন কে দিন বসে থাকতে পারব না। আমি আজ রাতেই যাব। আর তাছাড়া আমার বিজনেস এর বিঘ্ন ঘটছে। গত দু বছরে যা কামিয়েছে তা তো খরচ ই করে ফেলেছি। আমার আর ও টাকা লাগবে, দ্রুত পরি কে খোঁজার ব্যবস্থা কর। আর পরি কে ও আমার লাগবে এ সুন এস পসিবল। এক বার পাই আমি তারপর ওর কি অবস্থা করি দেখে নিও। আই নিড পরি।”

ছেলের কথাতে সুলতানা বেগমের ইচ্ছে করছে দুটো কষে
চ ড় বসিয়ে দিতে। ওনি কি বসে অছেন নাকি? প্রান্ত আধ খাওয়া আপেল টা টেবিলে রেখে দিয়ে বাইরে চলে আসল।
গত কয়েক দিনের ঝামেলায় বিজনেস এ বিঘ্ন ঘটেছে।
আজকে রাতে ক্লাব এ পার্টি আছে আর কালকে ডিল ও আছে। এখন এই ঝামেলার মধ্যে থাকলে চলবে না।
তাছাড়া চার দিন যাবত প্রান্ত কোনো মেয়ের সাথে সময় কাটায় নি শুধু হালকা ম দ খেয়েছিল। যার কারণে ওর মস্তিষ্ক বিরক্ত হয়ে আছে। প্রান্ত কাউ কে কল করে বলল,”একটা মেয়ে কে আজ রাতের জন্য রেডি কর।”

তারপর ই পৈশাচিক হাসি দিল। প্রান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল নিষিদ্ধ গলিতে কয়েক হাজার টাকা ফেললেই মেয়ের অভাব হয় না। আর পরির জন্য তার কতো সময় নষ্ট হচ্ছে! অবশ্য পরি কে বিয়ে করলে আখেরে লাভ টা তো তার ই। তাই বলে প্রান্ত নম্র ভদ্র নিষ্ঠাবান হতে পারবে না। সে নিজের মতো থাকবে আর পরির উপর ছুরি ঘোরাবে। প্রান্ত বত্রিশ টা দাঁত বের করে নরকীয় হাসি হাসতে লাগল।

আজ কে নীল সেই সকাল থেকে একবারের জন্য ও রুম থেকে বের হয় নি। সারাক্ষণই কাজে মজে ছিল। পরি সেই সকাল আটটার সময় নীল কে নাস্তা খাইয়ে গেছে। আর এখন অবধি নীল কিছু খায় ও নি দুপুর তিনটা বাজতে চলল। যতোবার ই সবাই খাবারের জন্য ডাকতে এসেছে নীল ততোবার ই ব্যস্ততা দেখিয়ে দিয়েছে। পরি কিছুক্ষণ পর পর লুকিয়ে উঁকি ঝুঁকি মে রে চলে যাচ্ছে। নীল দু বার ধরে ও ফেলেছে তখন পরি বলেছে,”আসলে আপনি খাবেন কি না তাই জিঙ্গেস করতে এসেছি।”

প্রতি উত্তরে নীল শুধু হেসেছে। নীল খায় নি বলে পরি ও খায় নি। পরি প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে নীলের রুমে চলে আসল। দরজা ঠেলে রুমে আসতেই পরি দেখল নীল রুমে নেই। ও ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগল এই অসময়ে মানুষটা গেল কোথায়? তারপরই বারান্দার দরজা খোলা দেখে মৃদু হাসল। খাবার টেবিলে রেখে সেদিকে পা বাড়াল। নীল রেলিং এ দু হাত দিয়ে পেছন ফিরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। পরি হালকা কাশতেই নীল ঘুরে তাকাল। পরি কে দেখে স্নিগ্ধ হাসি দিল। নীলের দিকে পরি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। পরি বরাবর ই নীলের মাঝে আটকে যায়। মেয়েটি কে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে নীল মৃদু হাসল। পরক্ষণেই দুষ্টুমি করার শখ হলো। তাই সে পরি কে চোখ মেরে দিল। নীল চোখ মারতেই পরি মাথা নিচু করে নিল। নীল বুঝি দেখে ফেলল পরি যে তার দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিল।
ইস কি লজ্জা!

পরি মাথা নিচু করেই বলল,”আপনার খাবার নিয়ে এসেছি খেতে আসুন।”

এই কথা বলেই পরি এক মুহূর্ত দেরি করল না। বারান্দা থেকে রুমের দিকে পা বাড়াল। পরির দিকে চেয়ে নীল হাসতে লাগল। পরক্ষণেই হাসি টা কোথাও বিলীন হয়ে গেল। মনের মাঝে এক রাশ অশান্তি এসে গ্রাশ করে নিল।
হঠাৎ নীলের ফোন বেজে উঠল। নীল পকেট থেকে ফোন বের করে কথা বলে নিচ্ছে। নীলের মুখ টা বের গম্ভীর দেখায়। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কয়েক দিনের মাঝেই সব কিছু বদলে যাবে। মনের ভেতর অজানা সব ভয় কাজ করছে। নীলের মন ব্যাকুল হয়ে পড়ছে। কি হবে। আচ্ছা সব কিছু কি ঠিক হয়ে যাবে? পরির হাতে হাত রেখে কি সংসার টা করা হবে? নীল আর ভাবতে পারে না। পরির ডাকে নীল ব্যস্ত পায়ে রুমে এল।

আজ দুদিন হলো নীল আর অনিক বাসায় নেই। নীল হঠাৎ ই সেদিন সন্ধ্যা তে অনিক কে নিয়ে বেরিয়েছে। বলেছে ফিরতে কয়েক দিন সময় লাগবে। নীলের কি এমন কাজ পড়েছে যার জন্য এত আর্জেন্ট যেতে হলো? মধ্য রাত থেকেই পরির মন টা কেমন কু গাইছে। কিছুতেই শান্তি মিলছে না। কেমন বাজে অনুভূতি হচ্ছে। হঠাৎ ই পরির বেশ কান্না পাচ্ছে। নীল ঠিক আছে তো? পরি আশে পাশে নিজের ফোন খুঁজতে লাগল। সেদিন যাওয়ার আগে নীল পরি কে ফোন কিনে দিয়েছিল। কিন্তু পরি ফোন টা খুঁজে পাচ্ছে না।
পরির নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছে। কোথায় রেখেছে ফোন টা? দৌড়ে বারান্দায় গেল। সেখানকার টেবিলে ফোন টা দেখতে পেয়েই পরি ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোন নিল।।পরির মনে হচ্ছে একটি সেকেন্ড ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। চোখ দিয়ে অঝোরে বর্ষন নামতে শুরু করেছে। হাত পা বেশ জোরে কাঁপছে। কাঁপা হাতে নীল কে কল করতে গিয়ে দুবার ফোন হাত থেকে পড়ে ও গেল। নীলের কিছু হয় নি এই কথা টা না শোনা অবধি পরি নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। পরি কাঁপা হাতে ফোন টা উঠিয়ে আবার কল লাগাল। বার কয়েকবার রিং হয়ে ফোন কেটে গেল। কিন্তু নীল ধরল না। নীল ঘুমোচ্ছে ভেবে পরি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
কিন্তু নাছোড়বান্দা মন কিছুতেই মানছে না। নীলের কণ্ঠ না শোনা অবধি পরি নিজেকে স্থির রাখতে পারবে না। পরি আবার কল লাগাল দুবার রিং হয়ে ফোনটা কেটে গেল।
পরি আবার কল লাগাল কিন্তু এবার ফোন সুইচ অফ বলছে। পরির শরীর যেন এবার দ্বিগুণ উত্তেজনা নিয়ে কাঁপতে লাগল। পরি একাধারে কল দিতেই লাগল কিন্তু বার বার ফোন সুইচ অফ বলছে। পরির মনের সরু আশঙ্কা গুলো স্থুল রূপ ধারন করছে। পরির ভেতর টা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। ওর নীল ঠিক নেই। না হলে ফোন ধরছে না ক?
পরির মাথা ঝিম ঝিম করছে। সারা মাথা জুড়ে শুধু নীল , নীল আর নীল করছে। মস্তিষ্ক শুধু নীল কে নিয়েই ভাবছে।
মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে শুধু নীল নাম টাই সেট করা আছে।
পরির কান্নার বেগ বাড়তে লাগল। সে নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে মেঝে তে লুটিয়ে পড়ল। চোখ থেকে তুমুল বর্ষন নেমে যাচ্ছে। মন অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কোনো মতে কান্না চেপে ওয়াসরুমে চলে গেল সে। অজু করে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে লাগল। আল্লাহর কাছে নীলের সুস্থতা কামনা করছে পরি।
চোখ দিয়ে বিরতহীন অশ্রু ঝরছে। পরির অশান্ত মন নামাজে বসে খানিকটা স্বস্তি পেলে ও পুরোপুরি শান্ত হতে পারল না। নামাজের রাকাত শেষ করছে আর নীল কে অনবরত কল করে যাচ্ছে। কিন্তু নীলের ফোন সুইচ অফ।

নামাজ পড়তে পড়তে ফজরের আজান পড়ে গেল। পরি ফজরের নামাজ শেষ করে উঠে বসল। চোখের নোনা পানি মুখে শুকিয়ে গিয়ে খানিকটা আঠালো রুপ ধারণ করেছে।
তার এতে কোনো ধ্যান নেই। সে তো শুধু নীলের সুস্থতা কামনা করে যাচ্ছে। মাথার ঘোমটা ফেলে অগোছাল পায়ে করিডোর দিয়ে বাসার সামনের দিকের খোলা বিশাল বারান্দায় গেল। হালকা শীত পড়েছে কিন্তু পরির গায়ে কোনো শীত বস্ত্র নেই। ভোরের মৃদু আলো ফুটতেই খানিকটা বাতাস অনুভব হলো। পরির খোলা হাফ স্লিকি ভাঙা চুল গুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে। চোখ জোড়া বাসার মেইন গেইট এ চেয়ে আছে। পরির মনের কোনে যেন আর কোনো ইচ্ছে ই নেই। শুধু নীলের সুস্থতা ছাড়া।

হঠাৎ পরির চোখ অশান্ত হয়ে গেল। মেইন গেইট দিয়ে নীলের গাড়ি ঢুকতে দেখতে পেয়েছে। ছুটে চলে গেল বাসার মেইন ডোরে। কিন্তু পরির কাছে এইটুকু পথ যেন মনে হচ্ছে হাজার মাইল। পরির পা যেন চলতে চাইছে না। পরি কোনো মতে নিচে আসলে ও মেইন ডোরে এসে পা আটকে গেল। শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। মুখ থেকে র ও কাটছে না। পরির সব কিছু কে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। হুট করেই বুকে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। চোখ দিয়ে পানি নামছে। পরি কাঁপা ঠোঁট দিয়ে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল,” নীল।”
ঠিক তারপর ই জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

|আমার পরীক্ষা চলছে। সকলে দোয়া করবেন।|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here