নীলের_পরি (৩৪)

0
10

#নীলের_পরি (৩৪)

অনিক আর নীল রেডি হয়ে বসে আছে। কেউ একজন ফোন দিলেই তারা বের হবে। নীল বার বার টাইম দেখছে। ওকে দেখে খানিকটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি কি হবে কে জানে। নীলের মাথাতে হাজারো চিন্তা। অনিক নীল কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। অনিক নীলের এই অতিরিক্ত চিন্তা টা নিতে পারছে না। নীল বরাবর ই খুব বেশি শক্ত মনের। বড়ো বড়ো কনফারেন্স মিটিং কিংবা ডিল এ যেখানে অনিকের হাত পা অবধি কাঁপা শুরু করে সেখানে নীল সব থেকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যা দেখে অনিক বরাবর ই অবাক হয়ে এসেছে। কিন্তু পরি কে নিয়ে নীলের অতিরিক্ত চিন্তা টা সবাই কে চিন্তিত করে তুলছে। নীল যেভাবে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে দিচ্ছে এতে নীলের ওপর কেউ আ ক্র মণ করতে চাইলে সহজেই করতে পারবে। তাই নীলের শান্ত দৃষ্টি কে ছাপিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় টেনশনে পড়ে যাওয়া নীল কে অনিক ঠিকঠাক হজম করতে পারছে না। অনিকের ইচ্ছে হলো নীল কে খান পাঁচেক চ ড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, না ভালোবাসার এক বিরাট অনুভূতি রয়েছে। না চাইতে ও নীল পরির বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে ফেলছে। এতে নীলের দোষ নেই। অবশ্য আজ থেকে মাস দু এক আগে হলে অনিক নীল কে চ ড় লাগানোর বিষয়টা তেই থেমে থাকত। কিন্তু আজকাল তার মনে ও যে অন্যরকম অনুভূতি জেকে বসেছে। অনিক এসব ভাবতে ভাবতেই নীলের ফোন টা বেজে উঠল। নীল তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে কথা বলে নিল। হাতের ঘড়িটা থেকে সময় দেখে নিয়ে অনিক কে বলল,”অনিক দ্রুত,টাইম নেই।”

অনিক সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর নীলের বাহু ঝাঁকিয়ে বলল,”নিজেকে শান্ত রাখ। না হলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে।”

নীল দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,”ইয়াহ আম ওকে।”

তারপর ই নীল আর অনিক বাসার সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। পরি নীলের যাওয়ার দিকে দীর্ঘ সময় নিয়ে চেয়ে রইল। নীল চক্ষু দৃষ্টি র আড়াল না হওয়া অবধি পরি এক ধ্যানে চেয়ে রইল। কয়েক দিনের ব্যবধানে নীল কে এতটা ভালোবেসে ফেলেছে পরি। যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয় তাহলে পরি কি করে থাকবে? নীলের থেকে নিজেকে আড়াল করার শক্তি পরির নেই। নীল চলে যেতেই পরি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে রুমে চলে এল। বড্ড কষ্ট হচ্ছে। কেন জানি একটু বেশি ই ভয় করছে। বার বার নীলের কথা মনে পড়ছে আর নীল কে হাড়িয়ে ফেলার এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে।

নীল আর অনিক গাড়িতে বসে আছে। আজ নীল বা অনিক কেউ ই ড্রাইভ করছে না। কারণ ড্রাইভ করার পর শরীর বেশ খানিকটা ক্লান্ত হয়ে যায়। আর তাছাড়া আজকের মিশনে শরীর ক্লান্ত হওয়া মানেই এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া যে করেই হোক শান্ত আর সুলতানা বেগমের সমস্ত চালাকির প্রুফ নিতেই হবে। অনিক ল্যাপটপ বের করে কাজ করতে লাগল। নীল একের পর একেক জনের সাথে ফোনে কথা বলছে।
কিছু সময় পর নীল আর অনিক বিশাল বড়ো একটা হোটেল এর কাছে পৌছাল। এই হোটেল সাধারনত ভদ্রলোক দের জন্য তৈরি। কিন্তু এখানে ভদ্র লোকের থেকে অভদ্র লোকের চলাচল বেশি। অনিক আর নীল চেঞ্জিং রুম এ গিয়ে নিজেদের পোশাক সহ পুরো লুক টাই পরিবর্তন করে নিল। মোটামুটি ভাবে যারা নীল আর অনিক কে যারা চিনে তারা ও ওদের দুজনের ছদ্মবেশ ধরতে পারবে না।

নীল আর অনিক হোটেল এ প্রবেশ করল। কাউন্টারে গিয়ে কথা বলে একটা রুম বুক করে নিল। আজ রাতে প্রান্ত এই হোটেলে মেয়ে নিয়ে ঢুকবে। যার ভিডিও নিতে পারলেই জোড়ালো একটা প্রুভ পাওয়া যাবে। নীল দুটো সার্ভেন্ট কে টাকা দিয়ে হাত করে নিল। সার্ভেন্ট গুলো নীল আর অনিক কে প্রান্তের বুকিং করা রুমে পাঠিয়ে দিল। অনিক আর নীল দ্রুত গতিতে সিক্রেট ক্যামেরা আর ভয়েস রেকর্ডার লাগিয়ে দিল। নীল আর অনিক বের হয়ে আসতেই প্রান্ত কে দেখতে পেল নীল। অনিক পালাতে গেলেই নীল ধরে ফেলে। অনিক ভ্রু কুঁচকাতেই নীল বলল,”আরে ও আমাদের চিনবে না। বরং এভাবে ভীত হয়ে গেলেই ধরা খাব।”

নীলের কথা বুঝতে পেরে অনিক মৃদু হেসে বলল,”আব্বে তোর গ্রেট মাথার বুদ্ধি চলে এসেছে।”

অনিকের কথাতে নীল না হেসে পারল না। অনিক ই বলল
,”কিছু খাওয়া প্রয়োজন। ঐ গুলো তো সব ঠিক ঠাক লাগিয়ে দিয়েছি বাকি টা দেখা যাক কি হয়। আগে চল ডিনার করে ফেলি,টাইম কম।”

নীল আর অনিক ডিনার করতে চলে আসল। তড়িঘড়ি করে ডিনার শেষ করেই দুজন রুমে চলে এসেছে। রুমে এসে ভিডিও ফুটেজ অন করতেই দেখল প্রান্ত একটা মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকল। ব্যাস এই টুকু রেখে বাকি সব ডিলিট করে দিল। আর টাইম সহ বের হওয়ার ফুটেজ টুকু ও রাখল।
নীল আর অনিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কারণ প্রান্ত কিছু ধরতে পারে নি। রাত একটার দিকে প্রান্ত হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ল। নীল আর অনিক ওর পিছু নিলো। নীল জানে এখন প্রান্ত কোথায় যাচ্ছে। নীল বাঁকা হাসল। কারণ সেখানে ও সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রান্ত ঢাকাতে নিজেদের ফ্লাট এ চলে আসল। নীল আর অনিক বাসার নিচেই অবস্থান করছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই একটা চল্লিশ বছর বয়সী ব্যাক্তি দৌড়ে আসল।

নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। নীল লোকটাকে একটা টাকার বান্ডিল দিতেই লোকটা একটা পেন্ডড্রাইভ বের করে দিল। নীল ফুটেজ চেইক করে দেখে নিল সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি না। নীলের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। এইবার কাজ হলো নেক্সট গেইম কন্টিনিউ করা। রাত তিনটে বেজে গেছে। কালকে সকাল সাতটাতে নীলদের ফ্লাইট আছে।
তাই নীল আর অনিক একটা ফ্রেন্ড এর বাসাতে চলে গেল।
দুই ঘন্টা না ঘুমালে কালকের ধকল নিতে পারবে না। ফ্রেন্ড এর বাসায় এসে একবার কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল। মনে হচ্ছে নীলদের জন্য ই অপেক্ষা করছিল। নীল আর অনিক সবুজ এর সাথে গলা মিলিয়ে নিচ্ছে। সবুজ নীলের খুব ভাল বন্ধু। ভার্সিটি লাইফ থেকে কয়েকটা বছর বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল ওদের। সবুজ একটা কোম্পানির সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করত। বর্তমানে আইন এজেন্সির বড়ো একজন কর্মকর্তা। আট মাস ধরে চাকরিতে জয়েন হয়েছে সাথে নিজের ছোট খাটো একটা বিজনেস ও আছে। নীল আর অনিক বেডে গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে ওদের জড়িয়ে নিল।

ছয়টা বাজতেই বেড বরাবর বিশাল মাপের ঘড়ি টা ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করল। ঘড়ির আওয়াজে নীল , অনিক আর সবুজ উঠে বসল। সাড়ে ছয়টায় এয়ারপোর্ট এ যেতে হবে। তাই তিনজনে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচ্ছে। নাস্তা করার মতো টাইম নেই ফ্লাইট এই নাস্তা করে নিবে। এয়ারপোর্টে আসতেই দুজন কালো ড্রেস পরা লোক এগিয়ে আসল।

নীল ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,”সব কিছু ঠিক ঠাক তো?”

লোকটি সম্মতি জানাল। নীল ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে এয়ারপোর্ট এ ঢুকে এল। নীলদের হাতে সময় কম তাই সমস্ত কিছু কালো ড্রেসের লোক দুটো ই করে দিল।নীল সহ সবাই ফ্লাইটে উঠে নাস্তা করে নিয়েছে। বিশ মিনিটের মাথায় চট্টগ্রাম পৌছে গেল ওরা। চট্টগ্রামের এক রিসোর্ট এ সবাই উঠল। আজ কে রাতে প্রান্ত বিশাল এক ড্রাগ ডিলারদের সাথে মিটিং করবে। আজ যেভাবেই হোক ওদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে হবে। কড়া সিকিউরিটি দেওয়া পাব টাতে। নানান ভাবে কাজে লেগে পড়ল ওরা।
একটু হেরফের হলে জীবনের জন্য আশংকা হয়ে পড়বে।
ল্যাপটপ, ফোন কল নিয়ে সারাদিন কেটে গেল। বিকেলের দিকে নীল জানতে পারল ডিল টা কক্সবাজার এ হবে।
নীলের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। নিশ্চয়ই কোনো ভাবে ওরা জানতে পেরেছে আজকে ওদের ডিল টা কেউ ফলো করছে। নীল মাথা চেপে ধরে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর তড়িঘড়ি করে নীল সহ সবাই বের হয়ে গেল কক্সবাজার। সন্ধ্যার দিকে পৌছে গেল ওরা। কিন্তু এখানকার সিকিউরিটি গার্ড দের তো কেনা হয় নি। এই নিয়ে আরেক জামেলার সৃজন হলো। বুদ্ধি করে ওরা সবাই সার্ভেন্ট সেজে নিল। অবশ্য মেইন ডোর দিয়ে ঢোকার সময় দুটো গার্ড বাঁধা দিলো। মহা মুশকিলে পড়ে গেল ওরা। সবুজ চটজলদি উত্তর দিল,”আরে আমরা ডিলার দের সার্ভেন্ট।”

কিন্তু গার্ড দুটো বিশ্বাস করল না। সবুজ হাসতে হাসতে পকেট থেকে নকল কার্ড বের করে দেখাল। গার্ড দুটো ভেতরে ঢোকার পারমিশন দিতেই ওরা তিন জন ভেতরে ঢুকে গেল।

কিন্তু মাঝে সমস্যা হলো সবুজ যখন ফোনে কথা বলছিল তখন তিনটে গার্ড শুনে ফেলল। গার্ড দুটো বন্ধুক ঠেকাতেই সবুজ হাত উপরে করে দিল। একজন গার্ড কাউকে ফোন দিতে লাগল। ফোন ধরার আগেই পেছন থেকে নীল এসে আফিম শুকিয়ে দিল। মুহুর্তের মধ্যে তিনজন জ্ঞান হারাল। সব কিছু বড়ো দ্রুত ঘটল। অনিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”আরে ভাই সাবধান। এখানে একটা নয় বেশ কয়েকটা ডিলার আসবে। তাই এত সিকিউরিটি। একবার ভুল হলে সব শেষ। জান চলে যাবে।”

তিনজন মিলে গার্ড তিনটে কে স্টোর রুমে বেঁধে রেখে দিল।
তারপর গার্ড তিনটের কার্ড নিয়ে নিল। যদি কোনো সমস্যা হয় তো এটা দিয়ে বাঁচার চান্স হবে। একজন হোস্ট এনাউন্স করল একটু পর ই ডিল হবে। পাবে গান বাজনা চলতে থাকল। একটু পর ই বেশ কয়েকজন ডিলার আসল।

নীল,অনিক আর সবুজ তিন জন মিলে আগে থেকেই ছোট ছোট ক্যামেরা আর ভয়েস রেকর্ডার বিভিন্ন জায়গায় সেট করে দিয়েছে। ডিল শুরু হয়ে গেছে। সবুজ আড়ালে গিয়ে ফোর্স দের ইনফর্ম করে দিল। মুহূর্তের মাঝেই রেড লাইট এলার্ম বাজিয়ে দিল। সবাই দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করে দিয়েছে। প্রান্ত ছুটে বাইরে চলে যাচ্ছিল। নীল দৌড়ে ধরে ফেলল কিন্তু প্রান্তের হাতে ধারাল নাইফ ছিল। প্রান্ত নাইফ দিয়ে নীলের হাতে আ ঘা ত করে দিয়েছে। যার কারণে নীল প্রান্ত কে ছেড়ে দিল। প্রান্ত দৌড়ে পালিয়ে গেল কিন্তু বেশি দূর পালাতে পারল না। সবুজ গিয়ে প্রান্তের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দিল। নীলের হাতে ভালোই আ ঘা ত লেগেছে। অনিক সময় খরচ না করেই নীল কে নিয়ে বের হয়ে আসল।সবাই কে পুলিশ ধরতে পেরেছিল। সবুজ সহ সবাই কে বিদায় জানিয়ে নীল কে নিয়ে হসপিটাল গিয়ে ওয়াশ করিয়ে নিল। তারপর ফ্লাইট ধরে সোজা নীলদের বাসাতে।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here