#নীলের_পরি (৩৬)
নীল বসে আছে পরিদের বাসার ড্রয়িং রুমে। সামনে নাস্তা সাজানো। ভদ্রতার খাতিরে এক মগ কফি হাতে নিয়ে বসে আছে নীল। সামনে বসে আছে পরির নানা,নানু আর মিসেস রাহেলা ও আফজাল হোসেন। নীলের পাশ ঘেঁষে বসে আছে নিশা আর আমান। সেইদিন ই নীল কে আমান আর নিশার বেশ পছন্দ হয়েছে। তিক্ত হলে ও সত্য নীল কে এই বাসার সবাই ই পছন্দ করেছে। কিন্তু একটা মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে ঐ ভাবে তুলে নেওয়া টা নিশ্চয়ই খুব ভদ্রতা না। তাই একটু হলে ও বড়োরা ক্ষিপ্ত। যদি ও পরির সাথে অন্যায় ই করছিলেন ওনারা।
নীল কফি কাপে চুমুক দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
“প্রথমেই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আমি জানি আমি যেটা করেছি সেটা অন্যায়। কিন্তু আপনারা যেটা করছিলেন সেটা ও খুব বেশি ভালো ছিল না।”
আফজাল হোসেন ঠিকঠাক হয়ে বসলেন। কণ্ঠটা রগরগা। “সে তো বুঝলাম কিন্তু তুমি যেটা করেছে সেটা দ্বিগুণ অন্যায়। আমরা পরির ভালোর জন্য প্রান্তের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলাম। তাছাড়া আমার আম্মার ইচ্ছে ছিল আমার মেয়ে হলে যেন প্রান্তের সাথে বিয়ে দেই। মৃ ত মানুষের শেষ ইচ্ছে পূরণ না করলে নাকি তার আত্মা শান্তি পায় না। আমি কোনো ভাবেই আমার আম্মা কে কষ্ট দিতে চাই নি। তাছাড়া আমার সংসারে ও অকল্যাণ হবে তাই পরির সাথে খানিকটা অন্যায় করে হলেও ওর ভালোটাই করছিলাম। প্রান্ত দেখতে শুনতে ও ভালো। পরি ওর সাথে খুব ভালো থাকত।”
নীল দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলল,”আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত। কিন্তু…..।”
মিসেস রাহেলা নীল কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,”এত কিছু বুঝি না আমি। কিন্তু তুমি কে আর আমার মেয়ে কোথায়?”
নীল হাঁটু তে দু হাত গুজে মৃদু হেসে নিল।
“আমি নীল। আমার পুরো নাম রাফসান আহমেদ নীল।
আমি হাফসার বড়ো এবং একমাত্র ভাই।”
হাফসা নাম টা শুনতেই সবাই জড়সড়ো হয়ে বসল।
মিসেস রাহেলা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন,”হাফসা বলতে? পরির বান্ধবী হাফসা?”
নীল প্রশস্ত একটা হাসি দিল। তার কথার রহস্য ভে ঙে দিয়ে বলল,”হ্যাঁ।”
আফজাল হোসেন চোখ মুখ কুঁচকে বললেন
“মিনাল এর মামাতো শ্যালক তুমি?”
নীল মাথা ঝাঁকাল। আফজাল হোসেন চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছেন।
“তোমার সাথে যদি পরির সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে পরি আমাদের বলে নি কেন? তোমার পরিবার নিয়ে আমাদের যথেষ্ট ভালো ধারণা।”
আফজাল হোসেনের কথাতে নীলের মুখে কালো মেঘের আঁধার নেমে এল। মাথা নিচু করে বসে রইল সে। নীলের উত্তর না পেয়ে কিছুক্ষণ পর ই মিসেস রাহেলা রক্তিম কণ্ঠে বললেন,”কি হলো বলছ না কেন?”
নীল মাথা উঁচু করে মলিন হাসল। তারপর হাতের মুষ্টি শক্ত করে বলল,”আমার জন্য। আমি দোষী ছিলাম। তার জন্য পরি কে এততটা….”
নীল আর বলতে পারছিল না। নীলের গলা ধরে আসছে।
শুকনো ঢোক গিলে বলল,”এক গ্লাস পানি হবে পিল্জ?”
নিশা উঠে গিয়ে পানি এনে দিল। নীল এক চুমুকে ঢক ঢক করে পানি পান করে নি সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে, শুধুমাত্র নীলের কথা শোনার জন্য। এই মুহূর্তে সবাই কে নীলের কাছে পৃথিবীর শেষ্ঠ মনোযোগী শ্রোতা মনে হচ্ছে।
নীল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,”আজ থেকে সাত বছর আগে পরিকে দেখেছিলাম আমার বন্ধুর বোনের বিয়ে। ও তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাচ্চা একটা মেয়ে দেখতে গুলুমুলু দেখেই ইচ্ছে হচ্ছিল একটু আদর করে দিতে তাই কিছু মুহূর্ত পরির দিকে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু বাসায় গিয়ে ও সেই মুখ টা বার বার মনে পড়ছিল। আমার আঠারো বছরের জীবনে কারো জন্য ঐরকম অনুভূতি হয় নি। কিন্তু আমি সেই সময় সেটা কে পাত্তা দেই নি। তারপর চলে যায় একটি বছর। স্কুলে গিয়েছিলাম তখনি আবার পরির দেখা পাই। এক মুহূর্তের জন্য চোখ আটকে গিয়েছিল। নিজেকে সামলে বাসায় চলে আসলে ও পরি কে ভুলতে পারি নি আমি।
সারা রাত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে মেনে নেই আমি পিচ্চি মেয়েটাকে ভালোবাসি। পরদিন ই ছুটে আসি স্কুলের কাছে এক মুহূর্ত পরি কে দেখার জন্য। এভাবেই আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে পরি কে দেখে চলে যেতাম।সবেশ ভালোই ছিলাম। যদি ও মনের অনুভূতি গুলো দিন দিন বাড়ছিল আর পরি কে পাওয়ার নেশা টা ও বাড়ছিল। কেটে যায় আর ও একটি বছর তারপর পরি হঠাৎ একদিন আমায় ম্যাসেজ দেয়। প্রথম দিকে বুঝতে না পারলে ও পরবর্তী তে বুঝে যাই এটা পরি। কিন্তু আমি সেটা পরি কে বুঝতে দেই নি। পরি প্রথম থেকে আমায় ঘৃণা করত কিন্তু আমাকে জানতে গিয়ে ওর ছোট মনটা আমাতে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরি নিজের অনুভূতি কখনোই আমাকে বলে নি শুধুমাত্র নিজের পরিবারের কথা ভেব। আর আমি বলি নি ও বাচ্চা মেয়ে বলে। কিন্তু বুঝি নি আমার জন্য ই পরির জীবনে এত বড়ো ক্ষতি হবে সেটা হলো জে এস সি রেজাল্ট। শুধুমাত্র আমাকে নিয়ে ভাবতে গিয়েই ওর রেজাল্ট টা বাজে হয়ে যায়। আমি নিজের ইচ্ছে কে বুকে চাপা দিয়ে পরি কে ইগনোর করতে থাকি। পরির প্রতি টা পোস্ট,বুঝিয়ে দিত আমাকে কতটা মিস করত ও। কতটা কষ্ট পেত ও। কিন্তু ওর স্বপ্ন কে আমি ভা ঙ তে চাই নি। বার বার ইগনোর করা সত্ত্বেও ও মেয়েটা এক ই ভাবে পড়ে থাকত। যখন নিজেই সহ্য করতে পারতাম না তখন পরি কে রিপলে দিতাম।
আমি নিজেই কতটা কষ্ট পেতাম সেখানে পরি তো বাচ্চা মেয়ে ছিল। তবু ও নিজের ভালোবাসা কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়েছি। আমি মানতাম কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়।
তাই আমি আমার যুবক বয়সের অনুভূতির কিছুটা সেক্রিফাইজ করেছিলাম। লাস্ট কয়েক বছর পরির সাথে একদম ই যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। চলে যাই লন্ডনে।
কিন্তু বুঝে উঠতে পারি নি আমার একটু ভুলের জন্যে পরি কে এত বেশি কষ্ট পেতে হবে। সেই দিন পরি কে ঐ ভাবে বিয়ে করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না। আমি পরি কে বদনাম হতে দিতে পারি না। আর আমি জানতাম পরি আমাকে কতটা ভালোবাসে তাই অনুমতির প্রয়োজন মনে করি নি। সেই সকল কিছুর জন্য আমি লজ্জিত। আমার সামান্য ভুল পরি কে জীবনের ভয়ঙ্কর এক পরিনতির সম্মুখীন করেছিল। আমি ওকে ভালোবাসি। বড় দের সামনে বিষয় টা বলা লজ্জা জনক হলে ও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি
আমি পরির সাথে এক ঘরে থাকি না। আমাদের মাঝে গভীর কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। পরিবার কে ছাড়া পরি সুখি নয়। সব কিছু পেয়ে ও পরি অসম্পূর্ণ। আপনাদের সবাই কে প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন।”
নীলের প্রতি টা কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। তাদের কারো মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না এরা কতটা মর্মাহত এতে। নীল মনে মনে সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি হতে লাগল।
আফজাল হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,”সব ই ঠিক আছে। কিন্তু তুমি উচিত কর নি ঐ ভাবে বিয়ে করে।
আমাদের সম্মান এর কথা ভাবা উচিত ছিল।”
নীল মলিন হেসে বলল,”আমি লজ্জিত। কিন্তু ঐ মুহূর্তে আমার কাছে কোনো অপশন ছিল না। আমি আপনাদের সাথে মিসবিহেব করেছি তার জন্য আমি শাস্তি নিতে ও প্রস্তুত। তখন যদি পরি কে ছেড়ে দিতাম তাহলে আজ আপনারা দ্বিগুণ আগুনে দ গ্ধ হতেন।”
নীলের কথার মানে কেউ বুঝতে পারল না। মিসেস রাহেলা মৃদু কণ্ঠে বললেন।
“মানে?”
নীল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমান কে উদ্দেশ্যে করে বলল
“আমান ল্যাপটপ নিয়ে আসবে প্লিজ।”
আমান মাথা ঝাঁকিয়ে ল্যাপটপ আনতে চলে গেল।
সবাই নীলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। আফজাল হোসেন সময় টাকে কাজে লাগিয়ে নীল কে দেখে নিল। ৫’১০ ফিট এর মতো লম্বা। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ। ভ্রু যুগল বেশ সুন্দর। চেহারাতে আলাদা স্নিগ্ধতা দেখা যাচ্ছে। নিঃসন্দহে উজ্জ্বল ফর্সা কোনো ছেলে কে ও সৌন্দর্যে হাড়াতে সক্ষম হবে। নীলের মায়া ভরা চোখ গুলোর দিকে তাকাতেই আফজাল হোসেনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।”
আমান ল্যাপটপ আনতেই মুচকি হেসে নীল ল্যাপটপ নিয়ে বসল। ল্যাপটপে পেন্ডড্রাইভ প্রবেশ করিয়ে কিছুক্ষণ সেট করল। কিছু মুহূর্তের মাঝেই ভেসে আসল প্রান্তের ড্রা গ ডিলিং, তারপর হোটেলে মেয়ে নিয়ে যাওয়া। কেউ ই যেন এই বিষয় গুলো মাথায় নিতে পারছে না। আফজাল হোসেন সহ সবাই স্থির হয়ে আছেন।
নীল মৃদু হেসে বলল,”প্লিজ কেউ এখনি ভে ঙে পড়বেন না। আরো ও অনেক কিছু আছে।”
সবাই আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে মনোযোগ দিল।
“প্রান্ত বাবা একটু বোঝার চেষ্টা কর। এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায় নি। দীর্ঘদিন ধরে সাজানো প্ল্যান আমার ঐ নীল এত সহজে ভে ঙে দিতে পারবে না।”
সুলতানা বেগম প্রান্তের পিছু পিছু ঘুরে ঘুরে বলছে এসব।
প্রান্ত রাগি কণ্ঠে বলল,”কি প্ল্যান করেছ তুমি? নানুর নামে মিথ্যে বলে ও তো কিছুই হলো না। বিয়ে তো ঐ নীল ই করে নিল।”
সুলতানা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,”দেখ মা কোনো কালেই তদের বিয়ের কথা বলে যায় নি। কিন্তু আমি তা আফজাল কে ভুলিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি। এত বড়ো একটা মিথ্যে বলতে পেরেছি আর এখন কেন পারব না?”
প্রান্ত বিরক্তি নিয়ে বলল,”এত সব বুঝি না আমার প্রপার্টি চাই। সাথে পরি কে ও লাগবে এখন। ওর অবস্থা বেহাল করে দিব। মামার সমস্ত কিছু আমার চাই।”
সুলতানা বেগম বেডে বসে বললেন,”সেই টাই হবে বাবা।
বিশ বছর ধরে ওদের সংসারে নানা ভাবে ভেজাল করে রেখেছি শুধুমাত্র প্রপার্টির জন্য। এত সব করেছি তা ও সংসার ভা ঙ্গে নি তাই তো বুদ্ধি করে পরি কে টোপে ফেলেছি। এত সব করেছি কি এমনি এমনি নাকি?
চিন্তা করিস না সব ঠিক করে দিব। শুধুমাত্র একটু সময় লাগবে। যেভাবেই হোক আফজাল কে বশে আনতেই হবে।”
ভিডিও ফুটেজ দেখে সবার অবস্থা নাজেহাল।
এত বড় ষড়যন্ত্র চলছে! আফজাল হোসেন থম মে রে বসে আছেন। তার মাথা কাজ করছে না। তার নিজের বড়ো বোন! ছি এত টা বাজে ওরা!
আফজাল হোসেনের শরীর রাগে কাঁপছে। ওনি হন্তদন্ত হয়ে বেড়োতে গেলেন। তার আগেই নীল বাঁধা দিয়ে বলল,”প্লিজ শান্ত হোন। ওনাদের যোগ্য শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে। আর প্রান্ত কে পুলিশ অলরেডি অ্যারেস্ট করেছে। এখন বাকি ফুপি শাশুড়ির শাস্তি।”
আফজাল হোসেন সোফা তে বসে পড়লেন। তার মাথা প্রচুর যন্ত্রণা করছে।
নীল কিছুক্ষণ বসে থাকল। পরিবেশ ভারী। এই মুহূর্তে অন্য কিছু বলা নিতান্তই অযোগ্য। নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল। রাত ১০ টা ১৭ বাজে। নীল উঠে দাঁড়াল তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল,”আজ আমি আসি।”
মিসেস রাহেলা চোখ মুছে বললেন,”সে কি কথা? খাবার খেয়ে যাও।”
নীল মলিন হেসে বলল,”আজ সময় নেই আন্টি অন্য একদিন।”
মিসেস রাহেলা আর জোড় করলেন না। সবার মনের অবস্থা ভয়াবহ। সবাই কে বিদায় জানাল নীল। নিশা আর আমান কে ইশারা করল নীলের কাছে আসতে। নীল গাড়ি থেকে দুটো চকলেট বক্স বের করে ওদের হাতে দিল। তারপর কয়েকটা শপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল,”আপু কে দেখতে যাবে না? আমি কি তোমাদের ভাই হিসেবে খুব অযোগ্য?”
নিশা আর আমান মুচকি হেসে বলল,”আপুর ইচ্ছের কাছে সব কিছু ঠিক ঠাক।”
নীল মুচকি হেসে বলল,”বাহ বুদ্ধি আছে দেখছি। আচ্ছা আমি আসি আর খুব তাড়াতাড়ি তোমার আপু কে নিয়ে আসব।”
নিশা আর আমান মুচকি হাসল। নীল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”জানি না তোমাদের আপুর সাথে আমার পথ চলা হবে কি না। তবে তোমাদের আপুর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারি। কিন্তু ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারি না।”
এই টুকু বলেই নীল মলিন হাসল। নিশা আর আমান বলল
“চিন্তা করবেন না ভাইয়া। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নীল হালকা হেসে ভাবল। নিশা আর আমান ও পরির মতো সান্ত্বনা দিতে পারে। ছোট সময়ে কত রকম সান্ত্বনার বানী শুনিয়েছে পরি। পুরোনো কথা ভাবতেই নীলের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। নীল গাড়ি নিয়ে পরিদের বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
পরি একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে একবার মেইন ডোরে।
নীলের আসার নাম ই নেই। করিডোরে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে পরি। মনের ভেতর শান্তি নেই। নীল একা বের হয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই। রাত বারোটা বেজে গেছে।
পরি ডিনার করতে গিয়ে ও পারে নি। মুখ দিয়ে খাবার যাচ্ছিলই না। রাত একটা ছুঁই ছুঁই। পরি ঘুমের ঔষধ খেয়েছিল তাই হাজারো ক্লান্তি নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে। পরি নীলের রুমের দিকে পা বাড়াল। দু সেট এর সোফাতে, গালে হাত দিয়ে বসে রইল।
“ভাই এবার যেতে দেয়,কালকে আবার আড্ডা হবে। রাত দুটো বেজে গেছে। ফোনের ব্যাটারি লো। সবাই চিন্তা করবে।”
নীলের কথাতে সাদাফ মুখ কুঁচকে বলল,”ব্যাটা পুরো চার বছর পর দেখা আর এখনি চলে যেতে চাচ্ছিস? আরে ভাই বউ তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। আরেকটু আড্ডা দিয়ে যা।”
নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,”ভাই টাইম নেই আজ।
কাল জমিয়ে আড্ডা হবে। আই প্রমিস,দশ টাকা বেশি ট্রিট দিব তোকে। তা ও যেতে দে বাপ।”
সাদাফ হাসতে হাসতে বলল,”তোর ফাজলামি আর গেল না। আচ্ছা যা।”
সাদাফ কে বিদায় জানিয়ে নীল চলে এল। এই রাম ছাগলের সাথে আজ ই দেখা হতে হলো। নীল গাড়ি চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত তিন টা বেজে গেল।
নীল ক্লান্ত। ডিনার করা ও হয় নি। অবশ্য ইচ্ছে ও নেই।
ব্লেজার খুলে বা হাতে ঝুলিয়ে বাসার সামনে এল।
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে নীল বাসায় প্রবেশ করেছে। বাড়ি পুরো অন্ধকার। যদিও থেকে থেকে ড্রীম লাইট জ্বালানো। কারো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে দেখে লাইট আর জ্বালালো না সে। ড্রীম লাইট এর মৃদু আলো দিয়ে ই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
করিডোর দিয়ে হেঁটে চলেছে। পরির রুমের সামনে এসে ভাবল একবার পরি কে দেখে যাবে। পরে আবার ভাবল না থাকুক ঘুমুচ্ছে। নীল ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমের দিকে গেল। রুমের লাইট জ্বলতে দেখে নীলের ভ্রু আপনা আপনি ই কুঁচকে গেল। নীল নিজেকে সামলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকেই স্তব্ধ হয়ে গেল সে। নিজের চোখ কচলে আবার তাকাল। না, সে তো ভুল দেখছে না।
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
| ইদানীং অলসতায় ধরেছে। সেই সাথে এইচ এস সি পরীক্ষার জন্য মানসিক চাপ ফ্রি। এডিট করতে ইচ্ছে করে না। নতুবা ইনশাআল্লাহ রোজ পেতেন গল্পটা। যাই হোক, সকলে দোয়ায় রাখবেন। আগামীকাল ফিজিক্স সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা।|