নীলের_পরি (৩৭)

0
7

#নীলের_পরি (৩৭)

পরি সোফাতে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। কি নিষ্পাপ এ মুখ। নীলের ইচ্ছে করছে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিতে। পরক্ষণেই ভাবল না,পরি ঘুমে যদি এতে কোনো ভাবে ওর খারাপ লাগে। তাই নীল নিজের ছোট্ট ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখল। ব্লেজার টা কাবাড এ রেখে পরির কাছে আসল।
দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ পরি কে দেখল। খুব গভীর ভাবেই দেখল। পরি আগের মতো আর গুলুমুলু নেই। বেশ সুন্দর স্বাস্থ্য হয়েছে। খুব বেশি চিকন ও নয়। গায়ের রঙ আগের থেকে কয়েক সেড ফর্সা হয়েছে। আর বোচা নাকটা খানিকটা সরু হয়েছে। নীল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরি কে দেখে নিল। ইস নীল বুঝি আবার নতুন করে পরির প্রেমে পড়ল?
নিজেকে পাগল পাগল ই মনে হচ্ছে ওর। নীল ৮০% নিশ্চিত পরির ফ্যামিলি থেকে ওদের সম্পর্ক টা মেনে নিবে। কিন্তু যদি কোনো ভাবে ওনারা নীলের প্রতি আ হ ত হয় সেটাই ভয়। তবু ও নীল বেশ নিশ্চিন্তে আছে এখন। আগের মতো বুকে পাথর চাপা কষ্ট টা আর নেই। নীল মেঝে তে বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পরির দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইল। এই ঘুমন্ত পরি টা রোজ নীলের পাশে এভাবে ঘুমিয়ে থাকবে বুঝি?

না, পাশে কেন ঘুমোবে? পরি তো নীলের বুকে ঘুমোবে।
নীল আলতো হাতে পরির চুলে বিলি কেটে দিবে। আর মাঝে মাঝে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিবে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে নীলের ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠল।
নীল লক্ষ্য করল,সোফাতে ঘুমোতে পরির বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। নীল মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। পরি কে কোলে করে বেডে এনে শুইয়ে দিল। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল,পরির অবাধ্য চুল গুলো মুখে হেলে পড়ছে। নীল বেশ বিরক্ত হলো। সে ভাবছে,’কেন রে আর কাউকে পাস না শুধু শুধু আমার পরিকে আঁকড়ে ধরিস! পরির চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি সমস্ত টা জুড়ে আমি থাকব, শুধু আমি।’

হঠাৎ ই নীল নিজের কৈশোর জীবন কে অনুভব করতে লাগল। এই সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বড্ড কঠিন।
নীল নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলে ও বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। অবশেষে নীল ভাবল,’পরি আমার স্ত্রী আমি ওকে জড়িয়ে ধরতেই পারি। ওর পাশে ঘুমোতে দোষ কিসের?
আর এমন তো নয় যে পরি আমাকে ভালবাসে না।’

নীল ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে পরির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পরি কে দেখল নীল। পরি ঘুমের ঘোরে কোল বালিস খুঁজতে শুরু করেছে। এপাশ ঘুরতেই পরি নীলের পেট জড়িয়ে ধরল। তারপর নীলের খানিকটা কাছে এসে একদম নীলের বুকের সাথে মিশে গেল।
নীলের বুকের উষ্ণতা পেয়ে পরি নীল কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ঘুমের ঘোরে পরির এমন কান্ড দেখে নীল মুচকি হাসছে। পরি যদি এই পরিস্থিতি দেখতো তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে যেত। পরির লজ্জা মাখা মুখ টা দেখতে নীলের বেশ ভালো লাগে। সত্যি বলতে পুরো পরি কেই নীলের কাছে স্বর্গীয় সুখ মনে হয়। এক হাত দিয়ে পরি কে জড়িয়ে নিল সে। তারপর চোখ বুঝতেই ঘুম মহাশয় নীল কে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে গেল।

সকালের মৃদু আলো চোখে পড়তেই পরির ঘুম ভে ঙে গেল।
পরি চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে উঠে বসতে চাইল কিন্তু কোনো কিছু যেন ওকে আটকে রেখেছে। পরি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো নীল ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। পরির চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেল। নীল এখানে কীভাবে?
পরি আশে পাশে চোখ বুলাতেই বুঝল এটা নীলের রুম।
কাল রাতে নীলের রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর বাকিটুকু বুঝতে পরির আর বেগ পেতে হলো না। হঠাৎ ই পরির বেশ লজ্জা লাগল। নীল ওর পাশে শুয়ে আছে। ইস কি লজ্জা!

এখন যদি নীল জেগে যায় তো পরি লজ্জা তেই ম রে যাবে।
ভাবতে না ভাবতেই নীলের ঘুম টা আলগা হয়ে গেল। নীল চোখ মেলে তাকাতেই দেখল, পরি জেগে গিয়েছে। নীল মুচকি হেসে উঠে বসল। তারপর বলল,”ঘুম কেমন হলো পরি?”

পরি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল,’হুম,ভালো।”

নীল মৃদু হেসে বলল,”শুধু ভালো? আমার তো খুব ভালো ঘুম হয়েছে। ইনজয়েবেল ঘুম।”

নীলের কথাতে পরি থতমত খেয়ে গেল। কি বলছে নীল?
পরি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”মানে?”

নীল কিছুক্ষণ পরির দিকে তাকিয়ে তারপর বলল,’তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা না। আমি কিছুই করি নি।”

নীলের কথাতে পরি দ্বিগুণ লজ্জা পেল। কি সব কথা বলছে ছেলেটা? এতটা লাজহীন কেউ হয়?

নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে ছয়টা বাজে। শীত কাল পড়ে যাওয়াতে সাতটার আগে কোনো কাক পক্ষী ও ঘুম থেকে উঠে না। নীল পরি কে টেনে বেডে শুইয়ে দিল।
তারপর পরি কে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে সমস্ত টাই পরির মাথার উপর দিয়ে গেল। পরি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকল শুধু। খেয়াল হতেই পরি নীল কে ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে লাগল।
কিন্তু বার বার ই অসফল হলো।

পরি মৃদু স্বরে ডাকল। “ছাড়ুন প্লিজ। আম্মু উঠে পড়বে।”

পরির কথাতে নীল পরির দিকে একপলক তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। পরি বোকা বনে গেল। খানিক বাদে নীল মুচকি হেসে বলল,”এত দূরে দূরে থেকো না পরি। নিজেকে সামলাতে পারছি না। বড্ড ইচ্ছে করে কাছে পেতে।”

নীলের কথা শুনে পরির গাল দুটো কমলা রঙ ধারণ করল। নীল জানে পরি লজ্জা পেয়েছে। তাই আর কিছু বলল না।

হঠাৎ ই দরজায় নক পড়ল। পরি শুকনো ঢোক গিলে নিল।
ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে নীল কে বলল,”আমি লুকিয়ে পড়ছি আপনি গিয়ে দরজাটা খুলে দিন।”

পরির কথাতে নীলের ভ্রু যুগল আপনা আপনি ই কুঁচকে গেল। নীল অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,”হোয়াট।”

পরি নিচু স্বরে বলল,”কেউ আমাকে দেখলে কি ভাববে?
আমাকে যদি বলে আমি এখানে কি করছিলাম ?”

পরির কথাতে নীল হাসবে না কাঁদবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। অবশেষে নীল হাসতে হাসতে বলল,”কি বলবে তাই তো? এটা তো খুবই সহজ। বলবে স্বামীর সাথে রোমান্স করছিলাম।”

পরি নীলের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো করে বলল,”আমি কখন রোমান্স করলাম? আপনি ই তো বললেন আপনি কিছু করেন নি।”

এই টুকু বলেই পরি জিহ্বা তে কামড় দিল। সে ভাবছে, এই রে ভুল জায়গাতে ভুল উচ্চারণ করে ফেলেছি।

পরি কে লজ্জায় লাল নীল হতে দেখে নীল হাসতে লাগল।
ময়না ডাক দিতেই বলল,”একটু পড়ে উঠছি।”

ময়না আচ্ছা ভাইজান বলে যেতেই নীল বাঁকা হাসল।
পরি কে এক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে বলল,”আমি এখন যা তা করতে পারি। কিন্তু করব না মিসেস নীল। তবে এত সহজে ছাড়ছি না।”
এই টুকু বলেই নীল পরির গলাতে চুমু দিয়ে দিল। ভোরের মিষ্টি আলোর সাথে নীলের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়েই পরি কেঁপে উঠেছে। নীল পরির গলাতে বেশ কয়েকটা চুমু দিতেই পরি নীল কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। নীল বুঝতে পেরে মুচকি হাসল। পাগলি একটা এই টুকু ভালোবাসা ও নিতে পারে না। পরবর্তী তে কি যে করবে, এত লজ্জাবতী মেয়েটা অথচ সেই নীল কেই গভীর ভাবে ভালোবাসে।

নীল পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”খুব তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে দিব। প্রস্তুত হও পিচ্চি, পিচ্চি বলে কোনো ছাড় নেই।”

নীলের কথাতে পরি লজ্জায় নত হয়ে গেল। কি সব বলছে নীল? এই ছেলেটার মুখে লাগাম নেই। পরি কে লজ্জা পেতে দেখলেই যেন এর শান্তি। ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে দিব, কথাতে ভাবতেই পরির শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। উফ নীল এই ছেলেটা বুঝি পরি কে মে রেই ফেলবে!

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ ন‍ৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here