#নীলের_পরি (৩৮)
নাস্তার টেবিলে বসে আছে সবাই। পরি আর রোজিনা বেগম খাবার সার্ভ করছে। ময়না কিচেন থেকে খাবার এনে দিচ্ছে।
নীল আপন মনে খাবার খাচ্ছে। পরি বার বার নীলের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু নীল পরি কে পাত্তাই দিচ্ছে না। পরির ইচ্ছে করছে নীলের মাথাটা ফা টি য়ে দিতে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে ও উপায় নেই। পরি নীলের মনোযোগ পাওয়ার জন্য খাবার সার্ভ করে নীলের বরাবর খেতে বসল। অল্প একটু খাবার নিয়ে খেতে লাগল পরি। কিন্তু নীল এখনো পরির দিকে তাকাচ্ছে না! যার ফলে পরি বেশ বিরক্ত। হঠাৎ ই ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। পরি ফিঁচেল হাসল। তারপর এক টুকরো খাবার মুখে দিতে দিতে পা দিয়ে নীলের পায়ে খোঁচা মে রে দিল। নীল খাবার খেতে গিয়ে চমকে গেল।
ভ্রু কুঁচকে পরির দিকে তাকাল। কিন্তু পরি তো খাবার খেতে মগ্ন। পরি কে দেখে মোটে ও বোঝার উপায় নেই যে এই কাজ টা পরিই করেছে। কিন্তু আশে পাশে এমন কেউ ও নেই যে নীল কে খোঁচা মা র বে। নীল বিরক্তি ঠেলে আবার খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরি মিটিমিটি হাসছে এবার। পরি নীল কে খোঁচা মা রা র জন্য আবার পা এগোতেই নীল নিজের পা দিয়ে পরির পা আটকে ফেলল। পরির হাত থেকে খাবারের টুকরো প্লেট এ পড়ে গেল। নীল বাঁকা হেসে পরির দিকে তাকিয়ে আছে। পরি বা হাত মাথায় ঠেকিয়ে ভাবছে গেলাম ধরা পড়ে। পরি শুকনো ঢোক গিলে নীলের দিকে তাকাতেই নীল চোখ মে রে দিল। পরি লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। পরি পা ঠেলে বার বার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নীলের পা কে। কিন্তু নীল বারং বার পা আটকে নিচ্ছে।
পরি অসহায় দৃষ্টি তে নীলের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু নীল খাবার খাওয়াতে গভীর মনোযোগ দিচ্ছে। পরি একটু জোড়ে পা সরাতে চাইলেই নীল বোম ফাটিয়ে দেয়। নীল একটু অবাক হয়ে বলল,”পরি এমন করছো কেন? মনে হচ্ছে তোমার পা কোনো বিড়াল এ খামচে ধরেছে।”
পরি হা হয়ে আছে। ও ভাবছে’এই ছেলে নিজেই এমন উল্টো কাজ করে এখন ভাব দেখাচ্ছে! এত গুলো মানুষের সামনে এভাবে লজ্জায় ফেলে দিলেন ওনি। আসলেই এই ছেলেটা নাম্বার ওয়ান বজ্জাত।’
পরি মেকি হাসি দিয়ে বলল,”না, বেড়াল কেন হবে? এক হনুমান পা আটকে ধরেছে।”
পরির কথাতে সবাই থতমথ খেয়ে যায়। আর নীল ভ্যাবলার মতো পরির দিকে চেয়ে রইল।
সবাই একটু সন্দিহান চোখে তাকাতেই পরি বোকা হাসি দিল। হাফসা চোখ মুখ কুঁচকে বলল,”ওয়েট আমি দেখছি কি হয়েছে।”
হাফসা কে নিষেধ করার আগেই হাফসা টেবিলের নিচে তাকাল। টেবিলের নিচে তাকিয়ে হাফসার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। হাফসা মুখ চেপে হাসছে পরি অসহায়ের মতো হাফসার দিকে আর নীলের দিকে চেয়ে আছে। আর নীল এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কিছু ই জানে না। হাফসা কে এভাবে হাসতে দেখে সবাই জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে।
হাফসা একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,”পরির পা একটা হনুমান চেপে ধরেছে।
আর সেই হনুমান টা হলো।”
হাফসা কে আর বলতে না দিয়ে পরি বলল,”না,না, তেমন না। আমি তো মজা করছিলাম। আর হাফসা ও।”
হাফসা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”ওহ তাই বুঝি?”
পরি তুতলিয়ে বলল,”তা নয় তো কী?”
এদের কান্ডে বিষয়টা সবাই খানিকটা বুঝে ও গেছে। তাই সবাই মুখ চেপে হাসছে আর নীল খাবার খাচ্ছে যেন সে কিছুই করে নি। পরির ইচ্ছে হচ্ছে নীলের মাথার সব গুলো চুল ছিঁড়ে ফেলতে। সব সময় পরি কে লজ্জায় ফেলে দিয়ে নিজে নবাব এর মতো ভাব ধরে থাকে। এদের সকলের কথার মাঝে নীল পারমাণবিক বো ম ব্লাস্ট করে দেয়। নীল খাবার শেষ করে চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”সবাই কে একটা কথা বলার ছিল। হাফসা আর অনিক একে ওপর কে পছন্দ করে।”
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হাফসার হাত থেকে পানির গ্লাস টা টেবিলের উপর পড়ে গেল। অনিক শুকনো ঢোক গিলে বলল,”এটাই বাকি ছিল তা ও হয়ে গেল।”
দুপুর একটা। নীল রেডি হচ্ছে আর পরি নীল কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ আগেই নীল পরি কে এসে বলল রেডি হয়ে নিতে। বার বার জিজ্ঞাসা করার পর ও নীল বলে নি কোথায় যাবে। পরি নীলের উপর বিরক্ত। হুটহাট এটা বলে সেটা বলে কিন্তু পরিষ্কার করে কিছুই বলে না। নীল আয়নাতে পরির প্রতিচ্ছবি দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কি অপূর্ব লাগছে পরি কে। নাকের ডগায় রাগ স্পষ্ট। কাউকে রাগলে ও যে এত সুন্দর লাগে নীলের তা জানা ছিল না। অবশ্য আজকাল নীল পরির সমস্ত টাতেই অতিরিক্ত পরিমানে মুগ্ধ হচ্ছে। একেই হয়ত বলে ভালোবাসা। আর ভালোবাসার মানুষ টাকে ভালো লাগা একজন প্রেমিকের রন্ধে রন্ধে মিশে আছে। নীল ও তো একজন স্নিগ্ধ প্রেমিক পুরুষ। তাহলে তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন হবে?
নীল চোখে সানগ্লাস টা দিয়ে চুল গুলো সেট করে নিল।
পরি এখনো এক ই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। নীল পরির সামনে এসে হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই পরি চমকে উঠল।
পরি চোখ মুখ কুঁচকে বলল,”কি হচ্ছে কি? যখন তখন যা ইচ্ছে করে যাচ্ছেন। যার সমস্ত টাই আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে যাচ্ছে।”
পরির এমন অদ্ভুত বাক্য উচ্চারণে নীল খিলখিল করে হেসে উঠল। পরি বিরক্তি নিয়ে তাকালে ও নীলের হাসির কাছে বিরক্তি নামক কঠিন শব্দ টা ব্যর্থ হয়ে গেল। মুহূর্তের মাঝেই এক চিলতে হাসি এসে পরির উপর ভর করল।
নীল হাসি থামাতেই দেখল পরির ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে নীলের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
নীলের চোখ গুলো পরির চোখের দিকে আটকে গেল।
নীল চোখ থেকে সানগ্লাস টা নামিয়ে নিল। পরির চোখ গুলো যে এত টা মায়াবি কখনো সেই ভাবে খেয়াল করে দেখা হয় নি নীলের। চোখ দুটোয় পানি টুইটুম্বর। ঘন কালো পাপড়ি কি স্নিগ্ধ এ চোখ। নীল মুগ্ধ হয়ে পরির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। নীলের কাছে মনে হচ্ছে পরির চোখের দিকে তাকিয়ে এক যুগ সময় অনায়াসেই পার করে দিতে পারবে।
নীলের অদ্ভুত চাহনি তে পরির অস্বস্তি লাগছিল। পরি বার বার চোখের পলক ফেলতে লাগল। দোপাট্টার কোণা মোচরাতে মোচরাতে পরি বলল,”যাবেন না?”
পরির কণ্ঠে নীলের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটল। নীলের চোখ মুখে বিরক্তি ফুটে উঠল। পরক্ষণেই বিরক্তি চলে গিয়ে ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠেছে। নীলের মনে হচ্ছে পৃথিবীর শেষ্ঠ প্রেমিক পুরুষ সে। এক জনম পরি কে ভালোবেসে ও আদৌ কি ভরবে নীলের মন? নীলের মনের এই অদ্ভুত প্রশ্ন নীল কে তাড়া করতে লাগল। ইসসসস এ কেমন অনুভূতি। নীল তো পাগল ই হয়ে যাচ্ছে।
পরি হালকা কাশতেই নীল কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে এল। নীল নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। পকেটে ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে বলল,”হুম চলো।”
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি