নীলের_পরি (৪৪

0
11

#নীলের_পরি (৪৪)

সন্ধ্যা সাতটা। এয়ারপোর্ট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে পরির পরিবার আর নীলের পরিবার।
সবাই নীল আর অনিক কে বিদায় জানাতে এসেছে। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরি এখন আর নীলদের বাসায় থাকবে না। নীল ফিরে আসার পর ধর্ম মতে বিয়ে করে একে বারে শ্বশুর বাড়ি যাবে। অবশ্য এতে কারো দ্বিমত না থাকলে ও নীলের বেশ বিরোধ ছিল। নীল কিছুতেই পরি কে দীর্ঘ চার মাস বাবার বাড়িতে রাখতে রাজি নয়। কিন্তু সবার যুক্তি আর সম্মান রক্ষার্থে নীল কে মেনে নিতে হয়েছে। নীল পরির উপর খানিকটা রেগে আছে। কারণ পরি নিজে ও বনানীতে থাকতে চেয়েছে। ফ্লাইট নয়টায়। নীল গুরুগম্ভীর হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পরি অশ্রু সিক্ত চোখে নীলের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। কিন্তু নীলের অভিমানের পাল্লা বেশ ভারী হয়ে গেছে। যার ফলে পরির দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। নীলের আচরণে পরির মনে বেশ আ ঘা ত লাগল। পরি আর ও কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে অশ্রু আড়াল করে পেছন ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। কিন্তু নীল পেছন থেকে হাত ধরে নিল। আর তখনি পরির চোখের অশ্রু বাঁধ ভে ঙে ঝড়ে পড়ল। নীল পরিকে কাছে এনে শক্ত গলায় বলল,”কাঁদছো কেন? আমার কথা তো একদম ই শুনতে চাও না। বাসায় থাকলে কি হত? বনানীতেই কেন থাকতে হবে?”

পরি অঝোরে কান্না করতে লাগল। পরির কান্না দেখে নীলের অভিমান আইসক্রিম হয়ে গলে গেল। সে পরির চোখের পানি দু হাতে মুছে দিয়ে বলল,”এমন করে কাঁদলে আমি কিন্তু যাবই না।”

পরি কান্না রত অবস্থাতেই বলল,”বনানীতে না থাকলে আমি রোজ কলেজ এ যেতে পারব না। মেডিকেল এ এডমিট হলে নিয়মিত তো যেতেই হবে তাই না? তাছাড়া আরো কত রকমের ঝামেলা আছে আর পরিবারের সবার সাথে ও কিছুটা সময় কাটাতে চাই।
পরবর্তী তে আমি আমার আরেক পরিবারের কাছেই চলে যাব। ও বাড়িতে থাকলে আপনাকে আরো বেশি মনে পড়বে।”

নীল এবার বুঝতে পারল। আসলে ও মেয়েটিকে আড়াল করতে চাইছিল না। গ্রামে থাকলে কিছুটা চিন্তাহীন হতো। অপরাধীর মতো করে বলল,”আম সরি জান। আমি এটার কথা ভাবি ই নি। আমার মনে হয়েছিল কেউ যেন তোমায় বলতে না পারে বিয়ে হওয়ার পর ও তুমি বাবার বাড়িতে পড়ে আছ। আর তাই বলেছিলাম গ্রামে গিয়ে থাকতে। অবশ্য গ্রাম থেকে বনানী আসতে দুই ঘন্টার ও বেশি সময় লাগবে ,তুমি একা একা,সাথে জ্যাম এর বিষয় টা ও আছে।
এই সমস্ত কিছু আমার মাথাতেই আসে নি। আম সরি পরি। প্লিজ কাঁদে না।”

পরি কান্না থামিয়ে নীলের ব্লেজারের কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলল,”আই প্রমিস আপনি আসার পর আমি কখনোই দীর্ঘদিন বনানীতে থাকব না।”

নীল মুচকি হেসে বলল,” সেটার আর দরকার হবে না ম্যাডাম। আমার সেই বিষয়ে খেয়াল আছে।”

নীলের কথার মানে পরি বুঝতে পারল না। কিন্তু তবুও পাল্টা প্রশ্ন করল না পরি।
পরি মুচকি হেসে বলল,”সাবধানে যাবেন।
আর হ্যাঁ পৌছে আমায় কল করে জানাবেন।”

নীল মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,”তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যদি এত গুলো মানুষের জীবনের কথা না হতো তাহলে আমি কিছুতেই যেতাম না।”

পরি নীল কে জড়িয়ে বলল,”এমন টা বলতে নেই। আমাদের এই ছোট বিচ্ছেদ এর জন্য আমরা অন্য কারো জীবনকে বিপর্যয়ে ফেলতে পারি না।”

নীল পরি কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল।
পরির থুতনি উঁচু করে আলতো ভাবে পরির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। তারপর নীল মুচকি হেসে বলল,”নিজের খেয়াল রেখো প্লিজ।
আমি আমার কলিজাকে রেখে যাচ্ছি,যত্ন করে রাখবে কিন্তু।”

নীলের যাওয়ার কথা ভাবতেই পরির মুখ বিস্বাদ এ ছেয়ে গেল। কিন্তু বিস্বাদ কে ছাপিয়ে নীল কে আর ও শক্ত হাতে জড়িয়ে নীলের বুকে মাথা রেখে বলল,”আপনার আমানত সব সময় ই রক্ষিত থাকবে নীল।
আমি সম্পূর্ণ খেয়াল রাখব।”

নীল মুচকি হেসে বলল,”আজ ও কি বলবে না তুমি?”

পরি চোখ খিচে বন্ধ করে নিল। সামান্য তিন শব্দের বাক্য উচ্চারণ করতে গিয়ে পরির শরীর কাঁপছে। নীল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পরির মুখ থেকে স্বগীর্য় সেই শব্দ শোনার জন্য। পরি নীলের ব্লেজার খিচে ধরে বলল,”আমি আপনাকে ভালোবাসি নীল।
আই লাভ ইউ নীল। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আপনার সাথে কাটাতে চাই আমি।”

নীলের কানে পরির বলা সেই অম্রিত তুল্য শব্দ বার বার বেজে চলছে। পরিকে বুকের সাথে আরো বেশি করে মিশিয়ে নিল নীল।
তারপর মৃদু স্বরে বলল,”আমার জীবনের অংশ বিশেষ তুমি। তোমায় ছেড়ে বেঁচে থাকাটা অতি ভয়ঙ্কর পরি। আমি ও খুব ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।”

দুজনে একে অপরকে বেশ কিছুক্ষণ আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে থাকল। এক মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসতেই পরি আর নীল নিজেদের ছাড়িয়ে নিল। দুজনের মুখেই মৃদু হাসি কিন্তু অন্তরে ঘা। দুজনেই একে অপরকে হাসি মুখে বিদায় জানাল। প্রকৃতি সাক্ষী হলো দুটি হৃদয়ের বিচ্ছেদের।

আবার দেখা হবে , নতুন এক ভোরে। সঙ্গী হবে ত্রিভুবন, অন্তরে রবে প্রশান্তি, মুখে রবে বিশ্বজয়ের হাঁসি। এই ছোট্ট বিচ্ছেদ কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শারীরিক অবস্থানের বিচ্ছেদ হলে ও দুটো মনের বিচ্ছেদ কখনোই হবে না। কখনোই না।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here