#নীলের_পরি (৪৫)
নীল লন্ডনে চলে গেছে আজ ছয় দিন হয়ে গেল। প্রথম তিন দিন তো পরি নীলের সাথে ফোনে কথা বলার সময় অঝোরে কেঁদেছে। আর নীল বেচারা পরি কে সান্ত্বনার বানী শুনিয়েছে। কিন্তু পরির কান্না থামত ই না। আর তখন নীল উপায় অন্তর না পেয়ে বলত আচ্ছা আজ ই টিকেট কেটে চলে আসব। তখন পরি কান্না থামিয়ে বলত না আর সে কাঁদবে না। এ ভাবেই দুঃখের মাঝে কেটে যায় ছয় ছয় টি দিন।
পরি মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছে। চুল গুলো আধ ভেজা।
জানালা ছাপিয়ে মিষ্টি রোদ এসে পরির গাল দুটো রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। শীতের দুপুরে এক চিলতে রোদ যেন স্বর্গীয় অনুভূতি। ইস, সাথে যদি থাকত প্রিয় মানুষটি। তখনই পরির ফোন বেজে উঠল। একরাশ আনন্দ নিয়ে পরি ফোন রিসিভ করল। তারপর ঠান্ডা স্বরে বলল,”হ্যালো।”
“বউ,ভালো লাগছে না। এত কাজের চাপ।”
“ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না তাই না?”
“তুমি না খাইয়ে দিলে ভালো করে খাই কি করে?”
“আপনার এই খামখেয়ালিপনা আমার একদম ভালো লাগছে না।”
‘আহ কি এমন করেছি বলো। মাথা ব্যথা করছিল তাই কল দিলাম একটু চিল করার জন্য আর…..”
ওর কথা শেষ না করতে দিয়েই পরি চিৎকার করে উঠল।
“কিহহ মাথা ব্যথা করছে? আর আপনি ফোনে আমার সাথে বক বক করছেন!”
“এমন করছো কেন? দিন রাত ভরেই তো ঐ সাদা চামড়ার পাবলিক গুলোর সাথে বক বক করতেই হয়। প্রচুর কাজ। তাই ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলে রিলাক্স হই।”
নীলের কথাতে পরির ভ্রু কুঁচকে গেল। পরি একটু উঁচু গলায় বলল,”রাত মানে?”
পরির কথাতে নীল বোকা হয়ে গেল। এই মেয়ে জাতি একটা ছোট্ট কথা কে ও ধরে নেয়। তিল কে তাল বানিয়েই ছাড়বে!
‘রাত মানে তুমি যেটা ভাবছ সেটা না রে বোকা। আমার কোম্পানির ৮০% স্টাফ ছেলে। আর আমাদের রাত দশ টা অবধি অফিসে কাজ করতে হচ্ছে। বাসায় এসে ও ফাইল হাতে বসে পড়তে হয়। যদি ও চোখে ঘুম নামক জিনিসটা উবে গেছে তবু ও শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে যায়।”
পরি মন খারাপ করে বলল,”দিন গুলো শেষ হচ্ছে না কেন?
আপনাকে কত কষ্ট করতে হচ্ছে। আপনি যদি ঠিক ঠাক না খান না তো আমি ও খাব না কিন্তু। আপনি অসুস্থ হয়ে গেলে আমি কিন্তু আপনার সাথে কথাই বলব না।”
পরির কথাতে নীল বেচারার অবস্থা খারাপ। পরি কে বলাই ভুল হয়েছে। নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল,”আচ্ছা খাব। আর আমার পিচ্চির জন্য অলয়েজ সুস্থ সবল থাকব।”
পরি মুচকি হেসে বলল,”দ্যাটস লাইক এ মাই হাসবেন্ড।”
পরির কথাতে নীল হেসে উঠলো। মেয়েটা পারে ও বটে!
তারপর হাসি থামিয়ে বলল,”আর শুনো বিডির সময় রাত দুইটার দিকে কল দিব। তোমার কি খুব অসুবিধা হবে বউ ?
আসলে ঐ টাইমে ফ্রি টাইম আর স্পেস পাব।”
পরি মুচকি হেসে বলল,”একটু ও না। আপনি এত কষ্ট করবেন আর আমি এই টকু পারব না? যদি ও অত রাতে কথা বললে আম্মু আব্বু রেগে যাবে আর আমি ও ওদের কে জানিয়ে কথা বলতে গেলে লজ্জা পাব। বাট আই ক্যান ম্যানেজ।”
” হাউ?”
পরি একটু ভাব নিয়ে বলল,”আবার কীভাবে? লুকিয়ে লুকিয়ে, ব্যালকনির কোণাতে গিয়ে চুপিচুপি কথা বলব।”
পরির কথাতে নীল হাসতে হাসতে শেষ। নীলের হাসির শব্দ পেয়ে পরি বলল,”এই এই আপনি হাসছেন কেন?”
নীল হাসি থামিয়ে বলল,”আর কি করব বউ। এই প্রথম কোনো বউ তার হাসবেন্ড এর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবে। আহ ইতিহাসে লেখা প্রয়োজন।”
নীলের কথাতে পরি ও হাসতে লাগল। হাসি হাসি স্বর নিয়েই বলল,”হুম বিয়ের আগে হয় নি তো প্রেম। বিয়ে করে লুকিয়ে লুকিয়ে জমিয়ে হবে প্রেম।”
পরির কথা শুনে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পরি যে এত টা দুষ্ট তা বোঝা দায়। পরি ধীর কণ্ঠ সুর তুলল।
“চুপিচুপি বলো কেউ জেনে যাবে। জেনে যাবে কেউ জেনে যাবে। ধ্যাত গান টাই ভুলে গেছি।”
নীল একটু অভিমানী কণ্ঠে বলল,”পরি তুমি না সেই আগের মতো দুষ্টুমি করছো। বি ডি তে থাকতে একটু ও দুষ্টুমি করো নি কেন? তুমি জানো কতো মিস করেছি তোমার দুষ্টুমি।”
পরি মিটিমিটি হাসল।
“কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমার বর টা কতটা দুষ্ট মি করতে পারে।”
“আচ্ছা? তাহলে বলছে তো বি ডিতে আসলে এবার দুজন ই দুষ্ট মি করব?”
“অবশ্যই পুরো দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলবে।”
নীল হাসতে হাসতে বলল,”তো মিসেস নীল রেডি থাকবেন কিন্তু। এবার আর কোনো ছাড় দিব না, সোজা সুজি….”
নীল কে আর বলতে না দিয়ে পরি বলল,”আপনি থামুন তো।
সব সময় আজে বাজে চিন্তা ভাবনা।”
নীল বুকে হাত দিয়ে বলল,”ইস বউ লজ্জা পায় বুঝি। এবার এসে সব লজ্জার অবশান ঘটিয়ে দিব। দেখব আমার লজ্জাবতী পরি কত টা লজ্জা পেতে পারে।”
পরি নীলের এই সামান্য কথা গুলো শুনে লজ্জা তে মিইয়ে যাচ্ছিল। কিছু বলতেই পারছিল না।
নীল ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,”আচ্ছা পরি রাখছি এখন। একজন ডিলার এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট আছে। রাতে অপেক্ষা কোরো। আর নিজের খেয়াল রেখো।”
“আচ্ছা। আপনি কিন্তু বেশি সময় না খেয়ে থাকবেন না।
আর রাতে সময় করে ঘুমাবেন।”
“আচ্ছা আচ্ছা, বউয়ের যেমন ইচ্ছা। এখন রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”
পরি মুচকি হেসে বলল,”আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।”
ফোন রেখেই পরি বেডে উপর হয়ে শুয়ে পড়ল। নীলের সাথে কথা বললেই ভেতর টা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব হয়। এখন শুধু নীলের ফিরে আশার অপেক্ষা। পরি নীলের জন্য হাজার বছর ও অপেক্ষা করতে রাজি। কিন্তু অপেক্ষা শেষে নীল তার কাছে আসলেই হবে। বড়ো বেশি ভালোবাসে যে।
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি