নীলের_পরি (৪৬)

0
6

#নীলের_পরি (৪৬)

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসার কলিং বেল বাজতেই আমান গিয়ে দরজা খুলে দিল। রোজিনা বেগম আর হানিফ আহমেদ কে দেখেই আমান সালাম জানাল। মিসেস রাহেলা সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করছিলেন। কলিং বেল এর আওয়াজে তিনি গ্যাস অফ করে মেইন ডোরের কাছে আসলেন।
নীলের পরিবারের সবাই কে দেখে ওনার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে মেহমান দের জন্য নাস্তা আনতে গেলেন। পরি ছাদে কাপড় আনতে গিয়েছিল। এক গাদা কাপড় হাতে বাসায় ফিরে সবাই কে দেখে বেশ অবাক ই হলো। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রোজিনা বেগমের পাশে গিয়ে বসল। রোজিনা বেগম মিষ্টি হেসে পরির মাথা তে হাত বুলিয়ে বললেন,”কেমন আছিস মা?”

“আলহামদুল্লিহ আম্মু আমি ভালো আছি। তোমরা সবাই কেমন আছ?”

হানিফ আহমেদ মুখ গোমড়া করে বললেন,”বাড়ির মেয়ে বাসায় না থাকলে কি করে ভালো থাকি বল তো?”

পরি মিষ্টি হেসে বলল,”আব্বু আমি তো আপনাদের সাথেই আছি। আর এখানে তো কয়েকটা দিন। আপনি কিন্তু ঔষুধ পত্র ঠিক মতো খাবেন। আপনার প্রেসার অলয়েজ ই হাই থাকে।”

হানিফ আহমেদ মুচকি হেসে বললেন,”জানি রে মা। আমার ডাক্তার মেয়ে দশ দিনেই আমাকে সোজা বানিয়ে দিয়েছে।
এখন আর কোনো ভুল হয় না।”

পরি মুচকি হেসে বলল,”অবশ্যই ঠিক হতেই হবে দেখতে হবে না কার বউ।”

এই কথা বলেই পরি জ্বিভ এ কামড় দিল। নাস্তা আনার বাহানায় দ্রুত গতিতে কিচেনে চলে গেল। তা দেখে সবাই অট্টহাসি তে ফেটে পড়ল। হাফসা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে সেই কখন থেকে অনিকের সাথে কথা বলছে কিন্তু অনিক ছাড়ছেই না। এখন ই নাকি অনিকের ফ্রি টাইম। হাফসা তো ভেবেছিল অনিক বুঝি লন্ডনে গিয়ে হাফসা কে ভুলেই যাবে।
কিন্তু এই ছেলে তো মহা ঝামেলা দিচ্ছে। এতক্ষণ ধরে কথা বলছে সবাই কি ভাববে? একে বারে বিচ্ছিরি বিষয়।

পরি আর মিসেস রাহেলা সবাই কে নাস্তা দিল। মিসেস রাহেলা সোফাতে বসে বললেন,”আপা হাফসা কে তো নিয়ে
আসতে পারতেন। মেয়েটা কয়েকদিন এখানে থেকে যেত।”

রোজিনা বেগম হালকা হেসে বললেন,”এসেছে তো।ফোনে কথা বলছিল তাই বাইরেই আছে।”

পরি চোখ মুখ ছোট ছোট করে বলল,”হাফসা কার সাথে এতো কথা বলে আম্মু। প্রায় ঘন্টা তো হয়েই গেল। নিশ্চয়ই অনিক ভাইয়ার সাথে।”

পরির কথা শেষ হতে না হতে কলিং বেল বেজে উঠল।
পরি মিষ্টি হেসে বলল,”এসে পড়েছে,আমি দেখছি।”

ডোর খুলতেই হাফসা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”কেমন আছিস?”

পরি হাফসা কে আগা গোড়া পরখ করে দেখে নিল। পরি চোখ নাচিয়ে বলল,”কি ব্যাপার? তুই কোথায় ছিলি?”

হাফসা পরি কে ঠেলে ভেতরে আসতে আসতে বলল,”চুপ কর। ঘেমে যাচ্ছি আমি কোথায় একটু আদর যত্ন করবি তা না করে প্রশ্ন করে যাচ্ছিস!”

পরি ডোর লাগিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,’কিহ,এই ঠান্ডার মধ্যে তোর ঘাম হচ্ছে! পাগল টাগল হলি নাকি?”

হাফসা মেকি হাসি দিয়ে বলল,”চেপে যা,সবাই দেখছে।”

পরি বিষয়টা বুঝতে পেরে আর কিছু বলল না। সবাই মিলে সন্ধ্যার নাস্তা সেরে নিল। রোজিনা বেগম আর হানিফ আহমেদ সবার জন্য এক গাদা জামা কাপড় আরো এটা সেটা এনেছেন। পরি তো বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
পরি মুখ গোমড়া করে বলল,”আম্মু এতো সব কেন, কিসের জন্য?”

রোজিনা বেগম মৃদু হেসে বললেন,”বাহ রে আমার মেয়েটা এত দিন এখানে থাকবে ওর প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র লাগবে না নাকি?”

মিসেস রাহেলা সোফাতে বসে বললেন,”আপা তাই বলে এতো সব?”

‘কি যে বলি আপা,নীল জোর করে পাঠাল। জানেন ই তো পরি কে এখানে রাখতে চায় নি। তাই এই সব পাঠাল।”

সবাই মিলে আর ও কিছুক্ষন গল্প করল। এশার নামাজ শেষ হওয়ার পর ই আফজাল হোসেন বাসায় ফিরলেন। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সবাই একসাথে ডিনার শেষ করে নিল। অনেক জোর করে সবাই কে রাজি করাল আজকে রাত টা ওনাদের থেকে যেতে হবে। আর হাফসার এডমিশন টেস্ট আশা অবধি হাফসা এখানেই থাকবে। কালকে ড্রাইভার দিয়ে হাফসার জামা কাপড় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

পরি আর হাফসা মিলে কিচেনে চলে গেল প্যান কেক বানাতে। প্যান কেক এর সাথে চকলেট সিরাম বেশ লাগে খেতে। প্যান কেক বানানো হলেই কেক এর কয়েকটা ছবি তুলে নিল তারপর ফেসবুকে পোস্ট করে দিল।

সবাই কে প্যান কেক পরিবেশন করে পরি আর হাফসা কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন হয়েছে তা জানার জন্য পরির আর হাফসার মনে হচ্ছে প্রাণ টাই বেড়িয়ে যাচ্ছে।
সবাই কেক মুখে দিয়ে চুপ করে আছে। হাফসা আর পরি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। বেশ কিছুক্ষণ চলে যাওয়ার পর সবাই যখন বলল কেক টা অসাধারণ হয়েছে তখন পরি আর হাফসা লাফিয়ে উঠল। ওদের কান্ড দেখে সবাই হাসতে হাসতে কেকের স্বাদ নিতে লাগল। পরি আর হাফসা প্ল্যাট এ কেক নিয়ে করিডোর দিয়ে লাইব্রেরির রুমে যাচ্ছিল। রুম টা বেশ সুন্দর করে গোছানো। বিরাট বড়ো কাঁচের দেয়াল সাথে খোলা বারান্দা তাই ঐ রুমে যাচ্ছিল। তখনই হাফসার ফোন বেজে উঠে। অনিকের ফোন দেখেই হাফসা লাফিয়ে উঠে। কল রিসিভ করতেই দেখতে পায় অনিক আর নীল ল্যাপটপে আছে। হাফসা ও কল টা ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করে দিল,তারপর চারজনে কথা বলতে লাগল। অনিক আর নীল তো আফসোস করেই যাচ্ছে। ইসসস বিডি থাকলে স্পেশাল হাতের বানানো প্যান কেক খাওয়া যেত। পরি আর হাফসা ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে প্যান কেক খাচ্ছে। হঠাৎ ই নীল নানা রকমের চকলেট বের করল। তারপর নীল আর অনিক ওদের দেখিয়ে চকলেট খেতে লাগল। পুরো বাচ্চা দের মতো কাহিনী! হাফসা রেগে বোম হয়ে যাচ্ছে। হাফসা রাগ দেখিয়ে বলল,”তোরা কি একাই খেতে পারিস? কালকেই এক গাদা চকলেট এনে তয়দের দেখিয়ে দেখিয়ে খাব।”

অনিক হাসতে হাসতে বলল,”ফেইক।”

পরি চোখ মুখ কুঁচকে বলল,”মোটে ও না। বি ডি তে ও অনেক ভালো চকলেট আছে। নট ফেইক।”

নীল চকলেট এ বাইট দিয়ে বলল,”উফফফ কি খেতে বিডিতে বসে অনেক এই বলে পিউর চকলেট খাচ্ছে।
সব ই ঢপ। অনিক এই সব পেত্নি দের কথা কানে নিস না।”

পরি তো রেগে আগুন। ইচ্ছে হচ্ছে নীলের চুল গুলো ছিঁড়ে ফেলতে। পরি নীলের দিকে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে হুট করে কল কেটে দেয়।

নীল বেচারা বোকা হয়ে যায়। আজ অনিক আর নীল দুজনের ই কপালে শনি আছে। ভাবতেই দুজন শুকনো ঢোক গিলে।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here