নীলের_পরি (৪৮)

0
6

#নীলের_পরি (৪৮)

আর মাত্র কয়েক টা ঘন্টা। তারপর ই প্রিয় মানুষটির সামনে এসে দাঁড়াবে নীল। মাত্র ই ফ্লাইট লেন্ড করল। নীল একাই এসেছে। অনিক সমস্ত টা গুছিয়ে দশ দিনের মাথায় পরিবার সমেত বাংলাদেশে সেটেল হবে। অনিকের বাবা মা অনিকের এক বার বলাতেই সমস্ত কিছু তে রাজি হয়ে গেছেন। একমাত্র সন্তান অনিক। ছেলের খুশি ই সবার আগে। নীলের মুখে বিশ্ব জয় করা হাসিহ সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে। সব কিছু গুছিয়ে নিতে চার মাস এর জায়গায় সাড়ে পাঁচ মাস লেগেছে। তবু ও দিন শেষ এ যে সব কিছু ভালোই ভালোই মিটেছে এটাই অনেক। অবশ্য এই কয়েক মাস খুব বেশি খারাপ কাটে নি নীলের। সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাকত। আর সময় পেলেই পরির সাথে ফোনে কথা বলে রিল্যাক্স সময় পার করত। রাত ভর ও আড্ডা, সব মিলিয়ে জমিয়ে প্রেম হয়েছে। এখন শুধু ধর্ম মতে বিয়ে করে পরি কে সম্পূর্ণ রূপে নিজের করে নেওয়ার পালা। নীল এয়ারপোর্ট এ আসতেই কয়েক জন লোক এসে নীলের ব্যাগ পত্র নিয়ে নিল। সবাই জানে নীল দশ দিন বাদে আসবে। কিন্ত নীল আজ কে এসে সবাই কে চমকে দিবে।
এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে নীল নিজের প্রিয় নীল রঙা গাড়ি টিতে উঠে বসল। বরাবর ই নিজেই ড্রাইভ করতে পছন্দ করে নীল। তাই ড্রাইভার কে গাড়ি রেখে অন্য গাড়ি নিয়ে চলে যেতে বলল। রাত প্রায় দশ টা ছুঁই ছুঁই। গ্রামে এই সময় টা অনেক রাত হলে ও ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে এই সময় টা সন্ধ্যা হওয়ার মতোই। চারদিকে মানুষের ভীর। শীত চলে গিয়ে বসন্ত শেষ হতে চলল। তাপমাত্রার পরিমান অত্যন্ত সন্তুষ্টজনক। নীল গাড়ির জানালার কাঁচ খুলে দিল ঢাকার দম ফাপর হওয়া আবহাওয়ার মাঝে ও কোথায় হতে যেন ফুরফুরে বাতাস নীল কে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার আলো গুলো বেশ মোহিনীয় লাগছে। যদি ও লন্ডনের তারতম্যর কাছে অত্যন্ত ক্ষীণ তবু ভালো লাগছে। নীলের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে স্নিগ্ধ হাসি। ইস কত শত দিন পরে প্রিয়তমার দেখা পাবে নীল। পরি কখনো ই ভিডিও কলে আসতে চায় না। ওর নাকি লজ্জা লাগে। আচ্ছা পরি কি আর ও শুকিয়ে গেছে নাকি গুলুমুলু হয়েছে? সেই ছোট্ট মিষ্টি গুলুমুলু পরির কথা মনে পড়তেই নীলের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা স্নিগ্ধ হাসি টা শব্দ হাসি রূপে পরিনত হয়। কি মায়াবি মেয়েটা।
নানা ভাবনার মাঝেই ছন্দপতন ঘটল। এক বিশাল মাপের জ্যামের মাঝে। মনের খুশি টা খানিকটা উবে গেল নীলের।
পরি কে দেখার এই সময় টুকু নষ্ট হচ্ছে। নীল বিরক্তি নিয়ে গাড়ি তে বসে রইল। দীর্ঘ ঘন্টা খানেক গাড়ি তে বসে রইল নীল। ফাঁকে কয়েক রকমের গান ও শুনে নিল। কিন্তু জ্যাম খুলছেই না। নীল গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। সামনে তাকিয়ে বিশাল মাপের জ্যাম দেখে নীলের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফুটে উঠেছে। কি ভয়ংকর জ্যাম।

নীল খানিকটা এগিয়ে জানতে পারল মন্ত্রীর ছেলে আর তার বন্ধুরা মদ খেয়ে উলোট পালোট ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল, রাস্তার ধারে এক চা বিক্রেতার ভ্যানের সাথে গাড়ি লাগিয়ে দেয়। লোকটার এত পরিমান লস হওয়ার পর ও মন্ত্রীর ছেলে গাড়ি থেকে নেমে লোক টাকে মা র ধোর করতে আসে আর তখনি পাশে থাকা পাবলিক বাঁধা দেয়। তারপর ই বিশাল বড় ঝামেলার সৃষ্টি হয়। পাশেই টিভি চ্যানেল অফিস ছিল তাই সাংবাদিক রা ও চলে আসে। আর এই নিয়েই বিরাট ঝামেলা পেকে গেছে। গত তিন ঘন্টা ধরে নাকি এসব চলছে। রাস্তা ব্লক হয়ে আছে ,নীলের ইচ্ছে করছে ঐ মন্ত্রীর ছেলের মা থা টা ফাটিয়ে দিতে। নীল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জ্যাম ছাড়ার অপেক্ষা করতে লাগল। আর ও আধ ঘন্টা চলে যাওয়ার পর ও যখন জ্যাম গেল না তখন নীল পকেট থেকে ফোন বের করে কাউ কে ফোন দিলো। রাগি কণ্ঠে বলল
“চল্লিশ মিনিট, চল্লিশ মিনিটের মধ্যে জ্যাম ফাঁকা চাই।
এস সুন এস।”

ফোন কেটে দিয়েই গাড়ি তে পিঠ ঠেকিয়ে লম্বা শ্বাস নিল নীল। নীলের ক্ষমতা নীল সব সময় ই আড়ালে রাখতে চায়।
কিন্তু বার বার পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। অবশ্য লাইফ রিস্কে রাখার থেকে নিজের ক্ষমতা আড়ালে ব্যবহার করা টাই উত্তম।

নীল গাড়ি লক করে আশে পাশে ঘুরতে লাগল। জ্যামের মাঝ খানে থেকে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। নীল খানিকটা আগাতেই দেখতে পেল একটা বারো তেরো বছর বয়সী ছেলে ফুল হাতে বসে আছে। মনে হচ্ছে সন্ধ্যার পর ফুল গুলো বিক্রি ই হয় নি। খুব বেশি ফুল নয় বিশ কি পঁচিশ টা গোলাপ হবে। কিন্তু ফুল গুলোর রঙ যেমন টকটকে ঠিক তেমনই তরতাজা। ফুল গুলো দেখতেই পরির কথা মনে পড়ে গেল নীলের।

এতক্ষণের বিরক্তিকর পরিস্থিতি কাঁটিয়ে নীল স্নিগ্ধ হাসি হাসল। ছেলেটার কাছে এগিয়ে যেতেই ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। সামান্য হেসে বলল,”স্যার ফুল লাগব? একদম তরতাজা।”

নীল মুচকি হেসে বলল,”হু তা তো দেখছি। আচ্ছা এখন তো বারোটা ছুঁই ছুঁই বাসায় যাস নি কেন?”

ছেলেটা করুণ হেসে বলল,”মা অসুস্থ স্যার আর বাপে রিক্সা চালায় এখনো আহে নাই। একটু পর আইসা আমারে সাথে করে নিয়া বাড়ি ফিরব।”

নীল মুচকি হেসে বলল,”আজ কয়টা ফুল বিক্রি করেছ?”

“ছয় টা স্যার।”

“কত টাকা লাভ হয়েছে?”

“ত্রিশ টাকা।”

নীল মুচকি হেসে বলল,”কয়টা ফুল আছে তোমার কাছে?”

ছেলে টা গুনে বলল,”পঁচিশ টা স্যার।”

নীল ভ্রু কুঁচকে বলল,”ফুল তো লেবেল করে বিক্রি করা হয়।
তাহলে মোট একত্রিশ টা ফুল আনলে কি করে?”

ছেলেটা দীর্ঘ হাসি দিয়ে বলল,”স্যার আমার ছোট বইন ডার গোলাপ অনেক পছন্দ। তাই মহাজনের থেকে একটা ফুল চাইয়া আনছি।”

নীল সমস্তটা বুঝতে পারল। ভেতর থেকে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস আসল। এই বয়সে এদের পড়াশোনার সময় আর এরা কি করছে ফুল বিক্রি।

ছেলেটার ডাকে নীলের ঘোর কাটলো নীল মুচকি হেসে বলল,”হু নিব তো। আচ্ছা বল তোর এই সব গুলো ফুলের দাম কত?”

ছেলেটার মুখে বিশাল এক হাসি ফুটে উঠল। ছেলেটা অংক কষে বলল,”একটা পনের টাকা কইরা তাইলে মোট হইল ৩৭৫টাকা।”

নীল মুচকি হেসে বলল,”বাহ খুব ভালো হিসেব করতে পারিস দেখছি। পড়াশুনা করিস?”

নীলের মুখে প্রশংসা শুনে ছেলেটা খানিকটা লজ্জা পেল।
লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,”স্যার আগে পড়তাম এহন পড়ি না।ক্লাস 5 পর্যন্ত পড়ছি।”

নীল ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই রকম কত হাজার হাজার বাঁচ্চা রা পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে না। কত রকমের স্বপ্ন থাকে এদের মনে কিন্তু কিছুই পূরণ হয় না।

নীল মৃদু হেসে ফুলের গুচ্ছ হাতে তুলে নিল। তারপর পকেট থেকে হাজার টাকার নোট বের করে দিল। ছেলেটার মুখে সঙ্গে সঙ্গে কালো আভায় ছেয়ে গেল। নীল মুচকি হেসে বলল,”খুচরো চাই নি আমি। এই টাকা টা তোর ফুলের দাম ই।”

ছেলেটা মিষ্টি হেসে বলল,”কিন্তু স্যার আমার ফুলের তো এতো দাম না।”

নীল কাঁধের ব্যাগ থেকে চকলেট বক্স বের করতে করতে বলল,”এই ফুল গুলো যার জন্য নিচ্ছি সে আমার কাছে অনেক বেশি দামি।সতার জন্য নেওয়া সব কিছুই দামি। এই অসময়ে তোর কাছে এমন তরতাজা ফুল পেয়েছি এটা আমার কাছে অনেক বড়ো বিষয়।”

এই কথা টুকু শেষ করেই নীল হাজার টাকার নোট টা আর চকলেট বক্স দিয়ে বলল,”টাকা টা রাখ। আর এই চকলেট গুলো তোর বোনের আর তোর জন্য।”

ছেলেটা মৃদু হেসে জিনিস গুলো গ্রহন করল। নীল কিছু দূর এসে আবার ছেলেটার কাছে ফিরে গেল। ছেলেটার চোখে কৌতূহল।

নীল হেসে ফুলের গুচ্ছ থেকে একটা গোলাপ বের করে বলল,”এই টা তোর বোনের জন্য। খুব পছন্দ তাই না? আর ওর জন্য ই তো একটা বেশি এনেছিলি। বলিস একটা ভাইয়া দিয়েছে।-

নীলের হাত থেকে গোলাপ নিতে নিতে ছেলেটার চোখ টইটুম্বর হয়ে যাচ্ছিল। চোখে মুখে উপচে পড়া কৃতজ্ঞতা।
নীল ছেলেটার মাথায় বার কয়েক হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে আসল।

নীল কে সেই সন্ধ্যা থেকে কল করে যাচ্ছে পরি। এখন রাত একটা বাজতে চলল নীল ফোন ধরছে না। অবশ্য বিকেলে যখন ফোনে কথা বলেছিল তখন নীল বলেছে আজ রাতে মিটিং আছে তাই কথা হবে না। পরি মন খারাপ করে ব্যালকনি তে চলে আসল। একদম ই ভালো লাগছে না।নীলের সাথে কথা বলে কিংবা কথা বলতে বলতে ঘুমানো পরির অসভ্য এ দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আকাশে বিশাল বড়ো চাঁদ উঠেছে,পূর্ণিমার রাত। চারদিকে সন্ধ্যার আলোর মতো লাল কালো আভা বিরাজ করছে। মানুষ জন কম থাকলে ও জনমানবশূন্য বলা যায় না। আজকাল পরি,প্রকৃতি কে দেখে একটু বেশি ই মুগ্ধ হচ্ছে। মেডিকেলে ভর্তির পর মানব শরীর,আর প্রকৃতির কিছু বিষয় নিয়েই সারাক্ষণ পড়ে থাকতে হয়।

বৃষ্টি হবে বোধহয়। আকাশ টা থেকে থেকে ঝলকানি দিচ্ছে।
কি অপূর্ব সে দৃশ্য। পরি লম্বা একটা শ্বাস নিল। মনের ভেতর উতাল পাথাল ঝড় হাওয়া বইছে। হঠাৎ ই সব কেমন জানি ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতি কাউ কি বরন করে নেওয়ার চেষ্টায় আছে। কিন্তু কাকে?

ঠিক তখনই পরি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নীল।
পরি প্রথম দিকে বেশ ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু প্রিয় মানুষটার স্পর্শ চিন্তে বিন্দু মাত্র অসুবিধা হয় না।কিন্তু নীল কি করে আসতে পারে? পরি পেছন ঘুরে তাকিয়ে নীল কে দেখতে পেয়ে অবাক এর উপর অবাক হয়। নীল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এই কথা টা যেন পরি মানতেই পারছে না।
পরি কি আজকাল জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে? পরি কাঁপা কাঁপা হাতে নীলের দু গাল স্পর্শ করে। না এটা তো নীল তার নীল। পরির চোখ দুটো পানিতে ঘোলাটে হয়ে যায়। এই বুঝি চোখ দিয়ে অশ্রু বর্ষন নেমে যাবে।পরি অস্ফুট স্বরে বলল
“নীল।”

নীল মুচকি হেসে পরি কে দু হাতে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। প্রিয়তমার স্পর্শ আহ কি শান্তি। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ টা মাসের পর প্রিয়তমার ছোঁয়া, প্রিয়তমার দেখা পাওয়া সত্যিই স্বর্গীয় সুখ। হঠাৎ ই নীল নিজের বুকে পানি অনুভব করল। নীল ভ্রু কুঁচকে নিল। মেয়েটা কথায় কথায় কাঁদে। এত কান্না কোথায় থেকে যে আসে নীল তা ভেবে পায় না। নীল পরির মাথায় চুমু খেয়ে বলল,”সব সময় কাঁদো কেন? তুমি জানো কাঁদলে তোমায় আবেদন ময়ী লাগে। তখন মনে হয় এই বুঝি কিছু একটা করে ফেলব। এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যি।”

পরি নীলের বুকে হালকা হাতে কয়েকটা কিল ঘু ষি দিয়ে বলল,”একদম মজা করবেন না আমার সাথে। আপনি কেন বলেন নি আজ কেই আসবেন? আপনার সাথে কথা বলতে না পেরে বুকের ভেতর তীব্র য ন্ত্র ণা হচ্ছিল। আর আপনি আমার সাথে ফাজলামি করছেন।”

নীল মুচকি হেসে পরি কে ছাড়িয়ে বলল,”বোকা মেয়ে। আমি তো সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”

পরি অভিমানি স্বরে বলল,”আমার চাই না। কোনো দিন ও সারপ্রাইজ চাই না। আমার শুধু আপনাকে চাই। সব সময় চাই।”

এই টুকু বলেই নীল কে দু হাতে খামচে ধরে পরি।নীল মুচকি হেসে পরি কে জড়িয়ে নেয়। মেয়েটা পারে ও বটে।

পরি নাক টেনে বলল,”একদম দূরে যাবেন না আমার থেকে।”

নীল মিটিমিটি হেসে একটু ঝুঁকে পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”আচ্ছা যাব না। তাহলে তো নিজের করে এখনি নিতে হয়। যদি ও পরি তো শুধু মাত্র আমার ই।”

নীলের কথাতে পরি থতমত খেয়ে যায়। এই ছেলে ঠিক হবার নয়। পুরো অশ্লীল।

পরি নীল কে ছাড়িয়ে বলে,”যত্তসব বাজে কথা। একদম কাছাকাছি আসবেন না।”

পরির কথাতে নীলের হাসতে হাসতে যায় যায় অবস্থা। এই বলে দূরে যাবেন না তো এই বলে কাছাকাছি আসবেন না।

পরি ভ্রু কুঁচকাতেই নীল বলল,”ওকে ওকে আর হাসব না।”

নীল আবার পরির কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,”আমি যে আসব এটা কিন্তু কেউ ই জানত না। আমার শ্বশুর আর শাশুড়ি আম্মু ও জানে না।”

পরি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করল,”মানে?তাহলে আপনি এখানে আসলেন কি করে?”

নীল পরির ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল,”আমার শ্যালক শ্যালিকার সাহায্য নিয়ে।”

নীলের কথা শুনে পরির চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেল।
পরি শুকনো ঢোক গিলে বলল,”ওদের কে বলে এসেছেন?
আল্লাহ কাল কে আমার মান সম্মানের প্লাস্টিক করে ছাড়বে। আপনি যে কি!”

নীল মুচকি হেসে বলল,”উহুম। ওদের কে ঘু ষ দিয়েই এসেছি।”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”কি দিয়েছেন ওদের?”

নীল মেকি হাসি দিয়ে বলল,”ড্রোন।”

পরি চোখ রাঙিয়ে বলল,” উফ কি করেছেন কি। এবার এরা ও ড্রোন এর মতো উড়বে। দুজনে দুটো ক্যামেরা ভে ঙে ছে তাই আবার আব্বুর কাছে ড্রোন চাওয়ার সাহস ই পায় নি।
আর আপনি এদের কে এনে দিলেন!”

নীল পরি কে শক্ত করে জড়িয়ে বলল,”এটা অনেক ভালো ড্রোন।এটার সিস্টেম ও ভালো আর ভাঙবে ও না সহজেই।
আমার শ্যালক শ্যালিকা একটু আবদার করেছে আমি ওদের আবদার রাখব না বলো।”

পরি নীল কে ছাড়িয়ে বলল,”এবার আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।”

নীল পরি কে ছাড়ার বদলে আরো কাছে নিয়ে আসে।
এক হাতে জড়িয়ে। অন্য হাত দিয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ পরির সামনে নিয়ে আসে।ফুল গুলো দেখেই পরির মন প্রজাপতির মতো উড়তে লাগে। পরি যখন ফুল গুলো নিতে যাবে, ঠিক তখনই নীল ফুল গুলো সরিয়ে ফেলে।

পরি মুখ গোমড়া করে বলল,”এটা কি হলো।”

নীল একটু ভাব নিয়ে বলল,”কিছুই না। এই ফুল নিতে হলে ঘুষ দিতে হবে। কথায় আছে না কিছু পেতে হলে কিছু দিতেও হয়।”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”কি!”

নীল দুষ্ট হেসে বলল,”জাস্ট একটা হামি। নট লিপস, ঐ টা তুমি পারবে না। আমি জানি। গালে দিলেও হবে।”

পরি ভেংচি কেটে বলল,”পারব না।”

নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল,”ওকে লাগবে না। আমি এখনি বাসার সবাই কে জাগিয়ে দিচ্ছি।”

পরি ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,”এই কেন জাগাবেন?”

নীল মুচকি হেসে বলল,”বলব পরি আমাকে এই ভাবে মাঝরাতে ফুল নিয়ে আসতে বলেছিল।”

পরি বেচারি অসহায়ের মতো করে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো। নীল ভাবলেশহীন ভাবে বলল,”তোমার কাছে অপশন তো আছেই নয় হামি দাও,আর না হয় আমি সবাইকে….

পরি চোখ বন্ধ করে বলল,”আমি রাজি।”

নীল মুচকি হেসে খানিকটা ঝুঁকে নিল। পরি ধীরে ধীরে ঠোঁট এগিয়ে এনে নীলের গালে ছুঁয়ে দেয়। নীল পরির দিকে তাকাতেই পরি সঙ্গে সঙ্গে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। আর নীল পরি কে জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here