নীলের_পরি (৫১) ~সমাপ্ত~

0
201

#নীলের_পরি (৫১) ~সমাপ্ত~

ফিরোজা রঙা গাউন পড়ে আছে পরি। মুখে ব্রাইডাল প্রসাধনীর ছোঁয়া । একদম রাজকন্যার মতো দেখতে লাগছে পরি কে। মেহেন্দির অনুষ্ঠান বলে কথা, একটু সাজ গোঁজ না হলে চলে? মুখে লাজুকতা হাসি,বন্ধু বান্ধবী আত্মীয় স্বজনে টইটুম্বর পুরো বাড়ি। বিশাল অনুষ্ঠান হচ্ছে,সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার মাঝে নীলদের বাসার সবাই পরিদের বাসায় চলে আসল। তরুন তরুণীরা নীল ও তার বন্ধু বান্ধবের সাথে ফাজলামিতে ব্যস্ত। পরি একা একা বোর হচ্ছে। মনে হচ্ছে পরি নিতান্তই সাজানো এক পুতুল। নীল আড়চোখে পরি কে দেখে যাচ্ছে। শ্যালক শ্যালিকাদের পাল্লায় পড়ে বউ কে দেখার ও সুযোগ পাচ্ছে না বেচারা। আধ ঘন্টা পর কোনো মতে উঠে এসেছে নীল। অন্যদিকে হাফসা আর অনিকের এনগেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এই ফাঁকে পরির হাত ধরে আড়ালে নিয়ে যায় নীল। পরি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,”আহ কি করছেন কি? বাড়ি ভর্তি মানুষজন।”

নীল ঘোর লাগানো কণ্ঠে বলল,”তো?”

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”মানে টা কি? লোকে দেখলে বিষয়টা কি হবে। ছাড়ুন তো এখন।”

“এত সহজে ছাড়ছি না। আমার বউ আমি ধরেছি তাতে কার কি হুম? তবে এক শর্তে ছাড়তে পারি।”

“কি শর্ত? একটু ফাস্ট বলুন প্লিজ কেউ এসে না পড়ে।”

“তুমি করে বলো। মিসেস নীল তুমি তোমার বর কে তুমি করে বলবে সেটা ও এই মুহূর্তেই।”

নীলের কথা শুনে পরির বুক ধুকপুকানি শুরু করে দিল।
নীল কে তুমি বলতে বেশ অস্বস্তি তে পড়তে হয় পরির।
অথচ এক সময় তুই করে ও বলেছে। নীল পরির দু পাশের দেয়ালের হাত রেখে সামান্য ঝুঁকে বলল,”বলো।”

পরি নীলের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে তুতলিয়ে বলল,”পারব না। আমার অস্বস্তি হয়। আপনি ই ঠিক ঠাক।”

নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল,”আচ্ছা সমস্যা নেই তো এভাবেই থাকো।”

পরি চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,”মানে?”

“মানে আমার দু হাতের বাঁধনে ই আটকে থাকো। দেখি কতক্ষণ থাকতে দেখে পারো। অবশ্য আমার কোনো সমস্যা ই নেই। সমস্ত টাই তোমার ইচ্ছে মিসেস নীল।”

পরি ভেংচি কেটে বলল,”আমার ও সমস্যা নেই।”

পাঁচ মিনিট যেতেই এই দিকটায় কারো আসার আওয়াজ পেলো পরি। পরি হুরমুরিয়ে বলল,”এই এই কে যেন আসছে ছাড়ুন প্লিজ। এসে এই ভাবে দেখলে পুরো ঘেটে যাবে। বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে ছাড়ুন প্লিজ।”

“পারব না।”

“মানে টা কি!”

“তুমি ও তো বললে পারবে না। তো আমি ও বললাম পারবো
না।”

পরির ইচ্ছে হচ্ছে নীলের মাথা টা ফা টি য়ে দিতে। কেমন লেগে লেগে কথা বলছে। পরি হাত দিয়ে নীল কে ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু ব্যর্থ হলো। অন্যদিকে কারো আসার আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। পরি তাড়া দিয়ে বলল,”প্লিজ ছাড়ুন। প্লিজ….’

কিন্তু নীল ছাড়তে নারাজ। অগত্যা পরি হার মেনে নিল।
পরি কয়েকবার দম নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,”নীল ছাড়ো প্লিজ।”

পরির কথাতে নীলের মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি ফুটে উঠল।
পরি চোখ মেলে তাকিয়ে বলল,”এই বার তো ছাড়ো প্লিজ।”

নীল ছাড়ার বদলে পরি কে উল্টো আরো আঁকড়ে ধরল।
পরি নীলের দু হাত সরাতে সরাতে বলল,”কেউ এসে পড়বে। আর আমি তো তোমার শর্ত মেনেছি। প্লিজ ছাড়ো না,প্লিজ নীল।”

নীল পরি কে আরেকটু কাছে টেনে বলল,”উহুম আসবে না।”

পরি ব্যগ্র হয়ে বলল,”একটু আগেই তো কারো পায়ের শব্দ পাচ্ছিলাম।”

নীল মুচকি হেসে উঠল। পরি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকাতেই নীল বাঁকা হাসল। নীলের এই হাসির মানেটা পরি ঠিক ঠাত্তর করতে পারল না। নীল চোখ নাচিয়ে পকেট থেকে ছোট্ট একটা রিমোট বের করে দেখাল। বাকিটা বুঝতে পরির আর অসুবিধা হলো না। নীল একটু দূরে ছোট্ট একটা রেকর্ডার রেখে ছিল যার থেকেই পায়ের আওয়াজ আসছিল।
পরির ইচ্ছে হলো নিজের গালে নিজেই ঠা স ঠা স করে চড় বসিয়ে দিতে। পরি এত ভীতু কেন? কেউ আসলে কি পরি একাই লজ্জা পেতো নীল ও তো পেত। পরি নীলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিশা আর আমান এসে হাজির।

আমান আর নিশা কে দেখে পরি দমে গেল। নিশা ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,”হাফসা আপু আর অনিক ভাইয়া রিং পরাবে। সবাই তোমাদের খুঁজছে।”

পরি নীলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে হন হনিয়ে চলে গেল।
নিশা আমান আর নীল পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে ই খিল খিল করে হেসে উঠল।

রাত নয়টা সবাই জড়ো হয়েছে মেহেদী দেওয়ার জন্য।
পরি কে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে। পরির বরাবর নীল পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। নীলের সাথে বেশ কয়েক বার পরির চোখাচোখি হয়ে গেছে। যতবার চোখাচোখি হচ্ছে নীল ততবার ই ফ্লাইং চুমু কিংবা চোখ মারছে। কি লজ্জা জনক বিষয় কেউ দেখে নিলে! নীলের লাগামহীন কণ্ঠে পরি বার বার লজ্জা আর অস্বস্তি তে নুইয়ে যাচ্ছিল।
এভাবেই নীলের খাম খেয়ালি পানা কান্ড সহ্য করতে করতে পরির মেহেদী দেওয়ার পর্ব শেষ হয়ে যায়। ডিনার করার সময় পরি পড়ল মহা মুশকিলে। হাতে মেহেদী দিয়ে কি করে খাবে ও? মিসেস রাহেলা খাবার নিয়ে এগিয়ে আসলেই নীল সামনে এসে হাজির হয়। পরি ভ্যাবলার মতো নীলের দিকে তাকাতেই নীল মেকি হাসি দেয়। মিসেস রাহেলার উদ্দেশ্যে নীল বলল,”আন্টি আপনি ডিনার সেড়ে নিন আমি পরি কে খাইয়ে দিচ্ছি।”

মিসেস রাহেলা কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারলেন না। ওনার ই অস্বস্তি হচ্ছে ওনি মৃদু হেসে নীলের হাতে খাবার দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন। পরি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হয়ে গেল। নীল চোখ মারতেই পরি মাথা নিচু করে নেয়।

এভাবেই হাসি মজা হৈ হুল্লোড় উল্লাস এ কেটে যায় মেহেন্দির অনুষ্ঠান। হলুদের দিন হয় আরেক কান্ড।
নীল পরি কে হলুদ লাগাতে চলে আসে। তার বউ এর গায়ে প্রথম হলুদ টা নাকি সেই লাগাবে। নীল তো নিজের মতো স্বাভাবিক ই আছে। কিন্তু পরি লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে। বড়ো ছোট সবাই মিলে পরি কে আরো ও লজ্জা দিয়ে যাচ্ছিল।
হলুদ দেওয়ার সময় নীল পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলল,”তৈরি থেকো কাল কে আর ছাড়ছি না।”

নীলের কথাতে পরির নিশ্বাস ভারী হয়ে যায়। শরীরে অস্বাভাবিক কম্পন শুরু হয়। এই নীলের ভালোবাসায় পরি ম রে ই যাবে। তবু ও বারং বার নীলের ভালোবাসা পরির চাই ই চাই।

পরি কে বধুর বেশে সাজানো হচ্ছে। লাল টকটকে রঙা বেনারষির সাথে ভারী গহনা। সাথে রয়েছে ব্রাইডাল মেকআপ। কি অদ্ভুত পরির বিয়ের সাত মাস হয়ে গেলে ও কিন্তু পরি বউ সাজে নি। আজ প্রথম বউ সাজছে পরি।
পরির ভেতর অসম্ভব লজ্জা কাজ করছে। যার খানিক টা রেশ মুখে ও দেখা যাচ্ছে। নীলের সামনে গেলেই বোধহয় সে জ্ঞান হারাবে। সাজ কমপ্লিট হলে বিউটিশিয়ান মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে মাশআল্লাহ। বিউটিশিয়ান পরির থুতনি উচু করে বলল,”পরি আজ তোমায় পরিপূর্ণ লাগছে। সেইদিন এত সুন্দর লাগার পর ও কোথায় যেন খামতি ছিল। আজ কোনো কিছুর কমতি নেই। তোমাদের গল্প শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। আল্লাহ তোমাদের জীবন সুন্দর করুক।”

বিউটিশিয়ানের কথায় পরির মনে স্নিগ্ধতা চলে আসে।
সত্যি সে খুব খুশি। নীলের মতো কাউকে জীবনে পেয়ে পূর্ন পরি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এমন একজন কে তার করে পাঠানোর জন্য ।

কিছুক্ষণ আগেই নাকি বরযাত্রী এসেছে। পরি কে ফেলে ই সবাই বরের কাছে চলে এসেছে। পরি বোরিং ফিল করছিল। তখনই হাফসা রুমে ঢুকে পরি কে জড়িয়ে ধরে। চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে পরির কানের পিঠে লাগিয়ে বলল,”মাশআল্লাহ আমার ভাবির দিকে কেউ নজর না দিয়ে দেয়।”

পরি মিষ্টি হেসে বলল,”তোর ভাই ই দিবে দেখে নিস।”

পরি কে হালকা ধাক্কা দিয়ে হাফসা বলল,”সে তো দিবেই অনেক কিছুই দিবে আজকে।”

পরি হাফসার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হাফসা দমে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই কাজি চলে আসেন বিয়ে পড়াতে।
অবশেষে পবিত্র সেই তিন কবুল উচ্চারণ করে ধর্ম মতে পরি আর নীল বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়।
কবুল বলার সময় পরির চোখ দুটো ভরে যায় অশ্রু তে।
এ চোখের পানি খুশির পানি। পবিত্রতার পানি , পূর্ণতার পানি , দীর্ঘ অপেক্ষা অবসানের পানি।

বিদায় দেওয়ার সময় পরি অপ্রতিরোধ্য ভাবে কান্না করে।
মিসেস রাহেলা , নিশা আর আমান ও অনড়গল কান্না করতে থাকে। আফজাল হোসেন চোখের কোণের পানি টুকু আড়াল করে মিসেস রাহেলার থেকে পরি কে ছাড়িয়ে আনেন। মেয়ে মানেই একটা সময় পর অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। মেয়ে মানে শান্তি, পবিত্রতা, স্নিগ্ধতা। তবে একদিন সেই মেয়েটিকে অন্যের ঘর আলো করার জন্য পাঠাতে হয়।
কি অদ্ভুত এ পৃথিবী। যে মেয়েটা তার বাবার ঘর আলো করে রাখে সেই মেয়েটিকে একটা সময় পর সেই ঘর ছেড়ে দিতে হয়। পরি আফজাল হোসেন কে জড়িয়ে কেঁদে উঠে। এই পরিবার কে অনেক বেশি ভালোবাসে পরি। এদের ছাড়া পরি যে অসম্পূর্ণ। আফজাল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”পরি মা জীবন টা অনেক কঠিন রে। দেখ না আমার সেই ছোট্ট পরির সাথে আমি কতটা অন্যায় করে ছিলাম। একজন সফল পিতা নই আমি। তবে বিশ্বাস কর তোকে খুব ভালোবাসি।”

পরি আফজাল হোসেন কে শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,”আব্বু তুমি নিজেকে দোষারোপ কোরো না।”

আফজাল হোসেন মৃদু হেসে বললেন,”খুব সুখি হবি মা।”

রাত সাড়ে আটটা বিদায় না দিলে গুলশান পৌঁছাতে খুব দেরি হয়ে যাবে ওদের। আফজাল হোসেন নিজের আবেগ সামলিয়ে পরি কে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলেন। নীলের হাতে মেয়ের হাত দুটি দিয়ে বললেন,”আমি পিতার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি নি বাবা। পরির ভালো থাকা তোমার হাতে দিলাম।”

নীল মুচকি হেসে আফজাল হোসেন কে আশ্বস্ত করে বলল,”চিন্তা করবেন না বাবা। দায়িত্ব যখন নিয়েছি তখন পরির চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ও ঝরতে দিব না।
অপরাধী তো আমি ও ছিলাম। তবে স্বামী হিসেবে কোনো অভিযোগের সুযোগ দিব না।”

নীলের কথাতে আফজাল হোসেন স্বস্তির হাসি হাসলেন।
তিনি জানেন নীল নামের ছেলেটির কাছে তার মেয়ে সব থেকে বেশি ভালো থাকবে , সব থেকে নিরাপদে থাকবে।

পরি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সবাই বিদায় জানাল। সবার চোখের কোণেই পানি চিক চিক করছে। এই বিদায় প্রতি টি মেয়ে কেই স্পর্শ করবে। প্রতি টি মেয়ে ই তার বাবার রাজকন্যা থেকে অন্যের ঘরের রানী হতে যাবে। কারো জীবনে রানী নামক স্থান আসবে তো কারো জীবনে সেই সৌভাগ্য আসবে না। তবু ও বাবার ঘর ছেড়ে যেতেই হবে।

পরি অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। নীল পরির হাত টা নিজের হাতের সাথে মিশিয়ে বলল,”কেঁদো না পরি। আমার কষ্ট হয়।”

পরি কে এক হাতে বুকে জড়িয়ে নীল বলল,”এমন ভাবে কাঁদলে চলে? একটু রেস্ট নেও।”

পরি নীলের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে নিল। সারাদিনের ক্লান্তি তার ওপর কান্না করাতে নীলের বুকেই পরি ঘুমিয়ে পড়ল। নীল মুচকি হেসে পরি কে দু হাত জড়িয়ে নেয়। এই মেয়েটা কে কখনো কাঁদতে দেবে না নীল। কখনো না।

রাত দশটা বিশ মিনিটে গুলশানে নিজ বাসার সামনে পৌছায় সবাই। পরি ঘুমিয়ে আছে। নীলের ইচ্ছে হয় না পরি কে জাগাতে। তাই কোলে করেই পরি কে নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আনে। তারপর লিফ্টে করে সতেরো তলাতে চলে আসে। ড্রয়িং রুমে আসতেই পরির ঘুম ভেঙে যায়। আশে পাশে এত মানুষ জনের মাঝে নিজেকে নীলের কোলে দেখে পরি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নীল পরি কে নামিয়ে দেয়। পরি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। বেশ কিছু রিচুয়াল শেষ করার পর পরি কে রুমে নেওয়ার জন্য দাঁড় করানো হয়।
পরি এক পা আগাতে অনিক সামনে পা দিয়ে দেয়। যার ফলে পরি সোজা গিয়ে পরে নীলের বুকে। পুরো সিনেমার মতো। আর সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সুন্দর একটি ফটো তুলে নেয় ক্যামেরা ম্যান। সমস্তটাই অনিক যে প্ল্যান করে করিয়েছে তা বুঝতে কারোই অসুবিধা হলো না। এত মানুষ জনের সামনে পরির ইচ্ছে হচ্ছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। নীলের দিকে তাকাতেই নীল বলল,”অনিক কে দেখাচ্ছি মজা।”

নীল তেড়ে অনিকের দিকে যায়। আর অনিক ও ছুট লাগায়হ করিডোরে এসে অনিক থেমে যায়। অনিক হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,”দেখ ভাই কিল ঘু ষি মা’রবি না।”

নীল অনিকের সামনে এসে অনিক কে চমকে দিয়ে বলল
,”দূর শালা মারব কেন? তোকে তো চুম্মা দিতে মন চাচ্ছে।
এই প্রথম একটা কাজের কাজ করলি।”

অনিক তব্ধা খেয়ে যায়। নীল কি বলছে কি! অনিক মুখ কুঁচকে বলল,”তাহলে আমার পেছনে এভাবে ছুটছিলি কেন?”

“চুম্মা দিতে।”

“এহহহ!”

“এহহহ নয় হ্যাঁ।”

তারপর দুজন ই অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে। রাত প্রায় বারো টা। পরি কে বাসর ঘরে বসানো হলো। পরির এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে । বার বার নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে। মন উথাল পাথাল করছে। দম নিতে ও কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে শ্বাস রোধ হয়ে এখনই মারা যাবে। নীল বন্ধুদের সাথে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলহ সাড়ে বারোটা বেজে যাওয়া তে সবাই নীল কে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। দরজা খোলার আওয়াজে পরি জড়োসড়ো হয়ে বসল। বুকের ভেতর কেমন ধিম ধিম করছে। রঙিন আলোর সাথে কাঁচা ফুলের এক অদ্ভুত মোহনীয়তা কাজ করছে । নীল দরজা লক করে ধীর পায়ে বেডের দিকে আসতে থাকে। নীল যত এগোচ্ছে পরির বুক ধুকপুকানি ততো বেড়ে চলেছে। নীল পরির পাশে এসে বসতেই পরির শ্বাস আটকে যাচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করল। নীরবতা ভেঙে নীল বলল,”পরি সারা দিন অনেক ধকল গেছে ফ্রেশ হয়ে এসো।”

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল। বাথরুমের দিকে আগাতেই নীল বলল,”আমি যদি জুয়েলারি গুলো খুলে দেই কোনো সমস্যা হবে?”

পরি মাথা ঝাঁকাল। নীল মুচকি হেসে পরির হাত ধরে বেডে বসিয়ে দিল। এর আগে ও নীল পরির অনেক কাছাকাছি ছিল কিন্তু আজ এইটুকুতেই পরির দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কেমন অদ্ভুত সব অনুভূতি হচ্ছে পরির। নীল সযত্নে পরির কান থেকে দুল খুলে দিল। গলার অলংকার খোলার সময় নীলের হাত পরির গলাকে স্পর্শ করতেই পরি কেঁপে উঠল। অদ্ভূত ভাবে অঙ্গ জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল ওর। নীল বুঝতে পেরে মুচকি হাসল। ধীরে ধীরে সমস্ত গহনা খুলে দিল।
নীলের হাত যতবার ই পরিকে স্পর্শ করছিল পরি ততো বার ই কেঁপে উঠছিল। নীল একটা শপিং ব্যাগ পরির হাতে দিয়ে বলল,”ফ্রেশ হয়ে এসো।”

পরি শপিং ব্যাগ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসল। প্রায় পঁচিশ মিনিট পর পরি ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পরি কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই নীল পেছন ঘুরে তাকাল।
পরির দিকে চোখ যেতেই নীলের চোখে ঘোর লেগে যায়।
নেশার মতো লাগছে পরি কে। নীলের মনের অবাধ্য ইচ্ছে গুলো চরাও হতে লাগল। নীলের লাগামহীন চোখের চাহনি তে পরির অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। নীলের দেওয়া ব্যাগ টা তে ছিল স্কাই ব্লু রঙের স্লিক শাড়ি। শাড়ি টা স্লিক এর হওয়াতে শরীরের বেশ কিছু অংশ ফুটে উঠেছে। পরি বার বার শাড়ি ঠিক করতে লাগল।

নীলের অদ্ভুত চাহনি পরির মনের ভেতর ঝড় তুলে দিচ্ছে।
শরীর অস্বাভাবিক ভাবে উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করেছে।
নীল ধীর পায়ে পরির দিকে এগিয়ে আসল। পরির কাছে এসে নীল নিজেকে সংযত রাখতে পারলনা। নীল পরির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। পরির হাত খোঁপা করা চুল গুলো খুলে দিতেই বেয়ে নেমে ছড়িয়ে পড়ল পুরো পিঠ জুড়ে। নীলের চোখে অসম্ভব পরি কে পাওয়ার নেশা। পরি কে পেছন ঘুরিয়ে নিল নীল। পরির চুল গুলো সাইট করে পরির অর্ধ উন্মুক্ত পিঠে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ করে।
সঙ্গে সঙ্গে পরির শরীরে মাদকতা বয়ে যায়। নীলের ঠোঁটের উষ্ণতা পেয়ে পরির চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এসেছে। পরি পেছন দিয়ে নীলের পাঞ্জাবি খামচে ধরে। নীলের অবাধ্য সব ছোঁয়ায় মেয়েটিকে কাবু করে ফেলল। পরি আবেশে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। নীল ঘোর লাগানো কণ্ঠে পরি কে বলল,”পরি তুমি কি আমাতে হারাতে রাজি? আমার ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করতে রাজি? তোমাকে নিয়ে প্রেম সাগরের বুকে পাড়ি দিতে চাই আমি। দেবে কি আমায় সেই সুযোগ? হারিয়ে যেতে চাই তোমার ভালোবাসায়।”

নীলের কথাতে পরির হার্ট বিট বেড়ে গেল। লজ্জায় পরির গাল রাঙা হয়ে গেল। নীল অধীর আগ্রহে সম্মতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

পরি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। নীল কে খামচে ধরে বলল,”আমি ও চাই।”

পরির সম্মতি পেয়ে নীলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আজ আর কোনো বাঁধা নেই । জায়েজ সম্পর্কে দুজনেই দুজন কে আপন করে পেতে চাচ্ছে। দুটি বিতৃষ্ণা মন বার বার নিজেদের তাড়া দিয়ে যাচ্ছে। নীল পরির চুলের ভেতর হাত গলিয়ে দেয়। অন্য হাত দিয়ে প্রিয়তমাকে শক্ত হাতে আলিঙ্গন করল। পরি কেঁপে উঠে নীল কে সর্বশক্তি দিয়ে খামচে ধরে। নীলের ঠোঁটের উষ্ণতা গিয়ে লাগে পরির কোমল অধরে। দুজনেই ভালোবাসার স্বাদ নিতে থাকে।
প্রেম সমুদ্রে পাড়ি জমালো দুজনেই। যার সাক্ষী হয়ে রইল সুন্দর এ রাতের নক্ষত্ররা। চারদিকে ছেয়ে গেল মোহনীয় ভালোবাসার সুঘ্রান।

~সমাপ্ত~
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here