#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_20
কনকনে শীতের মাঝে লঞ্চের ছাঁদে বসে আছে সবাই। উদ্দেশ্যে নাস্তা করা । তার আগে সবাই চা কফি খাচ্ছে। অভিনব তার স্পেশাল হাতের কফি বানিয়ে এনেছে। তাতে সুখময় চুমুক দিচ্ছে ঝিল। সূর্য এখনো উঠে নি। চার পাশে কুয়াশা আর কুয়াশা ।
অভিনব এক পাশে দাঁড়িয়ে ঝিলের অম্রিতর মতো স্বাদ নেওয়া কফি কাঁপের চুমুক দেওয়া ক্লিক করে নিলো ।
বেশ ভালো হাত সাফাই করতে পারে অভিনব ।
এই যে এতো গুলো ছবি তুলেছে ঝিলের, তার কিছুই জানে না ঝিল।
অভিনব আপন মনেই হাসতে লাগলো। সবাই কে নাস্তার টেবেলে বসানো হলো। আজকে সকালে আইটেম হচ্ছে ভাত। যা দেখে ঝিল নাক কুঁচকালো। অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ ভাতের সাথে কিন্তু হরেক রকমের ভর্তা থাকছে।
মুহুর্তেই ঝিলের চোখ চকচক করে উঠলো। একেই বোধহয় বলে বাঙালি। বাঙালি হচ্ছে ভর্তার পাগল। অভিনব এর আগে এসে বাঙালি রেসট্রন এ ভর্তার আইটেম খেয়েছিল। তারপর থেকে ওর ও প্রিয় হয়ে উঠেছে।
সবাই কে নাস্তা দেওয়া হলো। ভাতের সাথে আছে অনেক রকমের ভর্তা ।
আলুর ভর্তা , বেগুন ভর্তা , চিংড়ী ভর্তা , বাদামের ভর্তা , কাঁকড়া ভাজি আর ডিমের ঝুরি।
বেগুনের ভর্তা ঝিলের পছন্দ নয়। তাই ওহ সেটা খেল না।
অভিনব বেশ তৃপ্তি করে খেল। তবে সকাল হওয়াতে ঝিল তেমন একটা খেতে পারলো না। সকাল সাড়ে ছয় টা বেজে গেছে। শাকীল এসে অভিনবর পাশে বসলো। ঝিল হালকা হেসে স্থান ত্যাগ করলো। এই সব ছেলেদের আড্ডা তে থেকে লাভ নেই ওর। কোন প্রশ্নে ফেঁসে যাবে কে জানে ।
শাকীলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো অভিনব। শাকীল জানালো কটকা আর জামতলা সি বিচ দুপুরে যাওয়া হবে। মাঝে আর ও কিছু স্থানে নামানো হবে।
অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ তাহলে তো আমরা করমজলেই নাইট হোল্ড করতে পারতাম।
শাকীল ও মাথা ঝেকে সম্মতি জানালো। হয়তো কটকার কাছাকাছি নাইট হোল্ড করা টা বেশি সেফ ছিলো।
অভিনব আর কথা বাড়ালো না। ঝিল মেয়েলি আড্ডা তে মজে রয়েছে। তারা কিছু একটা খেলছে। অভিনবর বেশ আগ্রহ হলো।
কিন্তু চার পাঁচ টা মেয়ের সামনে একা একা থাকা টা লজ্জা জনক তাই আর সে দিকে আগালো না।
ঝিল কে ইশারা করে বলল ওহহ ছাঁদে যাচ্ছে। ঝিল প্রতিউত্তরে মুচকি হাসলো। সূর্যটা একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে। খুব মনোরম পরিশেষ । খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে সবাই নিচে চলে গেছে।
আর তাই ছাঁদের দিক টা একদম শুনশান। অভিনবর বেশ ভালো লাগলো। প্রান ভরে শ্বাস নিলো।
মনে হচ্ছে এই গাছ পালা ওর চেনা। তবে দূর দূরান্ত থেকে গাছ গুলো চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শুধুই সবুজের সমারোহ। আকাশের দিকে তাকাতেই এক চিলতে হাসি ফুটলো। কুয়াশা গুলো শিশির হয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে যাচ্ছে। তার ছিটে ফোঁটা অভিনব নিজের মধ্যে ও অনুভব করলো। ইসস বৃষ্টি হলে নেহাত ই মন্দ হতো না।
তবে ফ্রেবুয়ারি মাসে বৃষ্টির দেখা মেলা ভার।
মাথার উপর দিয়ে গাংঙচিল উড়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের নদী গুলো হলো মিঠা পানি আর নোনা পানির মিলনস্থল।
বঙ্গোপসাগরের সাথে হওয়ার দরুন এই রকম অবস্থা ।
সুন্দরবনের স্বাদুপানি জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আদ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এধরনের বন নোনাপানিযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুপানির জীবমন্ডলের পানি সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানির কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়। আর তারপর ধীরে ধীরে গঠিত হয় চর।
কিছুদিন আগে এক চর গড়ে উঠেছে। যে চরের নাম বঙ্গবন্ধু চর। ছাঁদে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো অভিনব।
মাহেরা কে দেখে এক ফালি হাসলো অভিনব। মাহেরা উজ্জ্বল মুখ টা প্রশস্ত করলো। যেন বিশ্ব জয় করে নিয়েছে। অভিনবর পাশে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। অভিনব কোনো কথা বলল না। মাহেরা নিরবতা ভেঙে বলল
_ এখানে কি করছো ?
_ এমনি সকাল টা কে অনুভব করতে আসলাম । তুমি ?
_ বাহহ খুব ভালো তো। আমি তো তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসলাম।
_ আচ্ছা। কিছু দরকার ছিলো ?
_ উহুহম। এমনি আসলাম তোমার সাথে কথা বলতে।
অভিনব ঝরা হাসলো। মাহেরার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। মাহেরা জানালো তার বাবা একজন পলিটিশিয়ান। আর মা কলেজের প্রফেসর।
অভিনব এক ফালি হেসে বলল
_ আমি ও লেকচারার ছিলাম। বাট পড়ানো টা বেশ মুশকিল মনে হয়েছে।
_ আচ্ছা। মেয়েরা বুঝি লেকচার দেওয়ার সময় তাকিয়ে থাকতো।
_ খানিকটা তেমনি।
দুজনেই এক সঙ্গে হেসে উঠলো। মাহেরা হাসতে হাসতে অভিনবর গাঁয়ে এসে পরছে। অভিনব সে দিকে লক্ষ্য করে একটু সরে দাঁড়ালো। কিন্তু মাহেরা আবার কাছে চলে আসছে।
অভিনবর অস্বস্তি হতে লাগলো। তবে মাহেরা বেশ আনন্দ সহিত কথা বলে যাচ্ছে।
অভিনব সরাসরি বারন ও করতে পারছে না। পেছন থেকে কিছু পরার আওয়াজে অভিনব পেছন ঘুরে তাকালো।
ঝিল চালাকি করতে পারলো না। অভিনব স্পষ্ট ঝিলের কুর্তি দেখতে পেল। মাহেরা বক বক করেই যাচ্ছে। অভিনব এক পর্যায়ে বলল
_ আচ্ছা চলো নিচে যাই , দেখি সব কিছু কতদূর।
মাহেরা কিছু একটা ভেবে বলল
_ আচ্ছা চলো।
নিচে নামার সময় অভিনব ,অভিনয় করে বলল
_ ওহহ হো ক্যামেরা টা রেখে এসেছি। তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।
মাহেরা মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। অভিনব দরজার আড়াল থেকে টেনে বের করলো ঝিল কে।
ঝিলের চোখ দুটো টলমল করছে। অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঝিল যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
অভিনব না বোঝার ভান করে বলল
_ এখানে কি করছেন ?
ঝিল থতমত খেয়ে গেল। অভিনব আবার প্রশ্ন ছুঁড়লো। ঝিল চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ এমনি।
অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ ওহহ।
অভিনব ঝিল কে ছেড়ে দিয়ে নিচে নামতে লাগলো। ঝিল ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো। দু ফোঁটা অশ্রু ও গড়িয়ে পরলো। হঠাৎ হেচকা টানে ঝিল চমকে উঠলো। অভিনব ঝিলের দু বাহু ধরে দরজার কাছে চেপে ধরলো।
ঝিল ভয়ার্ত চোখে তাকালো। অভিনব এক দৃষ্টি তে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ঝিলের চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। অভিনব লম্বা করে হেসে ঝিল কে ছেড়ে দিলো।
ঝিল নিজেকে ঠিক করতে লাগলো। অভিনব রুমাল বের করে ঝিলের চোখের পানি মুছে দিলো। ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব শান্ত স্বরে বলল
_ জেলাস হচ্ছেন ?
ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। অভিনব আর প্রশ্ন না করে বলল
_ হাসবেন্ড কে অন্য কারো সাথে দেখলে যে কেউ ই জেলাস হয়।
_ অভিনব।
_ ভুল কিছু বলেছি ?
_ আপনি এসব
_ আপনি প্রেমে পরে যাচ্ছেন ঝিল। গভীর প্রেমে পরে যাচ্ছেন।
অভিনব এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না । ঝিলের বুকের ভেতর ধীম ধীম শব্দ হচ্ছে। অভিনব কি বলে গেল ?
সত্যি কি ওহ প্রেমে পরে গেছে ?
যে সম্পর্ক টা সম্মতি ছাড়াই তৈরি হয়েছিল। সে সম্পর্ক টা কে গ্রহন করতে চাচ্ছে ওহ ?
অভিনবর কথা মনে হতেই ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠলো।
এ কি হচ্ছে ওর ? সত্যি কি ওহ জেলাস ফিল করছিলো?
*
তারপর আর অভিনবর সাথে ঝিলের কথা হয় নি। তবে লঞ্চ থেকে বোর্ট এ নামার সময় কোথা থেকে যেন অভিনব এসে হাজির। অভিনব কে এতো টাই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে যে মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি। ঝিল ফাঁকা ঢোক গিলে অভিনবর হাতে হাত বাড়িয়ে দিলো।
অভিনব যত্ন সহকারে ঝিল কে বোর্টে নামিয়ে নিলো। একি ভাবে আগলে রইলো। এমন ভাবে এক হাতে জড়িয়ে ছে যে কোনো মাছি ও গলতে পারবে না।
প্রথমে ঝিলের অস্বস্তি হতে লাগলে ও পরে বেশ ভালোই লাগলো। বোর্টের মধ্যেই ঝিল স্বাভাবিক হয়ে গেল।
বোর্ট এর একদম কর্নারে অভিনব দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে ঝিলের কি রাগ। আসলে অভিনব এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছে যে একটু হেরফের হলেই সোজা পানিতে।
অভিনব ঝিল কে আশ্বস্ত করে বলল
_ এই কর্নারে অনেক মজা। আপনি ভয় পাবেন না। পরে যাবো না আমি।
কিন্তু ঝিল মানতে নারাজ। সে অভিনব কে নামিয়েই ছাড়লো। কিছু মুহূর্ত পর আবার অভিনব কর্নারে দাঁড়ালো।
ঝিল রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব মেকি হাসি দিয়ে নেমে পরলো। ঝিলের দিকে ফিরে বলল
_ আপনি কর্নারে দাঁড়িয়ে দেখুন অনেক মজা।
_ না বাবা আমার দরকার নেই ঐ সব। পরে ট্যুর এ এসে প্রান টা না চলে যায়।
_ আরে দারান ই না।
_ উহহুহ
_ ঝিল দাঁড়াতে ই হবে।
অভিনব ঝিল কে এক প্রকার টেনে দাঁড় করালো। ঝিল কাঁপতে লাগলো। অভিনব রাগি ফেস করে বলল
_ আমার উপর বিশ্বাস আছে না ?
ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব হেসে ঝিলের দু বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ঝিল কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো দু বাহু ধীরে ধীরে মেলে দিতে।
ঝিল ধীরে ধীরে মেলে দিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস নিলো।
পিউর অক্সিজেন স্বরনালি তে পৌছাতেই যেন অদ্ভুত শান্তি অনুভব হলো।
ঝিল ওহহ হো বলে চিৎকার করে উঠলো। এতো সুন্দর অনুভূতি, ওহ ভাবতে ওহ পারে নি।
অভিনবর দিকে তাকিয়ে কৃতঙ্গতার হাসি হাসলো। অভিনব এক সময়ে ঝিল কে নামিয়ে দিল।
ঝিল আবার বায়না করলো। কিন্তু অভিনব শুনলো না।
কারন ঝিল বেশি উৎসাহিত হয়ে পরেছে। নিজের প্রতি ব্যালেঞ্জ নেই এখন।
কিছুক্ষণ পর বোর্ট টা একটা চরের কাছে এসে থামানো হলো। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আফরা পরে গেল।
তা দেখে সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। মাহেরা হাসতে হাসতে আফরা কে উঠালো।
আসলে এরা এইরকম জঙ্গলে ও কেন যে হিল পরে আসে।
ঝিল কিছু না বলে নামতে লাগলো। কারন ওহ সু পরেছে। তবু ও অভিনব ওকে সাহায্য করলো।
চারদিকে বালু আর বালু , চর টাকে ও বিচের মতোই লাগছে। একটু দূরে ঘন জঙ্গল ।
আফরা বেচারি জুতো হাতে হাঁটতে লাগলো। কারন বালিতে পা ডেবে যাচ্ছে।
ঝিল মিটমিট করে হাসছে। অভিনব নির্দেশক এর কাছ থেকে জানতে পারলো এটা নাকি ডিমের চর।
** ডিমের চরের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । 😒 কটকা অফিস আর জামতলা সি বিচ দুপুরে ঘুরবো ঠিক আছে ?
আর তার আগে দুবলার চর ও যাবো।
সবাই এই পোস্টে রিয়েক্ট দিয়ে আসো প্লিজ
https://www.facebook.com/groups/2025708374237629/permalink/2110055412469591/?app=fbl
** কমেন্টে ডিমের চরের ছবি দিয়ে দিবো।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে