নীলের_পরি (৩২)

0
149

#নীলের_পরি (৩২)

মুখে পানির ঝাপটা পড়তেই পরির জ্ঞান ফিরে এল। চোখ তুলে তাকিয়েই নীল কে খুঁজতে লাগল সে। নীল পরির মাথার কাছে বসে আছে কিন্তু পরি পাগলের মতো আশে পাশে খুঁজে চলেছে। পরি কে ডেসপারেট হয়ে যেতে দেখে নীল এক হাতে পরি কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু পরি শান্ত হচ্ছে না। সে তখনো নীল কে খুঁজে চলছে। অবস্থা খারাপ দেখে পরির মুখ এক হাতে চেপে ধরে ধমকের সুরে নীল বলল,”শান্ত হও। এমন করছ কেন? আমার দিকে তাকাও…।”

নীলের কণ্ঠ শুনে পরি পেছন ঘুরে তাকাল। নীল কে দেখে চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝরতে শুরু করেছে। কতটা প্রশান্তি হচ্ছে মনে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। পরি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে উচ্চারণ করল,”নীল।”

নীল মুচকি হেসে বুঝাল হুমম আমি ই তোমার নীল। পরি নীলের হাতের দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নীলের ডান হাতে বড় ব্যান্ডেজ করা। পরি নীলের হাত ধরে হিচকি টেনে কাঁদতে লাগল। নীল পরির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছে। নীল জানত এমন ই কিছু হবে। কিন্তু পরি এত টা ডেসপারেট হবে তা বুঝে নি। তাহলে এভাবে বাসায় আসত না।

পরি কে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু নীলের কথা পরি মানতে নারাজ। সে বার বার এক বুলি আওড়াচ্ছে কীভাবে হলো,কতটা ব্যথা পেয়েছে। খুব কষ্ট হয়েছে কী না। এবার আর নীল নিজের হাসি থামাতে পারল না। নীল ফিক করে হেসে দিল। পরি কি করছে পরির কোনো ধারনা ই নেই।
আশে পাশে সবাই আছে পরি যেন তা ভুলেই গেছে। পরি নীলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নীলের হাসি কে পাত্তা দিল না। পরি আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পরির এমন কান্ডে সবাই মিটিমিটি হাসছে। কতটা ভালোবাসলে এমন পাগল হওয়া যায় তা বলা মুশকিল।

হানিফ আহমেদ নীল কে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন পরি কে ঘরে নিয়ে যেতে। নীল মাথা ঝাঁকিয়ে পরির দিকে এক পলক চেয়ে নিল। এত ভালোবাসে মেয়েটা?এই মেয়েটা যদি তার হাতে হাত রেখে সারাজীবন থাকে তাহলে তো নীল পরি কে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে দিবে। মেয়েটাকে নীল ও যে খুব ভালোবাসে। নীল মলিন হেসে বলল,”পরি রুমে চলো তারপর তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিব।”

পরি এক মুহূর্ত সময় খরচ না করে উঠে দাঁড়াল। নীলের ডান হাতে ব্যান্ডেজ তাই বা হাত দিয়ে পরি কে আকড়ে ধরল।
তারপর পরি কে নিয়ে নিজের রুমে চলে এল। রুমে আসতেই পরি নীলের যত্ন শুরু করে দিয়েছে। পরি বলেছে,
“আগে আপনি ফ্রেশ হোন তারপর সমস্ত টা শুনব।”

নীলের ফ্রেশ হতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। মানুষের ডান হাত অতি ব গুরুত্বপূর্ণ। পরি নীল কে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।
তারপর হাত মুখ ধুয়ে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে দিল। নীল কে বেডে আধশোয়া করে ডান হাত টা বালিশের উপর রাখল। নীল পরির কান্ডে মুচকি মুচকি হাসছে। পরির কাজ শেষ হলে নীল বলল,”এবার তো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলো।”

পরি কোন ভনিতা না করে বলল,”আমি আপনার জন্য স্যুপ আনতে যাচ্ছি।”

এইটুকু বলেই পরি রুম থেকে চলে গেল। নীল কে বিন্দুমাত্র কিছু বলার সুযোগ ও দিল না। নীল পরির যাওয়ার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটার মাঝে মুগ্ধ হতে হতে নীল পাগল হয়ে গেছে। পাগল এর পর আর কি কোনো উপাধি আছে না কি? নীল কি তবে পাগলের থেকে ও পাগল হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পরি স্যুপ হাতে রুমে ঢুকল। পরি রুমে এসেই বলল,”ওহু কোনো কথাই বলবেন না। আগে স্যুপ টা শেষ করতে হবে।”

পরি এক চামচ স্যুপ তুলে নিল। হালকা করে ফু দিয়ে নীলের মুখের দিকে বাড়িয়ে দিল।নীল নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা ভাবছে। ছোট সময়ে আম্মু যেমন করে এটা সেটা বলে খাইয়ে দিত ঠিক তেমন ভাবেই পরি নীল কে খাওয়াতে লাগল। নীল মুচকি হেসে আয়েসে খাবার খেয়ে নিল।

খাবার শেষ হতেই পরি সিনেমার মতো করে ওড়না দিয়ে নীলের মুখ মুছিয়ে দিল। পরির এমন কান্ডে হতবাক নীল।
আসলে কেউ মানুক আর না মানুক পরি আর নীলের জীবনটা খানিকটা ছায়াছবি ই হয়ে গেছে। নীল কে হাসতে দেখে পরির বেশ অভিমান হলো। পরি অভিমানি কণ্ঠে বলল,”দেখুন অপনি কিন্তু বেশি করছেন। আমি এখন….” এই কথা টুকু বলতেই নীল আহ করে উঠল। পরি লাফিয়ে উঠে নীলের হাত ধরল। সেই সময়ের মতো পাগলামি শুর করেছে। নীল পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”বউ এত ভালোবাসো কেন আমায়?”

পরি প্রতিউত্তরে মুচকি হাসল। নীল পরির এক হাত ধরে বলল,”আমি ম রে গেলে খুব কি কষ্ট পাবে তুমি? নীলের মুখে ম রা র কথা শুনতেই পরির চোখ দিয়ে বর্ষন নেমে এল।”

পরির চোখের পানি নীলের বুকে তীরের মতো বিঁধতে লাগল। পরি কে এভাবে কাঁদতে দেখে নীলের ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই দুটো চ ড় বসিয়ে দিতে। ম রা র কথা টা না বললে কি হত না?

নীল পরি কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,”এই বোকা মেয়ে? এভাবে কাঁদছ কেন? আমি কোথাও যাব না।
তোমাকে ছাড়া আমি কি ভালো থাকব? উহু মোটে ও না।
কাঁদে না পরি।”

পরির কান্নার গতি কমার বদলে বেড়ে গেল। পরি নীলের শার্ট খামচে ধরেছে। মনে হচ্ছে একটু নড়চড় হলেই নীল পালিয়ে যাবে। নীল মলিন হেসে পরির মাথায় চুমু দিয়ে দিল।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here