#নীলের_পরি (৪১)
নীল কে পরির রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে নিশা আর আমান। তাদের হাজারো দাবি মানতে মানতে ক্লান্ত নীল।
প্রথম শর্ত লডুতে হারাতে হবে নিশা আর আমান কে না হলে নো এন্ট্রি। নীল বেশ সফল ভাবেই ওদের কে হারিয়ে দেয়।
কিন্তু দ্বিতীয় শর্ত ছিল একটা ধাঁধা। নীল এই ধাঁধার উত্তর দিতে ব্যর্থ হয় যার ফলে গেইম ড্র হয়ে যায়। তাই নিশা আর আমান শর্ত রাখে একদিন ওদের ফ্রেন্ড সার্কেল দের সহ ট্রিট দিতে হবে। নীল মুচকি হেসে রাজি হয়ে যায়। তারপর ও আরো ও কয়েকটা শর্ত রাখে ওরা নীল সেগুলো তে ও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তবু ও পরির রুমে আসার অনুমতি দেয় নি ওরা। নীল আহত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা দুজন বা হাত চুলকোতে থাকে। নীল ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলা হয়ে যায়। আজকালকের ছেলেমেয়েরা ও এত টা তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পূর্ণ তা নীলের জানা ছিল না। মানতেই হবে যেমন বোন তেমন তার ভাই বোন।
নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল,”বলুন শ্যালক শ্যালিকা আপনাদের দাবি কত?”
আমান আর নিশা আলোচনা করতে থাকে। কিন্তু দুজনের কেউ ই সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছিল না।
নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝল রাত ১২:৩৬ বাজে এরা আজ রাত দুটো বাজলে ও যেতে দিবে কি না সন্দেহ।
নীল হতাশ হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। আর ও দশ মিনিট আলোচনা করার পর ও ওরা উত্তর জানাতে পারল না।
নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”শ্যালক শ্যালিকা আপনারা দুজন আজ সারারাত আলোচনা করে কাল আমাকে জানাবেন প্লিজ। আর আমার পকেটে ক্যাশ দশ হাজার টাকাই পড়ে আছে। এর থেকে বেশি দিতে হলে কাবাড থেকে বের করে দিতে হবে। এত ভেজালের থেকে আজ দশ হাজার টাকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। কাল তোমাদের ডিমান্ড পূরণ করব ওকে?”
আমান আর নিশা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল। এত ভালো জিজু বাহ পুরো এটি এম কার্ড। অবশেষে নীল পরির রুমে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো।
রুমে এসে দরজা লক করে দিল নীল। বেডের এক পাশে বসে আছে পরি। চারিদিকের নানা রঙের ফুলের মাঝে পরি ই যেন এক মাত্র নীল পদ্মফুল।
নীল রঙের পাতলা একটা শাড়ি পড়েছে পরি। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই নরমালি সাদা কাজল দেওয়া। চুল গুলো হাত খোঁপা করা। লাল নীল আলোতে পরিকে মায়াবতী এক রাজকন্যা লাগছে। নীলের চোখ জোড়া বার বার পরি কে স্ক্যান করে যাচ্ছে। আর পরি লজ্জায় রঙিন হয়ে যাচ্ছে।
নীল পরির কাছে গিয়ে পাশ ঘেঁষে বসল। পরির শরীরের সাথে নীলের স্পর্শ লাগতেই পরি কেঁপে উঠেছে। নীল পরির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,”জানো পরি আজ তোমাকে বেশ আবেদন ময়ী লাগছে। আমি তো সামলাতে পারছি না পরি।”
নীলের শান্ত স্বরে বলা অশান্ত বাক্য উচ্চারণ শুনে পরির শরীর কেঁপে উঠল। নীল পরির কোমড় জড়িয়ে ধরে পরির হাত খোঁপা করা চুল গুলো মেলে দিল। পরির কোমড় অবধি চুল গুলো ঝর্ণার মতো বেয়ে পড়ল। নীলের চোখে অদ্ভুত ঘোর। পরি নীলের সেই চোখে হারিয়ে যাচ্ছে বারংবার। নীল ঘোর লাগানো কণ্ঠে আর নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে পরির নাকে চুমু খেয়ে বলল,”ইউ নো পরি আজ আমাদের দ্বিতীয় বাসর রাত। কিন্তু আজ ও আমরা নিজেদের সংযত রাখব।
সকলের মতামত নিয়ে ধর্মমতে বিয়ে করে আমরা আমাদের পরিপূর্ণ করব।”
নীলের কথাতে পরির ধ্যান ভাঙ্গেহ এই মানুষটি এতটা তীক্ষ্ম অনুভূতি বুনতে পারে যা ধারণার বাইরে। ক জন স্বামী পারে স্ত্রীর প্রতি এমন অমায়িক অনুভূতি বিরাজ করাতে।
নীল মুচকি হেসে বলল,”তুমি স্নিগ্ধ পরি,তোমাতে মুগ্ধ আমি।
জানি না কোন মায়াতে পড়েছি। তবে জানি হাজার বছর পর ও বলব এ মায়াবতী শুধু আমারই।”
নীলের অবাধ্য হাত জোড়া আলত হাতে পরির উদর ছুঁয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে নীলের পাঞ্জাবি খিচে ধরল পরি।
নীলের হাতের ছোঁয়া পেতেই পরি আ ত্ম হারা হয়ে পড়ছে।
নীল পরির চুল গুলো আলত হাতে সরিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,”এই টুকু ছোঁয়াতেই বিলীন তুমি।
আমার ভালোবাসার স্বাদ কি করে গ্রহন করবে?”
পরি নীলের পাঞ্জাবি আরো শক্ত করে খামচে ধরে বলল
,”থামুন প্লিজ। আমি এখনই ম রে যাব। এই অনুভূতি যে মারাত্মক নীল।”
নীল মুচকি হেসে বলল;”রোজ আমার ভালোবাসার নতুন নতুন অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ করাব তোমায়। তুমি সে সাক্ষাৎ গ্রহন করবে তো পরি?”
পরি নীলের বুকে মাথা রেখেই বলল,” আপনার সমস্ত অনুভূতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আমি রাজি নীল।
শুধু আমার হাতে হাত রেখে পথ চলিয়ে দিবেন প্লিজ।”
নীল শান্ত কণ্ঠে বলল,”আমার অস্তিত্ব তুমি পরি। আমরা একে ওপর কে ছাড়া অসম্পূর্ণ,আমরা অনন্তকাল এক সাথে পথ চলব পরি। অন্ততকাল।”
পরি নীলের বুকে মাথা রেখে নীলের অনুভূতি গুলো অনুভব করতে লাগল। নীল হঠাৎ ই পরি কে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে আসে। ব্যালকনির বিশাল দোলনাটাতে পরি কে বসিয়ে দিয়ে নীল ও পাশে বসে পড়ল। নীল আলত হাতে পরির থুতনি উঁচু করতেই পরি চোখ বন্ধ করে নেয়।
পরি এত টা লজ্জাবতী তা নীল জানত না। নীল মুচকি হেসে পরির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নীলের উষ্ণ ঠোঁটের সাথে পরির উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ হতেই দুজনে ই কেঁপে উঠে। একে ওপর কে শক্ত হাতে জড়িয়ে নেয়। এই ভালোবাসার অনুভূতি সত্যি ই মারাত্মক। নীল পরি কে দু হাতে জড়িয়ে বুকে টেনে নেয়। নীল আর পরি শীতের রাতের কুয়াশা বিলাশ করতে করতে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়।
পাখির কিচিরমিচির আর তীক্ষ্ম সূর্যের কিরনে চোখ মেলে তাকায় নীল। পরি নীলের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
ঠিক যেন পাখির ছোট্ট বাচ্চা টা শুয়ে আছে। নীল পরির মাথায় চুমু দিয়ে হাত বুলাতে থাকল। কিছুক্ষণের মাঝেই নীলের ফোন বেজে উঠে। যার ফলে পরি ও জেগে উঠে।
নীল ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগল।
পরি আড়মোড়া ভে ঙে বনানীর ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই বহুল পরিচিত রাস্তা টা আজ একটু বেশি ই মুগ্ধ করছে পরিকে। হয়ত প্রিয় মানুষটি পাশে আছে বলে।
ব্যালকনির কোণাতে রাখা বনি প্রিন্স এর আধফোঁটা কলির দিকে চোখ যেতেই পরির মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।
তিন তিন টে বছর ধরে এত যত্ন করার পর ও এই গাছ ফুল দেয় নি। আর আজ সেই গাছ ব্যালকনি টা কে পূর্ণ করে দিল। তবে কি নীলের সাথেই সংযোগ মিলন ছিল এই ফুল?
পরি মুগ্ধ হয়ে আধফোঁটা কলিটি কে দেখে যাচ্ছে। ঠিক যেন বসন্তের ফুটন্ত রঙিন ছবি ।
হঠাৎ ই নীল পরির কোমড় জড়িয়ে ধরে পরির ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,”কি দেখ?”
পরি নীলের দু হাত আঁকড়ে ধরে বলল,”দেখুন না, কি সুন্দর আজ কলি ফুটেছে। এত দিন যত্ন করার পর ও এই গাছ ফুল দেয় নি। আর আজ পরিপূর্ণ করে দিল।”
নীল মুচকি হেসে পরিকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে বলল
“এর বিশেষত্ব কি তা জানো?”
পরি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,”না।”
নীল পরির মাথাতে চুমু খেল।
“আমি বলছি।”
তারপর পরি কে নিয়ে দোলনাতে বসে পরির আঙুলের মাঝে আঙুল দিয়ে নীল বলতে লাগল।
“এর বিশেষত্ব হলো আমাদের সফলতা। আমরা দুজন দুজনার হয়ে ও দূরে ছিলাম। কেউ নিজেদের অনুভূতি জানান দেই নি। আর তাই এই ফুল গাছটা ও অভিমান করে ছিল আমাদের উপর। কিন্তু আমাদের মাঝে এখন আর কোনো বাঁধা নেই তাই বনি প্রিন্স ও জানান দিচ্ছে যে তোরা দুজন মুগ্ধ যুগলবন্দি। তোদের কাছে আমার অভিমান ও হার মেনে নিয়েছে।”
নীলের কথা শুনে পরি খিলখিল করে হাসতে থাকে। আর নীল বরাবরের মতো প্রেয়সীর ভুবনভোলানো হাসিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি