নিবেদিতা #পর্ব_২০ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

0
98

#নিবেদিতা
#পর্ব_২০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
জীবনকে সহজ কিংবা কঠিন বলে আখ্যায়িত করার ভাবনাটা করা যায় নিজের খারাপ সময়ে। তখন ভাবার মতো যথেষ্ট সময় না থাকলেও সময় আপনা-আপনি বের হয়ে যায়। নতুবা জীবন নিয়ে আমাদের এত ভাবারই বা সময় কোথায়? খারাপ সময়টাই উপযুক্ত সময় জীবনকে নিয়ে ভাবার জন্য। এই ভাবনা শেষে কখনো মন শক্ত হয়, কখনো বা ভেঙে পড়ে। আবার কখনো বুকচিরে বেরিয়ে আসে ভারী দীর্ঘশ্বাস। কখনো মনে হয় এই সময়টা আমি পার হতে পারব, আবার কখনো মনে আমি ভীষণ একা। এই সংগ্রাম, এই লড়াই আমার জন্য নয়। আমি আর পারছি না। আচ্ছা ভালোবাসা শব্দটার এত জোর কেন? এত প্রভাব কীভাবে সে একটা মনুষ্য জীবনে ফেলতে পারে? নিজের পরিবার, নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার সমস্ত কিছু কেন তুচ্ছ হয়ে যায় এই ভালোবাসা নামক শব্দটার কাছে? কেন? নিবেদিতা উত্তর খুঁজে পায় না। এত ভাবনা-চিন্তার পর তারও বুক থেকে কেবল ভারী দীর্ঘশ্বাসটাই বেরিয়ে এলো। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল সে। দৃষ্টি দূরে থাকা ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশপানে স্থির। একঝাঁক পাখি কী সুন্দর মনের আনন্দে দলবেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গন্তব্যস্থান কোথায়? নিবেদিতা বিষয়টা নিয়ে আর ঘাঁটাল না। পাখিদের দলবেঁধে উড়ে যাওয়া দেখছে চুপচাপ।

তিন দিন সে ক্লাসে যায়নি, বেকারিতেও যায়নি। সাবিহা সময় করে একবার দেখা করতে এসেছিল। সে ভেবেছিল নিবেদিতা হয়তো অসুস্থ। মন খারাপ দেখে একবার ঘুরতে যাওয়ার কথাও বলেছিল, নিবেদিতা শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ঘুরতেও যায়নি। তবে সাবিহা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে নিবেদিতার মন ভালো করার। সে পলকে কল দিয়ে অনেকগুলো খাবার-দাবার আনিয়ে একটা সুন্দর বিকেল কাটিয়ে গেছে। স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে, ঐটুকু সময় নিবেদিতার আসলেই ভালো কেটেছিল।

এই তিনদিন যখন যখনবাড়িতে কথা বলার সময় হয়েছে শুধু তখনই ফোন ওপেন করত নিবেদিতা। কথা বলা শেষ করে বাকিটা সময় আবার বন্ধ করে রাখত। এখনো সে রুমে গিয়ে বিছানার ওপর থেকে ফোন নিয়ে আবার বারান্দায় এলো। নাসিমা বেগমকে ভিডিয়ো কল দিল। কল রিসিভ করে নাসিমা বেগম প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন,

“তোর ফোন বন্ধ কেন?”

“চার্জ ছিল না।” মিথ্যে বলল নিবেদিতা।

“আমি যখনই ফোন দিচ্ছি শুধু বন্ধ পাচ্ছি।”

“আসলে মা ফোনে যেন কী হয়েছে। ঠিক করা লাগবে।”

“ওহ! টাকা আছে নাকি পাঠাব?”

“আছে।”

“লাগলে বলিস। এখন তো খরচ তেমন নিচ্ছিসই না। তুই চলিস কীভাবে?”

“ঐতো পার্ট টাইম জবের টাকা দিয়ে হয়ে যায়।”

“আজ যাসনি?”

“উঁহুঁ! কেমন যেন জ্বর জ্বর লাগছে। তাই ছুটি নিয়েছি।” এবারও মিথ্যে বলল নিবেদিতা।

নাসিমা বেগম অস্থির হয়ে শুধালেন,

“বলিস কী! বেশি জ্বর? ডাক্তার দেখিয়েছিস? ওষুধ খেয়েছিস?”

মায়ের অস্থিরতা দেখে হেসে ফেলল নিবেদিতা। বলল,

“আস্তে মা! তুমি এত অস্থির হইও না তো। জ্বর অল্পই।”

“তুই বললেই তো আর আমি চিন্তা ছাড়া থাকতে পারি না। আমি তো মা, মায়ের চিন্তা তুই বুঝবি না। যখন মা হবি তখন বুঝবি।”

“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে! এখন বলো বাড়ির সবাই কেমন আছে?”

“সবাই ভালো আছে। এই ভালো কথা নিবু, নির্ণয়ের কী খবর? কথাটথা হয় তোর সাথে?”

মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল নিবেদিতার।তবুও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,

“হয় মাঝে মাঝে।”

“আপার সাথে কথা হলো সেদিন। সুখীর নাকি অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে।”

নিবেদিতা অবাক হয়ে বলল,

“কী! কেন?”

“নির্ণয় আর সুখীই নাকি ডিসিশন নিয়েছে যে ওরা বিয়ে করবে না। বিয়ে তো হলো নির্ণয়ের অফিসের কলিগের সাথেই।”

সবটা নিবেদিতার মাথার ওপর দিয়ে গেল। কোথাও কিছু একটা রহস্য তো আছে যেটা ওরা কেউই জানে না। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতেই নিবেদিতা গিয়ে দরজা খুলে দিল। ওকে পাশ কাটিয়ে ঝড়ের বেগে ভেতরে প্রবেশ করল নির্ণয়। চুপটি করে বিছানার ওপর বসল। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নিবেদিতা। ফোনের অপরপ্রান্তে নাসিমা বেগম ‘হ্যালো, হ্যালো’ করছেন। হুঁশে এসে নিবেদিতা বলল,

“আমি তোমাকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি, মা।”

এরপর কল কেটে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নির্ণয়ের দিকে তাকাল। নির্ণয় বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,

“কথা শেষ?”

নিবেদিতা এ কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করল,

“আপনি এখানে কেন?”

“তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।”

“কী কথা?”

“অনেক কথা। তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন? ক্লাসে যাচ্ছ না, বেকারিতেও যাচ্ছ না। কেন?”

“আমার ইচ্ছে।”

“পালিয়ে বেড়াচ্ছ?”

“পালাব কেন? আমি কি চোর?”

“অবশ্যই তুমি চোর।”

কপালে ভাঁজ পড়ল নিবেদিতার। ভ্রু কুঁচকে বলল,

“মানে কী?”

“চোর অনেক ধরনের হয়। যে মন চুরি করে সেও একজন চোর। তুমিও তা-ই করেছ।”

“আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।”

নির্ণয় বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিবেদিতার মুখোমুখি হয়ে বলল,

“আমার চোখের দিকে তাকাও।”

নিবেদিতা তাকাল না। নির্ণয় ফের বলল,

“তাকাও।”

নিবেদিতা তাও তাকাল না। তার দৃষ্টি অন্যদিকে। নির্ণয় এবার ধমক দিয়ে বলল,

“আমি বলেছি, আমার চোখের দিকে তাকাও!”

ধমক খেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠল নিবেদিতা। নির্ণয়ের চোখে চোখ রাখল। নির্ণয় বলল,

“আমাকে তুমি ভালোবাসো।”

নিবেদিতা দৃষ্টি সরিয়ে নিল। আচমকা অসম্ভব একটা কাজ করল নির্ণয়। নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার এই দূরদেশে আসার একটাই কারণ। শুধু তুমি! আমি তোমাকে ভালোবাসি, নিবেদিতা।”

নিবেদিতার দুচোখে মুহূর্তেই অশ্রু জমা হলো। শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। মুখে কোনো রা নেই। শুধু কাঁপান্বিত দুহাত সে নির্ণয়ের পিঠে রাখল। উত্তর মুখে না দিলেও উত্তর পেয়ে গেছে নির্ণয়।

(দ্বিতীয় পরিচ্ছদের সমাপ্তি)

[কপি করা নিষেধ।

ছোটো পর্বের জন্য দুঃখিত! তৃতীয় পরিচ্ছেদ আসতে কিছুটা সময় লাগবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here