নিবেদিতা #পর্ব_৬ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

0
125

#নিবেদিতা
#পর্ব_৬
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
বই সামনে নিয়ে বসে আছে নিবেদিতা। দুচোখ ঝাপসা। বইয়ের পাতা চোখের পানিতে ভিজে গেছে। বুকের ভেতর অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথার ভেতর আঘাত লাগছে। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কয়েকবার মুখ চেপে ধরেও কেঁদেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। সব কিছু যেন হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

নয়ন চলে গেছে দুপুরের খাবার খেয়ে। বাড়ির সবাই রেডি হচ্ছে। নিবেদিতা ঘরের দরজা বন্ধ রেখে নিজেকে আটকে রেখেছে। খালা এসে দরজা ধাক্কালেন,

“নিবু? ঘুমাচ্ছিস নাকি?”

নিবেদিতা চট করেই চোখের পানি মুছে ফেলল। চুলগুলো খুলে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করল। দরজা খুলে আবার এসে বই নিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,

“না, খালা পড়ছিলাম।”

কণ্ঠ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল সে। খালা বললেন,

“তাড়াতাড়ি রেডি হ।”

“আমি তো যাব না। অনেক পড়া বাকি।”

“তুই একা থাকবি নাকি বাসায়? আমরা তো আর বেশিক্ষণ থাকব না।”

“না, খালা আমি যাব না।”

“আরে তুই চল তো। উঠ। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।”

খালা যে ওকে একা রেখে যাবে না এটা ভালোই বুঝতে পারল নিবেদিতা। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে জামা-কাপড় পালটে শুধু চুলটা বাঁধল। ফোলা চোখ-মুখ দেখে খালা কিছু জিজ্ঞেস করলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ তার কাছে উত্তর দেওয়ার মতো কিছু নেই।
কিন্তু খালাকে ব্যস্ত দেখাল। সে নিবেদিতাকে সেভাবে খেয়াল করেননি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে আরেক কেলেঙ্কারি অবস্থা। নির্ণয় আর খালু দুজনই বাইকে চলাচল করে। খালা দুম করে বলে বসলেন,

“নিবু তুই নির্ণয়ের বাইকে উঠে যা।”

নিবেদিতার অস্বস্তি হচ্ছে। সে একবার নির্ণয়ের দিকে তাকাল। খুব সম্ভবত নির্ণয় নিজেও অপ্রস্তুত বোধ করছে। দুজনের কেউই কিছু বলতে পারছে না কারণ যে-ই ‘না’ জাতীয় কিছু বলবে, অপরজনকে অপমান করা হবে। নির্ণয় ও নিবেদিতা দুজনেরই বলতে ইচ্ছে করছিল বিউটি বেগম নির্ণয়ের বাইকে উঠুক আর নির্ণয় নাদিম হোসাইনের বাইকে। কিন্তু কারোরই কিছু বলা হলো না। নিবেদিতা নীরবে নির্ণয়ের বাইকে উঠে বসল। নাদিম হোসাইন ইতোমধ্যে বিউটি বেগমকে নিয়ে রওনা দিয়েছেন। নির্ণয় বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে বলল,

“বসেছ?”

নিবেদিতা ছোটো করে বলল,

“হু।”

“ভালো করে বসো।”

“বসেছি।”

নির্ণয় বাইক স্টার্ট দিল। ভিউ মিররে নিবেদিতার চুপসানো মুখ দেখে জিজ্ঞেস করল,

“বাইকে ভয় পাও?”

নিবেদিতা ভাবলেশহীনভাবে বলল,

“না। ভাইয়ার বাইকে উঠে অভ্যাস আছে।”

“ওহ আচ্ছা। সমস্যা নেই আমি এমনিও বাইক আস্তে চালাব। আসলে মা ছাড়া কোনো মেয়ে নিয়ে বাইক চালানোর অভ্যাস নেই আমার।”

নিবেদিতার কেমন যেন নিজেকে খুব ছোটো লাগল। সে বলল,

“এটা তখন বললেন না কেন? আমি খালুর বাইকে চলে যেতাম। আচ্ছা সমস্যা নেই। আপনি বাইক সাইড করে থামান।”

নির্ণয় অবাক হয়ে বলল,

“কেন?”

“আমি অটো বা রিকশায় করে চলে যাব।”

“বাইকে কী সমস্যা?”

“আমার সমস্যা না। আপনার সমস্যা। আমি তো অন্য মেয়ে।”

“আমি সেভাবে বলিনি। তুমি তো আমার বোনও।”

নিবেদিতার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল বোন সম্বোধন শুনে। ইচ্ছে করছিল নির্ণয়ের চুল দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ইচ্ছেমতো ঝাঁকাতে। বোন বানানোর শখ একদম মিটিয়ে দিত।

“তুমি কি কোনো কারণে বিরক্ত?”

নির্ণয়ের প্রশ্ন শুনে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,

“না।”

“তাহলে আপসেট?”

সঙ্গে সঙ্গে নিবেদিতার দুচোখে অশ্রু জড়ো হলো। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বলতে,

“আমার সমস্ত দুঃখ তো আপনার জন্যই। আমি আপনাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারি না। সেখানে আপনি কী করে পারছেন অন্য মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগতে?”

কিন্তু নিবেদিতার কিছুই বলা হয়ে উঠল না। ঠোঁট চেপে কান্না আটকে নিয়ে বলল,

“না।”

নির্ণয়ও আর কিছু বলল না। প্রয়োজনের তুলনায় আজ সে অনেক বেশিই কথা বলেছে নিবেদিতার সঙ্গে। অন্য কোনো সময় হলে নিবেদিতা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত। কিন্তু আজ তার দুঃখ ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।

মেয়ের বাড়িতে গিয়ে জানা গেল মেয়ে বিউটি বেগমের পরিচিত। তার খুব কাছের বান্ধবীর মেয়ে। মেয়ের নাম সুখী। নামের মতো মেয়েটার মুখেও একটা সুখী সুখী ভাব আছে। দেখতে বেশ সুন্দর। হাসিও নজরকারা। নির্ণয়ের সঙ্গে ভালো মানাবে। এটা যেন নিবেদিতাকে আরো বেশি পীড়া দিতে শুরু করেছে। যেই মানুষটাকে সে অসম্ভব ভালোবাসে, সেই মানুষটা এই সুখী মেয়েটাকে ভালোবাসবে এরচেয়ে নিদারুণ কষ্ট আর কী হতে পারে?

কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল বিউটি বেগম এবং সুখীর মায়ের দুজনেরই অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে বন্ধুত্বটা আরো গাঢ় করার। তাদের এতদিনের ইচ্ছেও এখন পূরণ হওয়ার পথে। এই কথাটি যদি ভুলেও নিবেদিতা আগে কখনো জানতে পারত তাহলে নির্ণয়ের জন্য ভালোবাসার বীজ মনে জন্মানোর পূর্বেই উপড়ে ফেলত! কিন্তু এখন কী করবে সে?

কথার মাঝে হঠাৎ করেই বিউটি বেগম সুখীকে বললেন,

“তুমি নির্ণয়কে নিয়ে ছাদে যাও তো মা। দুজনে ছাদে গিয়ে কথা বলো।”

নিবেদিতার মনে হলো কেউ তীক্ষ্ম, ধারালো তীর তার বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তার প্যানিকড অ্যাটাক হচ্ছে। নিজেকে অস্বাভাবিক লাগছে। চোখের সামনে দিয়ে সুখী আর নির্ণয় একসাথে ছাদে যাচ্ছে। সে এখনই এটা সহ্য করতে পারছে না বিয়ে সহ্য করবে কীভাবে? মাথার ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে। দুহাত মাথায় রেখে চুপ করে নিজের মনকে মানানোর চেষ্টা করছে সে। খালু লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন,

“নিবেদিতা? মা? কী হয়েছে?”

নিবেদিতা অশ্রু লুকিয়ে ধরে আসা কণ্ঠে বলল,

“মাথা ব্যথা করছে।”

“গতকাল জার্নি করেছ। সকালেও মনে হয় ঘুম ভালো হয়নি। এজন্য মাথা ব্যথা করছে হয়তো।”

সুখীর মা সুমনা বেগম বললেন,

“মা, তুমি গিয়ে তাহলে রুমে রেস্ট করো।”

উত্তরের অপেক্ষা না করে তিনি ছেলেকে ডেকে বললেন,

“স্বপন, ওকে সুখীর রুমে নিয়ে যা তো। আর একটা মাথা ব্যথার ওষুধ দিস।”

বিউটি বেগম বললেন,

“আমি আসব নিবু?”

“না, খালা। তোমরা কথা বলো। আমি একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।” বলল নিবেদিতা।

সে স্বপনের সঙ্গে সুখীর রুমে গেল। স্বপন ছেলেটাকে এতক্ষণ সে লক্ষ্য করেনি। তার গুনগুন করা গান শুনে তাকাল। দেখতেছে একটা মানুষ অসুস্থ, তার সামনে আবার এমন গুনগুন করে গান কে গায়? নূন্যতম ভদ্রতাটুকু নেই।

স্বপন ওষুধ এগিয়ে দিয়ে বলল,

“খুব বেশি মাথা-ব্যথা না হলে ওষুধ খাওয়া ঠিক না।”

নিবেদিতা ওষুধটা নিয়ে বিছানার ওপর রেখে দিল। সবকিছু তার কাছে এখন বি’ষা’ক্ত লাগছে। এই লোকটার কথাও! স্বপন বলল,

“রেখে দিলেন যে? তার মানে মাথা-ব্যথা বেশি না?”

নিবেদিতা গম্ভীর হয়ে বলল,

“আমি একটু রেস্ট করতে চাই।”

“বেশ! মাথায় বেশি যন্ত্রণা হলে আমায় জানাবেন।”

নিবেদিতা মেজাজ আর ধরে রাখতে না পেরে বলল,

“আপনাকে কেন বলব?”

স্বপন ছেলেটা এবার হেসে বলল,

“কারণ আমি একজন ডাক্তার।”

“বাহ, খুব ভালো। এবার আপনি গেলে আমি একটু রেস্ট নিতে পারতাম।”

“শিওর।”

বলে স্বপন রুম থেকে বেরিয়ে গেল। দরজা চাপিয়ে দেওয়ার সময় এবার শব্দ করেই গান গাইতে লাগল,

“যখনই পড়েছে নজর,
আমি তো হয়ে গেছি তোর…”

নিবেদিতা কতক্ষণ থম মেরে বসে রইল। এরপর সে চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে দুহাতে নিজের মুখ চেপে ধরল।
.
.
নিবেদিতার আজ ঢাকায় এডমিশন পরীক্ষা আছে। সুখীদের বাড়ি থেকে আসার পর এরমধ্যে আর একবারও সে বই নিয়ে বসেনি। মনকে সে কোনোভাবেই কিছু বোঝাতে পারেনি। বিয়ে মোটামুটি প্রায় ঠিকই বলা চলে। এরমধ্যে সে নির্ণয়ের মুখোমুখিও হয়নি। দূর থেকে লুকিয়ে অবশ্য বার দুয়েক দেখেছিল। আজ পরীক্ষা দিতে নির্ণয় নিয়ে যাবে। কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে নিবেদিতা। বিষয়টা দৃষ্টি এড়াল না নির্ণয়ের। সে বেশ আতঙ্কিত হয়েই জিজ্ঞেস করল,

“তোমার চোখ-মুখের এই অবস্থা কেন?”

নিবেদিতা পালটা প্রশ্ন করল,

“কী হয়েছে?”

“লাল হয়ে আছে মুখ। চোখও ফোলা। কেঁদেছ তুমি?”

“কাঁদব কেন? রাতে ঘুম হয়নি।”

“ওহ। পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন?”

“ভালো।”

পথে দুজনের আর কোনো কথা হলো না। পৌঁছে যাওয়ার পর নির্ণয় বলল,

“ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিও। অল দ্য বেস্ট।”

নিবেদিতার নির্ণয়কে দেখলেই কান্না পায়। ইচ্ছে করে না বলা কথাটা বলে দিতে। কিন্তু আদতে এতে কোনো লাভ হবে না। নির্ণয় তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেবে। তাছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই। সব কিছু হাতের বাইরে চলে গেছে। সে অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছে যে, নির্ণয়ের মনে নিবেদিতার জন্য কোনো প্রকার অনুভূতি নেই।

নিবেদিতা মাথা নাড়িয়ে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ।”

“এখন ভেতরে যাও।”

পরীক্ষার হলে গিয়ে এত মানুষের মাঝেও নিবেদিতার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রশ্ন হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইল। কমন পাওয়া প্রশ্নের উত্তরগুলোও সে লিখতে পারছিল না। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। মাথা ফাঁকা হয়ে আছে।

পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে দেখে নয়ন জুস নিয়ে আর ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতদিন পর ভাইকে দেখে মন কিছুটা ভালো লাগছিল তার। সে দৌঁড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। নয়ন হেসে বলল,

“পাগলি! পরীক্ষা কেমন দিলি? ভালো?”

নিবেদিতা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাথা দোলাল। নয়ন পানির বোতল এগিয়ে দিল। নিবেদিতা বলল,

“তুমি হঠাৎ এলে যে?”

“তোকে নিতে এসেছি। এখানের পরীক্ষা তো শেষ।”

“হু। কখন এসেছ?”

“এসেছি আরো আগেই। এতক্ষণ মিদহাদ সাথে ছিল। এইমাত্র চলে গেল।”

“ওহ।”

“আচ্ছা চল এখন। কী খাবি? রেস্টুরেন্টে যাবি?”

“উঁহুঁ! এখন কিছু খাব না।”

“বার্গার?”

“কিচ্ছু না।”

“বলিস কী! আগে না পরীক্ষা দিলেই তোর ক্ষুধা লেগে যেত? খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেতি!”

“আজ ক্ষুধা লাগেনি ভাইয়া।”

“তোর কি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে কলিজা? এজন্য মন খারাপ? আরে পরীক্ষা ভালো না হলে নাই। এক জায়গায় হয়নি, আরেক জায়গায় হবে। এখনো কতগুলো বাকি! এজন্য মন খারাপ করতে হবে নাকি?”

নিবেদিতা মলিন হাসল। খালার বাসায় ফিরে খাবার খেয়েই আবার রওনা দিয়ে দিয়েছে গ্রামের উদ্দেশে। নির্ণয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। নিবেদিতাও চাচ্ছিল দেখা না হোক। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে আর লাভ কী!
.

নিবেদিতার একেকটা দিন যাচ্ছিল নিজের সাথে যু’দ্ধ করে করে। সবচেয়ে কঠিন সময় এটাই। নিজের মনের সাথে নিজের নিরব যু’দ্ধের মতো কঠিন যু’দ্ধ আর কোনোটাই হয় না। এই যু’দ্ধে র’ক্তক্ষরণটা দেখা যায় না, অনুভব করা যায় এতটুকুই পার্থক্য। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীনই বিউটি বেগম একদিন ফোন করে জানালেন নির্ণয়ের সাথে সুখীর বিয়ে ফাইনাল। এঙ্গেজমেন্টের ডেইট ফিক্সড করেছে সামনের মাসে। নিবেদিতার সময় তখন আরো খারাপ। তার খারাপ সময়টাকে আরো খারাপ করে দিতে রেজাল্টের সময় এলো। ভাগ্য তার সহায় হয়নি। কোনো পাবলিক ভার্সিটিতেই সে চান্স পায়নি। এটা নিয়ে অবশ্য হায়-হুতাশ করার মতো মানসিক অবস্থাও তার নেই। তার ভেতরকার যু’দ্ধেই তো হাঁপিয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে।

বাড়ির সবাই নিবেদিতাকে ভেঙে পড়তে নিষেধ করেছে। এটা কোনো ব্যাপার না, এমন আরো অনেক কিছুই বলেছে। নিবেদিতার মনের ব্যাপার তো আসলে পাবলিকে চান্স নিয়ে নয়। সে তো মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারছে না তার মনের অসুখটা সম্পূর্ণ নির্ণয়কে ঘিরে।

উদাস হয়ে নিবেদিতা যখন জানালার পাশে বসে ছিল তখন নির্ণয়ের নাম্বার থেকে কল এলো তার ফোনে। নাম্বার তো আরো আগে থেকেই সেইভ করা ছিল কিন্তু কখনো কল।দেওয়া হয়নি। নির্ণয়ও দেয়নি। আজ হঠাৎ? ভীষণ অবাক হলো নিবেদিতা। কিন্তু খুশি হতে পারল না। তার শুধু এটাই মনে হতে লাগল যে, এই মানুষটা অন্য কারো!

নিবেদিতা ফোন রিসিভ করে সালাম দিল। নির্ণয় সালামের জবাব দিয়ে বলল,

“আমি নির্ণয় বলছিলাম।”

নিবেদিতা বলল,

“চিনতে পেরেছি।”

“কেমন আছো?”

“ভালো। আপনি?”

“ভালো।”

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,

“কী করছ?”

“বসে আছি। আপনি?”

“এইতো অফিস থেকে এসেছি একটু আগে। এখন রেস্ট নিচ্ছি। মায়ের থেকে তোমার রেজাল্ট শুনলাম। এটা নিয়ে কি মন খারাপ?”

“মন খারাপের কী আছে?”

“কিন্তু তোমার কন্ঠ শুনেই মনে হচ্ছে তুমি ভালো নেই।”

নিবেদিতার এবার সত্যি সত্যিই বলতে ইচ্ছে করল,

“হ্যাঁ, আমি ভালো নেই। আপনাকে ছাড়া আমি সত্যিই ভালো নেই।”

নির্ণয় বলল,

“দেখো, পাবলিকে পড়ার স্বপ্ন কমবেশি সবারই থাকে। তার মানে এই না যে পাবলিকে না পড়লে স্বপ্ন বৃথা। ন্যাশনাল, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করেও জীবনে অনেক কিছু করা যায়। অনেক ভালো জায়গায় যাওয়া যায়, ভালো কিছু অর্জন করা যায়। যার মেধা আছে এবং যে পরিশ্রমী সে সব জায়গা থেকেই নিজের প্রতিভা দেখাতে পারে।”

নিবেদিতা চুপ করে আছে। নির্ণয় বলল,

“আমি নিজেও পাবলিকে চান্স পাইনি। আমি জানি এত চেষ্টা, কষ্টের পরও ফল না পেলে কেমন লাগে। এটা নিয়ে আমি প্রায় এক বছর ডিপ্রেশনে ছিলাম। ভালো ছাত্র হয়েও পাবলিকে চান্স পাইনি এটা অপমানজনক লেগেছিল আমার কাছে। এজন্যই ডিপ্রেশনটা বেশি কাজ করত। অনেক বেশিই ভেঙে পড়েছিলাম। তোমাকে মূলত আমি এজন্যই ফোন করেছি আজ। ভেঙে পড়ো না। মন খারাপ কোরো না। নিজেকে শক্ত রাখো।”

নিবেদিতা সমস্ত কথা এড়িয়ে গিয়ে করুণসুরে বলল,

“ভালোবাসি।”

নির্ণয়ের কণ্ঠে বিস্ময়,

“কী?”

নিবেদিতা আর কিছু বলল না। চুপ করে রইল। ওপাশেও পিনপতন নিরবতা। কিছুক্ষণ পর নির্ণয় নিজেই কল কেটে দিল।

চলবে…

[কপি করা নিষেধ। বিশাল বড়ো পর্ব না হলেও আজকের পর্ব বড়ো দিয়েছি কিন্তু। গাজীপুর ব্যাক করে সব কাজ বাদ দিয়ে লিখেছি। ঘুমে চোখ লেগে আসছে আমার। রাতে এখনো খাইওনি। এইযে এত কষ্ট করি, এরপরও অনেক সময় শুনতে হয় যত ব্যস্ততা শুধু লেখিকাদেরই। আপনারা ব্যস্ততাই দেখেন, আমাদের কষ্ট দেখেন না।🥹 তবে জানি, আপনারা আমাকে ভালোবাসেন। এনিওয়ে, একটা দুঃখের কথা বলি, শুক্রবারের মধ্যে হয়তো এই কয়দিন গল্প দিতে পারব না। সিলেট যাব। তাই আগেই জানিয়ে রাখলাম।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here