#কল্পকুঞ্জে_কঙ্কাবতী
লেখনীতে: নবনীতা শেখ
|পর্ব ১৬|
ক’দিন বাদেই দিদির বিয়ে। এই উপলক্ষ্যে কাজিনরা সবাই আজ একসাথে হয়েছি। যতবার সবাই একজায়গায় হই, ততবারই হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
রাতে খেয়ে-দেয়ে সকলে মিলে বাগানের ঘরটিতে বসে পড়লাম। এই ঘরে তেমন ফার্নিচার নেই, কেবল একটা শেলফ ছাড়া। সেটাতে রয়েছে প্রয়োজনীয় সব জিনিস; যেমন: ফার্স্ট এইড বক্স, ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলার বোতল, লুডো বোর্ড, ক্যারাম বোর্ড, সাউন্ড সিস্টেম, কাগজ-কলম, পানি, কিছু ড্রাই-ফ্রুটস এবং আরও কিছু জিনিস। প্রতিবার এই ঘরটিতে এলে এগুলোর প্রয়োজন হয়।
পুনরায় সমগ্র রুমটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। দিদি, আপি, নীতি, রাহী, সুপ্তি, দিয়া, কুঞ্জ ভাই, আসিফ ভাই, আকাশ ভাই (ছোটো মামার ছেলে) বসে আছি। দিদি আর নীতি বকবক করেই যাচ্ছে, বাকিরা শুনে যাচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে তারাও কথা বলছে। আমি এসবের মাঝে কেবল কুঞ্জ ভাইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছি। লোকটা ভীষণ লজ্জা দিতে পারে!
আজ যখন দোলনায় উনি আমার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল, সাথে অন্য রকমের এক অনুভূতি। আমি কিছু বলতে যাব, তার আগেই উনি আমার উদ্দেশ্যে কথা ছুড়েই ফেরার রাস্তায় পা বাড়ালেন।
ওঁর গম্ভীর গলায় সেই বাক্য ছিল, “বাড়ি চলো। এক আকাশের সম্মুখে দুটো চাঁদ বড্ড বেমানান। কোনটার প্রশংসা করব, ভেবে পারা যায় না।”
কুঞ্জ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবারও লাজে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। লোকটা কীভাবে যেন তাকিয়ে থাকে! ইশ!
তখনই দিদি বলে উঠল, “গাইস! চলো, ডেয়ার গেইম হবে আজ।”
সাধারণত এটাই বেশি খেলা হয়ে থাকে। নীতি গিয়ে বোতল নিয়ে এলো। আমরা সবাই গোল হয়ে বসেছি। আমার ডান পাশে নীতি, বাঁ পাশে দিদি আর একদম সামনে কুঞ্জ ভাই।
নীতির বোতল এনে আমার পাশে বসার পরই দিদি বলে উঠল, “উহুম! উহুম! খেলার নিয়ম তো সবাই জানোই? ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার গেইম কে না-চেনে? তবে আমাদের খেলা যেহেতু একটু ডিফরেন্ট, রুলস্ও তেমনই সামান্য ডিফরেন্ট।”
কুঞ্জ ভাই যেহেতু আমাদের কাজিন-আড্ডাতে নতুন, তাই উনি জানেন না। ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী-রকম ডিফরেন্ট, শ্যামা আপু?”
দিদি আবারও বলা শুরু করল, “আমাদের এখানে ‘ট্রুথ’ এর অস্তিত্ব নেই। ওনলি ডেয়ার অ্যান্ড ডেয়ার। তাই বোতলের মুখ নিজের দিকে আসলে কারো চ্যুজ করতে হয় না— ট্রুথ নেবে না-কি ডেয়ার; কেবলই ডেয়ার তার জন্য প্রযোজ্য। আর যে ‘ডেয়ার ডান’ করতে পারবে না, তার আমাদের যে-কারো একটা কাজ করে দিতে হবে; যা আমরা আলস্যতার জন্য করতে পারছি না। লাইক— রুম ক্লিনিং অর্ সামথিং এলস। কিন্তু সেটা আরও হার্ড হলেও পাল্টানোর অপশন থাকবে না; করতেই হবে।”
কুঞ্জ ভাই মন-প্রাণ ঢেলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, “বড্ড বেশিই ডিফরেন্ট!”
এখানে সবচেয়ে বড়ো হচ্ছে দিদি। খেলা শুরু করার আগ মুহূর্তেই কুঞ্জ ভাই আকাশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে আমাদের বললেন, “তোমরা খেলো, আমি আর আকাশ বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”
এরই মাঝে আকাশ ভাই আর কুঞ্জ ভাইয়ের চোখে চোখে ইশারা হতেই আকাশ ভাই বললেন, “হ্যাঁ, আমি আর ভাই ঘুরে আসি। এসব খেলা আমাদের তেমন পছন্দ নয়।”
আপি বলে উঠল, “পরে যেয়ো। এখন সবাই একসাথে খেলব।”
কুঞ্জ ভাই আরও কিছু বলতে যাবেন, তার আগে দিদি বলল, “আর ক’দিনই বা থাকব? এখন যাস না, কুঞ্জ।”
কুঞ্জ ভাই গেল না। আমি তপ্ত শ্বাস ফেলে ওঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকে বলে, নারী রহস্যময়ী; অথচ, আমার কাছে মনে হয়, পুরো ধরণির সকল রহস্য এই পুরুষের মাঝেই নিহিত।
খেলা শুরু হলো। দিদি বোতল ঘোরাল। প্রথমেই গেল নীতির দিকে। নীতি মেকি হেসে বলল, “আমি কিন্তু বাচ্চা মানুষ, বইনস।”
বিনিময়ে দিদি শয়তানি হাসি আর বাকি সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। নীতির ডেয়ার দিলাম আমি, “এক মাসের জন্য তোমার ফোন থেকে টিকটক অ্যাপটা আনইনস্টল করে দাও।”
নীতি কিছুক্ষণ অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, “এটা কি ঠিক করলে তোমরা?”
আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম, “অবশ্যই।”
দিদি বলল, “করবি কি না বল!”
নীতি ফোন বের করে টিকটক আনইনস্টল করে আমাদের দিকে তাকাল। কুঞ্জ ভাই নিজের ফোনে ব্যস্ত আছেন। আসিফ ভাই আর আপি পাশাপাশি বসেছে। আমাদের এত কথার মাঝেও যেন তাদের কানে কিচ্ছুটি ঢুকছে না। তারা হয়তো অন্য জগতে, অন্য খেয়ালে, কেবলই নিজেদের মাঝে মত্ত হয়ে আছে। দু’জনের ফুসুরফুসুর থামার নামই নেই! সেদিকে আমরা সবাই খেয়াল দিয়েও দিলাম না। থাক না তারা, তাদের মতো!
আবারও বোতল ঘোরানো হলো। এবার বোতল গিয়ে থামল, আকাশ ভাইয়ের দিকে। ডেয়ার দিল রাহী, “তোমার এক্সের সাথে আবারও রিলেশন কন্টিনিউ করার জন্য এক্সকে রিকুয়েস্ট করো।”
আমরা সবাই সম্মতি দিলাম। এতে আকাশ ভাই বললেন, “কোনটার সাথে? রিয়া/বীথি/আশা/তৃপ্তি/সোমা/সুহানা না-কি মীম?”
আমি কপালে হাত চাপড়ে বললাম, “মাত্র এই ক’টা? আর নেই?”
আকাশ ভাই উদাস হয়ে বললেন, “আছে, তবে মনে আসছে না আর নামগুলো।”
দিদি আকাশ ভাইয়ের বাহুতে থাপ্পড় মেরে বলল, “শুধরাবি না তুই?”
আকাশ ভাই দাঁত কেলিয়ে বলল, “আসলে এতগুলো রিলেশন করতাম না, দিদি। কী বলো তো! কুঞ্জ ভাইয়ের ভাগেরগুলোও আমাকেই করতে হচ্ছে। এজন্য নাম্বার অব্ এক্স এত বেশি!”
হতাশ শ্বাস ফেললাম সবাই। তারপর রাহী বলল, “আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে। সিরিয়াস রিলেশন কার সাথে ছিল?”
আকাশ ভাই কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “উম… তৃপ্তি। অ্যান্ড ও-ই ফার্স্ট ছিল।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তা ব্রেকআপ হলো কী করে, আকাশ ভাই?”
আকাশ ভাই সামান্য হেসে বললেন, “লং স্টোরি, সিস। মেইন কাল্প্রিট ছিল ওর বাপ। পরে কাহিনিটা শোনাব।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। রাহী বলল, “আচ্ছা। তবে, তৃপ্তি আপুর সাথেই।”
আকাশ ভাই ডেয়ার একসেপ্ট করলেন। আর এটার শুরু এখনই করলেন। ফোন হাতে তুলে কাকে যেন কল লাগালেন। আমরা সবাই উৎসাহিত নেত্রে তাকিয়ে আছি। দিয়া আর সুপ্তি এর মাঝে উঠে চলে গেল। বাচ্চা তো! সুপ্তি ক্লাস এইটে আর দিয়ে সেভেনে পড়ে। ওদের ভালো লাগছিল না। আর আমরা আটকালামও না।
আকাশ ভাই ওপাশে কল রিসিভ হতেই বললেন, “কেমন আছ, তৃপ্তি?”
ওপাশে কী বলল, জানা নেই। তবে যা বলেছে, এতে আকাশ ভাইয়ের ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে হাসির রেখা দৃশ্যায়ন হলো। আকাশ ভাই আমাদের সকলের দিকে সচেতন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওপাশে তৃপ্তি আপুর উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমার হিটলার বাপের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ির পেছনের দিকের বারান্দার সামনে এসে দাঁড়াও দেখি। আমি আসছি। পাঁচ মিনিট।”
কল রেখে দিল। আকাশ ভাই রাহীর উদ্দেশ্যে বললেন, “থ্যাংকস, বইন।”
তারপরই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এতটা দ্রুত সব হলো, যা বুঝতে আমাদের বেশ সময় লেগে গেল। আকাশ ভাইয়ের বাইক স্টার্ট দেওয়ার আওয়াজ পেতেই আমাদের ধ্যান ভাঙল। সকলে মিলে সশব্দে হেসে উঠলাম।
খেলা আবারও শুরু হলো। এবার বোতলের মুখ গিয়ে থামল কুঞ্জ ভাইয়ের দিকে। ওঁর ডেয়ার আমি দিলাম, “কুঞ্জ ভাই! নিজের কাছে আপনার সবচেয়ে বাজে অভ্যেস যেটা লাগে, সেটা আপনি এক মাসের জন্য ছেড়ে দেবেন।”
কুঞ্জ ভাই সঙ্গে সঙ্গে কেশে উঠলেন। তারপরই ফোন হাতে কাউকে মেসেজ করলেন। কাকে করলেন, তা বুঝলাম খানিকক্ষণ পরেই; আমার ফোনে মেসেজ আসার পর।
কুঞ্জ ভাই মেসেজ পাঠিয়েছেন, “আমার সবচেয়ে বাজে অভ্যেস তো তুই। ছেড়ে দেব?”
আমার কী যেন হলো, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম, “এই না! আমি ডেয়ার চেঞ্জ করব।”
সবার অদ্ভুত দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমি কুঞ্জ ভাইয়ের বাঁকা হাসিটা লক্ষ করলাম। তবে না সেটা না ঘেঁটে বললাম, “যতদিন বাড়িতে আছেন, রাত অবধি বাইরে আড্ডা দেয়া চলবে না। রাত করে বাইরেই যাবেন না। ঠিকাছে?”
কুঞ্জ ভাই উত্তরে সামান্য হেসে ঘাড় দুলিয়ে বললেন, “ওকে।”
কুঞ্জ ভাই এত সহজে মেনে যাবেন, এটা কেউই ভাবেনি। আমিও না। তবে মনে মনে বেশ খানিকটা খুশিই হলাম। আবারও বোতল ঘোরানো হলো। এবার এলো দিদির দিকে। ডেয়ার দিল আপি, “মেহেদী ভাইকে কল দিয়ে এমন কিছু বলো, যা তুমি বলতে চাও কিন্তু কখনও সম্ভব হয়নি। বারবার বলতে চেয়েও পারোনি।”
দিদি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। পরপর শুকনো ঢোক গিলে শুধাল, “এটা চেঞ্জ করা যায় না রে, রজনী?”
আপি আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “একদমই না।”
দিদি অসহায় বোধ করল। হতাশা মিশ্রিত শ্বাস ফেলে আপির উদ্দেশ্যে বলল, “দিন আমারও আসবে, সেদিন দেখে নেব।”
তারপরই শ্যামা দিদি মেহেদী ভাইকে কল দিয়ে ফেলল। স্পিকারে দিয়েছে। দু’বার রিং হতেই মেহেদী ভাই কল রিসিভ করল এবং সঙ্গে সঙ্গেই বলল, “কী ব্যাপার? মিস করছিলে বুঝি!”
দিদি খুকখুক করে কেশে উঠল। আমরা প্রায় সকলেই ঠোঁট চেপে হাসছি। আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে দিদি মেহেদী ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, “মোটেও না। একদম আজেবাজে কথা বলবে না।”
ওপাশ থেকে মেহেদী ভাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। দিদি বেশ বিরক্ত হলো। দিদির বিরক্তভাব বুঝতে পেরে মেহেদী ভাই আরও কিছুটা বিরক্তি ঢেলে দিতে বলে উঠল, “তা, এই সময়ে কল দিলেন যে! আপনার না আজ ব্যস্ত থাকার কথা, উইথ কাজিনস্!”
দিদি আমতা আমতা করে বলল, “হ্যাঁ, তা ছিলাম।”
“তবে?”
“কিছু না। ঘুমোও।”
দিদি কলটা কেটে দেবার জন্য উদ্যত হতেই সবাই চোখ ইশারায় বুঝালাম, ডেয়ার ডান করতে। দিদি টানা একটা শ্বাস তুলল। কল কেটে দেবার আগে বলল, “তোমার বান্ধবী নীরাকে আমার সহ্য হয় না। ও তোমার সাথে কথা বললে কিংবা আশেপাশে থাকলে, কেন যেন প্রচুর রাগ হয়। আর শোনো, তুমি তাকে ফ্রেন্ডের বেশি কিছু না ভাবলেও সে তোমাকে অনেক কিছুই ভাবে। আমি একটা মেয়ে, আরেকটা মেয়ের নজর বুঝতে অসুবিধে হয়নি। তাই, একটু বুঝো আমার দিকটা।”
কল কেটে এতক্ষণের আটকে রাখা শ্বাসটা ফেলল দিদি। মনের বোঝাটা নেমে গেল হয়তো। তারপর আবারও খেলা শুরু করলাম। এই নিয়ে আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতে পারলাম দিদির অস্বস্তি।
এবার ডেয়ার নেবার পালা আমার। আমাকে ডেয়ার দেবে কে, এই নিয়ে একটা হুলস্থুল কাণ্ড ঘটে গেল। সবার ‘আমি দেব, আমি দেব’ এর মাঝে হুট করেই কুঞ্জ ভাই বলে উঠলেন, “পুকুরপাড়ে গিয়ে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবি; উইদাউট ইউর ফোন অ্যান্ড এনি কাইন্ড অব্ টর্চ।”
এখন আমার খুব করে উচিত ছিল, দু’কানে হাত চেপে ধরে ইচ্ছেমতো বিলাপ করতে, ‘নায়ায়ায়ায়া! এএএএ হতেএএ পায়ারেএএ নায়ায়ায়ায়ায়া!’
কিন্তু, নাহ্! আমি তো তা করলাম না। আমি হচ্ছি, নবু। নবু দ্যা উচ্চমানের গাঁধি। এজন্যই তো অত শত না ভেবে, শুধু মাত্র মান-ইজ্জতের কথা ভেবে ডেয়ার এক্সেপ্ট করে নিলাম। সবার চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারলাম, তারা ভেবেছিল, আমি ভয় পাব এবং হেরে যাব। তেরছা হেসে আমি উঠে দাঁড়ালাম।
__________
আম্মুউউউ! কান্না পাচ্ছে। একটু আগে যেভাবে বিলাপ পারা আমার উচিত ছিল, তা এখন জোরদার ভাবে করতে ইচ্ছে হচ্ছে। চারপাশে নিকষ কালো অন্ধকার। দূর হতে শেয়ালের হাঁক কানে ভেসে আসছে। চোখ দুটো তো বন্ধ করে নিয়েছি। এখন কান দুটোও বন্ধ করে নিতে পারলে বোধহয় বেশ হতো। কিন্তু, তা পারলে তো!
আপন মনে নিজেকে গালি দিয়ে যাচ্ছি অনবরত। কী প্রয়োজন ছিল, এটা করার? ভুলে গেলাম কী করে, আমি অন্ধকার ভয় পাই?
দশ মিনিট কোনো ভাবে পার করলাম। তবে, আর হচ্ছে না আমার দ্বারা। সমগ্র মুখশ্রী দু’হাতে ঢেকে পিছু মুড়লাম, বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। বড়ো বড়ো পা ফেলে যেই না চার নম্বর কদম এগোলাম। ওমনিই সামনে কোনো এক দেয়ালের সাথে আটকে গেলাম। মস্তিষ্ক আমার বড্ড সচেতন। আমার আশেপাশে কেন, দূর-দূরান্তেও কোনো বাড়ি নেই। আছে শুধু গাছ, তাও অনেকটা দূরে। এখন, সামনে পুরোটাই খালি থাকার কথা। কিন্তু, কীসে আটকালাম আমি?
ভয়ে দরদর করে ঘামতে লাগলাম। তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কে এলো, এটা কোনো দেয়াল নয়, একটা মানব শরীর। উত্তপ্ত, ঘর্মাক্ত, নির্মেদ, পেশীবহুল এই শরীর থেকে ভেসে আসা পুরুষালী গন্ধটা আমার ভীষণ চেনা, ভীষণ প্রিয়।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছু অগণতি মিনিট। কতটা জানা নেই। নিজেকে যখন প্রিয় পুরুষের এতটা কাছে উপলব্ধি করলাম, আমি সরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলাম। কিন্তু, এক চুল নড়তে পারলে তো? পুরুষালী পেশীবহুল হাত দুটো আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আছে। আমার মাঝে এখন কেন যেন কোনোরূপ ভুত-ভীতি নেই। তবে, আছে এক অদ্ভুত শঙ্কা। সময় আরও কিছুটা অতিক্রম হতে, উনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দাঁড়ালেন। ঘোর অমানিশা আজ। আমার সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে শুধু অনুভবই করতে পারছি, দেখতে পারছি না। না দেখেও বুঝতে পারছি, উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন, নিজ জায়গায় স্থির হয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন।
হঠাৎ সুনশান-নিস্তব্ধ পাড়ের মাঝে কুঞ্জ ভাইয়ের একটি কথা বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল, আমার কর্ণকুহরে। ইশ! কী ভয়ংকর লাগছে!
চলবে…