#নিবেদিতা
#পর্ব_৩৬ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
মেরুন রঙের চুড়িগুলো নিবেদিতার দুই হাতে ঝলমল করছে। সে এক দৃষ্টিতে চুড়ি দেখছে। মনে অবশ্য অন্য রকম চিন্তা-ভাবনার উদয় হয়েছে। আজ তার বিয়ে। বউ সেজে আয়নার সামনে বসে আছে। নিজেকে দেখে এত লজ্জা লাগছে যে আয়নায় আর তাকাতে পারছে না। উঁহুঁ! আসলে সে নিজেকে লজ্জা পাচ্ছে বললেও কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক হবে না। লজ্জা পাচ্ছে নির্ণয়ের কথা ভেবে। আয়নাতে নিজেকে দেখলেই মনে পড়ছে আজ তার বিয়ে। আজ থেকে দুজনে একসাথে থাকবে। একসাথে থাকার প্রসঙ্গ মাথায় আসলেই লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছে সে। এসব দুষ্টু চিন্তা মাথায় আসারও একটা কারণ আছে। কারণটা হলো তুবা। নিবেদিতার বউ সাজা শেষ হওয়ার পরই কতক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এরপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল,
“আজকে রাতে তো ভাইয়া তোর ঘুম হারাম করে দেবে। ঘুমাতেও দেবে কিনা সন্দেহ!”
নিবেদিতা চোখ পাকিয়ে রাগ দেখালেও মনের ভেতর অদৃশ্য একটা শিহরণ বয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল নাম না জানা এক ভয়। কাছে আসার ভয়। অথচ এই দিনটার জন্যই দুজনে মিলে কতগুলো খারাপ দিন পার করেছে, অপেক্ষা করেছে।
“নিবেদিতা?”
ডাক শুনে নিবেদিতা মুখ তুলে আয়নায় তাকাল। তার পেছনেই সূবর্ণলতা দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে নীল রঙের একটা শাড়ি। দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে। নিবেদিতা হেসে বলল,
“হ্যাঁ আপু, বলেন?”
“তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে।” পেছনে দাঁড়িয়ে নিবেদিতার দু’কাঁধে হাত রেখে বলল সূবর্ণলতা।
নিবেদিতার হাসি প্রশস্ত হলো। বলল,
“থ্যাঙ্কিউ আপু।”
সূবর্ণলতা এবার নিবেদিতার পাশে এসে দাঁড়াল। নিবেদিতার এক হাত নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বলল,
“তোমার কি আমার প্রতি কোনো রাগ, ক্ষোভ আছে?”
নিবেদিতা বিস্মিত হয়ে বলল,
“না তো! কেন? আপনার ওপর আমি রাগ করব কেন?”
“কারণ তো আছেই। দেখো নিবেদিতা, ইচ্ছেতে হোক বা অনিচ্ছায় আমি অনেক সময়ই তোমাকে নিয়ে জেলাস হতাম। আমি যদি ভুল না হই, তাহলে তুমিও এটা বুঝতে। অথচ এরপরও তোমার চোখে কখনো আমার জন্য রাগ কিংবা ঘৃণা দেখিনি। দেখা হলে সবসময় হেসেই কথা বলো। সম্মান করো। তোমাকে যত দেখেছি তত উপলব্ধি করতে পেরেছি যে কেন নির্ণয় ভাইয়া এবং মিদহাদ তোমাকে এতটা ভালোবেসেছে। তোমার তুলনা তুমি নিজেই নিবেদিতা। পৃথিবীর কোনো ঈর্ষাই তোমার ধারে-কাছে খুব বেশি সময় টিকতে পারবে না। কারণ তুমি এমন একটাই মায়াবতী মেয়ে। আমার আগের ব্যবহারের জন্য আমি সরি। মন থেকেই মাফ চাইছি। যদি আপুর কোনো রাগ থাকে তাহলে মাফ করে দিও। নতুন জীবনে সদা সুখী হও এই দোয়া করি। তোমার সুন্দর ও মিষ্টি হাসিটা সারাজীবন জিইয়ে থাকুক।”
কথা শেষ করে সূবর্ণলতা নিবেদিতার কপালে আদুরে চুমু খেল। সঙ্গে সঙ্গেই চোখ ছলছল করে উঠল নিবেদিতার। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে সূবর্ণলতা দূরের কেউ নয়। সেও তার পরিবারের একজন সদস্য। পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট যেমন মনের গহীনে প্রবল ব্যথার সৃষ্টি করছিল আজ কয়েকদিন ধরেই, ঠিক একই রকম ব্যথা অনুভব করছে সে সূবর্ণলতার জন্য। নিবেদিতা সূবর্ণলতার এক হাত ধরে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,
“আপনার ওপর আমার কোনো রাগ, ক্ষোভ কেনোটাই নেই আপু। আগেও কখনো ছিল না।”
দরজার আড়াল থেকে আজকের অন্যতম সুন্দর দৃশ্যটি দেখে প্রাণ ভরে শ্বাস নিল মিদহাদ। সে এসেছিল নিবেদিতাকে রেডি থাকতে বলার জন্য। নির্ণয় চলে এসেছে। সবাই সেখানে গেইট ধরাধরি করে দাঁড়িয়েছে। কিছুক্ষণ পরই নিবেদিতাকে নিতে আসবে। কিন্তু সে নিজেই যে এসে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখবে ভাবেনি। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সে দরজায় নক করল।
নিবেদিতা ও সূবর্ণলতা দুজনই তাকাল দরজার দিকে। এতক্ষণ মিদহাদ নিবেদিতার মুখ দেখতে পায়নি। পেছনে ঘোরার পর নিবেদিতাকে বধূর সাজে দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। সে এক পা, এক পা করে আগাচ্ছে আর ব্যথা ক্রমশ ততই বাড়ছে। নিবেদিতা আজ থেকে সম্পূর্ণভাবে অন্য কারো হয়ে যাবে এই ব্যথা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। হঠাৎ করে নির্ণয়কে তার এত হিংসা হচ্ছে! হিংসা হচ্ছে নির্ণয়ের ভাগ্য নিয়ে। নির্ণয় অবশ্যই ভাগ্যবান কারণ সে নিবেদিতার ভালোবাসা পেয়েছে। নিবেদিতাকেও পাচ্ছে। তাহলে কেন তাকে নিয়ে হিংসা হবে না? যদিও নিবেদিতা কখনোই তার ছিল না, তবুও এই নিষ্ঠুর সত্যিটা মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। বুকের ব্যথা লুকিয়ে নিজেকে স্থির ও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল সে। ঠোঁটে সেই চিরপরিচিত হাসি। অথচ কতটা কষ্ট সে এই হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে এ কথা একমাত্র সে-ই জানে।
সূবর্ণলতা ব্যথিত চোখে মিদহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা এত বোকা! যতই কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করুক, লাভ তো কিছু হচ্ছে না। সূবর্ণলতা স্পষ্টভাবেই তো সব বুঝতে পারছে। নিবেদিতাও নিশ্চয়ই পারছে? পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সূবর্ণলতা মিদহাদের উদ্দেশে বলল,
“বাচ্চাদের টাকা আদায় করা শেষ?”
মিদহাদ সংবিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত বলল,
“হ্যাঁ, কী? ওহ হ্যাঁ। নিবেদিতাকে নিতে আসবে একটু পর।”
“আচ্ছা।”
“ঠিক আছে। ওকে রেডি রাখবেন। আমি যাচ্ছি।”
মিদহাদ দ্রুত প্রস্থান করলে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নিবেদিতা। সে সবই বোঝে। তবুও অবুঝের মতো থাকে। সে মনে মনে দোয়া করে মিদহাদের জন্য। মিদহাদের একটা সুন্দর জীবন সে আল্লাহর কাছে কামনা করে।
কিছুক্ষণ পর মেয়েদের একটা দল হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকল। হৈ-হুল্লোড়ে মুহূর্তেই নিরবতাকে উড়িয়ে দিয়ে ঘরটাকে মুখরিত করে তুলল। সবাই মিলে নিবেদিতাকে নিয়ে গেল স্টেজে। নিবেদিতাকে দেখেই বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল নির্ণয়। পড়ে যাওয়ার ভনিতাও করে ফেলল সে। নিবেদিতা লজ্জা পেলেও সবাই মিলে হেসে উঠল। সেই সাথে সবার হাত তালি, শিস বাজানো তো ছিলই।
নিবেদিতা নির্ণয়ের পাশে বসার পর নির্ণয় আড়চোখে বারবার দেখছে নিবেদিতাকে। তুবা সেটা খেয়াল করে বলল,
“আরে ভাইয়া এত উতলা হলে হয়? এইতো আর অল্প কিছু সময়! তারপর মন ভরে দেখবেন।”
নির্ণয় লজ্জা পেলেও লজ্জা ঢাকতে মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
“মা’ই’র খাবে।”
তুবা হেসে ভেংচি কাটল। নির্ণয় দৃষ্টি সামনে রেখেই ফিসফিস করে বলল,
“তুমি কি আমাকে মে’রে ফেলতে চাইছ?”
নিবেদিতা বিস্মিত হয়ে শুধাল,
“কেন?”
“কেন মানে? এমন প্রাণঘাতী সাজ নিয়ে কেউ আসে?”
“খুব বেশিই বাজে লাগছে?”
“খুব বেশিই সুন্দর লাগছে।”
নিবেদিতা লাজুক হাসল। নির্ণয় বলল,
“নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে।”
“কেন?”
“তোমাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে।”
ভালো লাগায় মন ছেঁয়ে গেল নিবেদিতার। সে জবাবে মুচকি হাসল। ভালোবাসার দৃষ্টিতে একবার তাকাল নির্ণয়ের দিকে। চোখে চোখ পড়তেই আবার লজ্জায় ফিরিয়ে নিল দৃষ্টি। দূর থেকে দুজনকে দেখছে মিদহাদ। কী সুন্দর লাগছে! বুক ভরে ভারী দীর্ঘশ্বাস নিলেও সে মন থেকেই দুজনের জন্য দোয়া করে। সারাজীবন যেন একসাথেই থাকতে পারে, ভালো থাকতে পারে এই দোয়া করে সে।
বিয়ে পড়ানোর সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। কবুল বলার পর নির্ণয় কেঁদে ফেলল। আনন্দের কান্না। উপস্থিত সবাই অবাক এই ঘটনায়। বিদায় তো নিবেদিতা নেবে। তাহলে নির্ণয় কেন কাঁদছে? পরক্ষণে কারোরই বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে নিবেদিতাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দেই সে কেঁদে ফেলেছে। এখন থেকে আর দুজনকে দূরে দূরে থাকতে হবে না। হারানোর ভয় পেতে হবে না। এখন থেকে সে এই মুখ দর্শন করে ঘুমাবে। আবার সকালে এই মুখটা দেখেই ঘুম থেকে উঠবে। সকল বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিবেদিতা আজ থেকে সারাজীবনের জন্য তার জীবনসঙ্গী, তার বউ।
নয়ন নির্ণয়কে জড়িয়ে ধরল। সে নির্ণয়কে খুব ভালো করেই চেনে। আজ তার বোনের জন্য এত ভালোবাসা সম্মুখে দেখে তার ভালো লাগা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সে একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলের অনুভূতি চেনে, বোঝে, জানে। খুব সহজে ছেলেরা কাঁদে না। তাও আবার এত এত মানুষের সামনে। তার বোনটা যে খুব ভাগ্য করেই নির্ণয়কে স্বামী হিসেবে পেয়েছে এটা অস্বীকার করার মতো উপায় নেই। নিবেদিতা তার জীবনের জন্য সঠিক মানুষটাকেই বেছে নিয়েছে।
বিয়ে পড়ানো শেষে মিদহাদও নির্ণয়কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কংরাচুলেশন ব্রো।”
“থ্যাঙ্কিউ ইয়ার।”
“সারাজীবন সুখে থাকো দুজনে, ভালো থাকো, একসাথে থাকো দোয়া করি।”
“থ্যাঙ্কস। বাট গিফ্ট কোথায় হু?”
মিদহাদ হেসে বলল,
“আমি গরীব, মিসকিন ব্রো।”
নির্ণয় শব্দ করে হেসে ফেলল। মিদহাদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোমার স্বচ্ছ মনের দোয়াটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়ো গিফ্ট। অন্য কোনো গিফ্টের প্রয়োজনও নেই।”
মিদহাদ মৃদু হাসল। মনে মনে বলল,
“আমার প্রাণটাকেই তো তোমায় দিয়ে দিলাম। এরচেয়ে বড়ো গিফ্ট আমার থেকে কী চাও তুমি!”
.
.
নিবেদিতাকে গ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকায় নির্ণয়দের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। পথিমধ্যে অনেকবার কেঁদে বুক ভাসিয়েছে নিবেদিতা। ওকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল নির্ণয়কে। এখন নিবেদিতা বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো খাটে। গায়ে একটা সুতি শাড়ি। এখানে এসে ভারী লেহেঙ্গা, গয়না খুলে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। নতুন বউ বলে শাড়ি পরেছে। নয়তো সব সময়ের মতো হয়তো আজও প্লাজো, টি-শার্ট পরে ফেলত। জার্নি ও ক্লান্তিতে ঘুমে চোখজোড়া বুজে আসছে নিবেদিতার। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে নিবেদিতা গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। নির্ণয় এলো আরো দশ মিনিট পর। নিবেদিতাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে বেশ অবাক হলো সে। একটু অভিমানও হলো বটে। তাকে রেখে একাই ঘুমিয়ে পড়ল! তার সাথে রীতিমতো অবিচার করছে মেয়েটা। সে কী করবে বুঝতে না পেরে রুমের ভেতর পায়চারি করতে লাগল। হঠাৎ করে ড্রেসিংটেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে পারফিউমের বোতলটা মেঝেতে পড়ে গেল। নির্ণয় চেষ্টা করেও ধরতে পারল না। ঝনঝন শব্দে চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলল সে। শব্দ শুনে নিবেদিতাও হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসল। সামনে তাকিয়ে দেখল নির্ণয় মুখটা অপরাধীর মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। সে পারফিউমের বোতলটা তুলে মুখ ভার করে বলল,
“সরি।”
নিবেদিতা জিজ্ঞেস করল,
“সরি কেন?”
“তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্য। ইচ্ছে করে করিনি।”
“সামান্য কারণে সরি বলতে হয় নাকি?”
“সামান্য কারণ কেন হবে? তোমার কাছে ঘুম তো সামান্য না। অনেক বেশিই ইম্পোর্ট্যান্ট। এজন্যই তো ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আমার জন্য একটু অপেক্ষাও করলে না।”
“আসলে চোখটা লেগে এসেছিল। আপনিই তো লেইট করলেন।”
“আচ্ছা আবার সরি।”
“এতবার সরি বলতে হবে না।”
“তাহলে কী করব?”
নিবেদিতা থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল। সে কী করবে এটা নিবেদিতা বলবে কী করে? নিবেদিতা ক্ষীণস্বরে বলল,
“কিছু না। ঘুমাতে আসেন।”
নির্ণয় আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এখনই ঘুমিয়ে যাবে?”
নিবেদিতা দেওয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত ১টা ২৫ বাজে। সে বলল,
“রাত তো অনেক হলো।”
“ওহ।”
নির্ণয় মন খারাপ করে লাইট নিভিয়ে বিছানায় গেল। ডিম লাইটে চোখ সয়ে এলে নিবেদিতাকে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছিল সে। এখন এত বেশি আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে! লাগুক। নিজে থেকে সে ধরা দেবে না। প্রয়োজনে নিজেকে কন্ট্রোল করবে। তার রাগের তো একটা দাম আছে নাকি! গাড়িতে বসে যেভাবে হাপুশ নয়নে কাঁদছিল মনে হচ্ছিল যেন তাকে কোনো জ’ল্লা’দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভালোবেসেই তো বিয়ে করলি মেয়ে! এত কান্নাকাটির কী আছে? ঐ ঘটনা তো বাদই দিল নির্ণয়। এখন আবার সে আসার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আবার বলতেছে এখনই নাকি ঘুমাবে। এটা কোনো কথা? একটু গল্প-গুজবও কি করবে না দুজনে?
দুজনে দুদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। যেন কেউই কাউকে চেনে না। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলেও তো মানুষ মনে হয় এতটা দূরত্ব রেখে শোয় না। অথচ এরা! নিবেদিতার বুক দুরুদুরু কাঁপছে। অজানা একটা ভয় কাজ করছে মনের ভেতর। এতক্ষণ ঘুমে ঢুলে পড়ে গেলেও এখন কোনো ঘুমই আসছে না তার। কী অদ্ভুত!
নির্ণয় আকাশমুখী হয়ে শুয়ে করুণসুরে বলে উঠল,
“মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হয় কী করে?”
নিবেদিতাও এবার নির্ণয়ের দিকে ফিরে শুয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কার কথা বলছেন?”
“অবশ্যই তোমার কথা।”
“আমি কী করেছি?”
“কী করোনি তুমি?”
“কিছুই করিনি।”
“ঠিক আছে।”
নিবেদিতা কয়েক সেকেন্ড মৌন থেকে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কি আমার ওপর রাগ করেছেন?”
“আমি রাগ করেছি কিনা এটা আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করছ? বোঝো না তুমি?”
নিবেদিতা রাগের কারণ বুঝতে না পেরে অসহায়বোধ করছে। চুপ করে আছে সে। নির্ণয় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। নিজেকে ও উন্মাদনাকে সংবরণ করা কঠিন হয়ে পড়ল তার জন্য। হঠাৎ করেই সে ঝুকে শুলো নিবেদিতার ওপর। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে গেল নিবেদিতা। তার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। বুক কাঁপছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। এতটা ঘনিষ্ঠভাবে দুজনের কাছে আসা এটাই তো প্রথম। নির্ণয় এক হাত নিবেদিতার উন্মুক্ত কোমরে রাখতেই শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল নিবেদিতার। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল তার। আরেক হাতে নির্ণয় নিবেদিতার গালে রেখে বলল,
“সব আমাকে বলে দিতে হবে? এত অবুঝ কেন তুমি?”
নিবেদিতা জবাব দিতে পারল না। জবাব দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই সে। জমে অদৃশ্য বরফ হয়ে গেছে সে। নির্ণয় এক দৃষ্টিতে নিবেদিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে নিবেদিতা নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিল। ঐ গভীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে রাখার মতো সাহস নেই তার। সে এখন ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। নির্ণয় একটু একটু একটু করে তার ঠোঁট নিবেদিতার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ও যেন ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছিল নিবেদিতাকে। ভয়ের ডেফিনিশন তার জানা নেই। তবে এতটুকু সে বুঝতে পারছে এই ভয় সম্পূর্ণ আলাদা, অন্যরকম। নির্ণয় চুমু খেতে গিয়েও আবার সরিয়ে নিল নিজের ওষ্ঠদ্বয়। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
“আর ইউ রেডি ফর এভ্রিথিং, মাই ওয়াইফ?”
নিবেদিতা কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে সম্মতিসূচক মাথা দোলাল। নির্ণয় মুচকি হেসে আলতো করে চুমু খেল নিবেদিতার ঠোঁটে। এরপর মুখ ডোবাল ঘাড়ে, গলায়, বুকে। নির্ণয়ের প্রতিটা স্পর্শ নিবেদিতাকে নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। সে হাত সরাতে গেলে নির্ণয় হাত চেপে ধরল। নিবেদিতার হাতের আঙুলের মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে হাতটা চেপে ধরল নির্ণয়। শিহরনে কাঁপান্বিত হাতের সাথে লেগে বেডসাইড টেবিলের ওপর থেকে কাচের গ্লাসটি মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেল। সেদিকে এই দুজন মানব-মানবীর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা তাদের উন্মাদ করা ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত। এক অন্যরকম অনুভূতির জগতে বিচরণ করছে প্রেম-পিয়াসু দুজনে।
_______
নির্ণয়দের বাড়িতে আজ সবার দাওয়াত। মিদহাদদেরও অনেক অনুরোধ করা হয়েছে আসার জন্য। আজ রাতের ফ্লাইটেই ওরা লন্ডন চলে যাবে। তাই সকালে রওনা দিয়েছে গ্রাম থেকে। নির্ণয়দের বাড়ি থেকেই সোজা চলে যাবে এয়ারপোর্টে। সকাল থেকে বিউটি বেগমের সাথে মিলেমিশে কাজ করেছে নিবেদিতা। একটু আগেই বিউটি বেগম তাকে গোসল করে তৈরি হয়ে নিতে বলেছেন। নিবেদিতা গোসল সেরে সাদা রঙের একটা জামা পরেছে। আয়নার সামনে এসে চুল ঝাড়ার সময় নির্ণয় এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। গালে চুমু খেয়ে বলল,
“আমার শুভ্র পরী।”
নিবেদিতা মুচকি হাসল। নির্ণয় বলল,
“শুধু হাসলে তো হবে না। আমায় চুমু দাও।”
“পাগল নাকি! ছাড়েন তো।”
নিজেকে ছাড়িয়ে নিল নিবেদিতা। নির্ণয় জেদ ধরে বলল,
“আমার চুমু চাই।”
“বাচ্চা নাকি?”
“হু বাচ্চাই! চুমু দাও।”
বিউটি বেগমের ডাক শুনে নিবেদিতা তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দৌঁড় দিল। দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবার পেছনে তাকাল। মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে নির্ণয়। হেসে ফেলল নিবেদিতা। নির্ণয়ের কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলল,
“আপনি একটা পাগল।”
“হ্যাঁ, শুধু তোমার জন্যই।”
.
গ্রাম থেকে সবার আসতে আসতে এগারোটা বেজে গেছে। নিবেদিতা সবাইকে আগে হালকা নাস্তা দিল। বিউটি বেগম, নির্ণয় সবার সাথে বসে গল্প-গুজব করছে। নিবেদিতা এখানেই জানতে পারল যে আজকে মিদহাদরা চলে যাবে। সে কিছু বলল না। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে সবাই রেস্ট নিচ্ছিল। নিবেদিতা টেবিল গোছাচ্ছে। মিদহাদ তখন মৌটুসীকে নিয়ে নিবেদিতার কাছে আসে। তার হাতে র্যাপিং কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট। প্যাকেটটি মিদহাদ নিবেদিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার আর নির্ণয়ের জন্য সামান্য গিফ্ট।”
“কী আছে এখানে?” জিজ্ঞেস করল নিবেদিতা।
“পরে খুলে দেখে নিও।”
মৌটুসীকে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আবার থেমে গেল। মৌটুসীকে পাঠিয়ে দিয়ে পিছু ফিরে মিদহাদ ডাকল,
“প্রাণ?”
নিবেদিতা এই প্রথম এই ডাকের সাড়া নিয়ে বলল,
“হু?”
“তোমার সেই অনুরোধ আমি পুরোপুরি রাখতে পারব কিনা আমি জানিনা। আসলে কী বলো তো মনের ওপর তো কারো জোর চলে না। আজ একজনকে ভালোবাসলাম, কাল আবার আরেকজনকে ভালোবাসলাম। এমনটা তো হয় না বলো? আমি বলছি না যে, জীবনে দ্বিতীয়বার আর কাউকে ভালোবাসা যায় না। অবশ্যই যায়। এরজন্য প্রয়োজন সময়। আমারও এখন সময় দরকার। তবে আমি তোমাকে এতটুকু শিওরিটি দিতে পারি, আমি সূবর্ণলতাকে নিয়ে ভাবব। তোমার পছন্দের মূল্য আছে আমার কাছে। যেদিন আমার মনে হবে যে, আমি সূবর্ণলতাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি কিংবা ভালোবাসতে পেরেছি এবং তাকে বিয়ে করতে পারব, তার সাথে সংসার করতে পারব সেদিন এই কথাটা সূবর্ণলতাকে বলার আগে আমি তোমাকেই বলব।”
নিবেদিতা কোনো কথা জবাব দিল না। মিদহাদ নিজেই বলল,
“তোমাকে মিস করব, প্রাণ। ভালো থেকো।”
মিদহাদ চলে যাওয়ার পর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নিবেদিতা। চেয়ারের ওপর প্যাকেট রেখে টেবিল গুছিয়ে নিল আগে। সব কাজ শেষ করে প্যাকেট রুমে রেখে এসে সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসল। সন্ধ্যার নাস্তা করে মিদহাদ ও তার পরিবার এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। ওদের এগিয়ে দিতে সাথে নয়ন আর নির্ণয়ও গেল। চলে যাওয়ার সময় মিদহাদ শেষবারের মতোও আর তাকাল না নিবেদিতার দিকে। সে আর কোনো মায়া বাড়াতে চায় না। ঐ মুখ তার স্বস্তির কারণ আবার কষ্টেরও। কী দরকার আর মিছে মায়া বাড়িয়ে? ভালোবাসায় সবচেয়ে সত্য বলে যদি কিছু থাকে তবে তার নাম কষ্ট। সেই কষ্টকেই মিদহাদ হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। ভালোবাসার মানুষ ভাগ্যে না থাকলেও মনে থেকে যায় সারাজীবন।
ওরা চলে যাওয়ার পর নিবেদিতা রুমে এসে বিছানায় শুলো। শরীরটা কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে হঠাৎ। বালিশে মাথা রাখতেই অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল সে। বিউটি বেগম রুমে এসে দেখেন নিবেদিতা ফ্যানও ছাড়েনি। অমনি শুয়ে আছে। তিনি আর ডাকলেন না ওকে। ফ্যান ছেড়ে দরজা চাপিয়ে আবার চলে গেলেন। এয়ারপোর্ট থেকে নির্ণয়ও ফিরে এসে দেখে নিবেদিতা ঘুমাচ্ছে। সে গিয়ে পাশে বসল। আলতো করে হাত বুলাল নিবেদিতার খোলা চুলে। গালে হাত বুলানোর পর নিবেদিতা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল। নির্ণয় আশ্বস্ত করে বলল,
“আরে আমি, আমি! রিল্যাক্স!”
নিবেদিতা স্থির হলো। নির্ণয় ওকে জড়িয়ে ধরার পর লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
“ভয় পেয়ে গেছিলাম!”
“সরি জান। এখন ঠিক আছো?”
“হু।”
নিবেদিতাকে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে চুল ঠিক করে দিচ্ছিল নির্ণয়। নিবেদিতা জিজ্ঞেস করল,
“ঠিকমতো পৌঁছিয়েছিলেন সবাই এয়ারপোর্টে?”
“হ্যাঁ।”
বিছানায় সেই প্যাকেট দেখে নির্ণয় জিজ্ঞেস করল,
“এটা কী?”
“ওহ! এটা মিদহাদ ভাইয়া দিয়েছিল। আমাদের জন্য নাকি গিফ্ট। ব্যস্ত ছিলাম তাই খুলে দেখা হয়নি।”
“এখন খোলো।”
নিবেদিতা প্যাকেট খুলে দেখল সাদা রঙের একটা সুন্দর গাউন। নির্ণয়ের জন্য সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট। নির্ণয় বলল,
“মিদহাদের পছন্দ দারুণ। এই গাউনে তোমাকে বেশ মানাবে।”
নিবেদিতা গাউনের ভাঁজ খুলতেই একটা ভাঁজ করা কাগজ পড়ল বিছানার ওপর। গাউন রেখে নিবেদিতা কাগজটা হাতে নিল। নির্ণয় বুঝতে পেরেছে এটা মিদহাদেরই কোনো চিঠি হবে হয়তো। যেহেতু কাগজটা গাউনের ভেতর ছিল তার মানে এটা নিবেদিতার জন্যই লেখা। নির্ণয় তাই বসা থেকে উঠে বলল,
“বাইরে থেকে এসেছি শরীরে ধুলো-ময়লা লেগেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
নিবেদিতা কাগজের ভাঁজ খুলতে খুলতে মাথা নাড়াল। কাগজের ভাঁজ খুলে দেখল সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
“নিবেদিতা প্রাণ, সাদায় তুমি শুভ্রতার প্রতীক।”
কাগজটা নিবেদিতা আবার জামা-কাপড়ের সাথে প্যাকেটে রেখে ওয়ারড্রবের ভেতর রেখে দিল। রান্নাঘরে গিয়ে নির্ণয়ের জন্য কফি বানিয়ে এনে দেখে নির্ণয় বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে। কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে নিবেদিতা জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে? এত চুপচাপ! মন খারাপ?”
“না তো!”
রাতের আঁধার সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করে নিয়েছে। বারান্দায় কোনো লাইট নেই। চাঁদের আলোতে বারান্দা এখন আলোকিত। চাঁদের আলো এলেও দূরের বিল্ডিং থেকে বারান্দা স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব নয়। তাই চট করেই নিবেদিতা নির্ণয়ের কোলে বসে পড়ল। গলা জড়িয়ে ধরে নাকে নাক ঘষে বলল,
“চিরকুটটা প্যাকেটেই আছে। দেখে নিয়েন।”
“আমি কেন দেখব? ও তো আমার জন্য লেখেনি। তোমার জন্য লিখেছে। এনিওয়ে, তুমি কি ভাবছ এই সামান্য কারণে আমি রাগ করেছি?”
“তাই তো ভেবেছিলাম।”
“ভুল ভেবেছ আমার জান। আমি রাগ করিনি। মনও খারাপ না। তোমাকে কাছে পাওয়ার অজুহাত।”
নিবেদিতা মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
“আপনি খুবই বাজে।”
নির্ণয় সুর দিয়ে গাইল,
“অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে।
আরো কাছে আসো না…”
নিবেদিতা নির্ণয়ের মুখ চেপে ধরে বলল,
“চুপ!”
“চুপ করতে রাজি আছি। যদি ঠোঁটে ঠোঁট রাখো।”
“ধুর! চলে যাচ্ছি আমি।”
নির্ণয় হাত টেনে ধরল নিবেদিতার। কফির মগ ফ্লোরে রেখে দুহাতে নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“চলে যাচ্ছি মানে কী? কোথাও তোমাকে যেতে দিলে তো!”
নিবেদিতা লজ্জায় দৃষ্টি নত করে রেখেছে। নির্ণয় ওর দুগালে হাত রাখল। আবারও সেই অজানা ভয়, অনুভূতি হচ্ছে নিবেদিতার। তবে এবার আর নির্ণয় নিবেদিতার ঠোঁটে নয়; কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল। নিবেদিতার মাথাটা বুকের ওপর রেখে বলল,
“সারাজীবন এভাবেই আমার বুকে থেকে যেও নিবেদিতা। ভালোবাসা দিয়ে আমায় বাঁচিয়ে রেখো। তোমায় ছাড়া আমার পূর্ণতা নেই। আমি শূন্য।”
“আপনাকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আপনার নিবেদিতা চিরকাল এভাবেই থেকে যাবে। আপনার আদরে, ভালোবাসায় এবং আপনার বুকে। ভালোবাসি আপনাকে।”
“ভালোবাসি নিবেদিতা।”
(সমাপ্ত)
[কপি করা নিষেধ।
বিঃদ্রঃ-১ অনেক অপেক্ষা করিয়েছি না এতদিন? আজ থেকে আর নিবেদিতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না আপনাদের। আমারও আর লেখার তাড়া থাকবে না। চাইলে গল্পটাকে আরো বড়ো করা যেত। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, এতে শুধু কাহিনি টেনে বড়ো করা হবে। শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট। আমি এই সপ্তাহ্ থেকে প্রচুর ব্যস্ত থাকব। তাই পাঠকদের জন্য চাইলেও সময় নিয়ে লেখা সম্ভব না। হাতে অন্য কাজও আছে। তাই দুজনের পূর্ণতার হাসির সাথেই গল্পের সমাপ্তি টানলাম।
বিঃদ্রঃ-২ মিদহাদের কাহিনি শেষ হয়নি এটা আমিও জানি। আমি ওর জীবন কাহিনির সমাপ্তি টানিনি। ওকে নিয়ে এটা পাঠকদের জন্য ওপেন এন্ডিং রেখে দিলাম। পাঠকরা যদি মনে করেন যে, মিদহাদ পরবর্তীতে সূবর্ণলতাকে ভালোবাসবে, বিয়ে করবে তাহলে সেটাও ভাবতে পারেন। আর যদি মনে হয় এমনটা হবে না তাহলে সেটাও ভাবতে পারেন। অর্থাৎ মিদহাদের অধ্যায়টা পাঠকদের মনের ও কল্পনার জন্য উন্মুক্ত।
বিঃদ্রঃ-৩ ব্যস্ততার কারণগুলো সামলে নিই আগে। তারপর ডেইজি শুরু করব ইন-শা-আল্লাহ্।
সবাই ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্যগুলো মিস করব। যদিও আশা করছি, আমাদের আবার খুব শীঘ্রই গল্প নিয়ে সময় কাটবে একসাথে। ভালোবাসা রইল আপনাদের জন্য। আর হ্যাঁ, ‘নিবেদিতা’ নিয়ে আপনাদের অনুভূতি জানিয়ে যাবেন।]