#কল্পকুঞ্জে_কঙ্কাবতী
লেখনীতে: নবনীতা শেখ
|পর্ব ১২|
সে রাতে আর আমার ঘুম হলো না। নীতির সাথেও ঠিকমতো কথা বললাম না। সর্বক্ষণ কিছু একটার অভাব খুব জোরদারভাবে বোধ করতে লাগলাম। এর আগেও কুঞ্জ ভাই এসেছেন; কিছুদিন থেকেই চলে গিয়েছেন। কখনও এই রকমের অনুভূতি হয়নি, যে-রকমটা আজ হচ্ছে।
আম্মুর কাছে শুনেছি– খালামণির কোমরের ব্যথাটা দিনদিন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সেজন্য ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হতেই এই শহরে এসেছে খালামণি।
পরের দিন কলেজেও মনটা খুব খারাপ ছিল আমার। উদাসীনতায় ঘেরা মুখশ্রীতে হাসির রেশ মাত্র ছিল না। যে কারণে আমাদের হাস্য-রানি রাহীও সেদিন হাসতে পারেনি। চিত্রা কিংবা নৌশি, কেউই আমার মন খারাপের কারণ বের করতে পারেনি। অতঃপর কলেজের মতো কোচিংয়েও আমাদের গ্যাংটা ভীষন নিশ্চুপ ছিল।
ছয়টা দিন এভাবেই কেটে গেল। বিগত ছয়টা রাতের মতো আজও আমি কুঞ্জ ভাইয়ের রুমে শুয়েছি। ওঁর বিছানায়, ওঁরই বালিশে মাথা রেখে শুয়ে আছি; যেন মনে হচ্ছে– এই তো কুঞ্জ ভাই। আমার কুঞ্জ ভাই। আমার পাশেই শুয়ে আছেন। আমি ওঁর বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছি। এই যে! ওঁর হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
কিন্তু! তবুও…
বিছানা থেকে আলগোছে উঠে দাঁড়ালাম। গুটি গুটি পায়ে কাবার্ডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাবার্ড খুলতেই সমগ্রটা জুড়ে কুঞ্জ ভাইয়ের কাপড়-চোপড় দেখতে পেলাম। ভালো করে পুরো কাবার্ডে চোখ বুলিয়ে কালো রঙের শার্টটা গায়ে জড়িয়ে নিলাম। তারপর আবারও বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
পাঁচটি রাত ধরে এই করছি, এতেই যেন অবাধ্য মনটার ছটফটানো সামান্য হলেও লাঘব হচ্ছে। তারপর ঘুমের অতল গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি।
তবে আজ নাহ্! অনেক চেষ্টায়ও আজ ঘুমোতে পারছি না। ঘুমেরা তো চোখে ধরাই দিচ্ছে না। পাশ হাতড়িয়ে ফোনটা হাতে তুলে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে আজ ছয়দিন পর কুঞ্জ ভাইকে মেসেজ করেই ফেললাম, “আপনাকে খুব মনে পড়ছে।”
সেন্ড করার পরপরই আনসেন্ট করে ফেললাম। কিছুক্ষণ ভেবে আবারও লিখলাম, “ঘুম আসছে না। আপনার সাথে স্পেন্ড করা মোমেন্টগুলো ভীষনভাবে জ্বালাচ্ছে আমাকে।”
কিন্তু এটাও আনসেন্ট করে দিলাম। আবারও মেসেজ করলাম, “আপনাকে না! খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। খুব, খুবব, খুউব বেশি।”
এবারও সেন্ড করার সেকেন্ড তিনেকের মাঝেই আনসেন্ট করে দিলাম। উফফ! এরকম করছি কেন? এরকম হচ্ছে কেন আমার সাথে? ইজ’ন্ট ইট দ্যা ওয়োর্স্ট ফিলিংস এভার?
মনে মনে নিজের মনকে রিমান্ডে নিলাম। কুঞ্জ ভাই অনলাইনেই আছেন। এবার আর কিছুটা সময় ভেবে মেসেজ করলাম, “কেমন আছেন, কুঞ্জ ভাই?”
কুঞ্জ ভাই সাথে সাথেই সিন করলেন। বুকটা কেমন যেন ধুক করে উঠল আমার। হৃৎস্পন্দন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়েই অস্বাভাবিক ভাবে ছুটে চলেছে। শান্ত-শীতল নিশীথা প্রহরে হঠাৎ করেই দরদর করে ঘামা শুরু করলাম; যখন দেখলাম, কুঞ্জ ভাই কিছু লিখছেন। কিন্তু এখনও সেন্ড করছেন না কেন? এত সময় লাগছে কেন ওঁর? আচ্ছা! আমার অস্থিরতা কি উনি বুঝতে পারছেন না?
চোখ দুটো কেমন যেন ছলছল করতে লাগল। অদ্ভুত এক অচেনা, অপার্থিব ইচ্ছে আমাকে ক্রমশ বশ করে ফেলতে লাগল। সবকিছু ছাপিয়ে মুহূর্তেই এই পাষাণ মানুষটির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু, তা বোধহয় আমার জন্য প্রায় অসম্ভব।
অবশেষে কুঞ্জ ভাইয়ের টাইপিং থেমে গেল। তৎক্ষণাৎ কুঞ্জ ভাইয়ের কল এলো। এবার হয়তো হৃৎপিণ্ড আমার বুক চিরে বেরিয়ে আসবে।
রিসিভ করব না করব না করেও বেশ সময় লাগিয়ে কলটা রিসিভ করেই ফেললাম। অতঃপর শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের সাথে ফোনটা মিশিয়ে ধরলাম। ফোনের ওপাশেই তো আমার প্রিয় পুরুষটি আছেন। খুব বেশি তো দূরে নয়; এই তো, এখানেই আছেন।
কল রিসিভ করতেই কুঞ্জ ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছিস?”
লাজ-লজ্জা এতক্ষণ যা পাচ্ছিলাম, সবটাই নিমিষেই একটা ঢোকের সাথে গিলে নিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম, “আগে আমি জিজ্ঞেস করেছি তো!”
ওপাশ থেকে যেন কুঞ্জ ভাই সামান্য হাসলেন, শুনতে পেলাম আমি। আরও শুনতে পেলাম কুঞ্জ ভাইয়ের বিড়বিড়িয়ে বলা কিছু কথা, “আচ্ছা, আচ্ছা। তবে আমার ভালো থাকা তো একই প্রশ্নের বিপরীতে দেওয়া তার উত্তরের উপর ডিপেন্ড করে।”
ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে শুধালাম, “কী?”
কুঞ্জ ভাই এবার বললেন, “যেমনটা থাকার কথা, তেমনটাই আছি।”
“উফফ! আবার ভনিতা! সোজাসাপ্টা বলতে পারেন না? এত ঢং করছেন কেন? আচ্ছা! ভালো আছেন তো?”
“কেন? খারাপ থাকার কথা নাকি?”
“নাহ্। তাই তো। আপনি তো ভালই থাকবেন। যত খারাপ, সব তো আমিই আছি; আমিই থাকব। হুহ! এক্সপেকটেশন বেশি করে ফেলেছিলাম তো! একজনের ভাবনায় ডুবে, তলিয়ে অর্ধেক মরে গেছি; অথচ সে দিব্যি বেশ আছে। আমার কোনো চিন্তাই নেই তার।”
শেষের দিকে আমার কণ্ঠস্বরটা সামান্য ভিজে এলো। কান্না পেল প্রচুর। আমি ওঁকে এত এত মিস করেছি, হাসতে পারিনি, কেমন একটা বাজে অনুভূতি বক্ষে নিয়ে এতগুলো সময় পার করলাম; আর উনি বেশ আছেন!
আর পারলাম না। এবার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। হয়তো অভিমানে কিংবা বিগত ১৫৪ ঘণ্টার কোনো এক অভাব সামান্য হলেও ঘুচে যাবার বদৌলতে। জানা নেই, এই কান্নার আসল কোনো কারণ।
আমার কান্নার আওয়াজ ফোনের ওপাশে যেতেই কুঞ্জ ভাই অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলেন, “অ্যাই, নবনী! অ্যাই! কাঁদছিস কেন? কী হয়েছে? খারাপ লাগছে তোর? শরীর খারাপ করছে কি? কী হয়েছে, বল না!”
কুঞ্জ ভাই! আমার শরীর না, মন অসুস্থ হয়েছে। আর এই অসুখের নিবারণ হবে একমাত্র আপনাকে দু’চোখ ভরে দেখতে এবং খানিকটা ছুঁতে পেরেই। কিন্তু তা যদি আপনাকে বোঝাতে পারতাম! যদি মুখ ফুটে বলতে পারতাম! কিন্তু পারলাম না তো, শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।
কুঞ্জ ভাই আরও কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়লেন। আমাকে আর কিছু বললেন না। গলা ঝেড়ে খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার প্রচেষ্টা করলেন। আমাকে আর কিছু না বললেও পাশে কারো একজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, “তোর বাইকটা সহ তুই দুই মিনিটের মাঝে গেটের পাশে গিয়ে দাঁড়া। আমার সাথে বেরোবি।”
ওপাশ থেকে এক সম্পূর্ণ অপরিচিত কণ্ঠে ভেসে এলো, “ভাই! কোথায় যাবা? তোমার বাইক নিবা না?”
“আমি চালাতে পারব না বলেই তোকে আসতে বলছি।”
“ওকে, ভাই।”
অতঃপর আবারও সব চুপ। আমার কান্না থেমে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। এতক্ষণ মন-প্রাণ সব লাগিয়েই কলের ওপাশের কথোপকথন শুনছিলাম। তারপর ওপাশেও পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
এর মাঝেই হঠাৎ কুঞ্জ ভাই ডেকে উঠলেন, “নবনী!”
ছোট্ট করে জবাব দিলাম, “হুম।”
“কী হয়েছে?”
আমি নাক টানতে টানতে বললাম, “কিছু না।”
“কী হয়েছে, বল। নাহলে ট্রাস্ট মি, কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে দেব।”
গম্ভীর কণ্ঠের জোরটা বেশ ছিল। কিছুটা কেঁপেও উঠলাম। আমি ফোঁপাতে লাগলাম। একরাশ অভিযোগ নিয়ে বললাম, “সবসময় বকেন কেন?”
কুঞ্জ ভাইয়ের লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ার শব্দ এপাশ থেকে শুনতে পেলাম আমি। রাগ কমানোর জন্য এই কাজটা উনি প্রায়শই করেন। আশ্চর্য! এখানে উনি রাগলেন কেন? রাগার কথা তো আমার।
কুঞ্জ ভাই আবারও বলা শুরু করলেন, “কী করছিস?”
“শুয়ে আছি।”
“রাতে খেয়েছিস?”
“উমম…”
“মিথ্যে বলবি না, নবনী।”
“ইয়ে, খিদে পায়নি।”
“না খেয়ে আছিস?”
“হুম।”
“নিজের খেয়াল রাখবি, প্রমিজ করেছিলি!”
“স্যরি।”
কুঞ্জ ভাই থামলেন। এরপর বাইক স্টার্ট দেবার শব্দ পেলাম এবং পরপরই প্রচণ্ড বাতাসের আওয়াজ। জিজ্ঞেস করলাম, “কোথাও যাচ্ছেন?”
কুঞ্জ ভাই জবাব নিলেন, “হুম।”
এরপর আবারও কোনো কথা নেই। এই প্রথম এমন হচ্ছে; আমি কথা বলার কোনো শব্দই খুঁজে পাচ্ছি না। এমনকি কলটা কেটে দেবার ইচ্ছেটাও হলো না, চাচ্ছি না। এই যে, প্রচণ্ড বাতাসের সাথে ওঁর নিঃশ্বাসের আওয়াজটাও আমার কর্ণে ভেসে আসছে; এও যেন অনেক। এটুকুই যেন আগামী কয়েকশো বছরের বেঁচে থাকার এক অদম্য ইচ্ছে আমার।
বাতাসের সাথেই কুঞ্জ ভাইয়ের ভরাট গলায় খানিকটা গাম্ভীর্যতার সাথেই ভেসে এলো, “কথা বলতে থাক।”
এবারও বুঝতে পারলাম না, কী বলব। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললেন, “বল।”
আমিও শুরু করলাম। না ভেবেই শুরু করলাম, “জানেন, আজ কী হয়েছে? আজ নৌশি আবারও একটা ছেলেকে মেরেছে। প্রচুর মেরেছে। মারতে মারতে আধ মরা বানিয়ে হসপিটালে অ্যাডমিট করে দিয়ে এসেছে।”
“কেন মেরেছে?”
“ইয়ে মানে, রাস্তায় আমাকে টিজ করছিল ঐ ছেলেটা।”
“কোন হসপিটালে অ্যাডমিট করেছে?”
“ইবনে-সিনা।”
“আচ্ছা। এরপর বল।”
এরপর আবারও কথা শুরু করলাম। একপর্যায়ে আমি বিছানা থেকে কথা বলতে বলতে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। লাইট অফ করে রাখা। এখন রাত একটা। চারিপাশ কেমন যেন থমথমে ভাব ধরে আছে। সবদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কথা বলতে লাগলাম। ঠোঁট থেকে যেন হাসি সরছেই না। ইশ! এই সপ্তাহে তো কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে গেছিলাম। আর আজ তার সামান্য কণ্ঠটা শুনেই আমি কতটা খুশি হয়ে গেছি। আচ্ছা! লোকটা কি জাদু জানে? আমার ঠোঁটের সাথে সাথে চোখও হাসছে।
হঠাৎ কুঞ্জ ভাই আমাকে থামিয়ে বললেন, “হোল্ড অন্।”
রিকানেকটিং এলো। কিছুক্ষণ পরেই কুঞ্জ ভাই বললেন, “কী খাবি?”
ভাবতে লাগলাম, “উমম…”
“বিরিয়ানি?”
“ওকে, বিরিয়ানি। কিন্তু…”
হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমার প্রশ্ন, তাই বলে উঠলেন, “কোনো কিন্তু না।”
এর মাঝে বাইক দ্বিতীয় বারের মতো থেমে গেল। কুঞ্জ ভাই অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ফিরে যা তবে।”
“কবে ফিরবা তুমি?”
“পরে জানিয়ে দেব।”
তারপর আবারও বাইক স্টার্টের আওয়াজ পেলাম। কিন্তু সেই বাতাসের শব্দ পেলাম না। আমি কথা বলতে লাগলাম। সেই সাথে কানে নিস্তব্ধ স্থানের ঠকঠক আওয়াজ আসতে লাগল। অবজ্ঞা করে আবারও কথা বলতে লাগলাম। কী যে শান্তি লাগছে!
হঠাৎ করেই কুঞ্জ ভাই মিউট করে ফেললেন। কিছুই বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর আবারও আনমিউট করলেন।
আমি ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছিল?”
কুঞ্জ ভাই বড্ড আলতো কণ্ঠে বললেন, “তেমন কিছু না।”
“কিছু তো অবশ্যই। এরকম করছেন কেন? আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনার সাথে কথা বলতে পেরে আমি কতটা খুশি হয়েছি। ঠিক কতটা ভালো লাগছে আমার, আপনি সত্যিই বুঝতে পারছেন না। আপনি কথা বলছেন না, চুপচাপ শুনছেন। বিরক্ত হচ্ছেন নাকি? খুব বেশিই জ্বালাই আমি, না? আসলেই তো। আমি ভীষন খারাপ; ভীষন, ভীষন খারাপ। কথা বলতে হবে না এই খারাপ মানুষটার সাথে। আপনার যা ইচ্ছে হয়, তাই করুন। যেখানে যাচ্ছেন, যান। আপনার কাজই করুন। আমি রাখছি।”
রাখছি বলেও রাখলাম না। ওভাবেই ফোন কানে চেপে ধরলাম। হঠাৎ কুঞ্জ ভাই জিজ্ঞেস করলেন, “কোন রুমে আছ?”
আমি বললাম না। বললাম না আমি ওঁরই রুমে আছি। উনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, “আমার রুমে?”
জানি না, বুঝলেন কী করে। তবুও প্রত্যুত্তর করলাম না। কুঞ্জ ভাই বেশ কিছুক্ষণ পরেই আস্তে এবং ধীর কণ্ঠে বললেন, “পিছে ঘোরো।”
আমি কথা বললাম এবার, “কেন? কেন আপনার কথা শুনব? আপনি আমাকে বোঝেন না, আমি কেন আপনার কথা শুনব? শুনব না। একটুও না।”
হঠাৎ আমার পিছে কোনো কিছু অনুভূত হলো। আমি যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেলাম। অনুভব করতে লাগলাম কারো হৃৎস্পন্দন। খুব পরিচিত, খুউব বেশি পরিচিত সেই স্পন্দনগুলো।
কাঁপা কাঁপা পায়ে পিছু মুড়লাম। দূর হতে ভেসে আসা স্ট্রিট লাইটের মৃদু আলোতে দেখতে পেলাম, কুঞ্জ ভাই! চোখে অদ্ভুত এক মাদকতা নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সোডিয়ামের হলুদ আলোয় ওঁর ফরসা মুখশ্রীতে পড়েছে। গালের চাপদাড়িতে ওঁকে অনেক, অনেক বেশিই আকর্ষণীয় লাগছে। ঠোঁটে হাসি নেই। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সেই দৃষ্টি যে আমি সহ্য করতে পারছি না। কেমন অসম্ভব রকমের ভালো লাগছে।
মনে পড়ল হঠাৎ ঘণ্টা খানেক আগের নিজের বলা সেই কথাটা, “সবকিছু ছাপিয়ে মুহূর্তেই এই পাষাণ মানুষটির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু, তা বোধহয় আমার জন্য প্রায় অসম্ভব।”
নাহ্! তা মোটেও অসম্ভব নয়। এখন তা না করাটাই বোধহয় অসম্ভব। ওঁর নেশালো চোখের সেই গভীর দৃষ্টি থেকে নিজেকে লুকোতে তার বুকের ঠিক মধ্যিখানে মুখ লুকোলাম।
বড্ড কোমল ও ভেজা কণ্ঠে বললাম, “আই মিস ইউ সো মাচ, কুঞ্জ ভাই।”
এক শক্তপোক্ত হাত আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। এক হাত পিঠে, আরেক হাত মাথায়। লম্বায় আমি তার ঠিক বুক বরাবর। উনি আমার মাথায় নিজের চিবুক ঠেকালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বললেন, “মিস ইউ ব্যাডলি।”
এরপরই তার ওষ্ঠ স্পর্শ করল আমার সিঁথি। ঈষৎ কেঁপে উঠলাম আমি। ইশ! এত সুখ! এত সুখ আমি রাখব কোথায়?
চলবে….
( কী যে একটা পরিস্থিতিতে আছি আমি। সারাক্ষণ একটা হৈ-হুল্লোড় টাইপের পরিবেশ! একটাও ঘুমোতে যায় না। এঁদের আগে আমিই ঘুমিয়ে পড়ি। এখন তো একটু পরপর ধমক দিয়ে যাচ্ছি আর লিখছি। উঠে কোথাও গেলে, ওরাও পিছু পিছু আসে। একটা পিচ্চি তো আমার ধমকে কেঁদেও দিয়েছে!🙂 যাই হোক, হ্যাপি রিডিং। )