নিবেদিতা #পর্ব_২২ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

0
107

#নিবেদিতা
#পর্ব_২২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
______________
সকাল সকাল তুবার ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল নিবেদিতার। ভিডিয়ো কল রিসিভ করতেই তুবা ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,

“নিবু রে নিবু, আমার কী হবে রে!”

নিবেদিতার চোখে তখনো রাজ্যের ঘুম বিরাজ করছিল। সে চোখ কচলে বলল,

“কী হয়েছে?”

“বাড়িতে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।”

“এটা তো ভালো খবর। তুই কেন কাঁদছিস?”

“কেন কাঁদছি মানে? আমার বিয়ে হয়ে যাবে আর আমি কাঁদব না?”

“হ্যাঁ, কাঁদবি। কিন্তু বিয়ের দিন। এখনই কেন?”

“আমার এখনই কান্না পাচ্ছে তো কী করব?”

“কান্না পেলে কান্না কর। আমি এখন ঘুমাব। সারা রাত জেগে পড়তে হয়েছে। এখন একটু না ঘুমালে পরীক্ষা দিতে পারব না।”

তুবা কান্না থামিয়ে বলল,

“তোর আজকে পরীক্ষা আছে নাকি?”

“আজ নেই। কাল আছে।”

“তাহলে এত ঘুম কীসের? সময় তো আছে আরো।”

“বেকারিতে তো যেতে হবে।”

“ওহহো! আচ্ছা নিবু শোন, তুই আর নির্ণয় ভাইয়া কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহ্ আগেই চলে আসবি আমার বিয়েতে।”

নিবেদিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“বিয়ে কি ঠিকও হয়ে গেছে নাকি?”

তুবা একটু লজ্জা পেল। মাথা নুইয়ে বলল,

“না। কিন্তু হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। ওরা আমাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে বুঝলি।”

“বুঝলাম। কিন্তু ছেলে কে? গ্রামের কেউ?”

“হ্যাঁ। চেয়ারম্যানের ভাতিজা। লন্ডন থাকে। বিয়ে করে আমাকেও নিয়ে যাবে।”

“তাহলে তো খুবই ভালো। রাজকপাল তোর।”

তুবা বিষণ্ণবদনে বলল,

“কিন্তু আমার একটু মনও খারাপ।”

“কেন? ছেলে তো সুন্দর আছে। কী যেন নাম? রাদিন না? অনেক আগে দেখেছিলাম যদিও। ভাইয়া তো লন্ডনেই পড়াশোনা করেছে।”

“হ্যাঁ, নাম রাদিন-ই। দেখতে এখন আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছে। এমন একটা ছেলে আল্লাহ্ আমার কপালে লিখে রেখেছে এটা ভাবলেই আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।”

“তাহলে আবার মন খারাপ কেন?”

“মন খারাপ এজন্যই যে আমার ক্রাশও তো লন্ডনেই থাকে।”

নিবেদিতা বুঝতে না পেরে বলল,

“ক্রাশ? তোর ক্রাশ কে?”

“আরে ভুলে গেলি নাকি! মিদহাদ ভাইয়ার কথা বলছি। স্বামী নিয়ে ক্রাশের শহরেই থাকব বিষয়টা দুঃখের না?”

“তোর মিদহাদ ভাইয়াকে পছন্দ নাকি?”

“ক্রাশ তো। পছন্দের মানুষ। থাক ব্যাপার না, আমার হবু স্বামীও কম সুন্দর না।”

নিবেদিতা হাসল। তুবা বলল,

“ঠিক আছে। তুই তাহলে এখন একটু ঘুমিয়ে নে। পরে ফ্রি হয়ে ফোন দিস।”

“ঠিক আছে।”

“এই নিবু, শোন, শোন?”

“কী?”

“মিদহাদ ভাইয়াকেও তো বিয়েতে দাওয়াত দেওয়া উচিত তাই না? দাওয়াত দিলে কী আসবে?”

“কী জানি! দিয়ে দেখতে পারিস।”

“তোর কাছে ফোন নাম্বার আছে?”

“আছে।”

“ঘুম থেকে উঠে নাম্বারটা দিয়ে রাখিস।”

“আচ্ছা।”

ফোন রেখে নিবেদিতা আবার বালিশে মুখ গুঁজল। ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। এপাশ-ওপাশ করল কিছুক্ষণ। ঘুম আসছে না আর। এখন না ঘুমালে ঠিকমতো কাজও করতে পারবে না। যন্ত্রণার শেষ নেই।

ঠিক তখন আবার ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল নির্ণয় কল করেছে। ওষ্ঠে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। কল রিসিভ করে বলল,

“হ্যালো।”

ওপাশ থেকে নির্ণয় বলল,

“ইশ! ম’রে গেলাম।”

“মানে? কী হয়েছে?”

“বুকটার ভেতর ধুকপুক করছে তোমার ঘুমন্ত কণ্ঠস্বর শুনে। ভালো লাগছে।”

“ভালো লাগছে নাকি? আমার তো খুবই বাজে লাগে ঘুমন্ত ভয়েস।”

“কারণ তুমি যে নিরামিষ তাই।”

“ওহ আচ্ছা! আমি নিরামিষ? আর আপনি খুব আমিষ তাই না?”

“অফকোর্স! সন্দেহ আছে কোনো? থাকলে খেয়ে দেখতে পারো। চলে আসব বাসায়?”

“মে’রে ফেলব একদম।”

নিবেদিতার শাসানোর ভঙ্গিতে কথা শুনে নির্ণয় শব্দ করে হেসে ফেলল। নিবেদিতা ধমক দিয়ে বলল,

“হাসবেন না। আমি হাসার মতো কিছু বলিনি। আপনি যে এত বদ হবেন এটা আমি কল্পনায়ও ভাবিনি।”

“তাহলে কী ভেবেছিলে তুমি? রোবটের মতো আচরণ করব তোমার সাথে?”

“অনেকটা ওরকমই ভেবে রেখেছিলাম।”

“এখন ভাবনা ভুল বলে কি আফসোস হচ্ছে?”

“আফসোস হবে কেন?”

“তাহলে কি ভালো লাগছে দুষ্টু দুষ্টু কথা শুনতে?”

“উফ! আপনি এভাবে কথা প্যাঁচাচ্ছেন কেন?”

“কারণ তোমাকে রাগাতে আমার ভালো লাগে।”

“আমাকে রাগিয়ে কী শান্তি পান?”

“দূর থেকে তো শান্তি পাই না। কাছে থাকলে পাই। তোমার রাগান্বিত মুখ দেখলেই বুকটা শান্তিতে ভরে যায়।”

“হয়েছে। এত প্রেম দেখাতে হবে না। অফিসে যাননি?”

“যাচ্ছি। গাড়িতে আছি এখন। গতকাল রাতে মাকে ফোন করে আমাদের সম্পর্কের কথাটা বলতে চেয়েছিলাম।”

“পরে?”

“পরে আর বলিনি। মা বলল তুবার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুমি কিছু জানতে নাকি?”

“বাসায় যখন কথা হয়েছিল তখন মা বলেছিল, বিয়ের কথাবার্তা চলছে। একটু আগে তুবা ফোন করেছিল। ওর কাছে শুনলাম রাদিন ভাইয়ার বাড়ির সবাই নাকি ওকে খুব পছন্দ করেছে। বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা বাকি মনে হয়।”

“হ্যাঁ। এজন্য মা বলল ছুটি নিয়ে দেশে যেতে পারব নাকি।”

“আপনি কী বলেছেন?”

“বলেছি পরে জানাব। যদি তুমি যাও তাহলে যাব। নয়তো যাব না। তাই ভেবে রেখেছি, দেশে গেলে সরাসরিই মাকে সম্পর্কের কথা বলে দেবো। তুমি যাবে না?”

“এখন ডেইটের ওপর ডিপেন্ড করছে যেতে পারব কিনা। পরীক্ষার পর তো লম্বা একটা ছুটি আছে। ডেইট তখন ফেললে যাব। না হলে তো আর কিছু করার নেই।”

“তুমি না গেলে তুবা বিয়ে করবে বলে তো মনে হয় না। তোমাকে পরে ফোন দেবে হয়তো। তুমি যখন যেতে পারবে তখনই হয়তো বিয়ের ডেইট ফেলবে।”

“দেখি কী হয়! আপনি নাস্তা করেছেন?”

“হ্যাঁ। বউ তো নেই, তাই নিজেই যা পারি নাস্তা বানিয়ে খেয়ে নিয়েছি।”

“খুব বউ আনার শখ দেখছি?”

“উঁহুঁ! তোমাকে বউ বানানোর শখ। কবে এই সুন্দর চাঁদটা আমার বউ হয়ে আসবে?”

“এই সকালবেলা আপনি চাঁদ পেলেন কোথায়?”

“পেলাম আর কোথায়? আগে বিয়ে তো করি তারপর না পাব! আর আমার চাঁদ সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত সবসময়ই ওঠে আমার চোখের দৃশ্যপটে।”

নিবেদিতা চুপ করে আছে। নির্ণয় বলল,

“কী হলো?”

“কিছু না।”

“চুপ করে আছো কেন?”

“আপনি মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলেন যে আমি জবাব দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাই না।”

“লজ্জা পেয়েছ?”

নিবেদিতা এবারও চুপ করে রইল। নির্ণয় হেসে বলল,

“ঠিক আছে চাঁদ, আমি অফিসে চলে এসেছি। তুমি উঠে নাস্তা করে নিও। রাখছি এখন।”

“ঠিক আছে। টেইক কেয়ার।”

“ইউ অলসো টেইক কেয়ার, মাই মুন।”
.
.
নিবেদিতা ঘণ্টা খানেক ঘুমিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাল। খেয়ে বেকারিতে চলে গেল। যাওয়ার সময় ম্যাসেজ করে নির্ণয়কে আপডেটও দিয়ে রাখল। এটা এখন তার রুটিনে পরিণত হয়েছে। কোথাও যাওয়ার আগে বা ছুটির সময় নির্ণয়কে ম্যাসেজ করে রাখে। ফ্রি থাকলে নির্ণয় তখনই কল করে। আর ব্যস্ত থাকলে ম্যাসেজের রিপ্লাই দিয়ে রাখে। এখনো সে ব্যস্ত তাই রিপ্লাই করল,

“সাবধানে যেও। নিজের খেয়াল রেখো। আমি পরে কল করব।”

লাঞ্চ টাইমে নিবেদিতা নিজেই কল করল। নির্ণয় তখন কাজ করছিল। ফোন ডেস্কের ওপর রাখা। সামনে তার এক বাংলাদেশি কলিগ চেয়ারে বসে আছে। সে এসেছে একটা ফাইল নিতে। ঐ সময়ে নির্ণয়ের ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে লেখা ‘চাঁদ’। সে ভ্রু কুঞ্চন করে বলল,

“ব্রো, দিন-দুপুরে দেখি চাঁদ কল দিচ্ছে আপনাকে। ব্যাপার কী?”

নির্ণয় হেসে বলল,

“এটা আমার ব্যক্তিগত চাঁদ, ব্রো।”

“আই সী! আমাদের ভাবি?”

নির্ণয় হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াল। কলিগ ফাইল নিয়ে যেতে যেতে হেসে বলল,

“ক্যারি অন।”

সে চলে যাওয়ার পর নির্ণয় ফোন রিসিভ করল। নিবেদিতা বলল,

“আপনি কি ব্যস্ত?”

“একটু। সমস্যা নেই। তুমি বলো।”

“দুপুরে খেয়েছেন?”

“না, খাব একটু পর। তুমি খেয়েছ?”

“বাসায় গিয়ে খাব। কাল পরীক্ষা আছে তাই আজ আগেই ছুটি নিয়েছি।”

“আজ তাহলে আর দেখা হবে না?”

“কী করে হবে? আমি তো চলে যাচ্ছি এখন বাসায়।”

নির্ণয় মন খারাপ করে বলল,

“ঠিক আছে। বাসায় গিয়ে খেয়ে নিও। আর সাবধানে যাবে।”

“আচ্ছা। আপনিও খেয়ে নিয়েন।”

বাড়িতে পৌঁছে আগে ফ্রেশ হয়ে নিল নিবেদিতা। আসার সময় বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছিল। রান্না করার মতো সময় কিংবা এনার্জি নেই এখন তার। সে দুপুরের খাবারটা খেয়ে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিল। এরপর উঠে চা বানিয়ে পড়তে বসল। সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে কল আসলো। নিবেদিতার কবে যেতে পারবে জানার জন্য। নিবেদিতা জানিয়ে দিয়েছে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই তার ছুটি হবে। তুবা তখন বলল,

“তোকে তো বিয়েতে আসতেই হবে।”

“ডেইট মিলে গেলে তো যাবই। ভাইয়ার ছুটি আছে আর ক’দিন?”

“তার ছুটি আছে এখনো আরো দুই মাস।”

“ওহ আচ্ছা! ডেইট কবে ফেলে আমাকে পরে জানিয়ে রাখিস। এখন আমি পড়ি। কাল পরীক্ষা আছে।”

“ঠিক আছে। পড়।”

নিবেদিতা ফোন রেখে কিছুক্ষণ বসে রইল। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে। হঠাৎ এমন লাগছে কেন কে জানে! ঘুম কি হয়নি ঠিকমতো? চা-তেও মাথা ধরা সারছে না। ইচ্ছে করছে শুয়ে থাকতে। কিন্তু শুয়ে থাকলেও তো এখন চলবে না। পড়তে হবে। মাথাব্যথা নিয়েই সে চুপচাপ বইয়ে চোখ বুলাচ্ছে। বাসার কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেখল সাবিহা ও পল। ওদের পেছন থেকে নির্ণয়ও বেরিয়ে এলো। ওর হাতে অনেকগুলো খাবার-দাবার। অবাক হওয়ার পাশাপাশি খুশিও হলো নিবেদিতা। ওদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে দরজা লাগাল। সাবিহা আর পল মিলে কিচেনে গিয়ে খাবারগুলো বের করছিল। নিবেদিতা ওদেরকে সাহায্য করতে যেতে চাইলে নির্ণয় হাত টেনে ধরল। বলল,

“তোমাকে যেতে হবে না। তুমি বসো এখানে।”

নিবেদিতাকে চেয়ারে বসিয়ে সেও পাশের চেয়ারে বসল। নিবেদিতা বলল,

“আপনি সরাসরি অফিস থেকে চলে এসেছেন?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

“কেন মানে? তোমাকে দেখতে। কিন্তু তোমাকে এমন লাগছে কেন? অসুস্থ তুমি?”

“না। হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ লাগছিল। এখন একটু ভালো লাগছে।”

“মেডিসিন নিয়েছিলে?”

“উম, না! আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।”

নির্ণয় হাসল। বলল,

“মাথাব্যথা বেশি করছে?”

“না, ঠিক আছি আমি।”

সাবিহা আর পল খাবার নিয়ে এসেছে তখন। চারজন মিলে খেতে খেতে তুবার বিয়ে নিয়ে কথা বলছিল। বিয়ের কথা শুনে পল বলল সে বাংলাদেশে যেতে চায়। এটা নিয়ে সিরিয়াস একটা আলোচনাও হয়ে গেল। নিবেদিতা পলকে আশ্বস্ত করে বলল, বিয়ের ডেইট ঠিক হলে সে পল এবং সাবিহাকেও নিয়ে যাবে।

নিবেদিতার আগামীকাল পরীক্ষা আছে তাই বেশি সময় গল্পগুজব করে ওরা নষ্ট করল না। পল এবং সাবিহা আগেই চলে গেল। নির্ণয়কে বিদায় দিতে গেইট পর্যন্ত গেল নিবেদিতা। নির্ণয় নিবেদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“বেশি স্ট্রেস নিও না, চাঁদ। প্রয়োজনে রেস্ট নিয়ে পড়তে বসো। আর রেডি থেকো।”

নিবেদিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“রেডি? কীসের জন্য?”

নিবেদিতার চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে নির্ণয় বলল,

“আমার বউ হওয়ার জন্য।”

চলবে…

[কপি করা নিষেধ। খুব শীঘ্রই ওরা আসছে বাংলাদেশে। আপনারা সবাই এয়ারপোর্টে চলে আসবেন ওদের রিসিভ করতে।🫣]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here