#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love) 💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_5
💕
.
.
সুমু বাসের জানালাটা খুলে রেখেছে। খোলা হাওয়া এসে তার মুখে বারি খাচ্ছে। আপনা আপনি সুমুর ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। চোখটা বন্ধ করে রেখেছে। জানালায় হাতের কনুই ঠেশ দিয়ে থুতনিতে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে রেখেছে। আর তা মুগ্ধ হয়ে উপলব্ধি করছে সাদি। মারাত্মক রকমের অ্যাট্রেকশন ফিল করছে সাদি।
.
হঠাৎ করে সুমুর মাথার ক্লিপটা ঠাস করে ভেঙ্গে ছিটকে পরে যায়। আর চুলগুলো উড়তে থাকে অগোছালো ভাবে। কিন্তু মুহূর্তেই সুমুর মেজাজ বিগড়ে যায়। এই কান্ড তার ভাই ছাড়া আর কারোর হতেই পারে না।
.
ক্লিপের অংশগুলো কুড়িয়ে তৎক্ষনাত রাকিবকে ফোন লাগায় সুমু!
রাকিবঃ কিরে! এতো তাড়াতাড়ি পৌছে গেলি?
— একদম কথা ঘুরাবি না৷ তুই এটা কি করেছিস?
রাকিবঃ(অবাক হয়ে) আমি আবার কি করলাম।
—এই নিয়ে তুই ১৪৭ বার ভেঙ্গেছিস।(রেগে)
সাদি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে! কে কি ভাঙ্গলো? আর মাথার ক্লিপটা ভাঙ্গায় এমন রিয়েক্ট কেন করলো তাই সাদির মাথায় আসছে না।
—তুই কালকে আমার রুমে এসেছিলি! আর আজাইরা টাইম পাসের বাহানায় তুই ক্লিপ ভেঙ্গে ফেলেছিস! পাজি কোথাকার! তোকে আমার এখন চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে! (একটু থেমে) এই তুই সত্যি করে বলতো আমার কয়টা ক্লিপের স্ক্রু খুলেছিস?
রাকিবঃ(মিনমিন করে) আসলে….
—কেন যে ডাক্তার হইলি? তোর ইঞ্জিনিয়ার হওয়া উচিত ছিল!
.
আবার অসহায় গলায় বলে উঠলো সুমু,
—এখন আমি কি করি? একটা ক্লিপই নিয়ে এসেছি বাসা থেকে। এখন পুরো রাস্তা চুল খোলা রেখে যেতে হবে! তোকে আমি ঢাকা এসে দেখবো! শয়তান!
বলেই সুমু ফোনটা কেটে দিল। হঠাৎ পাশে ফিরে দেখল একজোড়া চোখ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার৷ সুমু বেশ লজ্জা পেল। ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করার সময় অন্যদিকে খেয়াল থাকে না তার।
— সরি! আসলে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করছিলাম।
সাদি এবার মুচকি হেসে দেয়। সব ভাইবোনের সম্পর্কটাই এমন হয় হয়তো। ঝগড়া ছাড়া এদের প্রতিদিন পেটের ভাত হজম হয় না। ভাবতেই মুখের হাসি আরো প্রশস্ত হলো। কারন আজ সকালেও সে সায়মার কাছে মার খেয়ে এসেছে।
সাদিঃ তা ঝগড়া কি নিয়ে জানতে পারি?
—আসলে ভাইয়া যতবার আমার রুমে আসে ততবারই আমার ক্লিপের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। যেন ক্লিপ তার শত্রু। ইভেন ভাবী তার সব ক্লিপ তালাবদ্ধ করে রাখে কিন্তু তবুও প্রতিদিন চুল বাঁধতে যেটাই বের করে সেটাই নিহত হয়। আমার এই ক্লিপটা কাল কিনেছি কিন্তু রাতেই এটার স্ক্রু ঠিলে করে রাখায় এখন ভেঙ্গে গেল।
.
এবার সাদি বুঝল আসল কাহিনী। সাদি নিজেকে না সামলাতে পেরে বলে উঠলো,
সাদিঃ তোমাকে কিন্তু ক্লিপ ছাড়া খোলা চুলেও অনেক বেশি সুন্দর লাগে।
সুমু ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
—হুম জানি! আমার খোলা চুলে ফুল দিতে সবচেয়ে বেশি মানায়।
সাদি আরেকদফা অবাক হলো। মেয়েদের নাকি প্রশংসা করলে তারা লজ্জা পায়! কিন্তু এই মেয়ে তো নিজের সৌন্দর্যের কথা নিজেই বলছে! স্ট্রেঞ্জ!
সাদিঃ(মুগ্ধ হয়ে) একদিন দেখিও তাহলে!
.
সুমুর হঠাৎ করে খেয়াল হলো যে সাদি আগে আপনি ডাকতো কিন্তু আজ দেখা হওয়ার পর থেকে তুমি তুমি করে কথা বলছে। তাই কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি তো আগে আমাকে আপনি করে বলতেন তাহলে আজ যে তুমি করে বললেন?
সাদিঃ এখন থেকে আজিবনই তুমি করে বলব। তোমার ভালো না লাগলেও!
—এমা! ভালো লাগবে না কেন? আমি এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আরকি!
সাদিঃ(একটু হেসে) তোমার বয়স কতো?
—২০+
সাদিঃ পার্ফেক্ট! বাট আমার কত জানো?
সুমু মাথা নাড়িয়ে না বলল। সাদি হেসে উত্তর দিল,
সাদিঃ ২৮+। তাহলে ভাবো আমি তোমার চেয়ে কতবড়। তুমি তো পিচ্চি। তাই আপনি বলার কোন মানেই হয় না। বুঝতে পারলে?
সুমুও বুঝমানের মতো মাথা দোলালো।
.
.
দুইজনের খুঁটিনাটি কথাবার্তার সাথে সাথেই তারা ময়মনসিংহ পৌছালো। সুমু একবার সাদিকে জিজ্ঞাসা করেছিল সে ময়মনসিংহ কোথায় যাচ্ছে! কিন্তু সাদি বিনিময় শুধু হেসেছিল আর বলেছে এই যাচ্ছি আর কি! সুমুও আর বেহায়ার মতো বারবার জিজ্ঞাসা করতে যায় নি।
.
বাস স্টেশন থেকেই সাদি আর সুমু আবার আলাদা হয়ে গেলো। কিন্তু এবার আর সাদির মধ্যে তেমন অস্থিরতা কাজ করে নি যদিও একটু খারাপ লেগেছে। কিন্তু পরক্ষনে মনে করেছে কালকে সকালেই তো আবার দেখা হবে।
.
কিন্তু সুমু বেচারি এখনো তার অনুভূতি সম্পর্কে অনাগত। সে বুঝতেই পারছে না কেন তার খারাপ লাগছে! আগেও পাশের সিটে অনেকে আসতো কই তাদের যাওয়ার সময় তো এতো খারাপ লাগে নি। তাহলে কি সাদি চেনা তাই এতো খারাপ লাগছে? জানে না সুমু তার উত্তর।
.
সুমু ফিরে যায় গার্লস হোস্টেল আর সাদি ওঠে একটা কটেজে! এখানে তার এক বন্ধুর বাড়ি আছে, সেখানেই উঠতে পারতো কিন্তু বাসায় বন্ধুর বউ বাচ্চা আছে তাই আর সেখানে যায় নি। কিন্তু তার মাধ্যমে একটা বাসা ঠিক করে থাকবে। তাতেও তো দুদিন সময় লাগবে তাই এই কটেজে থাকা!
.
.
.
পরদিন সকালে উঠে সাদি কলেজের জন্য রেডি হতে থাকে। অটোমেটিক্যালি সাদির ঠোঁটে হাসি ফুটে আছে। যত না কলেজের জন্য তার চেয়েও বেশি সুমুর সাথে দেখা হবে তাই।
.
রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর জন্য এখনো জাগতে পারে নি সুমু। তার রুমমেট নাদিয়া বেচারি সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে সুমুকে।
নাদিয়াঃ সুমু বেবি! প্লিজ উঠে পর! আমাদের ৭:৩০ এ ক্লাস! এখন অলরেডি ৬:৫০ বাজে! তাড়াতাড়ি উঠ।
.
সময়ের কথা শুনে ধড়ফড় করে উঠে বসলো সুমু। সে কখনোই লেট করে ঘুম থেকে উঠে না। কিন্তু আজ যে কি হলো! আসলে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল সে। হয়তো সেই স্বপ্নের মুগ্ধতায় উঠতে পারে নি।
.
নাদিয়াকে বলে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে রেডি হতে থাকে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই দেখে মোবাইলে নীলের ৫ টা মিসকল! হায়! এই পোলা আজকে সামনে পাইলে চাবাইয়া খাইবো!
.
কল ব্যাক করতেই নীলের ঝাড়ি শুনছে সুমু।
—(অসহায় ভাবে) দোস্ত কুল ডাউন! আমি পাঁচ মিনিটে ক্যাম্পাসে আইতাছি!
নীলঃ তাড়াতাড়ি আয়! এমনেই ক্যাম্পাসে আইসা শুনলাম আজকে আমগো কলেজে নতুন প্রফেসর আসবে!
—আয়! হায়! কস কি? আমি আসতেছি!
ফোনটা কেটে আবারও রেডি হতে শুরু করলো সুমু।
একটা লনের থ্রিপিস পরেছে তাও আবার হালকা গোলাপি, লম্বা চুলে বেনুনি গাঁথা, মুখে নাই কোন সাজ! শুধু হালকা করে গোলাপি লিপস্টিক! হাতে ঘড়ি পরে তাড়াতাড়ি এপ্রোনটা হাতে ঝুলিয়ে ব্যাগ নিয়ে দোড়! হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়েছে! ৭:১৬! তাড়াতাড়ি একটা রিক্সা নিয়ে কলেজে চলে আসে সুমু! তবুও দুই মিনিট লেট!
.
চারপাশে না তাকিয়েই ক্লাসের উদ্দেশ্যে দোড় শুরু করে সুমু! ক্লাসে ঢুকবে তার আগে হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতে না তাকাতেই খেল এক ধাক্কা! তাতে তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে গেলো।
.
ব্যাথাকাতুর শব্দ বের করতেই খেয়াল হয় শুধু সে একা পড়ে নি তার সাথে আরো একজন পড়ে গেছে। কনুই ঘষতে ঘষতে সামনে তাকাতেই আরেকদফা ঝটকা খেলো! একটু অসস্থি নিয়েই বলে উঠলো,
—ডাক্তারসাহেব আপনি এখানেও!
বেচারা সাদি স্টুডেন্টসদের সাথে কথা বলে এই ক্লাসে আসছিল এই ক্লাসেরর স্টুডেন্টসদের সাথে কিছু কথা বলবে কিন্তু তার আগের ঝড়ের বেগে সুমুর সাথে খেল ধাক্কা!
.
সুমুকে পড়ে যেতে দেখে ক্লাসের ভিতর থেকে নীল দোড়ে এসে সুমুকে উঠাতে যায়। সামনে যে কেউ পড়ে আছে তার খেয়াল নেই!
নীলঃ তুই কি মানুষ হবি না? এতো ধাক্কা, উষ্ঠা কেমনে খাস? উঠ!
সাদি প্রথমে অবাক হলেও সাথে সাথে চেহারায় রাগ ফুটে ওঠে!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
(সরি ফর লেট। আর এখন থেকে রাতে গল্প দিব।)
(সাদির সম্পর্কে সবাই কিছু বলে যান। কে কেমন ভাবে সাদিকে কল্পনা করেন?)