৩০+৩১
#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_30
💕
.
.
সাদি ধীরে ধীরে সুমুর দিকে আগাচ্ছে। আর সুমু সে এক মনে বই হাতে রোমান্টিক উপন্যাস পড়ে যাচ্ছে। সাদি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এই রোমান্টিক পরিবেশে সে বই পড়ছে! কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলো সুমুকে আজ অসাধারণ লাগছে। সাদি চাইলেও আজ নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সাদি সুমুর সামনে গিয়ে হাঁটু ভেঙে বসলো। কিন্তু তাতেও সুমুর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার নজর আপাতত বইয়ের পাতায়। তা দেখে সাদি একটু হাসলো। সাদির হাসির শব্দে সুমুর ধ্যান ভাঙলো। সাদির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে একটা হাসি দিলো।
সাদিঃ চমকে উঠলে কেন? চমকে তো আমার ওঠা উচিত ছিলো।
—(অবাক হয়ে) তুমি চমকাও নি?
সাদিঃ হ্যাঁ। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পেরেছি এটা আমার সুমুর কাজ!
—হিহিহি!
সাদিঃ এভাবে হেসো না জান! পুড়ে যায় ভেতরটা!(বুকে হাত রেখে)
—যাক! পুড়ে যাক! পুড়ে ছাই হয়ে যাক!(সাদির কপালে কপাল ঠেকিয়ে) পুড়বে তো আমার জন্যই!
দুজনেরই চোখ বন্ধ। সাদি সুমুর শেষের কথা শুনে চোখ বন্ধ অবস্থায়ই হেসে দিলো। সাদি সুমুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
সাদিঃ সব তো তোমারই! এবার বলো কিভাবে কি?
—(সুমু দাঁত কেলিয়ে বলল) বলোতো কি?
সাদিঃ??
—(একটা শ্বাস ছেড়ে) আমি…. এখানে…..তোমার কাছে…..পার্মানেন্টলি….. চলে এসেছি!
সাদিঃ(খুশি হয়ে) সত্যি? তুমি আমাকে আগে বলো নি কেন?
—সারপ্রাইজ দেবো তাই। আমার ইন্টার্নি শেষ। এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ট্রেনিং করবো! ঢাকাতেও করতে পারতাম কিন্তু আমি আমার সিভি এখানে জমা দিয়েছিলাম আর তারা সিলেক্ট করেছে।
সাদিঃ আই লাভ ইউ!
—হুম! আই লাভ ইউ টু! আচ্ছা ডিনার করবে তো চলো।
সাদিঃ আজ অন্যকিছু ইচ্ছে করছে!
—শাট আপ! চলো!
সুমু আর সাদি একসাথে ডিনার করছে। খুব কমই তাদের একসাথে খাওয়া হতো আগে। এখন তাও একটু একান্তে সময় কাটাতে পারবে।
—(খেতে খেতে) কত করে বললাম মামনিকে তুমিও চলো আমার সাথে। সায়মা আপু তার শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু নাহ! মামনি আমার কথা শুনলে তো। বাবার দোহাই আসলো না। বাবার আবার পরের সপ্তাহে বিজনেস ট্যুর আছে।
সাদিঃ আম্মু আসেনি আমাদের একা ছাড়ার জন্য। যাইহোক! আজ থেকে তোমার হাতের রান্না খেতে পারবো। বাই দ্যা ওয়ে খিচুড়ি টা দারুণ হয়েছে। আকাশটা মেঘলা! হয়তো বৃষ্টি আসবে। একদম পার্ফেক্ট একটা সময়!
—(আনমনে) কিসের সময়?
সাদিঃ(বাঁকা হেসে) আমাদের রুমটা এতো কষ্ট করে ফুল দিয়ে সজ্জিত করলে তা তো আর বৃথা যাইতে দেওয়া যায় না।
সুমু লজ্জায় শেষ। ও আসলে এতো কিছু ভেবে করে নি। জাস্ট সাদিকে চমকে দিতে চাইছিলো কিন্তু এই সাদির মাথায় তো অন্যকিছু ঘুরছে। আবার পরক্ষণেই সুমু ভাবলো কত আর বেচারাকে দূরে রাখবে, এটা তো ওর অধিকার! তাই নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিলো সুমু।
রাত ১১ঃ৫৮ মিনিট……..
সুমু অধীর আগ্রহে ঘড়িটা দেখে যাচ্ছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। সাদিকে আজ বিশেষ ভাবে উইশ করবে সে। সাদির হয়তো মনেও নেই নিজের জন্মদিন। সুমু নিজের হাতে চকলেট কেক বানিয়েছে। সাদির ফোন আসায় সে বারান্দায় গেছে কথা বলতে। ঘড়িতে ১২ টা বাজতে আর মাত্র ৪০ সেকেন্ড বাকি! সুমু আস্তে আস্তে সাদির কাছে এগিয়ে গেলো। সাদিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরতেই সাদি ফোন কেটে সামনের দিকে ফিরে একটা হাসি দিলো। সুমু সাদির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট হালকা ছুঁইয়ে বলল,
—হ্যাপি বার্থডে ডাক্তারসাহেব!
সাদি পুরোদমে শকড! সুমু নিজে থেকে তাকে কিস! সুমু সাদির রিয়েকশন দেখে একটু হেসে সাদির হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো। টেবিলের উপর রাখা কেকের উপর থেকে ঢাকনা উঠাতেই সাদি আরেকদফা শকড!
সাদিঃ আমার মনেই ছিল না।
—জানি তো ভুলাক্কার জামাই আমার!
সাদিঃ আজ কিছুই ভুলবো না।
—চুপ তাড়াতাড়ি কেক কাটো!
সাদি হেসে কেক কেটে এক টুকরা সুমুর দিকে এগিয়ে দিলো, সুমু হা করবে তখনি হাত ঘুরিয়ে নিজের মুখে পুরে নিলো। আর মুখ থেকে উম্ম উম্ম শব্দ করছে। কি পাজি!
সুমু কেক এর ট্রে টা হাতে নিয়ে নিলো। আর সাদি সেটা নেওয়ার ট্রাই করছে।
সাদিঃ সুমু! জান কেক টা দিয়ে দাও! এতো টেস্টি কেক আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে! দাও না!
—এহ! তুমি আমাকে না দিয়ে নিজে খাইলা কেন?
সাদিঃ আজব! আজ আমার জন্মদিন। কোথায় তুমি আমাকে বলবা “বাবু খাইছো?” তা না করে কেক নিয়ে টানাটানি করছো? ভেরি ব্যাড সুমু!
—ওহ আচ্ছা! তো আপনার মতো একটা ধামড়া পোলাকে বাবু বলতে হবে? কি রুচি রে বাবা!
সাদিঃ আরে এটা তো ট্রেন্ড বুঝনা কেন?
—আমার অতো বুঝা লাগবে না। আমাকে কি কলেজে পড়া নিব্বি পাইছো!(কেক টা টেবিলে রেখে) আচ্ছা বাবু তুমি বসে বসে খাও! আমি পাশের রুমে গেলাম ঘুমাতে।
সুমু দরজার দিক এগিয়ে যেতেই সাদি ধিড়িম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
—কি হলো দরজা বন্ধ করলে কেন? ছাড়ো! যেতে দাও!
সাদিঃ(সুমুর দিকে এগিয়ে) আজ কোন ছাড়াছাড়ি নেই। এতো সুন্দর একটা গিফট দিলে, তার রিটার্ন তো আমার কিছু দিতে হয়!
সুমুকে কোলে তুলে নিয়ে,
সাদিঃ আজ তোমাকে এক অন্য সাগরে ডুবাবো! চলো!
—-আরে……!!!
.
বাইরে এতো মেঘ করেছে যে সকাল না দুপুর তাই বুঝা যাচ্ছে না। আর এই সাদিটা আমার উপর উঠে ঘুমিয়ে আছে! শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার! পাজি একটা! কাল কি না করলো! কোন মতে ঠেলে সরিয়ে সাদির পাঞ্জাবি টা গায়ে দিয়ে উঠে পড়লাম। ফ্রেশ হতে হবে। ঘড়িতে সময় বলছে ৯ঃ৩০! এতো বেলা হয়ে গেলো। আজ মনে হয় না সাদি কলেজ যাবে! প্রতিবার ওর জন্মদিনে এতো এতো গিফট আসে যে বেচারা গিফটের ভারে কাবু! হাহাহা!
গোসল করে সুমু ভেজা তোয়ালেটা বান্দায় মেলে দিচ্ছে। এর মধ্যেই সাদি ঘুমঘুম চোখে এসে সুমুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
—আরে কি করছো ডাক্তারসাহেব? ছাড়ো! যাও ফ্রেশ হয়ে নাও! আজ মেডিকেল যাবে না মনে হয়!
সাদিঃ(ঘুম ঘুম কন্ঠে) উহুম! যাবো না। আর ফ্রেশও হবো না। ঘুমোবো! তুমি এতো তাড়াতাড়ি কেন উঠেছো?
—পাগল হয়ে গেছো? দেখো কয়টা বাজে? ১০ঃ৩০! বাইরে বৃষ্টি তাই বুঝতে পারছো না। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আবার ঘুমাইও কেউ মানা করবে না। এখন ওঠো! এর এই ভাবে বারান্দায় আসছো কেন?
সাদিঃ নিচে শর্টস পড়া আছি! সমস্যা নেই!
—ইশ! যাও তো!
এর মধ্যেই কলিং বেল এর আওয়াজ। সুমু এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই তার চোখ চড়কগাছ! এ কি অবস্থা?
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
(অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন আমার এক্সাম কেমন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! অনেক ভালো! ধন্যবাদ জিজ্ঞাসা করার জন্য! আর আজকের পার্ট কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।)
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
#তবু_আছি_কাছকাছি(Doctors love)💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_31
💕
.
.
সুমু দরজা খুলতেই দেখে নীল দাঁড়িয়ে আছে তাও গিফটের প্যাকেট এর জন্য বেচারার চেহারা ভালোমতো বোঝা যাচ্ছে না। একটু উকি দিয়ে সুমুকে বলল,
নীলঃ সর তো পেত্নী সামনে থেকে! সাহায্য তো করবিই না।
সুমু অবাক হয়ে সরতেই নীল ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো।
—তুই এখন এখানে? আর এগুলো কি?
নীলঃ সাদি ভাই কই?
—ডাক্তারসাহেব তোর ভাই কবে থেকে হলো?
নীলঃ যবে থেকে এই পেত্নীর সাথে তার বিয়ে হয়েছে! ছাগী কোথাকার! দুলাভাইকে কি এখনো স্যার ডাকবো?
—হুহ! শয়তান কোথাকার!
নীল বাসার চারপাশে চোখবুলিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
নীলঃ কাল তো মনে হয় এখানে ছোটখাট ভালোবাসাবাসি গেছে! এখনো রুম গুছাস নি!
সুমু নীলের কথা শুনে বেশ লজ্জা পেলো। তারপর নিজেকে সামলে বলল,
—সময় দিলি কোথায়? হুট করে চলে এলি!
নীলঃ পেত্নী একটা! কোথায় আমাকে ধন্যবাদ দেবে এই ফুলটুল অ্যারেঞ্জ করে দেওয়ার জন্য! তা না সে আমাকে ঝাড়ছে। শয়তান্নি!
এর মধ্যেই সাদি ফ্রেশ হয়ে একটা ট্রাউজার পরে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে বের হলো।
সাদিঃ আরে নীল! এইসব কি?
নীলঃ হ্যাপি বার্থডে সাদি ভাই! আর এগুলো পুরো কলেজের যত নিব্বা নিব্বি আছে এদের পক্ষ থেকে গিফট আপনার জন্য! যা আমাকে বহন করতে হয়েছে।(দুঃখি দুঃখি মুখ করে)
—(হেসে) তা তোর ওই নিব্বা নিব্বি তারা জানে না যে তাদের স্যার ম্যারেড?
নীলঃ আরে গাধি! এখানে সবাই কি ক্রাশ খাইয়া দিছে নাকি! কেউ কেউ রেসপেক্ট থেকে দিছে!
—(কপালে হাত দিয়ে) হায়রে রেসপেক্ট! এখন আমার বাসা ভর্তি!
সাদি আর নীল একসাথে হেসে দিলো। সুমু নীলকে বসতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। নিজেদের জন্য নাস্তা বানাতে।
.
সাদি আর সুমুর ভালোবাসা বাসিতেই কেটে গেলো প্রায় একটা মাস! এখন তারা দুজনেই বেশ ব্যস্ত। সাদির বাবা ব্যবসার জন্য এখন প্রায়ই বাইরে থাকেন। তাই মামুনিও চলে এসেছে সাদি আর সুমুর কাছে। সাদির বাবা বাংলাদেশে ফিরলে আবার ঢাকা যাবেন। এর মধ্যে একবার সুমুর পরিবারের সবাই এসে ওদের দেখে গেছে।
.
সুমু সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে তারপর মামুনিকে চা দেয়। তারপর তার আর সাদির লাঞ্চ বানিয়ে সাদিকে রুমে কফি দিয়ে আসতে হয়। সকালবেলা শরীরচর্চা করে তার নাকি কফি খেতে খুব বেশিই ভালো লাগে। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। সুমু মামুনিকে চা দিতেই মামুনি বললেন,
মামুনিঃ সুমু মা যা তো সাদিকে আগে কফিটা দিয়ে আয়। দেখ কিভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে।
—তোমার ওই পোলা তো ষাঁড়ই। খালি শিং এর অভাব।
মামুনিঃ যা না মা! আর ভাল্লাগছে না এর চিল্লাচিল্লি।
—হুম যাচ্ছি!
.
অগত্যা আমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে সাদি। আমাকে শুইয়ে নিজে আমার উপর উপুড় হয়ে যতবার পুশআপ দেওয়ার জন্য নিচু হচ্ছে ততবার আমার ঠোঁটে এক এক করে চুমু দিচ্ছে। এবার তো আমাকে ঝাঁপটে ধরে কিস করে চলেছে। আর আমি ছাড়া পাওয়ার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছি। ছাড়া পেতেই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,
—এটা কি হলো? এটা কিন্তু চিটিং!
সাদি:( দুষ্টু হেসে) নিজের বউকে কিস করার জন্য এইটুকু চিটিং করা যায়!
—(হালকা হেসে) এবার আমিও একটু চিটিং করবো ডাক্তার সাহেব!
সাদি: না বউ! তুমি এটা করতে পারো না।
কে শুনে কার কথা আমি নিচ থেকে উঠে যেই না কিছু বলবো তার আগেই মামুনি রুমে নক করলেন। সাদি আমাকে ইশারায় না করতে করতে গেট খুলতে চলে গেলো। গেট খুলতেই মামুনি সাদিকে এক ঝাড়ি মারলেন।
মামুনি: সাদি তুই আবার সুমুকে আটকে রেখেছিস! সময়জ্ঞান ভুলে যাস?
সাদি:(অসহায় ফেস করে) এমন কেন করো আম্মু? সুমু তো আমারই বউ! একটু রোমান্স করলে কি হয়?
মামুনি বেশ রেগেই বললেন,
মামুনি: এখন সকাল ৯ টা বাজে! তুই তো পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে হসপিটালে চলে যাবি আর এই মেয়েটা পুরো সংসার সামলে নিয়ে পরে হসপিটাল যাবে।
এবার আমি একটু হেসে বললাম,
—আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাদের সো কল্ড ঝগড়ায় সময় নষ্ট হচ্ছে। আমি যাই গিয়ে বাকি কাজ সেড়ে নি। আর মামুনি তোমাকে আমি আগেই বলেছি তোমার এই বদ পোলার কফি দেড়িতে দিতে বলবা। তুমি তো শুনো না৷
আমি রান্নাঘরে যেতে যেতে শুনছি মামুনি সাদিকে সেই বকা দিচ্ছে! হাহা! পাগল একটা।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
(দেড়ি হওয়ার জন্য দুঃখিত। আজ আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই ছোট হইছে! কালকে বড় দেওয়ার চেষ্টা করবো!)
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।