#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love) 💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_23
💕
.
.
সুমু মেডিকেল থেকে বের হয়ে দেখে সাদি গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছে! সুমু হালকা হেসে সাদির কাছে গেলো। সাদি সুমুকে দেখে ফোন পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
সাদিঃ চলো!
—আপনি এখানে কেন? আর কোন কাজ নাই?
সাদিঃ আপাতত বউয়ের থেকে ইম্পরট্যান্ট কোন কাজ নেই!
—হইনি এখনো বউ! তাই আগে থেকেই এতো চিল্লানির মানে হয়না! আগে বিয়ে টা হোক তারপর বউ বউ কইরেন!
সাদি মুচকি হেসে বলল,
সাদিঃ সে তো চাইলে এখনো হতে পারো! যাবে নাকি কাজী অফিস?(ভ্রু নাচিয়ে)
আমার কিন্তু ভালো হবে যত তাড়াতাড়ি বিয়ে তত তাড়াতাড়ি বাসর!(চোখ টিপে)
সুমু চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল,
—অসভ্য!
সাদি কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে বলল,
সাদিঃ গাড়িতে ওঠো!
—ঢাকা আসতেই বাপের গাড়ি চালানো শুরু হয়ে গেছে? উঠবো না আমি! রিক্সায় যাবো!
সাদিঃ এক্সকিউজ মি! এটা তোমার শ্বশুরের না হবু স্বামীর গাড়ি! তিন মাস হলো কিনছি! এবার তো উঠেন! আমার সেল্ফরেস্পেক্টেড বউ!
সুমু ঠোঁট দিয়ে ভেংচি কেটে উঠে বসলো। সাদি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বেশ ভালোই গাড়ি চালায় সাদি। সুমু পাশের জানালা খুলে দিলো। আগে চুল খোলা রাখলেও এখন সুমু হিজাব ছাড়া বাইরে বের হয় না। সুমুকে দেখতে যাওয়ার দিনও সুমুর মাথায় কাপড় ছিল, তাই বেচারা সাদি সুমুর চুলগুলো দেখতে পারে নি। তাই জানার ক্ষেত্রেই বলল,
সাদিঃ তুমি কি টাক হয়ে গেছো?
—(অবাক চোখে) টাক হয়ে গেছি মানে?
সাদিঃ না মানে আগে হিজাব পড়তে না। এখন পড়ো তাই বললাম!
—মানুষ চায় তার বউ যেন পর্দাশীল হয় আর আপনি বলেন আমি টাক হয়ে গেছি? জ্বি না আমি টাক হইনি! যথেষ্ট চুল আছে আমার!(কপট রাগ দেখিয়ে)
সাদি একটু হেসে বলল,
সাদিঃ কে বলেছে আমি চাইনা আমার বউ পর্দা করুক? আমি অবশ্যই চাইবো সে পর্দা করুক! এবং আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি পর্দা করো! আগে আল্লাহকে খুশি করবা তারপর মা বাবাকে আর,,,,,তারপর আমাকে!
সুমু আড়চোখে সাদির দিকে তাকায়! সুমুর প্রচন্ড গরম লাগছিল তাই এসিটা চালিয়ে দিতে বলে। জানালাগুলো লাগিয়ে সাদি গাড়ির এসিটা চালিয়ে দেয়। সব জানালা বন্ধ হওয়ায় সুমু আস্তে আস্তে হিজাবটা খুলে ফেলে! গায়ে ওড়না থাকার দরুন কোন সমস্যা হয় নি। উচু করে খোঁপা করেছিল সুমু! আস্তে করে খোঁপাটা খুলে দেয়। আর লম্বা চুলগুলো সিট ছাড়িয়ে নিচে ছুঁই ছুঁই! তাই তাড়াতাড়ি চুলগুলোকে হাত দিয়ে উঠিয়ে কোলে রাখলো সুমু! সাদি সুমুর কাজ দেখে অবাক! সুমুর চুলগুলো দেখে সঙ্গে সঙ্গে মাশাল্লাহ বলল সাদি। আর সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। সুমু একটা চুলের কাঠি ব্যাগ থেকে বের করে সুন্দর করে খোঁপা করে কাঠিটা খোঁপায় লাগিয়ে নিল।
সাদিঃ খবরদার! কখনো কোন পরপুরুষ যেন তোমার চুল না দেখে! শুধু চুল কেন, তুমি আজকে থেকে সম্পূর্ণ পর্দা করবে।
—বিয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কিন্তু আপনিও পরপুরুষ!
সাদিঃ আমাকেও দেখাবে না। ইসলামিক শরিয়ত মতে তোমাকে বিয়ে করে নি তারপর সব উসুল করবো! রেডি থাইকো জান!
—হুহ!
সাদি ড্রাইভ করছে আর সুমু সিটে মাথা হেলান দিয়ে বসেছে। আজ অনেকটা খাটুনি খেটেছে। তাই চোখ লেগে এলো। চোখ খুলতেই দেখলো তার পাশে সাদি নেই। চোখ কুঁচকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে গাড়িটা এক পাশে সাইড করা। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে সূর্যটা পশ্চ্যদিকে বেশ হেলে রয়েছে, তার মানে এখন বিকেলের শুরু! রাস্তার সাইডে সাদি পা ঝুলিয়ে বসে আছে একটা বেঞ্চে! সুমুকে গাড়িতে ভিতর থেকে লক করে গেছে। তাই সুমু সহজেই গেট খুলে বাইর থেকে লক করে সাদির দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে যা দেখলো তাতে তার মেজাজ ফোরটি নাইন হয়ে গেছে। কারন সাদির হাতে সিগারেট! সাদি সুমুকে খেয়াল না করেই সিগারেট মুখ দিচ্ছিলো, তখনই সুমুর রাগী আওয়াজ শুনতে পায়!
—সাদির বাচ্চা চার কোনাচ্চা দেখতে সুন্দর!! খায় সিগারেট! বান্দর!!
সাদি সুমুর এমন কথায় ভড়কে গেলো। হাত থেকে তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা ঢোক গিলল,
সাদিঃ তুমি জেগে গেছো? চলো বাসায় যাই!
—(প্রচন্ড রেগে) সিগারেট কবে থেকে খাওয়া হয়?
সাদিঃ সবসময় না তো মাঝেমাঝে! (মাথা নিচু করে)
—(একটু থেমে) বিয়ের আশা ভুলে যান! আমি সিগারেট খোরকে বিয়ে করবো না। যে নিজের জীবনকে ভালোবাসে না সে কি করে আমাকে ভালোবাসবে?
সুমু যেতে নিলেই সাদি সুমুর হাত টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
—খবরদার আর যদি আমার ভালোবাসা নিয়ে কোন সন্দেহ করছো তো! অনেক শুনছি আর না! আর সিগারেট এর কথা বললে বলবো তুমি যদি না চাও জীবনে এটার নামও নিবো না খাওয়া তো দূর! আজ থেকেই বাদ দিলাম! তাও উল্টাপাল্টা কথা বলবা না। এই বিয়ে তো হবেই! তা তোমার ইচ্ছেতে বা অনিচ্ছাতেই হোক!
সুমু নিজেই ভড়কে গেছে সাদির এমন কথা শুনে। সুমু সাদির হাত ছাড়িয়ে বলে,
—আমাকে এক্ষুনি বাসায় দিয়ে আসবেন! আর তিন দিন আমার সাথে যোগাযোগ করবেন না। এটা আপনার শাস্তি!
সাদি সুমুর দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদিঃ অসম্ভব! তোমার বাসায় দিয়ে আসছি কিন্তু তার জন্য শাস্তি হিসেবে তোমার ওই কথা রাখতে পারবো না। কাছে থেকে যেকোন শাস্তি দাও! মেনে নিবো!
—যেকোন শাস্তি মানবেন?
সাদিঃ হ্যাঁ!
—তাহলে এখানে সবার সামনে কান ধরে বলুন, ” জীবনে সিগারেট এর নাম নিবো না আর সুমুর সব কথা শুনবো!”
সুমু ভেবেছে হয়তো সাদি না করে দিবে তাই এই কথা বলেছে কিন্তু না! সাদি সত্যি সত্যি কান ধরে সুমুকে সবার সামনেই কথা গুলো বলল। সুমু হা হয়ে আছে, সে তো মজা করেছে।
—উঠুন উঠুন! কান ধরতে বলছি! নীল ডাউন হতে বলি নি।
সাদিঃ আমার শাস্তি শেষ?
—হ্যাঁ! কিন্তু আজকের পর কোনদিন যদি চোখে পড়ে যে আপনি সিগারেট খাচ্ছেন, তৎক্ষনাত স্টেপ নিবো আমি!
সাদিঃ আচ্ছা নিয়েন!
সাদি সুমুর হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায়!
.
বাসায় পৌছে সুমু গাড়ি থেকে নেমে সাদিকেও বাসায় আসতে বলে কিন্তু সাদি মানা করে! তার এখন হসপিটাল যেতে হবে। তাই সুমুও আর জোর করে নি। সাদি যাওয়ার সময় সুমুকে ফ্লাইং কিস দেয়! সুমু লজ্জায় কিছু বলতে পারে না। ছোট করে বায় বলে ভিতরে চলে যায়। সাদিও মৃদু হেসে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। সুমু বাসার ভিতরে আসতেই দেখে রুমু গাল ফুলিয়ে, ভ্রু জোড়া কুঁচকে, কোমড়ে হাত দিয়ে ছোট ছোট চোখে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে! সুমু প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষনে নিজেকে সামলে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে হাত স্যানিটাইজ করতে করতে বলে,
—কি হইছে ছোট রিপোর্টার? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? চকলেট এনেছি তো!
রুমুঃ তুমার চকলেত তুমি কাও! আমাকে বুলো তুমার সাতে নতুন পাপা আইছিল?
—আইছিল কি রুমু? ভেরি ব্যাড! এসেছিল বলো! এর জন্য বলি এই তোতাপাখির সামনে যেন খালা ভালোভাবে কথা বলে কিন্তু সে শোনে আমার কথা!
রুমুঃ তুমি আগে বুলো!
—হ্যাঁ এসেছিল! কোথায় দেখেছো তুমি?
রুমুঃ আমি বারান্দায় দেকেছি! নতুন পাপা আমার সাতে কতা কেন বলল না?
—এমনি মা! পাপা বিজিতো! তোমাকে ফোন করে কথা নিবে, ওকে?
রুমুঃ পিপি!!
—(রুমুকে কোলে নিয়ে) হুম বলো!
রুমুঃ(হেসে) পাপা তোমাকে কিসি দিছে আমি দেকেছি…..!!!
সুমুর কাশি উঠে গেলো রুমুর কথা শুনে!
—আসলে,,,,,তোমার পাপা ওই কিসিটা তোমাকে পাঠিয়েছে!
রুমুঃ সত্যি?
—হুম! এখন চলো ভিতরে!
সুমু রুমুকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো আর সুমু মনে মনে ভাবছে খুব বাঁচা বেঁচেছে আজ! নয়তো এই রিপোর্টার সবাইকে বলে দিতো।
.
রুমু সেই কখন থেকে তার পিপির পিছন পিছন ঘুরছে? উদ্দেশ্য সে এখনি তার পাপার সাথে কথা বলবে। কয়েকবার সুমুর ভাবী এসে নিতে চেয়েছে কিন্তু সে যাবেই না। রাকিব বাসায় আসায়, রুমু বাবাই বলে দৌড় দিয়ে রাকিবের গলা জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ গল্প করে আবার সুমুর কাছে চলে এসেছে, আবার একই কথা পাপার সাথে কথা বলবো। সুমু নিরুপায় হয়ে কল দিলো সাদিকে! দুইবার রিং হতেই সাদি কল রিসিভ করলো।
সাদিঃ কি ব্যাপার আমার হবু মিসেস? হবু স্বামীকে এতো মনে পড়তেছে যে সরাসরি ফোন!
—বাজে কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা শুনুন! রুমু পাগল করে নিয়েছে সে তার পাপার সাথে কথা বলবে! এখন ওর সাথে কথা বলে আমাকে উদ্ধার করুন!
সাদিঃ আচ্ছা দাও!
রুমুকে ফোনটা দিতেই সুমুর থেকে একটু আড়ালে গেলো। সুমু ভ্রু কুঁচকে রুমুর কান্ড দেখছে।
রুমুঃ পাপা! তুমি আমার সাতে কেন দেকা করু নি? আমি রাক কসসি!
সাদিঃ সরি মা! কালকেই তোমার সাথে দেখা করবো ওকে?
রুমুঃ ওকে। আচ্ছা পাপা তুমি কি সত্তি আমাকে কিসি পাঠাইছো নাকি পিপি মিত্তা বলছে?
সাদিঃ কিসি?
এদিকে সুমুর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে এই মেয়ে ওকে অবিশ্বাস করে সাদিকে জিজ্ঞাসা করছে? এর জন্যই পাপার সাথে কথা বলবো বলে মাথা খাচ্ছিল! ওরে পাজি!!! আবার মনে ভয় হতে লাগলো সাদিকে তো এর কিছুই জানায় নি যদি সত্যি বলে দেয়?
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
(সরি পাঠক/পাঠিকা! আমার হাত ব্যাথার জন্য দুইদিন গল্প লিখি নি। তাই দিতে পারি নি। এখন রেগুলার দেওয়ার চেষ্টা করবো!)
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।