#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_21
💕
.
.
আজ প্রায় তিনদিন হতে চলল সাদি সুমুকে কলেজে দেখেনি! ভেবেছে হয়তো অসুস্থ, তাই ফোনেও ট্রাই করেছিল কিন্তু কিছুতেই কল যায় নি। তাই আজ আর না পেরে কলেজে এসেই নীলের খোঁজ করলো। একটা ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে!
সাদিঃ নীল!
নীল সাদির ডাকে ঘুরে দাড়ালো। সাদির দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।
নীলঃ জ্বি স্যার!
সাদিঃ সুমু কোথায়? ওকে তিনদিন ধরে দেখতে পারছি না?
নীলঃ আর দেখতেও পাবেন না!
সাদিঃ মানে?
নীলঃ মানে ও এই কলেজে নেই! ঢাকা ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছে একেবারের জন্য! এখানে হয়তো আর আসবে না!
সাদিঃ(অবাক হয়ে) চলে গেছে মানে কি? এভাবে পড়াশোনা অর্ধেক রেখে কি করে যেতে পারে?
নীলঃ আপনি ভুলে গেলেন ও কলেজে টপ করেছে এবার? তাই যেকোন মেডিকেল কলেজ ওকে অনায়াসে নিয়ে নিবে!
সাদিঃ ও এভাবে কি করে যেতে পারে?
নীলঃ যেভাবে আপনি ওকে ধোকা দিতে পারেন!
বলেই নীল চলে গেলো। আর সাদি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সুমু তাকে শেষ পর্যন্ত বুঝতেই পারলো না। কি করবে এখন ও! ওইদিন ওই ফোনটা না পেলে কিছুতেই এই কাজটা ও করতো না। এমনিতেও করতে চায় নি। কিন্তু একটা মেয়ের মৃত্যুর আগে এতোটুকু ও করতেই পারে। কিন্তু এখানে যে সাদির ভুল আছে সে নিজেই স্বীকার করে। সুমুকে আগেই সবটা জানানো উচিত ছিল। কিন্তু সুমুতো ওকে সেই সুযোগ টাও দেয়নি। তার আগেই ওকে প্রপোজ করলো। সেখানে নিলা না থাকলে সবটা সুমুকে সে বলতো! সাদি মনে মনে ভাবছে এবার আর কোন ক্রমেই দেড়ি করা যাবে না। কিন্তু পরক্ষনেই নিলার কথা মনে পড়লো। একটা শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেলো ক্লাসের উদ্দেশ্যে।
সুমু যাওয়ার পর থেকে সাদি একদম ভেঙে পড়েছে। যা পদে পদে খেয়াল করেছে নিলা। কিছুদিন ধরে শরীরটা আর সায় দিচ্ছে না তাকে। ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। কোথায় যেন একটা শুন্যতা অনুভব করছে। সাদি সর্বদা মন খারাপ করে থাকে। তার নিজেরও বড্ড গিল্টি ফিল হয়! একদিন সাদিকে একটা ডায়েরিতে কিছু লিখতে দেখে। সাদি নিলাকে দেখে তৎক্ষনাত ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেলে। নিলার আরো খটকা লাগে! তাই একবার সাদির অগোচরে তার ডায়েরিটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। ডায়েরির প্রতিটা পাতায় সুমুকে নিয়ে লেখা! কয়েকটা পাতায় শুকিয়ে যাওয়া পানির ফোটা! একটা পাতায় লেখা,
” হাত ধরে হাঁটলেই ভালোবাসা হয় না। মুখে প্রকাশ করলেই ভালোবাসা হয় না। অনেক সময় চোখের দেখাই সত্য হয় না। প্রিয়তমা তোমায় আগেই বলেছিলাম আমার অনুভূতির সাথে পরিচয় করাবো কিন্তু তুমি তো তার আগেই ভুল বুঝলে! দূরে সরে গেলেই আমার ভালোবাসা কমে যাবে না। বরং তীব্র গতিতে বাড়বে। আমার জীবনে হাজার নিলা আসলেও আমার অর্ধাঙ্গিনীর জায়গাটা সর্বদাই তোমার! তুমি এভাবে নিজের অধিকার ছাড়বে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!…….. ”
লেখাটা পড়ে নিলার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। এতোদিন যাকে নিজের অধিকার মনে করতো তা আসলে একজনের দয়া? এমন কি সাদির জীবনে তার কোন প্রভাবই নেই? নিলা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। এতোদিনে সে এটা বুঝেছে জোর করলেই ভালোবাসা পাওয়া যায় না। সে সাদির থেকে কেয়ার পেয়েছে কিন্তু তা শুধু বন্ধুত্ব পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। সে জোর করে সাদির থেকে একটা কিস ও আদায় করতে পারে নি। অথচ তাকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। ফোনের স্ক্রিনে অসংখ্য চুমু দিতে দেখেছে। নাহ! আজ নিলাকে সত্যিটা জানতেই হবে।
.
কেটে গেছে দুইটা বছর! স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে সুমু ইন্টার্নি করছে। এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে করিডোর দিয়ে যাচ্ছে সুমু! এই দুই বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। রাকিবের একটা কিউট মেয়ে বেবী হয়েছে। নাম রুবাইয়া ইসলাম রুমু! সম্পুর্ন টাই সুমুর নামে মিলিয়ে। বাচ্চাটার বয়স দেড় বছর! নিজের পিপিকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সুমুও যেন রুমু বলতে অজ্ঞান! একমাত্র ভাতিজি তার! তার মুখই দেখেছে ডায়মন্ড এর হ্যান্ডব্রেসলেট দিয়ে। সুমু তার বুটিক হাউস টাকে আরো দ্বিগুণ করেছে এই দুই বছরে। এখন মোটামুটি একজন স্ট্যাবলিশ ওম্যান সে। নিজেদের বাড়িটাকে সে আর তার ভাই মিলে এক রাজকীয় রুপ দিয়েছে। আর এই রাজ্যে রয়েছে দুইজন রাজকন্যা! এক সুমু আর এক রুমু!
.
সুমু আজকের মতো সকল কাজ সম্পন্ন করে বাসায় আসতেই ভিতরে হইচই শুনা গেলো।ভ্রু জোড়া কুঁচকে ভিতরে গিয়েই চোখ চড়কগাছ! সুমুকে দেখতেই রুমু দৌড়ে তার কাছে আসলো। সুমু দরজার পাশের টেবিল থেকে স্যানিটাইজার নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে রুমুকে কোলে নিল।
—এই ছোট রিপোর্টার! বাসায় কি চলে?
রুমুঃ পিপি! বাতায় মেহমান আতবে!
—বাসায়? কোন মেহমান আসবে? মাম্মা কিছু বলেছে?
রুমু মাথা নাড়িয়ে না বলল। এর মধ্যেই সুমুর ভাবী শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে আসলো।
ভাবীঃ পিপি আসতে না আসতেই রিপোর্ট দেওয়া শুরু হয়ে গেছে?
রুমু ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার সুমুর দিকে তাকালো।
রুমুঃ পিপি! জানোওওও,,,,আজকে মাম্মা আমাকে,,,,,দুইটা মাইর দিতে!
—কিহ! এতো বড় সাহস! আমার কলিজার গায়ে কে হাত তুলছে? আজকে তাকে শুলে চড়াবো!(নাটক করে)
রুমু সুমুর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলো। তারপর সুমুর গালে এক্টা পাপ্পি করে বলল,
রুমুঃ আমি দুতটামি করছি পিপি!
—ওরে দুষ্টু তাই নাকি?
রুমুঃ হুম্মম,,,,
সুমু রুমুকে কোলে নিয়েই রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনই সুমুর ভাবী সুমুকে আটকে দেয়। আর বলে
ভাবীঃ সুমু! বাবুকে দিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও! আমি আসছি!
—কেন ভাবী কি হইছে? আর আজ বাসাকে এতো সাজাচ্ছো কেন?
ভাবীঃ কারন আজ তোমাকে দেখতে আসবে!
—ভাবী! আমি কতবার বলবো আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না। প্লিজ তোমরা জোর করো না।
ভাবীঃ জোর করছি না বাবু! তুই একটু ভেবে দেখ! তারা নিজেরাই আসবে বলেছে সেখানে আমাদের না করে দেওয়াটা অপমান হয়ে যায় না? তাছাড়া ছেলে তোর ভাইয়ের বন্ধুর শ্যালক! কিভাবে মানা করি?
—ধুর! আমি আগে ফ্রেশ হয়ে নি। মাথা ধরছে!
সুমু রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে তার মা হাতে একটা পিয়াজ কালার এর জামদানী শাড়ি নিয়ে বসে আছে৷ সুমু বের হতেই তাকে টেনে নিজের পাশে বিছানায় বসালো।
মাঃ ছোট পাখি! তুই আমার সব কথাই শুনিস! তুই না করার আগেই বলছি দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না। ওই ছেলের তোকে পছন্দ হতে হবে তাছাড়া তুই মেইন পার্সন! তাই সবার কথাটা চিন্তা করে একটু সেজে নে!
—মা এটা কেমন কথা? আমাকে কেন সাজতে হবে? তারা আমাকে বউ করতে চাইলে এই সাধারণ চেহারা দেখেই নিতে হবে। আমি সাজতে পারবো না। আর একটা কথা ক্লিয়ার জানিয়ে রাখি আমার বুটিক হাউস বা পড়ালেখায় যেন হস্তক্ষেপ না করে! ভুলেও এইসব কথা যেন না উঠে!
মাঃ আরে তারা এমন মানুষ নয়! তুই একদম চিন্তা করিস না!
—হুম! ঠিক আছে! কিন্তু মা সবটা এতো সহজ হবে না। তুমি তো জানো!
মাঃ হ্যাঁ আমি জানি! কিন্তু সবদিক বিবেচনা করাটাই বেস্ট হতো! তাই জীবনকে একটা সুযোগ দে।
—হুম!
সুমু শাড়িটা পড়ে শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে ভ্যাসলিন লাগিয়েছে। তার সাজার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। এর মধ্যেই ভাবী এসে বলে গেছে যে তারা এসে গেছে। সুমু একটা শ্বাস ফেলে মাথায় কাপড় দিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর রুমু রুমে এসে সুমুর পাশে দাঁড়ায়। আজ সেও একটা পিয়াজ কালারের গাউন পড়েছে৷ দেখতে পুরো প্রিন্সেস। সুমু আবার মিনি অর্গানাইজার থেকে একটা সাদা মুকুট বের করে রুমুর মাথায় পড়িয়ে দিল। এখন একদম পার্ফেক্ট। রুমু সুমু হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর বলছে,
রুমুঃ জানো পিপি! নতুন পাপাটা না অনেক কিউট! আমার অনেক ভাল লেগেছে!
সুমুকে রুমু টানতে টানতে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো।
সুমু কিছু বলার আগেই দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই অবাক! একি সাদি আর তার পরিবার! সাদির সাথে চোখাচোখি হতেই সুমু চোখ নামিয়ে নিল। চায়না সে এই চোখের সামনা হতে!
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
(ভাইরে ভাই! আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরুন। সাদি গল্পের মেইন নায়ক! ওকে বাদ দিলে কেমনে হয়? আগে আগে দেখুন কি হয়!)
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।