#তবু_আছি_কাছাকাছি(Doctors love)💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_22
💕
.
.
সুমু চমকে সামনে তাকালো! সাদি এখানে কেন? আর আশেপাশে নিলা কোথায়? সাদিকে দেখেই অভিমানে সুমুর মুখটা অন্যদিকে ঘুরে গেল। সুমু নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। এতোবছর পর তার ভিতরের সুপ্ত অভিমান আবার কেন চাড়া দিয়ে উঠছে। মনে মনে হাজারবার উচ্চারণ করা হয়ে গেছে “আমার কিছু আসে যায় না”! কিন্তু সত্যি কি আসে যায় না। সুমু তার মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো! সুমুর মা ইশারায় বলল সালাম দিতে। সুমুর তৎক্ষনাত খেয়াল হলো এখানে বড়রা বসা। তাই মুখে সালাম দিলো। এর মধ্যেই পিচ্চি আহানা দৌড়ে সুমু কাছে আসলো। সুমু কখনোই বাচ্চাদের এভোয়েড করতে পারে না৷ তাই হেসে দিয়ে নিচে বসে পড়লো! আহানা সুমুকে ঝাপটে ধরলো যেন কত শত বছরের চেনা! অথচ তার সাথে মাত্র একবার ভিডিও কলে কথা হয়েছে।
আহানঃ মামি মা!
সুমু ভ্রু কুঁচকে বলল,
—আমি তোমার মামি মা না বাচ্চা! আমি তো তোমার আন্টি! ভুলে গেছো?
আহানাঃ উহুম! তুমি আমার মামি মা-ই হবে!
সুমু আহানার থেকে চোখ ফিরিয়ে সোফায় বসা সবার দিকে তাকালো! সবাই মিটমিট করে হাসছে। কি আজব! এমনকি সুমুর পরিবারও হাসছে। এর মধ্যে সাদির মা উঠে এসে সুমুকে নিচ থেকে তুলে বলল,
মামুনিঃ আমরা সব জানি সুমু! আর কিছু লুকাতে হবে না।
সুমু তৎক্ষনাত সাদির দিকে তাকালো সাদির দৃষ্টি নিচের দিকে!
—সব জানো মানে? কি জানো?
সাদির বাবা ও এসে সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
বাবাঃ আমরা তোর আর সাদির ব্যাপারে জানি! সাদি সবটাই বলেছে!
—সবটা বললে তোমরা এখানে কেন? তোমাদের তো নিলা ম্যাম এর বাসায় থাকা উচিত ছিল! যদিও এখনো সময় আছে!
মামুনিঃ কি বলছিস সুমু?
—সরি আন্টি তোমাদের অপমান করার কোন ইন্টেনশনই আমার নেই! তবুও বলতে হচ্ছে আমি ওনাকে বিয়ে করবো না। তোমরা আসতে পারো!
সাদি তৎক্ষনাত সুমুর দিকে মাথা তুলে তাকালো। সুমু আবারও চোখ ফিরিয়ে নিলো।
বাবাঃ হ্যাঁ মানছি নিলার জন্য তোদের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু সাদির কাছে কোন উপায় ছিল না।
সুমু তাকাতেই আবার বলল,
বাবাঃ এখানে সবাই-ই সাদিকে দোষ দিবে এবং এটাই স্বাভাবিক কিন্তু সাদির দিকটা কেউই দেখলো না। ওইদিন সাদির ফোনে আমিই ফোন করি! আর ওকে একপ্রকার জোর করে কনভিন্স করি নিলার সাথে নাটক করার জন্য! কারন আমি জানতাম না তোর আর সাদির সম্পর্কের কথা! সাদি কখনোই বলেনি তোর বিষয়ে আমাকে! তাই যখন নিলার বাবা আমাকে নিলা আর সাদির বিয়ের ব্যাপারে প্রপোজাল দেয় আমি মানা করি নি। করবোই বা কেন? আমার বন্ধুর মেয়ে হয়! ভেবেছি হয়তো নিলার সাইকোলজিক্যাল প্রবলেমটা ভালো হয়ে যাবে সাদির সঙ্গে থাকলে। আর একে অন্যের কাছাকাছিও আসবে কিন্তু আমি এটাই জানতাম না যে আমি সেই আগের সাদিকেই হারিয়ে ফেলবো। তারপর সাদির মা আমাকে তোর ব্যাপারে বলতেই আমি নিলার বাবার সঙ্গে কথা বলি কিন্তু ততক্ষণে নিলাও বুঝতে পারে সে ভুল! আসলে নিলা ঠিকঠাক ওষুধ নিতো না বলেই ওর প্রবলেমটা বেড়ে গিয়েছিলো। সাদি ওকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওষুধটা দিতো আর এর জন্যই ওর ব্যবহার অনেকটাই ভালো হয়ে গিয়েছিল। সাদি শুধু নিলার সুস্থটার জন্যই এমনটা করেছে। হয়তো ওর পদ্ধতিটা ভুল! তাও আমার জন্য! আমিই ওকে বলেছিলাম!
—(শক্ত মুখ করে) এক হাতে তো তালি বাজে না আংকেল!
মামুনিঃ মারে আর রাগ করে থাকিস না।
—আমি কি করবো আন্টি? আমি যতবার ওনার চেহারা দেখি ততবার ওই ধোকার কথা মনে ওঠে। ওর চেহারা যেন না দেখতে হয় তার জন্য আমি ময়মনসিংহ থেকে এখানে চলে আসছি! তাও মুখ উঠায়ে চলে আসছে! আমি ওনাকে বিয়ে করবো না।
এবার রাকিব এসে বলল,
রাকিবঃ সুমু! এভাবে বড়দের সাথে কথা বলে? সে সরি!
—আমি আবারও বলছি! সবাই প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি এই বিয়ে করবো না। নিলা ম্যামের সাথেই ইনার বিয়ে দেন! উনি সুখি হবে। আমি দোয়া করি!
সাদির মেজাজ এবার প্রচুর খারাপ হয়ে গেছে। সে এতোক্ষন চুপ আছে তার মানে কি সে কথা বলতে পারে না। সে শুধু চুপ আছে এই ভেবে সুমু বড়দের কথা শুনে সবটা বুঝবে কিন্তু না। সে তো এক নম্বরের ঘাড় ত্যাড়া! সাদি এবার এক ধমকে সবাইকে চুপ করালো। আর সুমুর কাছে এসে ওর হাত চেপে ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলো। সুমু হাত মোচড়ামুচড়ি করতেই সাদি বলল,
সাদিঃ একদম চুপ! বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার খবর আছে। চুপচাপ আমার সাথে চলো।
সুমু ভয় পেয়ে গেছে সাদির ধমকে। এ কি রুপ ওনার? সুমু তাও হাত মোচড়ামুচড়ি করছে! সাদি সুমুকে নিয়ে একটা রুমে গিয়ে দরজা ধারাম করে বন্ধ করলো। সুমু কেঁপে উঠলো দরজার আওয়াজে! ভ্রু কুঁচকে হাতের কব্জি ডলছে! লাল হয়ে গেছে হাত!
সাদি এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাত দিয়ে নিজের ঘাড় মালিশ করছে।
সাদিঃ কি হয়েছে এবার বলো! আমাকে নিয়ে কি সমস্যা?
সুমু বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকালো। যাকে নিয়ে সব সমস্যা সেই কিনা বলছে তাকে নিয়ে কি সমস্যা?
—(দাঁতে দাঁত চেপে) আপনিই তো সব সমস্যার মূল। নিলাকে ইউজ করা শেষ এখন আমার কাছে আসছেন? লুচু!
সাদির মেজাজ গেলো চটে! তাকে বলছে ভালো কথা! এখন তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলল যা মটেই মানতে পারেনি সে। চিৎকার করে সুমুকে বলল,
সাদিঃ কি করছি আমি লুচুমির? কি করছি? কারো সাথে আমাকে ইন্টিমেট হতে দেখছো নাকি তোমার সাথে কিছু উল্টাপাল্টা করছি! কোনটা? আর এতো কিছু শুইনাও বলো আমি নিলাকে ইউজ করছি?
—তা নয়তো কি? তার ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য নিশ্চয়ই তাকে কোলের উপর উঠানো লাগে না। আমার সব খেয়াল আছে!
সাদি এবার হাসলো।
সাদিঃ কবে দেখছো ওরে আমার কোলে?
—আপনি অস্বীকার কেন যাচ্ছেন? আমি যেদিন নিলার কাছে ক্ষমা চাইতে গেছি ওইদিনও আপনার কোলে নিলা ছিল!
সাদি এবার ভাবছে, সে কোনদিনও নিলাকে কোলে নেয় নি। বরং তার কোলে শুধু সুমুই উঠেছে তাও অজ্ঞান অবস্থায়! সুমু কি বলছে। হঠাৎ খেয়াল হলো।
সাদি এবার সুমুর দিকে বাঁকা হেসে এগিয়ে গেলো।
সাদিঃ তুমি শিওর নিলাকে আমার কোলে দেখছো?
— এখানে না শিওর হওয়ার কি আছে? আমি নিজের চোখে দেখছি!
সাদিঃ এমনিতেই তো দূরের জিনিস দেখতে পাও না! চশমা লাগে! আর দূর থেকে দেখে ফেললা নিলা আমার কোলে?
সুমু রাগে দাঁত চেপে সাদির দিকে তাকালো। সাদি এবার হেসে দিয়ে বলল,
সাদিঃ আরে বোকা! আমার চেয়ারের সামনে সিংগেল টুল ছিল।তার সামনে টেবিল থাকায় মনে করছো ও আমার কোলে!
—বলদ পাইছেন? তাহলে নিলা আপনার গলা জড়ায়ে ধরছিল কেন?
সাদিঃ তুমি জানো না ও গায়ে পড়া স্বভাবের ছিল! ওকে আমি তৎক্ষনাত সরিয়ে দি কিন্তু তার আগেই আপনার প্রবেশ ঘটেছিল। আর আপনি উল্টাপাল্টা বুঝে কথা না শুনেই দৌড় দিছেন!
—হুহ! আর একটা কথা বলেন তো আপনারা খালি নিলা ছিল ছিল কেন বলতেছেন? তার তো সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম ছিল তাতে তো মরার কথা না!
সাদিঃ নিলা এই দেশে নেই। বোনের কাছে চলে গেছে প্রায় দেড় বছর!
সুমু অবাক চোখে তাকালো।
সাদিঃ হ্যাঁ! আর ওই আব্বুকে আমাদের বিষয়ে বলেছে। হঠাৎ আব্বুর ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একগাদা গালির বহর এসেছিল। আমি তো কিছুই বুঝি নি, পরে আব্বু আস্তে আস্তে সব বলল। সব শুনে মন চাইছিল তখনই তোমার কাছে চলে আসি কিন্তু তখন আমি তোমার লাইফে ব্যাক করলে তোমার পড়ার ক্ষতি হতো! তাই এখন এসেছি! আর সম্ভব নয় দূরে থাকা!
—কেন সম্ভব নয়? আমি তো মিডেলক্লাস একটা মেয়ে! আমি আপনাকে ডিজার্ভ করি না! এটাই তো বলেছিলেন! এখন আবার কেন এই মিডেলক্লাস মেয়ের কাছে আসলেন!
সাদিঃ আর না সুমু প্লিজ! আর পারছি না! এবার এইসব বন্ধ করো! তোমার ঘৃণা নিয়ে আর বাঁচতে পারবো না! অসম্ভব!(চোখ বন্ধ করে)
সুমু হঠাৎ কেঁদে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। সাদি আওয়াজ পেতেই চোখ খুলে দৌড়ে সুমুর কাছে গিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো।
সাদিঃ এই! এই! প্লিজ কেঁদোনা জান! প্লিজ! সহ্য হচ্ছে না আর এই চোখের জল! প্লিজ!
সুমু কি করবে? এই দুইবছর সে নিজেও অনেক কষ্টে থেকেছে। বললেই কি আর কঠিন হওয়া যায়! যাকে ভালোবাসে! আর এখানে সাদির কথা শুনে স্পষ্ট বুঝা যায় যে এটা একটা ভুল! এখানে সাদি আর সুমু দুইজনেই ভুল করেছে। একজন ভুল করেছে আরেকজন ভুল দেখেছে যার দরুন তারা আজ দুইবছর একসঙ্গে নেই৷ সাদি সুমুকে বুঝিয়ে কান্না থামিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করলো। যদিও সুমু সাদিকে থ্রেট দিয়েছে এর বদলা সে নেবে!
সাদি সুমুর হাত ধরে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখে এখানে ছোটখাটো বিশ্বযুদ্ধ চলছে তাও একপাক্ষিক!
রুমু কোমড়ে হাত দিয়ে আহানাকে বলছে,
রুমুঃ তুমি কেন আমার পিপির কোলে উচ্ছো? পছা মেয়ে!(গাল ফুলিয়ে)
আহানা হালকা হেসে রুমুকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,
আহানাঃ ছোট আপু! তোমার পিপি তো আমারও মামি হয়! তাই কোলে উঠেছি!
রুমুঃ নাহ! পিপি সুদু আমাকে কোলে নিবে! তুমাকে না!
বেচারি আহানা আর রণচণ্ডী রুপী রুমুকে দেখে সাদির বিড়বিড় করে বলল,
সাদিঃ একদম ফুপুর মতো হইছে! কোলে ওঠা নিয়ে ঝগড়া!
সাদির কথা হালকা শুনতে পেয়ে সুমু আড়চোখে সাদির দিকে তাকালো।
,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..
(এবার ক্লিয়ার সবাই! আমার ইনোসেন্ট সাদিকে যাতা বলে ফেলছো! এবার ওর রোমান্টিক অত্যাচার দেখার জন্য প্রস্তুতি নাও সবাই!)
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
★আসসালামু আলাইকুম “আমার গল্প”-বাসী। আপনাদের অনুগ্রহ কামনা করছি। আশা করছি সকলেই আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করবেন।
ধন্যবাদ
https://www.youtube.com/channel/UCdq4gm9E9EAkKNIljhJdOkA