স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_১৪ #তানজিম_তানাজ

0
85

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১৪
#তানজিম_তানাজ

আহনাফ রুমে ঢুকে দেখলো রুম অন্ধকার। ভ্রু কুচকে এলো তার।নাদিয়া বেগমের কাছে শুনে এলো সিরাত রুমে আছে।তাহলে এমন রুম অন্ধকার করে থাকার মানে কী!আহনাফ বিরক্তি নিয়ে লাইট জ্বালালো।রুমে আলোর উপস্থিতি পেতেই সিরাত মাথা তুললো।আহনাফ কপালে বিরক্তির ভাজ নিয়ে পিছনে থাকাতেই তার কপালের ভাজ মিলিয়ে গেলো।সিরাতকে দেখে বিধস্ত লাগচ্ছে।চোখ তার লাল হয়ে রয়েছে।আহনাফের হাতে একটা বড় বাক্স ছিল তা টেবিলের উপর রেখে সিরাতকে চিন্তিত কন্ঠে বললো,

“তোমার এই অবস্থা কেনো!”

সিরাত কিছু বলচ্ছেনা। করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে।আহনাফ সিরাতের কাছে এগিয়ে গেলো।সিরাত দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে।আহনাফ কাছে আসতেই নড়েচড়ে বসলো।আহনাফ সিরাতের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে বললো,

“তুমি ঠিক আছো!”

আহনাফের কথা শুনে সিরাতের রাগ লাগলো।ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো আহনাফের দিকে।আহনাফ চমকে গেলো।সিরাতকে তার অদ্ভুত লাগলো।সিরাত উঠে দাঁড়ালো। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,

“আমি ঠিক আছি। কিছু হয়নি আমার।”

আহনাফ উঠে সিরাতের সামনে এসে দাঁড়ালো।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো।তার কাছে সিরাতকে অদ্ভুত লাগচ্ছে।আহনাফ এগিয়ে গিয়ে টেবিলের বাক্সটা হতে নিয়ে পুনরায় সিরাতের কাছে এসে বললো,

“এর ভিতর তোমার কলেজের সব বই রয়েছে।”

সিরাত নির্বিকার কন্ঠে বললো,”আপনি এসব আমার জন্য কেনো করচ্ছেন!”

আহনাফ ভ্রুকুচকে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সকালেই তো বললাম। আবার কেনো জিঙ্গেস করচ্ছো!”

সিরাত নির্বিকার ভাবে বললো,”শুধু দায়িত্ববোধ থেকে! কিন্তুু আপনার আমার প্রতি দায়িত্ববোধ কেনো থাকবে!আপনি তো আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেননা।”

আহনাফ বাক্সটা টেবিলে রেখে কপালে নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“সারাজীবন আমি তোমাকে চালাতে পারবোনা। তাই পড়াশোনা শেষ করতে সাহায্য করছি যাতে পরে চাকরি করে নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারো।”

সিরাত কিছুটা ক্ষোভমিশ্রিত কন্ঠে বললো,

“কেনো করছেন এসব!আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবেনা।আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না।শুধু নামমাত্র এই সম্পর্কে বাঁধা পরে থাকতে হবেনা আপনাকে।সারাজীবন চালাতেও হবেনা আমাকে।আপনি এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।নিজের মনের মানুষের কাছে চলে যান।”

আর কিছু বলতে পারলোনা সিরাত কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।হৃদয়ে অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে।ছলছল করচ্ছে তার চোখ। আর একমূর্হত আহনাফের সামনে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারবেনা সে।আহনাফের সামনে সে কোনো চোখে পানি ফেলতে চায়।এতে নিজে দূর্বল হয়ে পরবে। যা সে চায়না।দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আহনাফ থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া বেগম ডাকতেই সে নিচে চলে গেলো।

————

খাবার টেবিলে সবাই বসে রয়েছে।কিন্তুু সিরাত আসচ্ছেনা।নাদিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে বললো,

“কী এমন হলো মেয়েটার।দুপুরেও খেলোনা।এখনও খেতে আসচ্ছেনা।”

আহনাফ অবাক হয়ে বললো,”দুপুরে খায়নি!”

নাদিয়া বেগম দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বললো,”অনেকবার জোর করেছিলাম।কিন্তুু মাথা ব্যাথার কথা বলে আর খায়নি।”

আহনাফ উঠে দাঁড়ালো।ফারিহা অবাক হয়ে বললো,

“একি!তুই উঠে দাঁড়ালি কেনো।”

আহনাফ ফারিহার কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নাদিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আমি সিরাতকে ডেকে নিয়ে আসচ্ছি।”

কথাটা বলে আহনাফ উপরে চলে গেলো।নাদিয়া বেগম হেঁসে বললো,”তোমরা খাওয়া শুরু করো।”

ফারিহা ক্ষিপ্ত হয়ে বসে রইলো।নাদিয়া বেগম ফারিহাকে বসে থাকতে দেখে বললো,
“তুই আবার বসে রয়েচ্ছিস কেনো!খাওয়া শুরু কর।”

ফারিহা হেঁসে বললো, “ওরা আসুক।তারপর একসাথে খাওয়া শুরু করবো।”

আহনাফ রুমে এসে দেখলো সিরাত রুমে নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখলো সিরাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।আহনাফ গিয়ে সিরাতের পাশে তাকালো।সিরাত আনমনে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে।আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“সিরাত!”

সিরাত থমকে গেলো।পাশ ফিরে তাকালো আহনাফের দিকে।এই প্রথম আহনাফ তার নাম ধরে ডেকেছে।সিরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে।পুনরায় নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“খেতে চলো।”

সিরাত সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি খাবো না।”

আহনাফ সিরাতের হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরলো।সিরাত কেঁপে উঠলো।হাত ছাড়াতে নিতেই আহনাফ ধমক দিয়ে বললো,

“স্থির থাকো।”

সিরাত স্থির হয়ে দাঁড়ালো। আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“খেতে চলো।”

সিরাতকে কিছু বলতে না দিয়েই হাত টেনে নিয়ে আসলো।সিরাত আর বাঁধা দিলো না।আহনাফ সিরাতকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে আছে।হাত ধরে রেখেছে।ফারিহা সেদিকে তাকিয়ে হাতের চামচ শক্ত করে ধরলো।রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে সে।আহনাফ বসে সিরাতকে ইশারায় নিজের পাশে বসতে বললো।কিন্তুু সেখানে বসলোনা। সে ঘুরে গিয়ে নাদিয়া বেগমের পাশে বসলো।আহনাফ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে খাওয়া শুরু করলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ।সিরাত এখনো রুমে আসেনি। আহনাফ সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করচ্ছে।রাত অনেক হয়েছে।সিরাত এখনো আসচ্ছেনা দেখে আহনাফ ভাবলো নিচে যাবে কিন্তুু তখনি সিরাত রুমে আসলো।সিরাত আসতেই আহনাফ বললো,
“আমার কিছু কাজ আছে। সোফায় বসে কাজ করবো।তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো।”

সিরাত একপলক আহনাফের দিকে তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।আহনাফ পুনরায় ল্যাপটপের দিকে তাকালো।

————-

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলো আহনাফ নিচে বসে বিছানায় মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছে। সিরাত চমকে উঠে বসলো।সিরাতের হাত আহনাফের হাতের মুঠোয় ছিল।সিরাত উঠে বসাতেই আহনাফ জেগে গেলো।সিরাতের হাত ছেড়ে মাথা তুলে বসলো।সিরাত চোখ ছোট করে বললো,

“আপনি এভাবে ঘুমাচ্ছিলেন কেনো!”

আহনাফ কিছু বললোনা।উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সিরাত আহনাফের যাওয়ার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইলো।

————

নাস্তা শেষে আহনাফ বললো,

“দ্রুত খাওয়া শেষ করো।তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আমি হসপিটালে যাবো।”

ফারিহা আগ্রহ নিয়ে বললো,

“তাহলে আমিও খাওয়া শেষ করি।সিরাতকে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাবো।”

আহনাফ বাঁধা দিয়ে বললো,

“তুই একা যা।আমি আর আগে বের হবো।তুই নিশ্চিন্তে খাওয়া শেষ করে পরে যা।”

সিরাত অবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো।আজকে হঠাৎ ফারিহাকে মানা কেনো করলো সে!এই কয়দিন তো একসাথেই গিয়েছিলো তারা।আহনাফ বিরক্তি নিয়ে বললো,

“দ্রুত চলো।”

সিরাত উঠে দাঁড়িয়ে আহনাফের পিছু পিছু চলে গেলো।ফারিহা অপমানিত্ব বোধ করে আরো রেগে গেলো।

সিরাত গাড়িতে উঠতেই আহনাফ বললো,

“রাস্তা চিনে রাখো। প্রতিদিন আমি তোমাকে দিয়ে যেতে পারবোনা।”

সিরাত বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে ফিরে বললো,

“আপনাকে প্রতিদিন কেউ দিয়ে যেতেও বলেনি।”

আহনাফ অবাক হয়ে বললো,”তুমি এমন ব্যবহার কেনো করছো কালকে থেকে!”

সিরাত আহনাফের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো,

“কিছু না।”

আহনাফ আর কিছু বললোনা। গাড়ি চালানো শুরু করলো।পুরো গাড়িতেই কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।আহনাফ সিরাতকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

————–

কলেজে আজকে তেমন কোনো ক্লাস হয়নি। পুরো ক্লাসই সবার পরিচয় পর্ব চলেছে।সিরাত হেঁটে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।মাঝ পথে থেমে ভাবলো হেঁটে যাওয়া যাবেনা।যে রোদের তাপ রিক্সায় যেতে হবে।রোদের উত্তাপে অতিষ্ট চারিদিকে। সিরাত থেমে রিক্সা খুঁজতে লাগলো।আজকে সকালে আসার সময় নাদিয়া বেগম তারা হাতে টাকা দিয়েছে না হলে তাকে হেঁটেই যেতে হতো।হঠাৎ কারো কন্ঠে পাশফিরে তাকালো সিরাত।সাদাদ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,

“আপনি এখানে! ”

“এখান থেকেই যেতেছিলাম দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছে।এমন সময় এখানে কী করছো!”

সিরাত হাসিমুখে বললো,

“এই কলেজ শেষে বাসায় যেতে ছিলাম।”

সাদাদ হেঁসে বললো,”আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে আছে। কফি খাওয়ানের কথা ছিল।চলো আজকে কোথাও বসে কফি খাই।”

সিরাত অসস্থি পড়ে গেলো। এখন কী বলবে সে!সিরাতের অসস্থি দেখে সাদাদ বললো,

“আমার শুধু এক জায়গায় বসে কফি খেয়েই চলে যাবো।কিছুসময়ের ব্যাপার। আর কোনোদিন কিছু বলবোনা।”

সিরাত ভাবলো নাদিয়া বেগম তাকে যা টাকা দিয়েছে তাতে কফির টাকা হয়েই যাবে।আর সাদাদ সেইদিন তার জীবন বাঁচিয়েছে।এইটু্কু করাই যায় ভেবে সিরাত রাজি হয়ে গেলো।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here