স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_১৬(শেষ পর্ব) #তানজিম_তানাজ

0
6

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১৬(শেষ পর্ব)
#তানজিম_তানাজ

সবে মাত্র নিজের কেবিনে এসে বসলো আহনাফ।চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।আজকে অনেক প্রেসার গেছে কাজের।হঠাৎ ফারিহা এসে চেঁচিয়ে বললল,

“তুই আমার নাম বদলির লিস্টে দিচ্ছিস কোন সাহসে!”

আহনাফ চোখ মেলে তাকালো।মাথা সোজা করে বসে রইলো যেন ফারিহা কিছু বলেনি।হাতে একটা ফাইল নিয়ে দেখতে লাগলো।ফারিহা পুনরায় চেঁচিয়ে বললো,

“তুই সিরাতের মতো মেয়ের জন্য আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস!”

আহনাফ রাগী চোখে ফারিহার দিকে তাকালো।গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“সিরাত কেমন মেয়ে সে কথা বলার যোগ্যতা তোর নেই।সিরাতকে নিয়ে কিছু না বলাই তোর জন্য ভালো।না হলে চাকরিটাও থাকবেনা তোর।”

ফারিহা কিছুটা নরম সুরে বললো,

“আহনাফ আমি তোকে ভালোবাসি।”

আহনাফ তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো,

“ভালোবাসিস!তুই ভালোবাসতে জানিস!তুই যে শুধু টাকার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাস সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।আর ফুফিই যে পরিকল্পনা করে তোকে সিরাতকে ভুল বোঝাতে বলছে তা সব শুনেছিলাম আমি।বিয়ে ভাঙ্গার জন্যও তো তুই টাকা নিয়েচ্ছিস আমার থেকে আমি তোকে এখনো টাকা দিচ্ছি। তবে তুই এখন থেকে চলে যাবি।আমার আর সিরাতের সম্পর্ক ভাঙ্গার চেষ্টা করিসনা ফল ভালো হবেনা। ”

ফারিহা আশেপাশে খেয়াল করে দেখলো কেবিনের আশেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে।সবাই ফারিহাকে খারাপ বলচ্ছে।অপমানিত হয়ে ফারিহা আর কিছু বললোনা চলে গেলো।

——-
সিরাত কলেজ থেকে বেরিয়ে দেখলো আহনাফ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরা। দেখ মনে হচ্ছে সাদা শার্টটা শুধুই তার জন্য তৈরী এমনভাবে গায়ে ফুটে উঠেছে।সিরাত গাড়ির কাছে না গিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো।আহনাফ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলো।

হাতে টান লাগাতে দাঁড়িয়ে গেলো সিরাত।পিছনে না ফিরেই বুঝতে পারলো আহনাফ হাত ধরেছে। সিরাত পিছনে ফিরয়ে কিছু বলার আগেই আহনাফ হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসতে বললো।সিরাত উঠতে নিবে তখনই কারো কন্ঠ সরে থেমে গেলো।সাদাদ এসে সিরাতের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“সিরাত এই লোকের সাথে তোমাকে যেতে হবেনা চলো আমি তোমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসি।”

আহনাফ বিরক্তি নিয়ে তাকালো সাদাদের দিকে।সিরাত গাড়িতে উঠে বসলো।আহনাফ অবাক হয়ে তাকালো সিরাতের দিকে।সাদাদ ভারক্রান্ত কন্ঠে বললো,

“সিরাত!”

সিরাত সাদাদের দিকে তাকিয়ে স্লান হাসি দিয়ে বললো,

“আমি আমার স্বামীর সাথে অনেক ভালো আছি।আপনি আমার স্বামীকে ভুল বুঝে তাকে অপমান আর করবেন না।আর আমার সাথেও কোনোদিন কথা বলার চেষ্টা করবেন না।

আহনাফ আরো অবাক হলো।সিরাত আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,

” দ্রুত গাড়িতে উঠুন।”

আহনাফ অানমনে হ্যাঁ বললো।সিরাতের কথা আবার পুনরায় মস্তিষ্কে আওড়াতেই আহনাফ বুঝে গাড়িতে গিয়ে বসলো।সাদাদের চোখের পলকে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো আহনাফ।সাদাদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নিজে নিজে বললো,

“তোমাকে ভালোবেসে আমি ভুল করিনি।আমার ভালোবাসা ভুল না।শুধু একটাই আফসোস তোমার জীবনে আমি আগে কেনো আসলাম না!”

সাদাদ আনমনে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।স্লান হাসি দিয়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো।পুনরায় নিজেকে বললো,

“তোমার কথা আমি রাখবো সিরাত।এই প্রথম তুমি আমার কাছে কিছু চেয়েছো।তোমার কথাই থাকবে আমি আর কোনোদিন তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবোনা।”

গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো সাদাদ সেখান থেকে।

———-
সিরাত জানালা দিয়ে বাহির দেখছে।আহনাফ একটু পর পর লুকিংগ্লাসে তাকিয়ে সিরাতকে দেখচ্ছে।যা সিরাতের চোখ এড়ায়নি।সিরাত বিরক্ত নিয়ে বললো,

“এভাবে বার বার কেনো তাকাচ্ছেন!”

আহনাফ সমানের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো অবহত রেখে বললো,

“আমার বউকে আমি দেখচ্ছি তাতে তোমার কী সমস্যা!”

সিরাত থমকে গেলো।এই প্রথম আহনাফ তাকে নিজের বউ বলে সম্মোধন করলো।নিজেকে সামলে বললো,

“যাকে ভালোবাসেন না তাকে নিজের বউ কেনো বলচ্ছেন!করুনা করে নিজের অনিচ্ছায় নিজের বউ বলতে হবেনা।”

আহনাফ গাড়ি থামিয়ে তাকালো সিরাতের দিকে।সিরাত তার তাকানো বুঝতে পারচ্ছেনা।যে তাকানোতে আবেক আছে।আহনাফ শান্ত কন্ঠে বললো,

“মুখেই কেনো বলতে হবে ভালোবাসি!অনুভব করতে পারোনা!মুখে বলেই ভালোবাসা হয়ে যায়!ভালোবাসা অনুভব করে নিতে হয়।”

সিরাত স্তব্ধ হয়ে গেলো আহনাফের কথায়।নিজের কানকে তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। আহনাফ মুচকি হেঁসে বললো,

“শুধু ডাইরির পাতায় লিখলেই হয়না ভালোবাসি।বলার সাহস আর যাকে ভালোবাসো তার ভালোবাসা অনুভব করার যোগ্যতাও রাখতে হয়।”

সিরাত চমকে উঠলো।আহনাফ কীভাবে জানলো সে ডাইরির পাতায় তাকে ভালোবাসে কথাটা লিখেছিলো।আহনাফ তাহলে তার ডাইরি পড়ছে!সিরাত লজ্জায় অন্যদিকে তাকালো।কেনো তার লজ্জা লাগচ্ছে সে বুঝতেছে না।আহনাফ সিরাতের অবস্থা দেখে হেঁসে গাড়ি চালানো শুরু করলো।

————
ফারিহা ব্যাগ গোছাচ্ছে। তা দেখে তার মা রোকেয়া বেগম এসে বললো,

“তুই ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেনো! কোথাও যাবি!”

ফারিহা রাগানিত্ব চোখে তাকালো তার মায়ের দিকে।ক্ষোভ নিয়ে বললো,

“আহনাফ আমার বদলি করিয়েছে।কালকে রংপুরে জয়েনিং। ”

রোকেয়া বেগম অবাক হয়ে বললো,

“কিন্তুু আহনাফ এমন কেনো করলো!”

“আহনাফ আমাদের সব প্লান শুনে ফেলেছিলো।আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম মা।আহনাফ এই মেয়েকে ভালোবাসে এই মেয়েকে আহনাফ ওর থেকে দূরে সরাতে দিবেনা।এই প্লান কাজে দিবেনা আগেই বলেছিলাম দেখলে তো!আহনাফও গেলো আর সম্পত্তিও গেলো।”

রোকেয়া বেগমের আফসোস হচ্ছে। মেয়ের কথা তার শুনা উচিত ছিল।আরো চিন্তাভাবনা করে কাজ করা উচিত ছিলো।

——-
আহনাফ আর সিরাতকে বাসায় ঢুকতে দেখে নাদিয়া বেগম বললো,

“আহনাফ তোর সাথে আমার কথা আছে।”

আহনাফ দাঁড়িয়ে গেলো।সাথে সিরাতও।নাদিয়া বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“আমি বিকেলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।তুমি এবার না করতে পারবেনা।কেউ জানেনা তোমাদের বিয়ের কথা। তাই তোমাদের বিয়ে উপলক্ষে আমি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।”

আহনাফ আসস্ত করে বললো,

“আমার কোনো আপত্তি নেই।”

নাদিয়া বেগম আনন্দিত হয়ে সিরাতকে বললো,

“আমার সাথে আসো।পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে তোমাকে সাজানোর জন্য। তাড়াতাড়ি প্রস্তুুত হতে হবে বেশি সময় বাকি নেই।”

সিরাত একপলক আহনাফের দিকে তাকিয়ে নাদিয়া বেগমের সাথে চলে গেলো।

সিরাত কিছু জিনিসপত্র নিতে রুমে আসলো।নাদিয়া বেগমের রুমেই সাজবে।রুমে এসে দেখলো আহনাফ নেই।বিছানায় তাকিয়ে দেখলো আহনাফের ফোনের স্কিনে তার ছবি। সিরাত অবাক হয়ে ফোন হাতে তুলে নিলো।দেখে বুঝলো এটা সাজেকে বসে তোলা। আহনাফ তার ছবি কখন তুললো!

তখনি আহনাফ ওয়াশরুম থেকে বের হলো।সিরাত আহনাফকে দেখে বললো,

“আপনি আমার ছবি কখন তুললেন!”

আহনাফ বিছানায় বসে বললো,

“কেনো ভালো হয়নি!”

সিরাত বিরক্ত হয়ে বললো,

“আমি তা বলিনি।আপনাকে তো দেখলাম না আমার ছবি তুলতে। কখন তুললেন! ”

আহনাফ মুচকি হেঁসে বললো,

“এমন অনেক ছবি আছে।সবই তোমার অজান্তে তোলা।”

সিরাত অবাক হয়ে তাকালো আহনাফের দিকে।নাদিয়া বেগম ডাকতেই আর দাঁড়ালো না চলে গেলো।
———–
সিরাতের পরণে লাল লেহেঙ্গা মেচিং করা গহনা আর হালকা মেকআপ।আর আহনাফ কালো পান্জাবি পড়া।সবাই তাদেরকে ঘিরে রয়েছে।সবাই আস্তে আস্তে তাদের শুভকামনা জানালো।ফারিহাও এসে শুভকামনা জানালো।সিরাত স্লান হেঁসে বললো,

“শুভকামনার থেকে অন্যের স্বামীর দিকে নজর না দিলে ভালো হবে।”

ফারিহা অপমানিত হয়ে চলে গেলো।সিরাতের চাচা চাচি আসতেই সিরাত এগিয়ে তাদের কাছে গেলো।নিশিও সাথে এসেছে। নিশিকে সিরাত জড়িয়ে ধরলো।সিরাত তার চাচাকে বললো,

“কেমন আছো চাচা?”

তিনি হেঁসে বললো,

“তোকে দেখে অনেক ভালো আছি। আমার মেয়ে সুখে আছে আমি ভালো না থেকে পারি!”

সিরাত ছলছল চোখে তাকালো।এই লোকটা তাকে আসলেই নিজের মতো ভালোবাসে।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত। চাঁদের আলোতে রুম আলোকিত।নিজের পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে সিরাত পাশে তাকালো।আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে তারপাশে।আহনাফ সিরাতের হাত ধরে বললো,

“আমার ভালোবাসার #স্নিগ্ধ পরশে তোমাকে অনুভব করতে চাই তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেই সুযোগ দিবে আমাকে!”

সিরাত উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে আহনাফকে জড়িয়ে ধরলো।বুকে মুখ গুজে বললো,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

কন্ঠে তার লাজুকতা।ঠোঁটে লাজুক হাসি।যা অনুভব করে মুচকি হাসলো আহনাফ।আহনাফ সিরাতকে নিজের বুক থেকে তুলে বললো,

“আমিও তোমাকে ভালোবাসি সিরাত।”

সমাপ্ত

(আমি খুবই দুঃখিত গল্পটা অনিয়মিত দেওয়ার জন্য।এই কয়েকদিন নিজের ব্যস্থতার কারণে গল্প দিতে পারিনি।হঠাৎ করে পড়াশোনার চাপ বেরে গেছে।গল্পটা কেমন লাগলো সবার কাছে!আজকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করতে পারি!
সামনে আমার পরীক্ষা সবাই দোয়া করবেন।ধন্যবাদ গল্পটা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here