স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_৪ #তানজিম_তানাজ

0
6

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৪
#তানজিম_তানাজ

“কেমন আচ্ছিস ফারিহা!”

মেয়েটি নাদিয়া বেগমকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

“এই তো ভালো মামনি।”

ফারিহা সিরাতের দিকে ইশারা করে বললো,”এই কী আহনাফের বউ!”নাদিয়া বেগম হাসিমুখে মাথা নাড়লেন।ফারিয়া উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
”আমি আগেই বুঝেছিলাম তুমিই সিরাত।”
সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।নাদিয়া বেগম সিরাতকে ফারিয়ার দিকে ইশারা করে বললো,”এই হলো তোমার ননদ।রোকেয়ার মেয়ে। আহনাফের ফুফাতো বোন।”
সিরাত ফারিহার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।আহনাফ এখনো একজায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে।নাদিয়া বেগম সবাইকে ত্যাড়া দিয়ে বললেন,”সবাই খেতে আসো। ”
বলেই তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।সিরাতও নাদিয়া বেগমের সাথে চলে গেলো।ফারিয়া আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,

“কীরে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি!”

আহনাফ আপনমনে কিছু একটা ভাবতে ছিলো।ফারিয়ার কথায় আহনাফের ভাবনায় ছেদ ঘটলো।”আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।” বলেই আহনাফ উপরে চলে গেলো।ফারিয়া আহনাফের যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একফালি নিশ্বাস ফেলে চলে গেলো।

খাবার টেবিলে নাদিয়া বেগম খাবার গুছিয়ে রাখছে। নাদিয়া বেগমের সাথে সাথে সিরাতও হাতে হাতে কাজ করছে।ফারিয়া ফ্রেস হয়ে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো
“মামুনি মা কোথায়? মা’কে যে দেখছিনা!”
“তোর মা তার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে।চলে আসবে বিকেলের মধ্যে।”(নাদিয়া বেগম)
” আমি বরং আহনাফকে ডেকে নিয়ে আসি।” বলেই চেয়ার ঠেলে উঠতে নিলে নাদিয়া বেগম বাঁধা দিয়ে বললেন “তুই বস।সিরাত গিয়ে ডেকে নিয়ে আসুক।”
সিরাত আমতা আমতা করে বললো,”আআআমি!থাক আপুই যাক।”
নাদিয়া বেগম গম্ভীর নয়নে তাকিয়ে বললেন,”তুমিই যাবে।যাও তাড়াতাড়ি আহনাফকে ডেকে নিয়ে আসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও আহনাফকে ডাকতে চলে গেলো।আহনাফ সবে গোসল করে বেড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচ্ছে।পরনে গেন্জি আর ট্রাউজার। সিরাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে।কী বলবে বুঝে উঠতে পারচ্ছেনা।সিরাত এইটুকু বুঝছে তার উপস্থিতি আহনাফের পছন্দ না।আয়নায় সিরাতের বিম্ব দেখে আহনাফ ভ্রু কুচকে বললো,
“কী সমস্যা?”
সিরাত চমকে উঠলো।মূর্হতেই নিজকে সামলে আমতা আমতা করে বললো,
“আসসলে….আসলে……..”
আহনাফ বিরক্ত চোখে পিছন ফিরে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আসলে… নকলে কী!”
সিরাত নিজেকে ধাতস্ত করে নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“আপনাকে খেতে ডাকছে।”
আহনাফ কিছু বললোনা।পুনরায় চুল মুছতে শুরু করলো।সিরাত আহনাফের দিকে রয়েছে।আহনাফ এমন ভান করছে যেন এখানে কেউ নেই।সিরাত দ্বিধাদন্ডে পরে গেলো।আহনাফ তো উত্তরে কিছু বললোনা। সে এখন কী করবে! চলে যাব!সিরাতের ভাবনার মাঝেই আহনাফ টাওয়াল মেলে দিয়ে সিরাতকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।একবারও সিরাতের দিকে তাকায়নি।মনে হলো এখনে সিরাত অদৃশ্য।সিরাতের ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসলো।

খাবার টেবিলে কেউ তেমন কোনো কথা বলেনি।মাঝে মাঝে ফারিহা আহনাফের সাথে কথা বলছে। আহনাফ শুধু তার হু হ্যাঁ জবাব দিয়েছে।সিরাত নিরবে খাওয়া শেষ করছে।একে একে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।সিরাত পরলো আরেক বিপাকে। এখন সে কী করবে! রুমে তো উনি আছেন।আমি গেলে তো বিরক্ত হবেন।ভেবেই সিরাত আর উপরে গেলোনা।সোফায় গিয়ে বসে পড়লো।সোফায় হেলান চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।কিছুক্ষন পর কারো গলার খিকরির শব্দে সিরাত চোখ মেলে তাকালো।চোখ খুলে আহনাফকে দেখে সোজা হয়ে বসলো।আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“তুমি আমার সাথে এক জায়গায় যাবে।তাড়াতাড়ি আসো।”
সিরাত অবাক হয়ে বসে রইলো।কথাটা তার বোধগম্য হলো না ঠিক। কোথায় যাবে সে!সিরাতের কোনো হেলদোল না দেখে আহনাফ বললো,
“কী হলো!”
সিরাত উঠে দাঁড়ালো। আহনাফকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাহিরে কোথাও যাবে।সেরকমই রেডি হওয়া। সিরাত আহনাফের পিছন পিছন চলে গেলো।আহনাফ গাড়িতে ড্রাইভিং সীটে বসে বললো,
“তাড়াতাড়ি উঠো।”
সিরাত আহনাফের পাশের সীটেই বসলো।আহনাফ সিরাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো,

“সীট বেল্ট লাগাও।”

সিরাত মাথা নাড়ালো।সিরাত সীট বেল্ট লাগিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আহনাফ কাউকে কল দিয়ে “আমরা তাড়াতাড়ি আসতেছি।” বলে রেখে দিলো।একবার সিরাতের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।সিরাত একবার জিঙ্গেস করছে আহনাফকে তারা কোথায় যাচ্ছে কিন্তুু আহনাফ কিছু বলেনি।সিরাত জানালার কাচ ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে ভাবচ্ছে আহনাফ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!তাকে কী তার চাচার বাসায় রেখে দিয়ে আসবে আহনাফ!আকাশকুসুম চিন্তা করতে করতে সময় পার করলো সিরাত।গাড়ি থামলো প্রায় একঘন্টা পর।এর মধ্যে অনেক সময় জ্যামে পরেছিলো তারা।সিরাত গাড়ি থেকে নেমে বুঝলো তারা একটা হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আহনাফ হসপিটালের ভিতর প্রবেশ করলো।সিরাতও আহনাফের পিছন পিছন গেলো।আহনাফ তিনতলার করিডরের শেষ প্রান্তে এক কেবিনে প্রবেশ করলো।সিরাত বুঝতে পারছেনা তারা এখনে কেনো এসেছে!কারো কী কিছু হয়েছে!সিরাত কেবিনে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো।বেডে তার চাচা শুয়ে রয়েছে।সিরাত দ্রুত বেডের কাছে এগিয়ে গেলো।পাশেই তার চাচি আঞ্জুমান বেগম বসে রয়েছেন।আহনাফ একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিরাত ব্যাস্ত হয়ে জিঙ্গেস করলো,

“কী হয়েছে চাচার!”

“হঠাৎ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলো।তারপর লোকজন ধড়াধড়ি করে এখানে নিয়ে এসেছে।আমি আসার সময় আহনাফ বাবাকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম।আহনাফ বাবাও তো ডাক্তার তাই।আমি আসতেই ডাক্তার বললো রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছে যার কারণে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমাচ্ছে।”

সিরাত চিন্তিত হয়ে পড়লো।আজকে তার চাচার এই অবস্থার জন্য সিরাত নিজেকে দায়ী করছে।তাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতেই তার চাচার এই অবস্থা।

/////////////////////////////

সন্ধ্যা ছয়টা।সিরাত তার চাচার পাশে বসে রয়েছে।আহনাফ কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।উনি তাহলে ডাক্তার। হার্টসার্জন।তখন চাচির কথায় খেয়াল না করলেও পারে জানতে পেরেছে সে।এমন সময় আহনাফ কেবিনে ঢুকে বললো,”আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলছি।কালকে সকালেই আপনাকে ছেড়ে দিবে।আমাকে এখন যেতে হবে চাচা।”

সিরাতের চাচা আজমল সাহবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আহনাফ সিরাতের পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “চলো, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে দ্রুত যেতে হবে। একটা ওটি রয়েছে।”

সিরাত অনুনয় করে বললো,” আমি এখনেই থাকি আজকে?”
আহনাফ কিছু বলার আগেই সিরাতের চাচা বাধা দিয়ে বললেন, “তোর চাচি আছে তো। চিন্তা করিসনা। তুই বরং জামাই বাবাজির সাথে চলে যা।”

সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও আহনাফের সাথে চলে আসলো। সিরাত বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আহনাফ আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে।হাঠাৎ গাড়ি থামায় সিরাত নড়েচড়ে বসলো।এটা তো বাড়ির সামনে না।তাহলে উনি এখনে কেনো থামিয়েছেন!সিরাতের ভাবনার মাঝেই আহনাফ বললো,”নামো।”
সিরাত হকচকিয়ে উঠলো।মাঝ রাস্তায় কেনো নামবে!চারপাশে সাই সাই করে দ্রুত গতি গাড়ি চলছে।আহনাফ পুনরায় বললো, “দ্রত নামো।”

সিরাত নামতেই আহনাফ বললো,”আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারবোনা।একাই বাড়িতে চলে যাও। ”

সিরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আহনাফ চলে গেলো।সিরাত রোডের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করলো।তার কাছে এক টাকাও নেই।আনমনে ব্যাস্ত রাস্তায় হাঁটছে সিরাত।আনমনে জীবনের সমীকরণ মিলাচ্ছে।জীবন বড়ই অদ্ভুত । শত কষ্ট থাকা শর্তেও হাসিমুখে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।হাঠাৎ চোখে অনেক আলো পরতে সামনে তাকাতেই থমকে গেলো।তারদিকে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। এইমনে হয় তার জীবন শেষ ভাবতেই সিরাত চোখ বন্ধ করে নিলো আর মূর্হতেই,

চলবে!

(আমি খুবই দুঃখিত গল্প দেরী করে দেওয়ার জন্য। আমি অসুস্থ ছিলাম যার কারণে গল্প লিখতে দেরী হলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here