স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_১০(বোনাস) #তানজিম_তানাজ

0
6

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১০(বোনাস)
#তানজিম_তানাজ

আহনাফের চোখ হালকা লাল বর্ণ দেখাচ্ছে।সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ উঠে সিরাতের দিকে আগাতেই সিরাত পিছিয়ে গেলো।আহনাফ সিরাতের কাছে আসতেই সিরাত রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে হাতে জোড়ে ব্যাথা অনুভব হতেই দাঁড়িয়ে গেলো।ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ সিরাতের কনুইয়ের কাছে ধরে টান দিলে সিরাত আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“ফোন ধরো নি কেনো!কতবার ফোন দিয়েছি!”

অনেকটা চেঁচিয়ে বললো কথাটা।সিরাত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“খেয়াল করিনি।”

সিরাতের কথাটা যেন আহনাফের রাগকে আরো ক্ষিপ্ত করলো।দ্বিগুন রাগ দেখিয়ে আহনাফ বললো,

“খেয়াল কই থাকে তোমার! আর কার অনুমতিতে তুমি বাহিরে গিয়েছিলে!”

সিরাত চুপ করে রইলো।সিরাতের চুপ থাকা যেন আহনাফের রাগকে আরো বাড়িয়ে তুলচ্ছে।আহনাফ চেচিয়ে বললো,

“আজ থেকে বাহিরে বের হওয়া বন্ধ তোমার।”

কথাটা বলেই সিরাতকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে আসলো আহনাফ।আকষ্মিক ধাক্কায় তাল সামলে না পেরে সিরাত ছিটকে ফ্লোরে পড়লো।হাতে থাকা কাচের চুড়ি ভেঙ্গে সব তার বাম হাতে বিধলো।উঠে হাত চেপে বসে রইলো সিরাত।নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে তার।অনেকসময় পর উঠে ওয়াশরুমে গেলো।হাতে গাঁথা কাচ গুলো বের করে ফেললো।হাতে পানি লাগাতেই প্রচন্ড জ্বালা করলো।কিন্তুু এই জ্বালা তার মনের জ্বালা থেকে কম।হাতে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করার সময় দেখলো ডান হাতে কনুইয়ের কাছে অনেকটা জায়গা জুড়ে কালশিটে দাগ পড়ে রয়েছে।সিরাত সেইদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখমুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তার।রুমের লাইট বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।অনেকসময় বাদে ঘুমিয়ে পড়েছে।

—————–
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো সিরাত।কিছুসময় বসে থেকে হাতের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো।তার দুইহাতে ব্যান্ডজ করা। কিন্তুু ব্যান্ডজ কে করলো ভাবতেই আহনাফের কথা আসলো।দ্রুত সোফার দিকে তাকালো।সোফায় আহনাফকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলো।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।নিজের অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটলো সিরাতের মুখে।হাতে ব্যাথাও কালকের থেকে অনেকটা কম।পাশে তাকাতেই দেখলো সাইড টেবিলে বাটিতে পানি আর রুমাল রাখা। তারমানে রাতে তার আবার জ্বর উঠেছিলো।মুগ্ধ নয়নে তাকালো আহনাফের দিকে।কিন্তুু ক্ষানিকক্ষন বাদে বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকালো।কালকে ঘটনা মনে পড়তেই মন তিক্ত হয়ে উঠছে।বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

———
নাদিয়া বেগমরা সকাল সকাল চলে এসেছেন।খাবার টেবিলে সবাই বসা।সিরাত গায়ে এমনভাবে ওড়না জড়িয়ে রেখেছে যাতে ব্যান্ডজ না দেখা যায়।নাদিয়া বেগম সিরাতের দিকে তাকিয়ে আহনাফের দিকে ইশারা করে পানি দিতে বললো।সিরাত গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দেওয়ার সময় হাত থেকে ওড়না ক্ষাণিকটা সরে যাওয়ায় বাম হাতে ব্যান্ডেজ দেখা যাচ্ছে।সেটা দেখে অবাক কন্ঠে ফারিহা বললো,

“একি সিরাত! তোমার হাতে কী হয়েছে!ব্যান্ডজ করা কেনো!”

সিরাত দ্রুত হাত ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো।এক বিপাকে পড়ে গেলো এখন সে। সবাই কে কী বলবে!যদি কালকের ঘটনার কথা বলে তাহলে নাদিয়া বেগম কষ্ট পাবে।ফারিহা সিরাতের পাশের চেয়ারেই বসা ছিল।সিরাতের হাত ধরে দেখতে লাগলো।নাদিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
“কীভাবে হলো এমন!”

সিরাত একপলক আহনাফের দিকে তাকালো।সে প্লেটের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে খাচ্ছে।যেন এখানে কিছু হয়নি।টেবিলের সবার আকর্ষন সিরাতের দিকে শুধু আহনাফ বাদে।আহনাফের এমন কান্ড দেখে সিরাতের রাগ লাগলো।তার জন্য এমন পরিস্থিতে পরতে হয়েছে তাকে।নাদিয়ে বেগম পুনরায় জিঙ্গেস করলেন, “কী হলো বলো!”

সিরাত আমতা আমতা করে বললো,”আআসলে মা।সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়েগিয়েছিলাম।আর তখন চুড়ি ভেঙ্গে হাতে গেঁথে গিয়েছিলো।”

কথাটা বলে আহনাফের দিকে তাকাতেই দেখলো আহনাফ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সিরাত অন্যদিকে তাকালো।নাদিয়া বেগম ব্যাস্থ হয়ে বললেন,”দেখে চলবি তো।এরপর থেকে সাবধানে থাকবে।”

সিরাত উপর নিচে মাথা নাড়ালো।রোকেয়া বেগমের এসব ভালো লাগচ্ছেনা।তিনি বিরক্তি নিয়ে উঠে বললেন,

“খাবার টেবিলে এতো নাটক দেখার ইচ্ছা আমার আর নেই।আমি উঠলাম।”

কথাটা বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন।ফারিহা অবশ্য তার মা’কে ডেকে ছিলো কিন্তুু রোকেয়া বেগম চলে গেলেন।সিরাত স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।ফারিহা সিরাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তার মায়ের আচরণে সিরাত কষ্ট পেয়েছে।ফারিহা সিরাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“মায়ের কথা শুনে কষ্ট পেয়না।মা একটু ওমনই।”

সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও মুখে হাসি আভা রেখে বললো,

“আমি কষ্ট পাইনি ফারিহা আপু।”

ফারিহা আহনাফের দিকে তাকিয়ে ব্যাস্থ কন্ঠে বললো,

“চল। এখন আমরা বের হই।”

আহনাফ ফারিহার কথায় সায় মিলিয়ে উঠে দাঁড়ালো।আহনাফ যাওয়ার পর ফারিহা নাদিয়া বেগমকে বলে বেরিয়ে পড়লো।নাদিয়া বেগম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ফারিহার সাথে আহনাফের বিয়ের কথা চলতে ছিল।মূলত রোকেয়া তুলেছিলো কথা।ফারিহাও রাজি ছিল।আমিতো ভেবেছিলাম তোর আর আহনাফের বিয়ের ব্যাপারটা ফারিহা সহজে মেনে নিবেনা।কিন্তুু ফারিহা সব ভালোভাবে মেনে নিয়েছে।ভালোই হয়েছে।ফারিহাও তোকে আপন করে নিয়েছে।”

সিরাত নাদিয়া বেগমের কথা শুনে অবাক হলো।নাদিয়া বেগম উঠে রান্না ঘরে গেলেন।সিরাত টেবিলে বসে আনমনে ভাবচ্ছে,”তাহলে কী উনিও ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করেন!বিয়ের কথা যখন হতে ছিলো তাহলে নিশ্চয়ই উনিও ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করে।আমার কারণে তাহলে তাদের বিয়েটা হলো না।আমি বাঁধা তাদের মধ্যে।উনি তাহলে ফারিহা আপুকে ভালোবাসেন তাই আমাকে মেনে নেন নি।

কথাটা ভাবতেই আনমনেই সিরাতের চোখ থেকে একবিন্দু অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো।

—————

দেখতে দেখতে পুরো এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।সেইদিনের রাতের পর থেকে আহনাফের সাথে সিরাতের কথা হয়নি।একই ছাঁদের নিচে এক রুমে থেকেও তাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি।পুরো এক সপ্তাহ আহনাফ অনেক ব্যাস্থ ছিলো।কখন অনেক সকালে বের হয়ে গিয়েছে তারপর অনেক রাত করে বাসায় এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আবার কখন নাইট ডিউটি করে সারাদিন ঘুমিয়ে রয়েছে।মাঝে মাঝে চোখেচোখ পড়তেই সিরাত দ্রুত অন্যদিকে তাকিয়েছে।

আজকে আহনাফের ছুটি তাই সারাদিন বাসায়ই রয়েছে।কিন্তুু সিরাতের সাথে কথা হয়নি।সিরাত মূলত আহনাফের সামনে পড়েনি ইচ্ছাকৃতভাবে।রাত এগারোটা বাজে।খাওয়া দেওয়া শেষে সোফায় নাদিয়া বেগম আহনাফ বসে কথা বলছেন।সিরাত রান্না ঘরে ছিল।রুমে যাওয়ার জন্য তাদের সামনে থেকে যেতে নাদিয়া বেগম সিরাতকে দাঁড়াতে বলে।সিরাত নাদিয়া বেগমের কাছে এসে দাঁড়ায়। নাদিয়া বেগম গম্ভীর কন্ঠে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“দেখো আহনাফ আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।সবই যখন নিজের বউ নিয়ে যাবে এই ট্যুরে তখন তুমিও তোমার বউকে নিয়ে যাবে।আর এই বাসায় আসার পর সিরাত কোথাও যায়নি।তুমি ওকে নিয়ে যাবে।”

সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো কোথায় যাওয়ার কথা বলছে!নাদিয়া বেগম উঠে বললেন,

“আশা করি আমার কথা তুমি শুনবে। ”

কথাটা বলেই নাদিয়া বেগম তার রুমে চলে গেলেন।আহনাফও উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।সিরাত আহনাফের পিছু পিছু গিয়ে বললো,

“দেখুন আপনাকে বাধ্য হয়ে আমাকে নিয়ে যেতে হবেনা।আমি মা’কে বুঝিয়ে বলবো।”

আহনাফ ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসেছিলো মাত্র। সিরাত দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে বললো,

“কালকে অনেক সকাল সকাল বের হবো।রেডি হয়ে থেকো।তোমার জন্য জানি দেরি না হয়।”

সিরাত বাঁধা দিয়ে বললো,”আপনার আমাকে নিয়ে যেতে হবেনা।”

আহনাফ বিরক্তি নিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এতো বেশি কথা বলো কেনো তুমি!”

সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“ওখানে গিয়ে সবার সামনে এমনভাবে থাকবে যেন আর বাকি পাঁচটা সাধারন স্বামী স্ত্রীয়ের মতো আমাদের মনে হয়। আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই এমন থাকবে।কিন্তুু তার মানে এই নয় যে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।শুধু আমার স্ত্রী হওয়ার নাটক করবে।”

সিরাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ পুনরায় তার কাজে মনোযোগ দিলো।

—————–

সকাল সকালই দ্রুত রেডি হয়ে গেলো সিরাত।নাদিয়া বেগমকে বলে আহনাফের পিছুপিছু সিরাত বাহিরে আসলো।ফারিহা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সিরাতকে দেখে কিছুটা আশাহতো হলো।ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললো,

“তুমিও যাবে আমাদের সাথে!”

সিরাত কিছুটা অপ্রস্তুুত হয়ে পড়লো।সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাথা নাড়লো।ফারিয়া আর কিছুনা বলে গাড়ির পিছনের সীটে বসলো।সিরাতও পিছনের সীটে বসতে নিলে আহনাফ বললো সামনে বসো।সিরাত আর কিছুনা বলে সামনে আহনাফের পাশে বসলো।গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে।খুব সকাল হওয়ায় খুব একটা গাড়ি নেই রাস্তায়।তবে কমও না।সিরাত লুকিংগ্লাস দিয়ে ফারিয়ার দিকে নজর পড়তেই ভাবতে লাগলো,

“এসে তো প্রথমে অনেক উচ্ছাসিত দেখছিলাম ফারিহা আপুকে।হঠাৎ এমন মনভার করে রইলো কেনো!কী এমন হলো!”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here