#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১১
#তানজিম_তানাজ
কিছুক্ষণ বাদে একজায়গায় এসে গাড়ি থামলো।আহনাফ ইশারায় নামতে বলে সেও নেমে পড়লো।সামনে একটা বড় বাস রয়েছে।আহনাফ একজনকে গাড়ির চাবি দিয়ে দিলো।এনাকে অনেকবার দেখছে সিরাত বাসায়।নাদিয়া বেগম যখন বের হতো তখন উনিই গাড়ি চালাতো।লোকটি চাবি নিয়ে গাড়িতে বসলো।গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।বাসের সামনেই দশ বা বারো জনের মতো মানুষ রয়েছে। ফারিহা আর আহনাফ সেদিকে এগিয়ে গেলো।সিরাতও পিছুপিছু এগিয়ে আহনাফের পিছনে দাঁড়ালো।সবার কথায় মনে হচ্ছে এরা সবাই ডাক্তার বা কেউ কেউ ডাক্তারের বউ।আহনাফ আর ফারিহা সবার সাথে কথা বলছে আর সিরাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ক্ষাণিকটা অসস্থি লাগচ্ছে।তখনই এক মেয়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বললো,
“তুমি নিশ্চয়ই আহনাফ ভাইয়া বউ!”
সিরাত আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ একপলক পিছনে ফিরে আবার সামনে ফিরে কথা বলতে থাকলো।সিরাত স্লান হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।মেয়েটি হাত বাড়িয়ে বললো,”আমি সুমনা।তুমি!”
সিরাতও হাত বাড়িয়ে হাত মিলালো।হাসিমুখে বললো,
“সিরাত।”
সুমান তার স্বামীর দিকে ইশারা করে পরিচয় করিয়ে দিলো।তার স্বামী সৌরভ হাসি মুখে সালাম দিলো।সিরাতও সালামের উত্তর দিলো।সুমনা অনেকটা মিশুক নিজ থেকে সিরাতের সাথে অনেক কথা বলচ্ছে।সিরাতের ব্যাপারটা ভালোই লাগলো। একটা সঙ্গী পেলো।না হলে একা একা অনেকটা অস্থি হতে ছিলো।সুমনার সাথে কথা বলার পর থেকে আর লাগচ্ছেনা।হঠাৎ নিজের নাম কারো মুখে উচ্চারিত হতে শুনে সিরাত সেইদিকে তাকালো।আহনাফও সেইদিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
সমানে সাদাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে।নির্মলভাবে চেয়ে আছে সিরাতের দিকে।সিরাত সাদাদকে দেখে অবাক হলো।সাদাদ সিরাতের দিকে এসে বললো,”তুমিও যাচ্ছো আমাদের সাথে!”
সিরাত মাথা নাড়ালো।সুমনা আগ্রহ নিয়ে বললো,
“তোমার কী দুইজন পরিচিত!”
সাদাদ বললো,”হ্যাঁ আমরা পূর্ব পরিচিত।”
সুমনা কিছু বলতে নিবে তখনই একজন বললো সবাইকে বাসে উঠতে। সুমনা কিছু না বলে সিরাতের হাত ধরে টেনে বাসের দিকে গেলো।
———–
ফারিহা আর সিরাত একসাথে বসেছে।সিরাত জানলার পাশে বসেছে।সামনের সীটে আহনাফ আর সাদাদ বসেছে।হঠাৎ ফারিহা উঠে দাঁড়ালো। সিরাত ভ্রুকুচকে ফারিহার দিকে তাকালো।আহনাফ জানালার পাশে বসেছে।ফারিহা সাদাদের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“তুমি একটু পিছনে বসবে!তুমি আর সিরাততো পূর্বপরিচিত।আমার আহনাফের সাথে রোগীর ব্যাপারে কিছু আলোচনা করার ছিল।”
সাদাদ কিছুএকটা রাজি হয়ে গেলো।সাদাদ সিরাতের পাশে বসতেই সিরাত নিজেকে একটু গুটিয়ে বসলো।অসস্থি কাজ করছে তার মধ্যে।ফারিহা পাশে বসতেই আহনাফ অবাক হয়ে বললো, “তুই এখানে কেনো আসলি!”
আহনাফ এতো সময় মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখতে ছিলো।ফারিহা বসতেই উক্ত কথাটি বললো।ফারিয়া বললো,
“ওরা আগে থেকেই পূর্বপরিচিত।একসাথে গল্প করুক।তোর সাথে আমার একটা রোগীর ব্যাপারে কিছু আলোচনা করার ছিলো।”
আহনাফ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“এখন কেনো! এটা তো পড়েই বলা যেতো।”
বাস মাত্র ছেড়েছে।সিরাত জানালা দিকে তাকিয়ে রয়েছে।জানলা বন্ধ।খুব খুলতে ইচ্ছা করচ্ছে।তাই হাত বাড়িয়ে জানালা খুলতে নিলো।কিন্তুু পারচ্ছেনা।সাদাদ তা দেখে বললো,”আমি খুলে দিবো!”
সিরাত ইতস্ত হয়ে বললো,”না থাক।খোলা লাগবেনা।”
সাদাদ সিরাতের কথা শুনলোনা।সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে জানালা খুললো।
সিরাত বাহিরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্থ।কপালের কাছ থেকে কিছু চুল বেড়িয়ে রয়েছে।বাতাসে তা বার বার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আর সিরাত তা ঠিক করতে ব্যাস্ত।একসময় সে হাল ছেড়ে দিলো।এলোমেলোই থাকতে দিলো চুলগুলো কে।তারপরও মাঝেমাঝে চোখের উপর পড়তেই বিরক্তি নিয়ে তা ঠিক করচ্ছে।কানে গুজে রাখলোও থাকচ্ছে।বড়ই অবাধ্য তার চুলগুলো।সিরাত পাশে থাকাতেই থমকে গেলো।সাদাদ দিকে তাকিয়ে ছিলো।সাদাদ হেসে বললো,”যে উড়তে চায় তাকে উড়তে দাও।বাঁধা দিওনা।”
সিরাত কিছুসময় সাদাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পাড়লো সাদাদ চুলের কথা বলছে।সাদাদ কথা বলেই যাচ্ছে আর সিরাত তা শুনচ্ছে।সাদাদের কথাশুনে বুঝলো তারা সাজেক যাচ্ছে।সাদাদ থেমে বললো,
“এতো সময় আমিই কথা বললাম।এখন তুমি বলো।”
সিরাত চমকে উঠলো।ইতস্তত হয়ে বললো,”আমি কী বলবো!আপনিই বলুন। আমি শুনি।”
সাদাদ কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো,”তাহলে তোমার বিয়ের ব্যাপারে বলো।”
আহনাফ ঘাড় ঘুরে পিছে তাকালো।সাদাদের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার সামনে ফিরলো।সিরাত থমকে বললো,
“আমাদের বিয়ে নিয়ে তেমন কোনো বলার কিছু নাই।”
সাদাদ আর কিছু বললোনা সিরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে সে সিরাতের দিকে তাকিয়ে।সিরাত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখচ্ছে।এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
————
ঘুম ভাঙ্গতেই সিরাত আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো বাসে কেউ নেই।দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। পুরো বাস খালি কেউ নেই।তখনই বাহিরে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে এসে সাদাদ বললো,
“ভয় পেও না।সবাই বাহিরে আছে।তুমিও আসো।”
সিরাত স্বস্থির নিশ্বাস ত্যাগ করলো।বাস থেকে নামতেই সুমনা সিরাতের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“ঘুম কেমন হলো তোমার!”
সিরাত স্লান হাসলো।সুমনা মুচকি বললো,
“তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আহনাফ ভাইয়া সাদাদ ভাইয়াকে উঠিয়ে নিজের জায়গায় বসতে বলে। আর আহনাফ ভাইয়া তোমার পাশে বসে।তোমার পুরোটা পথ আহনাফ ভাইয়া কাঁধে ঘুমিয়ে কাটিয়েছো।”
সিরাত অবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ একজনের সাথে কথা বলচ্ছে।সিরাত সুমনার দিকে তাকালো।সুমনা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসচ্ছে।সিরাত লজ্জায় পড়ে গেলো।সুমনা জোড়ে হেসে বললো,
“আর লজ্জা পেতে হবেনা।চলো এখানেই সবাই দুপুরের খাবার খাবে।”
সিরাত লাজুক হেসে সুমনার সাথে গেলো।
————–
একটা টেবিলে ছয়জন করে বসা যায়। একপাশে সিরাত, সুমনা, ফারিহা বসেছে।তার বিপরীত পাশে আহনাফ, সাদাদ আর সৌরভ বসেছে।খিচুড়ি ওর্ডার দিয়েছে।এখন সকাল আর দুপুর দুটোই একসাথে খাচ্ছে সবাই।অবশ্য বাসে হালকা খাবার খেয়েছিলো সবাই।সাদাদ সৌরভের ছোট ভাই। সেই হিসেবে এখানে আসা।
খাবার খাওয়া শেষ করে সবাই জিপ গাড়িতে বসে রয়েছে।এবার সিরাতের পাশে ফারিহাই বসেছে।ফারিহা সিরাতকে ফোনে কিছু দেখাচ্ছে।মূলত দুইজন ফোন নিয়ে পড়ে রয়েছে।আর্মি চেক করার পর এখানের সব গাড়ি একসাথে সাজেক যাবে।তিনটায় গাড়ি ছাড়লো।গাড়ি আস্তে উপরে দিকে যাচ্ছে। একসময় মনে হলো হাত বাড়িয়ে মেঘ ছোঁয়া যাবে।নিচের দিকে তাকালে গাছগাছালির সবুজ মেলা দেখা যায়।
সবাই একটা রিসোর্টে উঠেছে।পুরো রিসোর্টে বাশের বেড়া দেওয়া চারপাশে বারান্দা। সবাই ফ্রেস হতে নিজ নিজ রুমে চলে গিয়েছে।এখানে ফারিহা আর সাদাদ বাদে সবাই বিবাহিত।প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর জন্য একটা করে রুম। আর সাদাদ আর ফারিহার জন্য আলাদা আলাদা দুইটা।
সিরাত গোসল করে বের হতেই আহনাফ বললো,
“একা নিজে রুমের বাহিরে যেওনা। আমি বের হলে তারপর একসাথে যাবো। ”
সিরাত মাথা নাড়ালো।আহনাফ ওয়াশরুমে চলে গেলো।সিরাত সকাল থেকে খেয়াল করেছে আহনাফ সবার সাথেই একটু কম কথা বলে। অনেকটাই গম্ভীর সে।সিরাত এতো দিন ভাবতো শুধু তার সাথেই গম্ভীর কিন্তুু আজকে বুঝলো আহনাফ গম্ভীর প্রকৃতির।
সিরাত বারান্দায় গেলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে একটু হাত বাড়ালেই যেন মেঘ ছুতে পারবে সে।সূর্য অস্ত যাচ্ছে।পুরো আকাশ সূর্যাস্তের রূপ ধারণ করেছে।অসম্ভব সুন্দর সেই সুন্দর সেই দৃশ্য।নিচের দিকে তাকালে গভীর খাদ তার মধ্যে সুবজ গাছপালা দেখা যাচ্ছে।
চলবে!