#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১৫
#তানজিম_তানাজ
সিরাতের বিপরীতে বসে রয়েছে সাদাদ।কফি ওর্ডার দিয়ে বসে রয়েছে তারা।কলজের কাছেই একটা কফিশপে এসেছে তারা।সিরাতের অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ সাদাদ বললো,
“আহনাফের সাথে তুমি ভালো নেই তাই না!”
সিরাত অবাক হয়ে তাকালো সাদাদের দিকে।সাদাদের কথাটা মস্তিষ্কে পুনরাবৃত্তি করতেই রাগী চোখে তাকালো সাদাদের দিকে।শক্ত গলায় বললো,
“উনি আপনার বড়।এভাবে নাম ধরে কেনো বলচ্ছেন!”
সাদাদ কিছুটা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“আহনাফ যেমন ধরনের মানুষ তাকে নাম ধরে ডাকচ্ছি এইটাই বেশি।এর বেশি সম্মান দেওয়া যায়না।”
সিরাত বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।মনে চাচ্ছে এখনি এখান থেকে চলে যেতে।কিন্তুু ভদ্রতার জন্য বসে রইলো।সাদাদ নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“সেইদিন আমি দেখেছি ফারিহা কীভাবে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে ছিলো।আর তুমি কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলে!”
সিরাত লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো। কী বলবে এখন সে!কিছু বলারই মুখ নেই তার।চুপ করে বসে রইলো সে।সিরাতের হাত টেবিলের উপরই ছিলো।সাদাদ সিরাতের হাত ধরলো।সিরাত অসস্থি নিয়ে সাদাদের দিকে তাকালো।হাত ছাড়াতে নিতেই সাদাদ বললো,
“সিরাত আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
সিরাত চমকে তাকালো সাদাদের দিকে। ঘৃণিত কন্ঠে বললো,
“আমার হাত ছাড়ুন।”
সাদাদ সিরাতের হাত ছেড়ে দিলো।সাদাদ পুনরায় বললো,
“প্রথম দেখাই তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।তখন আমি জানতাম না তুমি বিবাহিত।পরে যখন নিশির কাছে জানতে পারি তুমি বিবাহিত তখন তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তুু সেদিনের ঘটনার পর বুঝতে পারলাম তুমি ভালো নেই এই সম্পর্কে তাই…”
সাদাদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সিরাত ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“তাই ভাবলাম এই সুযোগ কাজে লাগাই তাই তো!”
সাদাদ ব্যস্থ হয়ে বললো,”সিরাত তুমি ভুল বুঝচ্ছো আমাকে। শান্ত হয়ে শুনো আমার কথাটা।”
সিরাত উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের উপর টাকা রেখে বললো,
“আপনার কথা শুনার ধৈর্য বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই।কফিটা খেয়ে চলে যাবেন আর কোনোদিন আমার সামনে আসবেন না।”
বলেই সিরাত চলে আসলো।বের হওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“দেখে চলতে পারেননা!”
কথাটা বলে সামনে তাকাতেই সিরাত থমকে গেলো।আহনাফ তার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।আহনাফ বিরক্ত হয়ে বললো,
” তুমি এখন এখানে কী করচ্ছো!”
সিরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাদ পিছন থেকে এসে বললো,
“কফির জন্য ধন্যবাদ।আর আমি সত্যিই তোমাকে পচ্ছন্দ করি। ”
কথাটা বলে সাদাদ আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ হাত মুঠো করে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে সাদাদের দিকে।আহনাফ সাদাদের দিকে এগোতে নিলেই সাদাদ চলে যায় সেখান থেকে।আহনাফ রাগমিশ্রিত চোখে সিরাতের দিকে তাকালো।সিরাত কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ শক্ত কন্ঠে বললো,
“ও তোমাকে পচ্ছন্দ করে মানে!”
সিরাত নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“মানে মানে কেনো করচ্ছেন!বুঝেন নাই আপনি!তাহলে আমিই আবার বলচ্ছি উনি আমাকে পচ্ছন্দ করে।”
আহনাফ সিরাতের অনেক শক্ত করে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে গেলো।গাড়ির দরজার খুলে দাঁতে দাত চেপে বললো,
“গাড়িতে উঠো।”
সিরাত কিছু বলতে নিলেই আহনাফ বাঁধা দিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“দ্রুত গাড়িতে উঠো।”
সিরাত কেঁপে উঠলো। আর কথা বাড়ালো না।দ্রুত উঠে বসলো গাড়িতে।আহনাফ উঠে কাউকে কল করে বললো সে আসতে পারবেনা।পরে ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে নিবে।পুরো গাড়িতে কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।
নিশির ফোন থেকেই না বলেই সিরাতের নাম্বার নেয় সাদাদ।সেইদিন রাতে সিরাতকে সাদাদই ফোন দিয়েছিলো। নিশির কন্ঠ শুনে আর কোনো কথা বলেনি।পরদিন যখন শুনলো সিরাত বিবাহিত তারপর নিজের ফোন থেকে সিরাতের নাম্বার ডিলিট করে দেয় সাদাদ।
————
আহনাফ সিরাতের হাত টেনে নিয়ে রুমে ডুকলো।ড্রইং রুমে কেউ ছিলোনা তাই কোনো ঝামেলা হয়নি।হাত ছাড়তেই হাফ ছেড়ে বাচলো সিরাত।হাত জ্বলে যাচ্ছে তার।হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ তিক্ত কন্ঠে বললো,
“তোমাকে আমি পড়তে পাঠিয়েছিলাম।কারো সাথে কফি শপে বসে কথা বলতে না।”
সিরাত চুপ করেই রইলো।সিরাতের নিরবতা আহনাফকে আরো রাগীয়ে তুলচ্ছে।আহনাফ রাগ সংযোত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“ওই ছেলের সাথে এতো কীসের কথা তোমার! আর কোনোদিনও জানি ওই ছেলের সাথে তোমাকে না দেখি।”
সিরাত বিরক্ত নিয়ে বললো,
“আমি যার সাথেই কথা বলি তাতে আপনার কী!আমি ওনার সাথেই কথা বলবো। আরো বেশি করে বলবো।”
আহনাফ সিরাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো।সিরাত ব্যাথা চোখমুখ খিঁচে রইলো।আহনাফ চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
“সেই সুযোগই আমি তোমাকে দিবোনা।তুমি আমার সাথেই কলেজে যাবে আর আমার সাথেই ফিরে আসবে।”
সিরাত ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“আমি ওনার সাথে কথা বলি আর না বলি তাতে আপনার কী!আপনার সমস্যাটাই আমি বুঝচ্ছিনা।”
আহনাফ শক্ত কন্ঠে বললো,”আমার অনেক সমস্যা আছে তা তোমার না জানলেও চলবে।আর বড় কথা হলো ওই ছেলে তোমাকে পচ্ছন্দ করে এটা জানার পরও কেনো ওর সাথে কথা বলবে!”
সিরাত ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,”আমাকে পচ্ছন্দ করলে তাতে আপনার কী!আপনার তো তাতে কোনো সমস্যা থাকার কথা না।আর আমি যদি উনার সাথে কথা বলি তাহলে আপনার আরো সুবিধা হবে।এই কারণ দেখিয়ে আমাকে ছেড়ে দিবেন।”
আহনাফ অবাক হয়ে গেলো।মলিন কন্ঠে বললো,
“তোমার কী হয়েছে!কালকে থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কেনো বলচ্ছো!আমি কী তোমাকে এখন পর্যন্ত একবারও বলেছি তোমাকে ছেড়ে দিবো!”
সিরাত বিরক্তি নিয়ে বললো,”ভয় নেই আমি মা’কে আপনার বিরুদ্ধে কিছু বলবোনা।আমিই আপনাকে ছেড়ে দূরে সরে যাবো।তাতে মা আপনার কারণে কষ্ট পাবেনা আর আপনিও আপনার ভালোবাসা ফারিহা আপুকে বিয়ে করতে আর কোনো বাঁধা থাকবেনা।”
আহনাফ চমকে বললো,”এসব তুমি কী বলচ্ছো!আমি কখন বললাম আমি ফারিহাকে ভালোবাসি!”
সিরাত বিরক্ত নিয়ে আহনাফকে ধাক্কা দিলো।আচমকা ধাক্কা দেওয়াতে আপনাফ দূরে সরে আসলো।সিরাতের বাহু থেকেও হাত সরে গেলো।সিরাত বিরক্ত কন্ঠে বললো,
“সেদিন যখন আপনাকে জিঙ্গেস করলাম তখন তো আপনি একবারও না বলেন নাই।”
“হ্যাঁও তো বলনি।একমিনিট।”
আহনাফ একটু থেমে বললো,”কালকে তোমার ফারিহার সাথে কী কথা হয়েছে!”
“কোনো কথা হয়নি।”
বলে সিরাত চলে যেতে নিলে। আহনাফ সিরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি জানি কালকে তোমাকে নামিয়ে দাওয়ার পর তোমার ফারিহার সাথে কথা হয়েছে।আমি আজকে সকালে দারোয়ানকে জিঙ্গেস করেছিলাম।এখন বলো ফারিহা তোমাকে কী বলেছে!”
সিরাত চুপ করে রইলো।আহনাফ প্রশ্নাত্তুর কন্ঠে,
“ফারিহা তোমাকে এমন কথা বলেনি তো আমি ওকে ভালোবাসি।”
সিরাত একপলক আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মিথ্যা তো আর বলেনি।”
আহনাফ ভ্রুকুচকে বললো,”আসলেই তুমি গাধা।তোমার আমাকে দেখে কোন দিক থেকে মনে হয় আমি ফারিহাকে ভালোবাসি! ফারিহা বললো আর তুমি বোকার মতো বিশ্বাস করে দূরে চলে যাচ্ছো।”
সিরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,”আপনি ফারিহা আপুকে ভালোবাসেন না!”
আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,”না।আর আমিই ফারিহাকে বলেছিলাম আমি ওকে বিয়ে করতে পারবোনা তারপর তো ফারিহা ফুফিকে মানা করে দেয় আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।”
সিরাত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাহলে ফারিহা তাকে মিথ্যা বললো!কিন্তুু কেনো!আহনাফ সিরাতে কাছে এগিয়ে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“কালকে থেকে আমি বাদে বাহিরে কোথাও একমিনিটের জন্য থাকা তোমার বন্ধ।”
কথাটা বলেই আহনাফ ওয়াশরুমে চলে গেলো।নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজের উপর রাগ লাগচ্ছে সিরাতের।কিন্তুু ফারিহা এমন কেনো করলো তা বুঝতে পারলোনা সিরাত।
চলবে!