#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_২ ও ৩
#তানজিম_তানাজ
“কে কোথায় আছো!বাসায় ডাকাত পড়েছে।কেউ আমাকে বাঁচাও। ”
আহনাফ সিরাতের কথা শুনে বালিশ হাতে থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিরাতের কথায় আহনাফ পুরো ‘থ’।সিরাতের কথা বোধগম্য হচ্ছে না তার।রুমে ডাকাত দেখলো কোথায়!সিরাতের আহনাফের হাতের বালিশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ডাকাত আমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে নিয়েছিলো।কে কোথায় আছো! তাড়াতাড়ি আসো।”
আহনাফ বুঝতে পারলো সিরাত তাকেই ডাকাত বলছে।কথাটা বোধগম্য হতেই আহনাফের মুখে রাগ ফুটে উঠলো।চোয়াল শক্ত করে বললো,
“এই মেয়ে আমাকে তোমার ডাকাত মনে হয়!”
আহনাফের এমন কন্ঠে হালকা কেঁপে উঠলো সিরাত।হুঁশ ফিরলো তার।হাঠাৎ চোখ খুলে আহনাফকে এভাবে দেখে যা মাথায় আসছে তাই বলে ফেলেছে সিরাত।আহনাফের মুখের দিকে স্থিরদৃষ্টি নিক্ষেফ করলো।না একে দেখে তো ডাকাত মনে হয়না।ডাকাত দেখতে তো আরো ভয়ানক।ডাকাতদের বড় বড় গোঁফ থাকে কিন্তুু এর তো তেমন গোঁফ নেই।ডাকাত যদি না হয় তাহলে কে!পরিচিত তো না।এতো রাতে রুমে অপরিচিত কাউকে দেখে খুব অসস্থি লাগছে তার।সিরাত প্রশ্নাত্তুর কন্ঠে বললো,
“আপনি কে!এতো রাতে এই রুমে আসার সাহস কী করে হলো আপনার!”
আহনাফ ভ্রু কুচকে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার রুমে বসে আমাকেই জিঙ্গেস করছো রুমে আসার সাহস কী করে হলো আমার!”
সিরাত অবাক নয়নে তাকিয়ে বললো,
“এটা আপনার রুম!”
আহনাফ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“কোনো সন্দেহ আছে?”
সিরাত আনমনে বললো,
“হ্যাঁ”
আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে সিরাতের দিকে তাকালো।সিরাত আহনাফের তাকানো দেখে নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“আপনি আহনাফ!”
আহনাফ কিছু বললোনা।বালিশ হাতে নিয়ে সোফার কাছে গেলো।সোফার উপর বালিশ রেখে বেডের কাছে গিয়ে পাশের দেয়ালে লাইটের সুইচ ওফ করলো। বেডের পাশে সাইড টেবিলের উপর রাখা টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো।টেবিল ল্যাম্পের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুমের ভিতর।
সিরাত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আহনাফের কর্মকান্ড দেখছে।আহনাফ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।সিরাত স্থির হয়ে বসে রয়েছে। আহনাফ চোখের উপর হাত ভাজ করে রেখে বললো,
“শুধু নাম জেনেই একজনকে বিয়ে করলে!এখন আমার জায়গায় অন্য কেউ আমার পরিচয় দিলে তাকেই আমি বলে বিশ্বাস করতে!এখনো মানুষ এতোটা কীভাবে বোকা হয়! তোমারমতো বোকা আর বিরক্তির মানুষের জন্য সমাজে যতো ঝামেলা।”
আহনাফের কথা শুনে নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো।আহনাফ পুনরায় বলে উঠলো,
“আর হ্যাঁ।প্রতিদিন আমি সোফায় ঘুমাতে পারবোনা।সপ্তাহে চারদিন তুমি আর তিনদিন আমি সোফায় ঘুমাবো।আর আমার উপর নিজের কোনো অধিকার দেখাতে আসবেনা।আমি আমার মতো আর তুমি তোমার মতো থাকবে।
সিরাত কিছু বললোনা।নিরবে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে।ক্লান্ত থাকায় আহনাফ দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লো।সিরাত বসে বসে জীবনের সমীকরণ মিলাচ্ছে।তার জীবনে কতোকিছু হয়ে গেলো।প্রত্যেক মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে তারও ছিলো।নিজের একটা সংসার হবে।কিন্তুু এই সংসারে তাকে হয়তো সারাজীবন করুণার পাত্রী হয়ে থাকতে হবে।আর ভাবতে পারছেনা কিছু প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তার।বিছানায় গা মেলে দিলো সিরাত। চোখ বন্ধ করে রেখেছে।চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পড়লো সিরাত।
////////////////
ভোরের আলো ফুটেছে কিছুসময় হয়েছে।এখনো পুরোপুরি আলো ফুটেনি।চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ।সিরাতের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে আযানের শব্দে।উঠে বসলো।নামাজ পড়ার জন্য ওযু করতে চলে গেলো।ওযু করে এসে জায়নামাজ খুঁজতে লাগলো। রুমে চারদিকে চোখ বুলালো।দৃষ্টি স্থির হলো ওয়ারড্রবের উপর সেখানে জায়নামাজ ভাজ করে রাখা রয়েছে।সিরাত ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।জায়নামাজ হাতে নিয়ে নিচে বিছিয়ে নামাজ পড়া শুরু করলো।
নামাজ শেষ করে যথাস্থানে গুছিয়ে রেখেছে জায়নামাজ।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বারান্দায়। বারান্দায় অনেকজাতের ক্যাকটাসের গাছ রয়েছে।ক্যাকটাসের সৌন্দর্য অতুলনীয়।ক্যাকটাসের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বাড়ির কোণে ঠাই দেয়।কিন্তুু এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে স্পর্শ করলে এটি তার ভয়ানক রুপ দেখায়।শরীর অসংখ্য কাঁটায় ভর্তি।এর সৌন্দর্য শুধু দূর থেকে উপভোগ করা যায়।ক্যাকটাস (cactus) হচ্ছে caryophyllales বর্গের cactaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদের রয়েছে পানি সংরক্ষণের অসাধারণ ক্ষমতা। মরুভূমির প্রচুর উত্তাপ্ত আবহাওয়াতেও ক্যাকটাস পানি সংরক্ষরণ করতে পারে বলে ক্যাকটাস দুইশো বছরের মতো বেশি সময় বাচঁতে পারে।ক্যাকটাস ঘরের ভেতরে টবে লাগানো হলে দশ থেকে চল্লিশ বছর বেঁচে থাকতে পারে।বারান্দায় ভিন্ন টবে ভিন্ন ভিন্ন ছোট সাইজের ক্যাকটাস গাছ লাগানো রয়েছে।
সিরাত দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসে পরলো।তার দৃষ্টি বাহিরের দিকে স্থির।বাহিরে এক স্নিগ্ধ পরিবেশ স্নিগ্ধ বাতাস।সিরাত চোখ বন্ধ করে জোড়ে নিশ্বাস নিলো আবার ত্যাগ করলো।এই সময়ের বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।সিরাত দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।বাহিরের পরিবেশ দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।
হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গতেই সিরাত চারদিক পর্যবেক্ষণ করে বুঝলো সকাল হয়েছে অনেক সময় হয়ে গেছে।দ্রুত উঠে রুমে চলে আসলো।সোফায় আহনাফ নেই। রুমের কোথাও নেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিট।সিরাত রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো।তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো।সিরাত চোখমুখ খিচে উপরে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ কপালে সরু ভাজ ফেলে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।গম্ভীর কন্ঠে আহনাফ বললো,
“গাধা নাকি তুমি!দেখে চলতে পারোনা!”
সিরাত উঠতে উঠতে বিরক্ত নিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“আমি নাহয় দেখে চলতে পারিনা আর আপনি!নিজে অন্ধের মতো চলতে ছিলেন কেনো!”
আহনাফের ঠিকই কর্ণকুহর হয়েছে সিরাতের কথাগুলো।কপালে আরো সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে বললো,
“কী বললে!”
সিরাত আহনাফের দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
“কিছুনা।”
আহনাফ কিছু বলতে যাবে কিন্তুু ফোন আসতে কিছু বললোনা।ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে বারান্দায় চলে গেলো।সিরাত আহনাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।আহনাফের পরনে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। ফরমাল ড্রেস।আহনাফ দেখতে ফর্সা তার উপর গালে চাপ দাঁড়ি। দেখতে সুন্দর হলে কী হয়েছে!ব্যবহারে ভয়ানক।যত সময় দেখলাম শুধুই মেজাজ।ক্যাকটাসের মতো। ক্যাকটাস যেমন দেখতে সুন্দর তেমন ধরতে গেল কাটা ফুটে আর উনিও তেমন দেখতে সুন্দর কিন্তুু কথা বললে কাঁটার মতো বলে।মিঃ ক্যাকটাস।কথাগুলো আনমনে বলে বেড়িয়ে গেলো সিরাত।
সিরাতকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে নাদিয়া বেগম বললেন,
“আহনাফ কোথায়?”
সিরাত নাদিয়া বেগমের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“উনি ফোনে কথা বলছেন।আমি কোনো সাহায্য করবো!”
নাদিয়া বেগম টেবিলে নাস্তা গুছিয়ে রাখতে ছিলেন।সিরাত দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বললেন,
“তোমাকে কিছু করতে হবেনা।তুমি বসো।”
সিরাত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া বেগম রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে রোকেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“জুসের জগটা নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি…..”
সিরাত নাদিয়া বেগমকে থামিয়ে বললো,
“আমি নিয়ে আসছি।”
বলেই সিরাত রান্না ঘরে চলে গেলো।রান্না ঘরের যেতেই সিরাতের চোখ পড়লো রোকেয়া বেগমের দিকে। তিনি বিরক্তি নিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।সিরাত ইতস্তবোধ করলো।অন্যদিকে তাকাতে থাকলো।খেয়াল করলো রোকায়া বেগমের হাত পাশেই জুসের জগ রাখা আছে।সিরাত ধীর পায়ে নিচের দিকে তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো।জুসের জগ হাতে নিয়ে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসলো রান্না ঘর থেকে।রান্নাঘর থেকে বের হতেই হাফ ছেড়ে বাচলো।জুসের জগ এনে টেবিলের উপর রাখলো।টেবিলের এককোণে বসে আহনাফ ফোনে কিছু দেখছে আর নাস্তা করছে।নাদিয়া বেগম সিরাতকে গ্লাসে জুস ঢেলে আহনাফকে দিতে বললো।সিরাত একটা গ্লাসে জুস ঢেলে আহনাফের পাশে রাখতেই আহনাফ সিরাতের দিকে তাকালো।আহনাফের চোখে চোখ পড়তেই সিরাতে অস্বস্থি লাগলো। দ্রুত চোখ সিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
নাদিয়ে বেগম কিছু একটা বলতেই আহনাফ রাগে খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালো।আহনাফের এমন কান্ডে সিরাত কেঁপে উঠলো।
চলবে!
#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৩
#তানজিম_তানাজ
“তোমার কথা রাখতে বিয়ে করেছি।এখন আর কোনো কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব নয় মা।”
মিসেস নাদিয়া বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“বিয়ে যখন করলেই এখন সবার কাছে স্ত্রী’র পরিচয় দিতে সমস্যা কী!”
আহনাফ বিরক্ত নিয়ে একবার সিরাতের দিকে তাকালো।আহনাফের বিরক্তিমাখা নজর সিরাতের চোখ পড়েছে।আহনাফ পুনরায় মায়ের দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“সবাইকে অনুষ্ঠান করে জানালেই স্ত্রী’র পরিচয় পাওয়া যায়না।হয়তো সবাই জানবে এই মেয়েটা আমার স্ত্রী তবে আমি মন থেকে কোনোদিন এই মেয়েকে স্ত্রী বলে মানতে পারবোনা।মেয়েটা বিধবা আর বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে সমাজে লোকলজ্জা থেকে বাঁচানোর জন্য এই বিয়েটা করছি শুধুমাত্র তোমার কথা রাখতে।এর থেকে বেশি কিছু আমার থেকে আশা করা বেকার।”
কথাগুলো বলেই টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে আহনাফ চলে গেলো।আহনাফের কথাগুলো শুনে সিরাতের চোখ ছলছল করে উঠলো।মিসেস নাদিয়া বেগমের মুখে হতাশার ছোপ।আসলে কী তিনি ভুল করলেন সিরাতের সাথে আহনাফের বিয়ে দিয়ে!মেয়েটাকে ভালো রাখার আশায় কী শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিলো!ভেবেছিল আহনাফ সিরাতকে বুঝতে পারবে। সিরাতকে সঠিক সম্মান দিতে পারবে। কিন্তুু ছেলেটা যে সিরাতকে করুনার পাত্রী বানিয়ে দিলো।নাদিয়া বেগম কোন মুখে এখন সিরাতের সাথে কথা বলবেন।তিনি অনুতাপের চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিতেই সিরাত বলে উঠলো,
“উনি যখন চাননা তখন কোনো অনুষ্ঠান করে আমাকে উনার স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত করা লাগবেনা।উনি আমাকে বিয়ে করেছেন এটাই অনেক আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই আমার।”
কথাগুলো বলে স্নান হাসি দিলো সিরাত।মন তার অসহ্য যন্ত্রণা দুমরে মুচরে যাচ্ছে তবুও মুখে স্নান হাসি বজায় রেখে বললো,
“আমি উপরে রুমে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে আর এক মূর্হতও দাঁড়ালো না সিরাত দ্রুত উপরে চলে গেলো।রোকেয়া বেগম চেয়ার টেনে বসে বললেন,
“আমাদের আহনাফের জীবনটা ধ্বংস করে দিলে তুমি।নিজের মত ছেলের উপর চাপিয়ে দিলে।তাও এমন একটা অপয়া মেয়ের জন্য!”
নাদিয়া বেগম গম্ভীর চোখে রোকেয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সিরাতের সাথে যা কিছু হয়েছে তাতে সিরাতের কোনো দোষ নেই। শুধু শুধু সিরাতকে দোষারোপ করা বন্ধ করো।”
কথাটা বলেই নাদিয়া বেগম উঠে চলে গেলেন।তারও আর খাওয়া হলোনা।
///////////////////////
সিরাত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে।চোখ দিয়ে তার অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরছে।উনি ঠিকই বলছেন।বিধবা মানেই এই সমাজে তাদের কোনো মূল্য নেই।বেঁচে থাকা তাদের জন্য তীক্ততা। তার উপর আবার ভরা আসরে বিয়ে ভেঙ্গেছে যার কারণ আমি বিধবা। আমার আগে একটা বিয়ে ছিলো।বিয়ে পরদিনই আমার স্বামী মারা যায়।যার জন্য সমাজ আমাকে দায়ী করে।সমাজের সবাই বলে আমি অপয়া যার কারণে ভাগ্য এমন করছে আমার সাথে।উনি আমাকে বিয়ে না করলে হয়তো আমাকে সমাজের কথায় মরে যেতে হতো।উনি অনেক করছেন আমার জন্য। আর কিছুর প্রয়োজন নেই আমার।তেমন ভাগ্য নেই আমার যে স্বামীর কাছে পূর্ণ সন্মান পাবো।আমাকে বিয়ে করে সমাজে আমাকে সন্মানের সাথে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছেন এটাই অনেক।উনি না হয় মন থেকে স্ত্রীর সন্মান নাই বা দিতে পারলো।এতে আমার কোনো দুঃখ নেই।কথাগুলো বলে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো সিরাত।উঠে দাঁড়ালো। ভাগ্য তার সাথে যতোই নিষ্ঠুরতা করুক না কেনো।সে আর কষ্ট পাবেনা।নিজেকে ধাতস্ত করে বেডের দিকে তাকালো।বেডে শুকনো ফুলের পাপড়ি পরে রয়েছে। সিরাত বেডের দিকে এগিয়ে গেলো।পাপড়ি গুলো কুড়িয়ে নিজের আঁচলে রাখলো তারপর সেগুলো বারান্দায় রেখে দিয়ে আসলো।তারপর রুমে এসে বেডে গুছিয়ে রাখলো।রুম পুরো গোছানো।রুম দেখে বুঝা যাচ্ছে আহনাফ খুব পরিপাটি।সিরাত লাগেজ থেকে একটা শাড়ী বের করে গোসলে চলে গেলো।
//////////////////////////////
নিজের কেবিনে বসে রিপোর্ট দেখতে ছিলো আহনাফ।পরনে সাদা এপ্রোন। খুব মনোযোগ দিয়ে এক রোগীর রিপোর্ট দেখতে আছে আহনাফ।তখন তার কেবিনে কেউ প্রবেশ করলো।চেয়ার টেনে আহনাফের সামনে বসে বললো,
“দেশের বিখ্যাত হার্ট সার্জন মিঃ আহনাফ চৌধুরী। যে কীনা অল্প বয়সে বেস্ট হার্ট সার্জেনদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এতো নামকরা ব্যক্তির বিয়ের খবর কেউ জানেনা!গোপনে বিয়ে করছে!”
আহনাফ চোখতুলে সামনে তাকালো।তার সামনে এক হাস্যজ্বল মেয়ে বসে রয়েছে। যার মুখে লেগে রয়েছে হাসির রেখা।আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“তুই এখানে!”
মেয়েটি জবাবে বললো,
“কেন আমাকে দেখে খুশি…… ”
মেয়েটিকে থামিয়ে আহনাফ বললো,
“ফালতু কথা কম বলে যা জিঙ্গেস করছি তাই বল।”
মেয়েটি হাতাশা ভঙ্গিতে বললো,
“আজকে আসছি।আর এই হসপিটালে জয়ন করছি।”
আহনাফ চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।হাতে রোগীর রিপোর্ট নিয়ে বললো,
“আমাকে যেতে হবে রোগী দেখতে।বাসায় কী একসাথে যাবি?”
মেয়েটি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হুমম”
আহনাফ মেয়েটিকে নিজের কেবিনে অপেক্ষা করতে বলে চলে গেলো।
///////////////////////////
ঘড়িতে তিনটার কাটা ছুইছুই।নাদিয়া বেগম ক্লান্ত দেহ সোফায় হেলিয়ে দিয়ে সিরাতকে ডাক দিলো।নাদিয়া বেগমের কন্ঠ শুনে সিরাত দ্রুত নিচে চলে আসলো।নাদিয়া বেগম অনেক আগে একটা কাজের জন্য বের হয়েছিলেন।এই দুপুরের গরমে তিনি অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছেন।বাহিরে রোদের প্রখর অনেক।উনি কোথায় গিয়েছিলেন তা বাড়ির কাউকে জানানি।সিরাত এক গ্লাস পানি এনে দিলে তা একমূর্হত দেরী না করে দ্রুত খেলেন তিনি।খালি গ্লাসটা সিরাতের হাতে দিয়ে বললেন,
“বুঝলে রাস্তায় প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম।এই গরমে অনেক সময় জ্যামে অাটকে পরে থাকতে হয়েছে তাই আসতে দেরী হয়েছে।দুপুরে খেয়েছো!”
সিরাত না সূচক মাথা নাড়ালো।নাদিয়া বেগম ব্যাস্ত হয়ে বললেন,
“এখনো খাওনি কেনো!সকালেও তো কিছু খাওনি।”
সিরাত নাদিয়া বেগমে ব্যাস্ত হতে দেখে শান্ত কন্ঠে বললো,
“আসলে একা একা খেতে ইচ্ছে করছিলোনা তাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম।আর আপনিও তো সকালে কিছু খাননি।”
নাদিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সকাল যে কান্ড হলো তারপর আর খাবার গলা থেকে কীভাবে নামে!সিরাতকে খাওয়ার জন্য বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।সিরাতের সাথে কথা বলতে তার অনেক অনুতাপ বোধ কাজ করছে।
এমন সময় কারো কন্ঠ শুনে নাদিয়া বেগম আর সিরাত পিছনে ফিরে তাকালো।দরজার সামনে এক বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে বললো,
“একগ্লাস ঠান্ডা পানি পাওয়া যাবে মা!তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অনেক।”
নাদিয়া বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“অবশ্যই রহিম চাচা।আপনি ভিতরে আসুন।সিরাত মা একটু ওনা একগ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দেও।”
লোকটি ভিতরে এসে নাদিয়া বেগমের সামনে দাঁড়ালো।সিরাত উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলো।পানির গ্লাস লোকটির হাতে দিতেই তিনি দ্রুত পানি পান করলে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক তৃষ্ণার্ত তিনি।পানি পান করে বললেন,
“এতো সময় পর শান্তি পেলাম।তাহলে মা আমি বাড়ি গেলাম।দুপুরের খাবারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।”
লোকটি তাদের গাড়ির ড্রাইভার।নাদিয়া বেগম বাধা দিয়ে বললেন,
“আজকে এখানে খেয়ে যান চাচা।”
লোকটি অসম্মতি জানিয়ে বললো,
“না মা আগে একটা সিগারেট খাওয়া লাগবে তারপর বাসায় যেয়ে শান্তিমতো খাবো।”
নাদিয়া বেগম বিরক্তি নিয়ে বললেন,
” বয়সতো অনেক হলো চাচা এখনও কী সিগারেট খান!সিগারেট মানুষের অনেক ক্ষতি করে।”
লোকটি হাসিমুখে বললেন,
“সবাই তো তাই বলে মা।কিন্তুু সিগারেট ছাড়তে পারিনা।সিগারেট ছাড়া যায়না।”
সিরাত বলে উঠলো,
“সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া যায় শুধু মনোবল লাগে।আমারা যদি ছাড়াতে পারবোনা তাহলে কখনো সেই জিনিসটা ছাড়া সম্ভবনা।আর আমরা যদি জানি সিগারেট খেলে কী কী ক্ষতি হয় তাহলে খুব সহজে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া যায়।”
রহিম চাচা হাসিমুখে বললেন,
” সিগারেট কোনো ক্ষতি করেনা মা।আমার তো তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।”
সিরাত অমত পোষন করে বললো,
“হয়েছে আপনি বুঝতে পারছেননা।”
রাহিম চাচা অবাক হয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে সিরাতের কথা বুঝতে পারলনা।সে তো কোনো ক্ষতি দেখতে পারছেনা। সিরাত বুঝতে পারলো রহিম চাচা তার কথা কিছু বুঝতে পারেনি।তাই সিরাত বললো,
“আমাদের নিশ্বাসের সাথে অক্সিজেন ফুসফুসে যায়।ফুসফুসে রয়েছে কোটি কোটি বায়ুথলি।এই বায়ুথলি দিয়ে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে।ধূমপান ফুসফুসে বায়ুথলিকে ধ্বংস করে।একবার বায়ুথলি ধ্বংস হলে নতুন করে তৈরী হয়না।কোটি কোটি বায়ুথলি থাকায় আমারা সহজে বুঝতে পারিনা।কিন্তুু নিরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে।এর থেকে শুরু হয় শ্বাস কষ্টের রোগ।এই শ্বাস কষ্টের রোগ শুরু হলে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই।ধুমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সারও হতে পারে। শুধু ফুসফুসে না আরোও অনেক জায়গায় হতে পারে শুধু ধুমপানের কারণে।ধুমপানের কারণে হ্যার্টঅ্যাটাকও হতে পারে।প্রতি দুইজন ধুমপান খাওয়া ব্যাক্তির মধ্যে একজন মৃত্যু বরন করে ধুমপানের কারণে।একজন সিগারেগ খাওয়া মানুষ সাধারণ মানুষের থেকে আট থেকে নয় বছর কম বাঁচে। শেষ সিগারেট খাওয়ার বিশ মিনিটের মধ্যে হার্টবিট আর ব্লাডপ্রেশার স্বাভাবিক হতে শুরু করে।আট ঘন্টার মধ্যে অক্সিজেনের পরিমান স্বাভাবিক হতে শুরু করে আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে শরীর থেকে সব কার্বন মনোক্সাইড দূর হয়ে যায় নাকের ঘ্রান আর মুখের স্বাধ ফিরে আসে।৭২ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসতন্ত্র প্রসারিত হওয়া শুরু করে যার ফলে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়ে যায়।একবছর পর হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই নেমে আসে।শুধুমাত্র মনোবল আর ক্ষতিকারক দিক গুলো মাথায় রাখলে খুব সহজে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া যায়।”
একশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো সিরাত।রহিম চাচা সব বুঝতে না পারলেও অনেকটাই বুঝছে।তিনি হাসিমুখে বললেন,
“এখন থেকে তোমার কথা মাথায় রাখব মা।এগুলো মনে থাকলে আমার আর সিগারেট খেতে মন চাইবেনা।জেনেশুনে নিজের ক্ষতিকরা বোকামি।”
তখনি কেউ বলে উঠলো,
“বাহ্ তুমি তো দেখি অনেক কিছু জানো।”
সিরাত দরজার দিকে তাকালো।দরজার সামনে আহনাফ আর একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আহনাফ মুগ্ধনয়নে সিরাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।এতোসময় মনোযোগ দিয়ে সিরাতের কথাগুলো শুনেছে সে।
মেয়েটি এসে সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো।হঠাৎ এমন কান্ডে সিরাত থমকে গেলো।মেয়েটি সিরাতকে ছাড়তেই নাদিয়া বেগম হাসিমুখে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো।সিরাত অবাকপানে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে।কে মেয়েটি!
চলবে!