#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৫
#তানজিম_তানাজ
হঠাৎ হেচকা টানে কেউ সরিয়ে নিলো সিরাতকে।গাড়িটা সিরাতের পাশ থেকে চলে গেলো দ্রুত গতিতে। সিরাতের অনেক কাছ থেকেই অতিক্রম করেছে গাড়িটি। আর একটু হলেই সিরাতকে আঘাত করতো।একটুর জন্য বেঁচে গেলো।জোরে টান দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই এক শক্ত পুরুষালি বলষ্ঠি হাত তার বাহু ধরে ভারসাম্য বজায় রাখলো।সিরাত চোখ মেলে তাকতেই দ্রুতগতিতে ছিটকে সরে আসলো।লোকটি আসস্ত করতে নরম কন্ঠে বললো,
“রিলেক্স।ভয় নেই।আমি শুধু আপনাকে বাঁচানোর জন্য ধরেছিলাম।আপনি ঠিক আছেন তো!”
সিরাত উপরে নিচে মাথা নাড়ালো।চোখ মুখে তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।হাঠাৎ আচমকা এমন কান্ডে ভয় পেয়েছে খানিকটা।ভেবেছিলো আজকেই তার শেষদিন।গাড়িটা যে স্পিডে আসতে ছিলো তাতে তার বাঁচার সম্ভবনা ছিলোনা বলেই চলে।ভাগ্যক্রমে লোকটি তাকে বাঁচিয়ে নিলো।সিরাত কৃতজ্ঞতা কন্ঠে বললো,
“ধন্যবাদ।”
“ইট’স ওকে।আমার নাম সাদাদ।আপনি!”
সিরাত ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলো।পরে কিছু একটা মনে করে বললো,
“সিরাত।”
সাদাদ হাস্যজ্বল মুখে বললো,”নাইস নেইম।তা আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু নিয়ে চিন্তিত।আনমনে যেভাবে হাঁটতে ছিলেন তাই বললাম আর কী।”
সিরাত কথা এড়িয়ে বললো,”আমি আসি তাহলে।”
সিরাতে এক পা বাড়াতেই সাদাদ বাঁধা দিয়ে বললো,
“চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। ”
সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,”প্রয়োজন নেই।আমি একাই যেতেই পারবো।”
সাদাদা আপত্তি জানিয়ে বললো,”আপনি যেমন আনমনে হাঁটতে ছিলেন পুনরায়ও আবার আনমনে হয়ে গেলে কোনো বিপত্তি হতে পারে।আর বড় কথা হলো সামনের রাস্তা নির্জন তাই আপনার একা একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা।”
সিরাত পুনরায় বাঁধা দিতে নিলেই সাদাদ হাত উচু করে সিরাতকে থামিয়ে বললো,”আমি আপনার কোনো কথা শুনছিনা।আমি আপনাকে একা যেতে দিতে পারবোনা। তাইলে বিবেকবোধ তাড়া করবে সারাক্ষণ। ”
সিরাত অাপত্তি থাকা শর্তেও আর বাঁধা দিলোনা রাজি হয়ে গেলো।আসলেই একা একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা আর লোকটাকে দেখে ভালো মানুষই মনে হচ্ছে। অনন্ত বিবেকহীন না।কথাটা সিরাত আহনাফকে উদ্দেশ্য করে ভাবলো।সিরাতের ভাবনার মাঝেই সাদাদ তার গাড়ি নিয়ে হাজির হলো।সাদাদ গাড়িতে উঠতে বললে সিরাত অসস্থি নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
/////////////////
আহনাফের যে ওটি করার কথা ছিল তা রোগীর কিছু সমস্যার কারণে করা হয়নি।কালকে অপারেশন হবে।তাই আহনাফ বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে সোফায় গা হেলিয়ে বসতেই নাদিয়া বেগম হতদন্ড করে এসে বললো,
“তুই একা যে!সিরাত মা কই!”
আহনাফ সোফায় মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো।নাদিয়া বেগমের এমন কথা শুনে ধপ করে চোখ মেলে তাকালো।মাথা সোজা করে বললো,
“কই মানে!বাসায় আসেনি!”
নাদিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন,”তোদের তো একসাথে আসার কথা! তাহলে ও আগে আসবে কীভাবে।”
আহনাফ উঠে দাঁড়ালো।কিছুনা বলে দ্রুত বেরিয়ে গেলো।নাদিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে রইলো।আহনাফ গাড়ি নিয়ে যেখানে সিরাতকে রেখে এসেছিলো সেখানে বেরিয়ে গেলো।
////////////////////////////
ধীর গতিতে গাড়ি চলছে।সিরাত বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সাদাদ টুকটাক কথা বলছে।সিরাত শুধু কথায় সায় মিলাচ্ছে নিজে কিছু বলেনি।হঠাৎ সিরাত গাড়ি থামাতে বলতেই সাদাদ গাড়ি থামিয়ে বললো,
“কী হলো!এখানে থামতে বললেন কেনো!”
সিরাত গাড়ি থেকে নামার জন্য উদ্ধত হয়ে বললো,
“বাড়ির সামনে এসে গেছি।”
সাদাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিরাত গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।সিরাত গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,
“ধন্যবাদ।”
সাদাদ মুচকি হসে বললো,”শুধু ধন্যবাদে হবেনা। পরের বার দেখা হলে এক কাপ কফি খাওয়ালেই হবে।”
সিরাত মাথা নাড়িয়ে চলে আসলো।সাদাদ বাড়িটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে আসলো।
সিরাত বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই নাদিয়া বেগম সোফা থেকে উঠে সিরাতের কাছে এগিয়ে গেলো।চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“কোথায় ছিলি এতোসময়!আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা।তোদের তো একসাথে আসার কথা ছিলো।আহনাফ আগে আসলো আবার বেরিয়ে গেলো তুই এখন একা আসলি।”
সিরাত আসস্ত করে বললো,”আসলে ওনার জরুরি কাজ ছিলো তাই উনি আগে এসেছিলেন আর আমি হস্পিটালে ছিলাম আমিই ওনাকে বলেছিলাম চলে যেতে আমি একা যেতে পারবো।”
সিরাত নাদিয়া বেগমের সাথে মিথ্যা কথা বললো।যদি সত্যি কথা বলতো তাহলে নাদিয়া বেগম অনেক কষ্ট পেতো।এমনিতেই সকালে আহনাফের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছেন তিনি তাই সিরাত মিথ্যা বললো।নাদিয়া বেগম সিরাতের চাচার ব্যাপারে জিঙ্গেস করলো।সিরাত নাদিয়া বেগমের সাথে কিছুসময় কথা বলে উপরে চলে আসলো।
///////////////////////
সিরাত রুমে এসে সোজা গোসলে চলে গেছিলো।অনেকসময় নিয়ে গোসল করে বেরিয়ে আহনাফকে বেডে বসে থাকতে দেখে ক্ষানিকটা চমকে উঠলো। আহনাফকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।সিরাত সেদিকে বেশি খেয়াল না দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আচমকা আহনাফ উঠে এসে সিরাতের বাহু শক্ত করে ধরে দেয়ালে ঠেকিয়ে বললো,
“আমি তোমাকে নামিয়ে দিছিলাম কত সময় আগে!বাড়ি আসতে এত দেরী হলো কেনো!”
আহনাফ এমনভাবে ধরেছে যে সিরাত প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছে।তার উপর আহনাফের এমন কথা শুনে সিরাতের অনেক রাগ লাগলো। কিন্তুু চুপ করে থেকে নিজের রাগকে সংযোত করতে লাগলো।আহনাফ সিরাতকে চুপ থাকতে দেখে পুনরায় অগ্নি চোখে বললো,
“কী হলো! কথা বলছোনা কেনো!এতসময় রাতে একা রাস্তায় থাকার মানে কী?তোমাকে আমি যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলাম তোমার আরো আগে বাসায় আসার কথা ছিল।এতো রাতে রাস্তায় থাকার মানে কী! যদি কিছু হয়ে যেত!
এবার আর সিরাত চুপ থাকতে পারলোনা।ক্ষোভে বললো,
“একা একটা মেয়েকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার সময় আপনার এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।কিছু হতে পারতো!কোনো বিপদ হতে পারতো! নামিয়ে দেওয়ার সময় যখন আপনার বিবেকে বাঁধেনি তাহলে এখনও আমি দেরী করছি তাতে আমার কিছু হতে পারতো এইভেবে আপনার সময় নষ্ট করার দরকার নেই।”
আহনাফের মুখশ্রীতে এতো সময় ফুটে থাকা রাগ নিমেষে মিহিয়ে গেলো।হাতের বাধান আগলা হতেই সিরাত আহনাফকে ধাক্কা দিয়ে সরে আসলো।মাথার টাওয়াল খুলে চেয়ারে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।আহনাফ আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকলো।
রাত বারোটা বাজে।সিরাত এতো সময় রুমে আসেনি।খাবার টেবিলে আহনাফের দিকে একবারও তাকায়নি।আহনাফের সামনেই পরতে ইচ্ছা করছে না তার।অনিচ্ছা শর্তেও ধীর পায়ে রুমে ঢুকলো। রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো আহনাফ কোথাও নেই।বারান্দার কাছে যেতেই বুঝতে পারলো আহনাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে।সিরাত দ্রুত বেড থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।গায়ে একটা কাঁথাও মুড়িয়ে নিলো।ক্ষানিক সময় পর আহনাফ রুমে আসলো।সোফার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার সিরাতের সাথে কিছু কথা ছিলো।অনেক সময় অপেক্ষা করেছিলো সিরাতের জন্য কিন্তুু সিরাত এতো সময় রুমে আসেনি।একটা কল আসায় বারান্দায় গিয়েছিলো এখন রুমে এসে দেখে সিরাত ঘুমিয়ে গিয়েছে।কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা খেয়াল হতেই আহনাফ বিরক্ত নিয়ে বললো,”আসলেই বিরক্ততিকর।এই গরমে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে।”
কথা আহনাফ জোরে বলায় সিরাতও শুনতে পেলো।সে ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে রয়েছে।মনে মনে বললো,”আর আপনি তো আসলে মিঃক্যাকটাস। যার ব্যবহার কাঁটার মতো।”
আহনাফ রুমে লাইট বন্ধ করে বেডে শুয়ে পড়লো।জানালা দিয়ে রুমে মৃদু আলো এসে পড়ছে।আকাশে জ্বলছে অসংখ্য তারা সাথে চাঁদের আলোয় আলোকিত বাহিরে পরিবেশ।যার খানিকটা ছোঁয়া ভিতরের পরিবেশেও পাচ্ছে।রুম জুড়ে চাঁদের আলোয় আলোকিত ভিতরের পরিবেশ।
//////////////
সকাল হয়েছে অনেক আগেই সিরাত আড়মোড়া ভেঙে বসে রইলো। মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে।ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকাতেই আহনাফকে দেখে চমকে উঠলো।দ্রুত চোখ কচলে আবার সামনে তাকালো।আহনাফ তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতে একটা ব্যাগ যা সিরাতের দিকে এগিয়ে ধরে রেখেছে।আহনাফ ইশারায় সিরাতকে ব্যাগটা নিতে বললো।সিরাত বিষ্ময় নিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলো।ব্যাগ খুলে দেখলো ভিতরে একটা বক্স রয়েছে। বক্স হতে নিতেই পুনরায় বিষ্ময় চোখে আহনাফের দিকে তাকালো।
চলবে!