চিত্তসন্ধি পর্ব ২৪ লেখা: #Azyah

0
5

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৪
লেখা: #Azyah

আদরকে আবারো চঞ্চলতায় ভরপুর দেখে উৎফুল্ল তার বন্ধুমহল।আজ রুবি ফিরে এসেছে।গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল।আদর এর মন ভালো থাকলেও রুবিকে ঠিক দেখাচ্ছে তার বিপরীত।রুবি আদরের চেয়ে বেশি চঞ্চল।তবে আজ মুখটা একদম ছোট।শান্ত,রোহিত আর আদরের হাসি দেখে জোরপূর্বক হাসছে।তবে সে জানে না তার বন্ধুদের যুহরির চোখ।কোনটা তার প্রানবন্ত হাসি আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত।যে মেয়ে কিনা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। যাকেতাকে থাপ্পড় মেরে বসে সে আজ মুচকি হাসছে।এটা কোনো হেলাফেলার বিষয় না।

শান্তা তার সবসময়ের কাজ চশমা ঠিক করে বললো,

“তোর কি হয়েছে রুবি?”

“কই?”

“হাসার সময় থাপ্রাথাপ্রি করছিস না যে?” রোহিত খোচা দিয়ে বললো রুবিকে কথাটা।

“গ্রামে গিয়ে মনে হয় ঘোলা পানি খেয়ে এসেছে।নয়তো তেতুল গাছের ভূতে ধরেছে।” আদরও হাসতে হাসতে বলছে।

সবাই হাসছে তার মধ্যে রুবি এমন একটা কথা বলে বসলো যে হাসি সবার উড়ে গেছে।বিশেষ করে রোহিতের।

“আব্বা বিয়ে ঠিক করতেছে”

আদর বললো, “তোর?”

মলিন মুখে উত্তর দিলো রুবি, “হ্যা”

“তুই কি বলেছিস?”

“আমি কি বলবো?”

রোহিত প্যান্ট ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ালো।রেগে রক্তচক্ষু।বিয়ে ঠিক করছে শুনার জন্য এত সাধনা করলো সে?

“ফাজলামো করিস!বিয়ে ঠিক করেছে।আর তুই হেবলার মতন বসে ছিলি?”

“আমার কিছু করার আছে?”

“অবশ্যই আছে।আমাকে বিয়ে করবি তুই।আমি ভালোবাসি তোকে।কোন ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করছে?নাম বল। ব্যাটারে তুলে এনে বিয়ের শখ মিটিয়ে দিবো”

রুবি হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিচ্ছে নাকি থ্রেট!কিছু সময় পর রুবি উঠে দাড়ালো।নাক ফুঁসতে ফুঁসতে কষে চড় মেরেছে রোহিতের গালে।আচমকা থাপ্পড় দিয়ে বিমুঢ় রোহিত!ঠিক এই কারণেই এতদিন নিজের মধ্যে সব চেপে রাখা।

রোহিতের কলার টেনে রুবি বলল,

“এই কথাটা আগে বলতে পারিস নাই! শালা দুর্বল ছেলেলোক।এতদিন ওয়েট করিয়েছিস আমাকে।এখন বিয়ের কথা শুনে তোমার শরীরে তেজ এসেছে?তোরে আমি বিয়ে করবো না।তোরে আমি ভালোও বাসবো না।তুই স্বীকার করতে ২ বছর লাগিয়েছিস।আরো দুই বছর পিছনে ঘুরবি।আমি ইচ্ছে করে পাত্তা দিবো না তোকে।এটা তোর শাস্তি।”

শান্তা তাদের মধ্যে বলে উঠলো, “আমার আর আদরের তরফ থেকে আরো দুইটা দে।তোরে না পেয়ে আমাদের কান ঝালাপালা করেছে”

ঠাস ঠাস করে আরো দুটো চড় পড়লো রোহিতের গালে।এবার সে দুইগালে হাত চেপেছে।ভালোবাসা প্রকাশ করাতে চড় খেলো?আবার বলছে দুই বছর পিছে ঘুরতে।তাদের বিয়ে হলে তারপরতো সে রোহিতকে কুচি কুচি করে ভাসিয়ে দিবে বানের জলে।কি জবাব দিবে নিজের ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের? প্রেমের প্রথমদিনই মার হাতে থাপ্পড় খেয়ে গাল লাল করেছে?

___

“দেড় মাস কেটে গেছে।আপনার মধ্যে আমি কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না” রাশভারী কণ্ঠে মেহতাব বললো।

“এতে আমার দোষ কি?কাজ করেছি এতদিন।ওই কারণেই ওজনটা কমে গেছে!”

মেহতাব আদরের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বলে,

“সবসময় উত্তর রেডি থাকে মুখে?কাজ আপনি একাই করেন?আজকাল ৬০-৭০ বছরের মানুষও জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে।”

“আমি খাবার ঠিকঠাক মতই খাচ্ছি।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহতাব আবারো বলে উঠে,

“এখানে আসেন। পালস চেক করবো”

নিজের চেয়ার ছেড়ে মেহতাব এর পাশের চেয়ারে বসলো আদর।তাকে সামনে বসিয়ে ফাইল চেক করা হচ্ছে। নীল রঙের ফাইলটা বন্ধ করে নিজেও চেয়ার টেনে এগিয়ে বসলো।

“বাম হাত দেন”

পালস রেট চেক করার জন্য হাত এগিয়ে দিয়েছে ঠিকই।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হাতে কম্পন ধরেছে। মেহতাব এর তিন আঙ্গুলের স্পর্শ পেতেই এই অবস্থা।লোমকূপ দাড়িয়ে গেছে।কাপতে থাকা হাতে পালস চেক করতে সমস্যা হলো মেহতাব এর।

“কি সমস্যা? কাপছেন কেনো আপনি?”

“কই?”

মেহতাব উত্তর দেয়নি।তার কাছে আদরের লজ্জা, সংকোচ স্পষ্ট।আচ্ছা তাকে আরেকটু বিরক্ত করলে কেমন হয়?নারীর লজ্জা দেখতে প্রত্যেকটা পুরুষেরই হয়তো ভালো লাগে।যদি সে হয় ধীরেধীরে আফিমের ন্যায় রন্ধে রন্ধে মিশে যাওয়া কোনো নারী। আরো লজ্জা দিতে ইচ্ছে করে।তার লজ্জামাখা মুখ দেখে চোখের ব্যাকুল তৃষ্ণা মেটে।তার সমস্ত অসস্তি,লজ্জা অনেককিছুর স্বীকারোক্তি দেয়।চেয়ার টেনে আরো একটু কাছাকাছি এনে পূনরায় পালস রেট চেক করছে। স্টেটেস্কোপ প্রথমদিনের মতন হাতে ধরিয়ে দিলো। বাধ্য মেয়েরমতন আদরও ঠিক বুকের বাম পাশটায় চেপে ধরেছে।একটা যান্ত্রিক বস্তুর মাধ্যমে সামনে বসা মানুষের হৃদ ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। এতবছরে কত মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন শুনেছে।কিছুই অনুভব হয়নি।আজ রক্তকণিকারা তাদের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।আদরের হৃদপিণ্ডের প্রত্যেকটা শব্দ কান ভেদ করে তার হৃদয়ে গিয়ে লাগছে।

মেহতাব বললো,

“আপনার হার্টবিট অনেক ফাস্ট চলছে আদর”

বাক্যটি কান অব্দি পৌঁছাতে হৃদয় তার স্পন্দন আরো দ্বিগুণ করলো।সাথেসাথে স্টেটস্কোপ নামিয়ে ফেলেছে। মেহতাব মুখে যত স্বাভাবিক কথা কথাই বলুক না কেন আদরের কাছে সব করার অর্থ লাগে ভিন্ন।তার সামনে থাকলেই এই হৃদপিণ্ডটা অযথা লাফালাফি করে।হাত পা অটোম্যাটিক কাপা শুধু করে।নিজের হৃদপিণ্ড,হাত,পা পুরোটা নিজের উপরই আদর এখন বিরক্ত।মনে মনে নিজেকেই আচ্ছামত স্বাসায়।তুই আমার হাত পা,আমার হৃদপিণ্ড তুই আমার অনুমতিবিহীন কেনো কাজ করবি?

ভাবুক আদরকে দেখে নিচ্ছে মেহতাব।হুট করে মনে হলো তার ভাবা শেষ।মাথা ঝুঁকিয়ে আদরের দিকে ছোটো ছোটো চোখে চেয়ে বলে উঠে,

“আপনার নাকটাও লাল হয়ে গেছে মিস আদর।সমস্যা কি?”

ঝড়ের বেগে পিছু হটে গেছে আদর।যাওয়ার আগে মেহতাব এর পায়ে ভুলবশত পাড়াও লাগলো। হনহন করে নিজের ডেস্কে গিয়ে ধপাস করে বসেছে।নাক ফুঁসছে। চেকআপ এর নামে নাটক করা হচ্ছে তার সাথে।লজ্জা দেওয়া হচ্ছে?তার এই অদ্ভুত কন্ঠস্বর আদরের মস্তিস্ককে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয় সেটা জানে।গোলমাল লেগে যায়।মাথার তার একটার সাথে আরেকটা বাড়ি খায়।লাগবে না তার এমন ডাক্টার! হুটহাট কাছে চলে আসে।জড়িয়ে ধরে,হাত টেনে ধরে।আসলেই ক্যারেকটারে ঝামেলা আছে।

“আমার পায়ে পাড়া দিয়েছেন তার কি খেয়াল আছে?তার উপর আমাকে মনে মনে গালি দিচ্ছেন।পরপর দুটো বেয়াদবি”

আদর আর মেহতাবের কোনো কথায় অবাক হয় না। স্বাভাবিক মুখেই উত্তর দিলো,

“ইচ্ছে করে পাড়া দেইনি।”

“গালিতো ইচ্ছে করেই দিচ্ছেন।”

“আমি গালি টালি দিচ্ছি না”

মেহতাব বাঁকা হেসে বললো, “গুড। প্রকাশ্যে অথবা মনেমনে যাই করবেন,ভাববেন সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা মাস্ট।কারণ আপনিতো জানেনই আমার ক্যারেকটারে সমস্যা!”

আদর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলে মেহতাব আবার বললো,

“এভাবে তাকিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?অথচ নিজেই সেদিন গাড়িতে বলেছেন আমার চরিত্রে সমস্যা আছে।আমিও ভেবে দেখলাম থাকতেই পারে।আফটার অল আমরা পুরুষ জাতি।আপনারা নিজেই আমাদের কলংকিত করে রেখেছেন।”

সেই কথা এখনও মনে পুষে রেখেছে?ভুলে যাওয়া বলে একটা শব্দ আছে।আদরের এক দিন আগে ঘটে যাওয়া কিছু মনে থাকে না।মনের কথা শুনতে পাওয়ার সাথেসাথে স্মৃতিশক্তিও দেখছি লাজাওয়াব।ঠিকই বলেছে!তার ক্যারেকটারে ঝামেলা আছে।নাহয় সেদিন কেনো ওই লাল কটকটা লিপস্টিক ওয়ালা মেয়ের সাথে ঘেঁষে ছবি তুলবে?আবার পোস্টও করেছে।সেই মেয়েটিও কি তার বোন?সেকি জানে না ফেসবুক একটা পাবলিক প্লেস।এদিকে আবার এখন তার সাথেই ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করেছে।আসলে ছেলে মানুষ!সব এক সওওওব!
উদাসী মনে আদরকে দেখে উঠে দাড়ালো মেহতাব।চা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।নিজেই বানাচ্ছে আজ।

আধ চা চামচ চিনি কাপে ঢালতে ঢালতে বললো,

“যান আপনাকে আজকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।আমার ব্যপারে আপনার কি কি ধারণা বলেন।আমি রাগ করবো না, ধমকও দিবো না”

আদর বসে থেকেও শান্তি পাচ্ছে না। তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়েছে। দাড়িয়েই বললো,

“আপনাকে নিয়ে বলতে গেলে দিনরাত পার হয়ে যাবে তারপরও কথা শেষ হবে না।”

“অনেক ভাবনা চিন্তা করে ফেলেছেন দেখছি আমাকে নিয়ে”

“মোটেও না।আপনার কর্মকাণ্ডগুলো সব আমার চোখের সামনে।কথায় কথায় ধমক দেন,নিজের যা ইচ্ছা করে করেন,আবার জোর খাটান সবার উপরে,আমারে এতোগুলা কাজ করান,চোখ রাঙানি দেন,গলায় দাগটাগ নিয়ে ঘোরেন,আবার মেয়ে মানুষের সাথে ঘেঁষাঘেঁষিও করেন।”

বলতে বলতে যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে আদর এটা হুশে আসতে আসতে মেহতাব এগিয়ে এসেছে। এতটাও মন খুলে কথা বলা উচিত ছিলো না তার সামনে।নিজের মুখের উপর কি নূন্যতম নিয়ন্ত্রণ নেই?এবার বাঘের খাচায় পড়ে থাকা খরগোশের মতন অবস্থা হবে?সেটা থেকে কে রক্ষা করবে তাকে?

“আমি রাগ করি,ধমক দেয়,জোর খাটাই,গলায় দাগ নিয়ে ঘুরি,আবার মেয়েদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করি।আর?”

অত্যন্ত সংকটজনক মুখের ভাব ভঙ্গি।চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে একপা দুই পা করে এগিয়ে আসছে।পায়ের গতিপথ বলছে আদরের দিকেই আসবে সে। হলোও তাই।তার পা দুটো আপনাআপনি পেছনে পিছিয়ে যাচ্ছে আদরের।আসন্ন বিপদের আগাম বার্তা। আতংকিত হলে চলবে না। মেহতাব এর পায়ের গতি এখনও ধীর গতিতে কাছিয়ে আসছে।

“আপনি পেছাচ্ছেন কেনো?আমি কি আপনাকে ধমক দিয়েছি?”

আদরের পিঠ ঠেকলো দেয়ালে।মাথার মধ্যে হালকা ব্যথা পেয়েছে।সিনেমার মতন এমন একটা সময় পিছনে দেয়াল থাকা লাগবে কেন? ভুক্তভুগীকে পালানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।টেবিলের দিকে তাকিয়ে চট করে বুদ্ধি খেলে গেছে।ব্যাগ হাতে নিয়ে তৎক্ষনাৎ নিজের মুখের সামনে চেপে ধরলো।এই মুহূর্তে এটাই তার সুরক্ষা কবজ।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো বেচে যাওয়ার আশায়।

মেহতাব চায়ের কাপ রেখে একটানে ব্যাগ সরিয়ে চেয়ারে ছুঁড়ে ফেলেছে।আদর ধরফরিয়ে বলে উঠলো,

“আপনি সামনে আসছেন কেন?”

“কারণ আমার চরিত্রে দোষ আছে।সেটাই প্রমাণ করছি”

আরো দূরত্ব ঘুচিয়ে একহাত দেয়ালে রাখলো মেহতাব। কোমড় বেকিয়ে ঝুঁকে আদরের দিকে।আর বললো,

“কি বলছিলেন যেনো?”

আদর বিচলিত। ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলে উঠল,

“আমি কিছু বলি নাই।ভুলে মুখ ফুটে বেড়িয়ে গেছে।আপনি দূরে সরে দাড়ান”

মেহতাব আদরের কথার প্রেক্ষিতে কোনো উত্তর দেয়নি।সরেও দাড়ায়নি।কপাল কুঁচকে জুড়ে দিলো বিচিত্র এক প্রশ্ন,

“এমন ডার্ক লিপস্টিক দিয়েছেন কেনো?”

আদর চোখ বন্ধ রেখেই ভাবনা জুড়ে দিচ্ছে।এখন কি তার জন্য লিপিস্টিক দিলেও সমস্যা?নাকি বাকি সবকিছুর মতন এটাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে।নাহ!এটা কোনোভাবেই মেনে নিবে না আদর। ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে ফেলছে যে।

“কাউকে আকর্ষিত করতে চাচ্ছেন এত গাঢ় রঙে ঠোঁট রাঙিয়ে?”

“একদম ফালতু কথা বলবেন না!কাকে আকর্ষিত করবো আমি?”

আদরের তেজী স্বরে এক চিমটিও পরিবর্তন আসলো না মেহতাবের।মুখের ভঙ্গি যেমন ছিল ঠিক তেমনি আছে।

“আপনি ভাবেন আমি কিছু লক্ষ করি না?চোখ নামিয়ে রাখলেই যে মানুষের সবকিছু দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায় সেটা অন্তত আমার ক্ষেত্রে ভুল।আগেতো কখনো দেখিনি!আজ হুট করে কি হলো?একদিন বোরকা পড়েন।আবার আরেকদিন সেজেগুজে ফিটফাট হয়ে আসেন। রহস্যটা কি মিস আদর?”

“কোনো…কোনো রহস্য নেই।আর থাকলেও আপনার কি?”

“আমার হসপিটাল,আমার কেবিন আর আপনি?আপনিও আমার অধিনস্ত।আর আপনি জিজ্ঞেস করছেন আমার কি?”

“আমার ব্যক্তিগত বিষয় এটা”

মেহতাব একটু পিছু সরে গেছে।তবে অতটাও দূরত্ব দেয়নি
আদরকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে।তবে তার অসস্তি কাটতে দেয়নি।হুট করে কাছে আসলে আদরের সে কম্পিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সেটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে মেহতাব।

“আপনার খাওয়া,দাওয়া,কাজ,সপ্তাহের,দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমি কন্ট্রোল করছি।আর আপনি বলছেন আপনার ব্যক্তিগত?”

আদর অবিলম্বে চক্ষুদ্বয় খুলে নেয়। নেত্রজুগলে ভয়ের ছাপ নেই।না মুখে অশান্ত ভাব।চোখের পলকে পাল্টে যাওয়া তার শ্রী মেহতাব এর দৃষ্টিগোচর হয় নি।স্ম্লান মুখটা ভাবাতে শুরু করেছে।আদরের এই চেহারা দুর্ভেদ্য।সময় ব্যয় না করে মেহতাব প্রশ্ন করলো,

“কি হলো?”

প্রগাঢ়তা ত্যাগ করে আদর বললো,

“ঠিকই বলেছেন।আমার জীবনের উপর আমার নিজেরই কোনো অধিকার নেই।কন্ট্রোল নেই।কখনো বাবা মার উপর নির্ভর করে চলেছি,কখনো অন্য করো উপর।এইযে দেখেন আমার রোগা পাতলা গড়ন?আমি যদি নিজের যত্ন নিতাম আমার পেছনে আপনার সময় নষ্ট করা লাগতো না।আমি নিজে নিজে কখনো কিছু করতেই চাইনি।অন্যের ঠেলা ধাক্কা খেয়ে করেছি।নিজের ইচ্ছায় গুছিয়ে উঠতে চাইনি নিজেকে।আমার জীবনে যেখানে আমার চেয়ে বেশি অন্যের অবদান।সেই জীবনে আমার অধিকার কি করে থাকে?”

“আদর আমি সেটা মিন করিনি” হিম কণ্ঠে বলল মেহতাব।

“জানি আমি।আপনি কত কথাইতো বলেন। আমি শুনেও শুনি না।আপনাকে দোষ দিচ্ছি না।আপনার কথাটা আমাকে উপলব্ধি করতে বাধ্য করলো আমি আমার বাইশ বছরের জীবনে নিজের জন্য কিছুই করিনি।আর এই কারণেই অন্য মানুষ দ্বারা আমার জীবন কন্ট্রোল হয়েছে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here