#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৯
লেখা: #Azyah
নির্দয়,পাষাণ লোকটির পেটে পা গুটিয়ে বসে আছে ছোট্ট বিড়ালটি।অনেকক্ষন যাবৎ চেয়ে আছে তার দিকে।দেখছে আর ভাবছে এই রাতে তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম না পাড়িয়ে কি এমন চিন্তায় মগ্ন।অবুঝ প্রাণী একজন বুঝদার প্রাণীর মাথায় কি চলে সেটা বুঝার চেষ্টায়।কোনো ভাবেই বুঝে উঠতে পারছে। অন্যথায় মেও শব্দ করে উঠলো।তারপরও তার ধ্যান ভাঙ্গাতে অক্ষম।আকাশী রঙের টি শার্ট পরে মাথার পেছনে দুই হাত বেধে শুয়ে আছে।চোখ তার সিলিং ফ্যানের দিকে।
বিড়ালটি নড়েচড়ে উঠতেই মেহতাবের ঘোর ভাঙলো।তার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“রায়হান ঠিকই বলেছে।তোমার একটা নাম দরকার।কতদিন বিড়াল,বিড়াল ছানা বলে ডাকবো?”
বিড়ালটি মেহতাব এর দিকে চেয়ে কতটুকু বুঝলো জানা নেই।কিন্তু তার লেজ নাড়ানো আর “মেও” শব্দ উচ্চারণ এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল সেও একটা নাম চায়।মেহতাব এর কথায় সহমত।
“ম্যাথিও!…আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখলাম।পছন্দ হয়েছে?”
ম্যাথিও মেহতাব এর পেট থেকে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বুকের উপর বসেছে।মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল তার নামটা বেশ পছন্দ।
“আচ্ছা আদরকে তোমার কেমন লাগে?”
ম্যাথিও মাথা তুললো।সম্পূর্ণ কালো জ্বল জ্বল করা চোখ তুলে নির্বিকার চেয়ে রইলো মেহতাবের দিকে।মেহতাব আবার বললো,
“ঠিক তোমার মতন করেই এভাবে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।তোমার মতই আরেকটা বিড়াল ছানা।হাতে পায়ে অনেক বড় হয়েছে কিন্তু স্বভাব? স্বভাবে এখনও বড় হতে পারেনি।তুমি কত শান্ত একটা বাচ্চা ম্যাথিও।আদর কিন্তু ভীষণ অশান্ত,চঞ্চল। বিদ্যুতের গতিতে আমার মধ্যে এসে মিশে গিয়ে আবার চোরের মত পালিয়ে যায়।আমি সব বুঝি। আমার সামনে ভেজা বিড়াল হয়ে থাকে।”
ম্যাথিওকে শান্ত উপাধি দেওয়া হয়েছে।সেটা মনে হয় তার পছন্দ হয়নি।একলাফে মেহতাবের মাথায় চড়ে বসলো। এতক্ষন চুপচাপ বসে ছিলো।এবার মেহতাবের চুল খামচে দিচ্ছে।
“বুঝেছি!তুমিও তোমার রং দেখানো শুরু করলে?ঠিক আছে এবার নামো।আমার দুটো বিড়ালের একটা বিড়ালও শান্ত না।তোমরা দুজনই অশান্ত।”
ম্যাথিও নামলো না।লাফালাফি আরো বাড়িয়েছে। মেহতাব হাত তুলে তাকে দুহাতে জাপটে ধরে বললো,
“এবার নেমে আসো।আদর দিচ্ছি বলে মাথায় চড়ে বসেছেন আপনিও?এবার ধমকে দিবো নাহয়।”
মেসেঞ্জারে মেসেজ এসেছে। টুং করে আওয়াজ করে জানান দিচ্ছে। মেসেজটি আদরের।লিখেছে,
“আগামীকাল থেকে আমার এক্সাম।টানা ছয়দিন চলবে।”
মেহতাব উত্তরে লিখলো,
“কাজে আসবেন না?”
“আসবো কিন্তু দেরি হবে।একটা বাজবে”
“আচ্ছা”
ফোন সাইডে রেখে ম্যাথিও এর উদ্দেশ্যে বললো,
“আমার মনে শান্তি নেই।অশান্তির কারণ নিয়ে কথা বলতে চাই না।এখন ইচ্ছে করছে তোমাকে একটা গান শোনাতে।যাকে শোনাতে চাই তাকে শুনাতে পারি না।তুমি গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ো কেমন?”
“সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগল হয়ে
সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগল হয়ে
মরমে জ্বলছে আগুন আর নিভে না
সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগল হয়ে
মরমে জ্বলছে আগুন আর নিভে না
আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে
পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে
বিরলে বসে করো যোগ-সাধনা
পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে
বিরলে বসে করো যোগ-সাধনা
একবার ধরতে পেলে মনের মানুষ
ছেড়ে যেতে আর দিও না
ধরতে পেলে মনের মানুষ
ছেড়ে যেতে আর দিও না।
তারে ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম আর পেলেম না
ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম আর পেলেম না।”
______
“রুবি কাজটা মোটেও ভালো হবে না।”
“তুই একটা গাঁধী।আমি কিছু পারি না।এটাই একমাত্র উপায়”
“আমিওতো পারি না।তাই বলে নকল করবি?”
“তোকে কে বলেছে নকল করবো?নকল মানে বুঝিস।আজকের এক্সামে এত এত সাল আছে।এত সাল মনে রাখা যায়?আমি লিখেছি ৭টা সাল এই ছোটো কাগজে।তুই কোণায় বসবি তাই তোর কাছে রাখ”
“আমার ভয় করে দোস্ত”
রোহিত এসে বললো, “এই তোরা আস্তে কথা বল।আমরা জাস্ট সালগুলো লিখে এনেছি।দ্যাটস ইট!”
রুবির কুবুদ্ধিতে কয়েকটা প্রশ্নের শুধু সাল লেখা কাগজগুলো সাথে রেখেছে আদর। কর্নারের সারির চতুর্থ বেঞ্চে বসে আছে।ভয়ে হাতপা এখনই কাপা শুরু করেছে।যতই খারাপ প্রিপারেশন থাকুক।এই ধরনের কাজ কোনোদিন করেনি।অস্বাভাবিক চেহারা বানিয়ে খাতায় মার্জিন টানতে থাকলো।রুবি ধাক্কা দিয়ে বললো,
“ভাই তুই প্যানিক করবি নাতো আবার?”
“চুপ থাক।এমনেই টেনশনে পেট গুলাচ্ছে আমার”
রোহিত সামনের বেঞ্চ থেকে একটু পেছনে ঝুঁকে বললো, “তুই স্বাভাবিক থাক”
কোনোভাবেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না আদর।বুক কাপছে।ধীরেধীরে প্রশ্ন দেওয়া শুরু হয়েছে।সময় নিয়ে পুরো প্রশ্নে চোখ বুলিয়েছে তারা সবাই।রোহিত পিছু ঘুরে তাকালো।রুবি ইতিমধ্যেই আদরের দিকে তাকিয়ে হা করে আছে।আদর চোখ কটমট করে রুবির দিকে তাকালো।হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।প্রশ্ন কমন এসেছে।রুবির লেখে আনা কোনো সাল কাজে আসছে না এখানে।
রুবি আদরকে রেগে যেতে দেখে আমতা আমতা করে বলল,
“ইয়ে দোস্ত! বাদ দে।লেখা শুরু কর। সবতো পারি। হেহেহে”
আদর দাত চিবিয়ে বললো,
“এটা ওয়ানিং ছিলো।খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকার ওয়ানিং।নেক্সটে এসব করলে নাও বাঁচতে পারি।”
“সাইলেন্স প্লিজ” ম্যামের চিৎকারে থেমে গেলো তারা।নিজের মতন পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েছে।আদর খুব তাড়াতাড়িই ঘাবড়ে যায়।ভয় জিনিসটা তার মধ্যে ভর করে ফেলে। রোহিত ঠান্ডা কোক খাইয়ে মাথা ঠাণ্ডা করেছে তার।
রুবি বলল, “আজ আমাকে নিয়ে যাবি তোর সাথে? আমার মাইগ্রেন এর চেকআপ আছে ওই ক্লিনিকে।”
“ডাক্তার আসবে কখন?” আদর প্রশ্ন করলো।
“দুইটা বাজে”
আদর ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল, “এখনও দেড় ঘণ্টা বাকি। কোথায় অপেক্ষা করবি?”
“তুই যেখানে কাজ করিস সেখানে একটু বসবো নাহয়?তোর বস রাজি হবেতো?”
আদর অন্যমনস্ক হয়ে বললো, “চল গিয়ে দেখি।”
বিশ মিনিটের মধ্যে ক্লিনিকে এসে পৌঁছেছে।দেলাওয়ার চাচার কাছে জানতে পারলো মেহতাব রুমে নেই।রাউন্ডে গেছে। রুবিকে নিয়ে ঢুকে পড়লো।রুবি বলল,
“কিরে দোস্ত?এটা কেবিন?রাজ প্রাসাদ বানিয়ে রাখছে দেখি”
আদর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “নিজের সম্পত্তি হলে যা হয় আর কি?”
বিড়ালের কন্ঠ পেয়ে রুবি খোজাখোজি শুরু করেছে। কোথা থেকে আসছে এই শব্দ তাই জানতে।আদরের শ্বাস আবার আটকে গেলো।আজও এনেছে এই বিড়ালকে?আমাকেতো দায়িত্ব দিয়েছে এর দেখাশোনা করার।এখন থেকে ডিউটিএর পাশাপাশি বিড়ালকেও খাতির যত্ন করতে হবে?শুধু খাটানোর ধান্দা।জেনে শুনে ইচ্ছে করেই তার বিড়ালকে আমার হাতে ন্যস্ত করে গেছে।ভয় পায় এটা জানা সত্ত্বেও।ভাবনা চিন্তার ছেদ পড়ল রুবির হাতে বিড়ালকে দেখে।আদর চোখ গোলগোল করে ফেললো।এই মেয়ে খুজে বের করে এনেছে?তাও আবার তার কোলে?
আদর মৃদু স্বরে চেচিয়ে বললো, “রুবি এটাকে একশো হাত দূরে রাখ আমার থেকে।”
“কেনো?দেখ কি কিউট না?”
“কিউট না কচু।জানিস না ভয় পাই?”
রুবির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেললো।এক লাফে বিড়াল নিয়ে আদরের একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।আদর ভরকে গিয়ে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলেছে মেহতাব এর টেবিলে।বই পত্র বাকি সব গিয়ে পড়েছে জমিনে আর চেয়ারে।আঙ্গুল উচু করে রুবিকে বললো,
“খবরদার রুবি।এই ধরনের ফাজলামো আমার একদম পছন্দ না”
দরজার বাইরে মেহতাব চেঁচামেচি শুনে ভেতরে এসেছে।টেবিলের নাজেহাল অবস্থা তার কাছে স্পষ্ট দৃশ্যমান।একদিকে রুবি ম্যাথিওকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে হাসছে।অন্যদিকে আদরের ভীত চেহারা।দুজনকেই দেখে নিলো।রুবি মেহতাবকে দেখে চিনতে মোটেও ভুল করেনি।সাথেসাথে জ্বিভ কেটেছে।হাসি থামিয়ে ফেলেছে।গম্ভীর মুখে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ার থেকে বই, খাতা সরিয়েছে।বসে আদরের দিকে তাকায়।আদর তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,
“ও রুবি।আমার ফ্রেন্ড।একটু পর ওর ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট।তাই আমার সাথে এসেছে”
রুবি বলে উঠলো, “আসসালামু আলাইকুম স্যার”
মেহতাব সাবলীল ভঙ্গীতে সালামের জবাব নিয়ে আদরকে বলে উঠলো, “বইপত্র সব পড়ে আছে।এগুলো গোছান।”
আদর একে একে সব বই টেবিল থেকে সরিয়ে ব্যাগে নিয়েছে।রুবিকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে নিজের কাজ গুছিয়ে নিলো। ম্যাথিও এখনও তার কোলে।বেশ মনে ধরেছে বিড়ালটাকে তার।বাবা মার জন্য পালতে পারে না।
উৎসুক কণ্ঠে মেহতাবকে প্রশ্ন করে বসলো,
“স্যার বিড়ালটা কি আপনার?”
“জ্বি”
“নাম কি ওর?”
“ম্যাথিও”
“বাহ খুব সুন্দর নাম।”
“ধন্যবাদ”
পায়ের কাছে মোড়ানো কাগজ দেখতে পাচ্ছে মেহতাব।ছোট্ট একটা কাগজ। চিরকুটের মতন।অবশ্যই আদরের ব্যাগ থেকে পড়েছে।ঝুঁকে তুলে নিলো।কাগজটি খুলে দেখলো বিভিন্ন সাল লেখা।তারিখসহ।
মুখে হাসি টেনে মেহতাব বলে, “আজতো এক্সাম ছিলো আপনাদের।কেমন দিলেন?”
রুবি ছটফটে স্বভাবের। চট করে উত্তর দিলো,
“খুব ভালো হয়েছে। সব কমন এসেছে”
মেহতাব ভ্রু উচিয়ে বললো, “বাহ! সাল তারিখ সব ঠিক মতন দিতে পেরেছেনতো?”
রুবি বলে উঠলো, “অবশ্যই”
আদরের খটকা লাগছে।এমন প্রশ্ন করার মানুষ না সে।রুবিকে চেনেই না।তারপরও তার সাথে কি সুন্দর করে কথা বলছে। পড়ালেখার ব্যাপারেতো আদরকেও আজ পর্যন্ত কিছু জিজ্ঞেস করেনি।তাহলে রুবিকে কেনো? মতলব ভালো ঠেকছে না।উঠে গিয়ে সামনে দাড়ালো আদর।
মেহতাব বাঁকা হেসে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “সেটাতো ঠিকঠাক দিতে পারবেনই। চিরকুটে লিখে নিয়ে গেলে কার পরীক্ষা না ভালো হয়”
কাগজটি আদরের হাতে এগিয়ে দিলো মেহতাব।তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।রুবির হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ফুস হয়ে গেলো।হাতের ঢিল ছাড়তেই ম্যাথিও মেহতাব এর কাছে চলে গেছে।আদর বিষম খেয়ে দাড়িয়ে। টিচারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে এসে দুজনই হাফ ছেড়ে বেচেঁছে।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাঘের মুখ থেকে বেঁচে এসে হায়নার কবলে পড়লো।এই চিরকুট ওনার হাতে কিভাবে গেলো?সব দোষ এই বিড়ালের।একে দেখে আদর লাফ না দিলেই ব্যাগ থেকে জিনিসগুলো পরতো না।আর ফাঁসির আসামির মতন এখানে দাড়িয়ে থাকতে হতো না।অদ্ভুত চাহনি মেহতাব এর। কটাক্ষ করে কথাটি বলেছে সে।
রুবি নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে বললো, “আরেহ নাহ স্যার এটা আমার না”
“আদরের?”
“নাহ নাহ ওরও না।আমি আবার মিথ্যে কথা বলি না স্যার।হয়েছে কি।এই সাবজেক্টের বইটা এত ভারী।উফ কি বলবো!অযথা নিজের কাঁধকে কষ্ট কেনো দিবো?লাস্ট টাইমের রিভিশন করার জন্য লিখে এনেছিলাম।আপনি যা ভাবছেন একদম ভুল।আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্টুডেন্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যত এসব নকল টকল করে শেষ করতে পারি না স্যার”
মেহতাব মনোযোগ সহকারে রুবির কথা শুনছে।সে যে মিথ্যে বলছে এটা ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।মেহতাব বুঝে গেছে সেটা আদরও ভালই বুঝেছে।পরিস্থিতি আদরের অনুকূলে নেই।চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করলো।নাহয় বন্ধুর সামনে অপমান করতে তার একবিন্দু মুখ কাপবে না।
মেহতাব বললো, “তাই নাকি?আচ্ছা আপনারা দুজনই বলেনতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কে?”
উত্তর আদর,রুবি কারোই জানা নেই।ছিলো সেটা প্রথম বর্ষে। মুখে বারোটা বাজিয়ে দুজনই একে অপরের দিকে চাও়াচাওয়ি করছে।রুবি দুরন্ত।ভাবলো সে মেডিকেলের স্টুডেন্ট।শুধু বিজ্ঞানের জনক ছাড়া আর কোনো বিজ্ঞানের জনক কে সেটা কিভাবে জানবে?শুধুই তাদের অসস্তিতে ফেলার জন্য প্রশ্ন করছে।
রুবি বলল, “স্যার হেরোডোটাস”
“হেরোডোটাস ইতিহাসের জনক।রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল”
রুবির চঞ্চল মুখ সেকেন্ডের মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে মেহতাব।আদর অবাক হয়নি।সে এমন কিছু হবে আগে থেকেই ভেপে ফেলেছিলো।আপাদত মুখ বুজে অপমান সহ্য করা তাদের কাজ।নিচু কণ্ঠে ডাক্তার দেখানোর সময় হয়েছে বলে রুবি কেটে পড়লো।রয়ে গেলো আদর।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে এদিক ওদিক।এবার তার ক্লাস নেওয়া হবে।
ঠোঁট কামড়ে মেহতাব এর দিকে তাকিয়ে।মেহতাব জিজ্ঞেস করলো,
“কি?”
“আমি কিছুই করিনি।”
মেহতাব এই কথার জবাবে বললো,
“দুপুরে খাওয়া দাওয়া হয়েছে?”
“উহুম”
“দেলাওয়ার চাচা খাবার দিয়ে যাবে।ফ্রেশ হয়ে আসুন”
ইলিশ মাছ আদরের পছন্দের একটা মাছ।শুধু এই মাছটা খেতে পছন্দ করে।সমস্যা এখানেও রয়েছে।বাড়িতে বাবা অথবা মা কাঁটা বেছে দিলেই খেতে পারে।এখানে বোকার মতন চেয়ে আছে।অন্যদিকে মেহতাবের খাওয়ার সময় কোনদিকে খেয়াল থাকে না।খেয়েই চলেছে মুখে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে।খাওয়া শেষে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আদরের দিকে চাইলো।প্লেটে যেমন ভাত তেমনি।পুরো মাছের টুকরো ভেঙে এলোমেলো।দেখে বোঝা হয়ে গেলো আর কিছু নয় আদর কাঁটা বাছার চেষ্টায়।
“আপনি খাচ্ছেন নাকি মাছের পোস্ট মার্টম করছেন?”
“কাঁটা বাছার চেষ্ঠা করছি!”
“দেন এদিকে।”
হাত এগিয়ে প্লেট টেনে নিল।অবস্থা দেখে মাথা দোলাচ্ছে দুইদিকে।অনেক অগোছালো এই মেয়ে। মাছ বাছতে গিয়ে পারো মাছের টুকরোকে ক্ষতবিক্ষত, ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। পরিপক্ক হাতে আরেক পিস তুলে সুন্দর করে বেছে আদরের সামনে দিলো।আদর খাচ্ছে।সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া প্লেট আবার এলোমেলো করেছে। মেহতাব হাত ধুয়ে এসে আদরের সামনে বসে বললো,
“দুটো বিড়াল সামলানো অনেক কষ্টের।একটা মাছ খায় আরেকটা মাছের কাটা”
মুখ ভর্তি ভাত দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে প্রশ্ন করলো আদর, “কিহ্হ?”
“নাহ!কিছুনা।আপনি আরাম করে খান।”
চলবে…