চিত্তসন্ধি পর্ব ৩০ লেখা: #Azyah

0
191

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩০
লেখা: #Azyah

বাবার কোলে মাথা রেখে আরাম করে শুয়ে আছে আদর। আশরাফ মাহমুদ এখন অনেকটা সুস্থ।তবে ব্যবহার বাচ্চাদের মতন।ভয়ে ভয়ে থাকেন সবসময়।চিন্তা করেন মেয়ে আর স্ত্রীর জন্য।আজ একটু ভালো লাগছে।মেয়ে, স্ত্রী আর তিনি একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।এই সংসার তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি। মান,অভিমান,কষ্ট,খুশি সব মিলিয়েই এই সংসার।এখানে মানুষের অঢেল মানুষের সমাগম না থাকলেও বেশ সুখের পরিবার।পুরো বাড়ির চার দেয়ালে তিনজন মানুষ একে অপরের পরিপূরক।নিজেদের মধ্যেই সকল সুখ,দুঃখের আদান প্রদান করে নেন।ভালো সময়ে যেমন তারা একে উপরের পরিপূরক ঠিক খারাপ সময়েও তাই।জীবন যুদ্ধে নিজেকে এখন একজন দূর্বল যোদ্ধা হিসেবে মনে করেন আশরাফ মাহমুদ। প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাওয়ার ভয়।

আশরাফ মাহমুদ আদরকে প্রশ্ন করলেন, “মা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“হ্যা আব্বু বলো।জিজ্ঞেস করার কি আছে?”

“তোমার কাউকে পছন্দ আছে?”

বাবার প্রশ্ন কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বিস্ময় ভরা চাহনি দিলো বাবার দিকে আদর।হুট করে এমন প্রশ্ন করছেন?বাবা তার সাথে ছোটোবেলা থেকেই অনেক ফ্রি।কিন্তু কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি।কোনোদিন এইরকম প্রশ্ন করেনি।উঠে বসলো আদর।

বাবার দিকে চেয়ে বলল, “হুট করে এমন প্রশ্ন করছো?”

আশরাফ মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “বড় হয়েছিস মা।মেয়ের দায়িত্ব বাবার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।সবার জীবনেই বাবা,মা,ভাই,বোন ছাড়া একটা সঙ্গীর দরকার।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম…..”

“বিয়ে দিতে চাচ্ছো বাবা?”

আশরাফ মাহমুদ নত চোখে মেয়ের হাত আকড়ে ধরলেন।বুঝতে বাকি নেই আদর যা ভাবছে তাই সত্যি।বিয়ের কথা একদিন না একদিন উঠতই।সেটা আজই উঠে গেছে।বাবা কখনো তাদের অমতে কিছু করেনি।কোনোদিন করবেও না।বাবা-মা সন্তানের জন্য কিছু ভাবলেও এর পেছনে যুক্তিযুক্ত কারন থাকে।তাছারাও বাবার দিকে চেয়ে ভীষণ মায়া হয়।কেমন হয়ে গেলো লোকটা হার্ট এ্যাটাক করার পর!বাবাকে কিছুতেই কষ্ট দেওয়া যাবে না।সে যা বলবে তাই শুনবে আদর।

আশরাফ মাহমুদকে আশ্বাস দিয়ে বললো, “তুমি আমার জন্য না সিদ্ধান্ত নিবে আমি মানবো।কিন্তু আমাকে একটু সময় দিতে পারবে ভাবার জন্য?”

আশরাফ মাহমুদ মাথায় হাত রেখে বললেন, “অবশ্যই মা”

রাতের ঘনঘটা চারপাশে।ভীতু আদর বারান্দায় বসে আছে।যে কিনা রাত বারোটার পর ওয়াশরুমে যেতেও মাকে ডাকে।বাবার বলা কথাটি এখনও কানে বাজছে।মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।তার দিক থেকে তিনি ঠিক।কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।তারপরও কেমন এক অদ্ভুত যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে।যত ভাবছে বাবার কথাগুলো ততই বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়।অন্যরকম আবেগ আকড়ে ধরে আছে আদরকে।সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক ভুগেছে।কিন্তু এ কেমন সিদ্ধান্তহীনতা?কি সিদ্ধান্ত নিবে? মস্তিষ্কে সবকিছু গড়মিল।আচ্ছা বিয়েতো করতেই হতো।আজ হোক, কাল হোক। জীবনসঙ্গী হিসেবে কাউকে বেছে নিতেই হতো।চোখ বুজে অন্য কাউকে নিজের পাশে কল্পনা করতেই পারছে না আদর।বারবার একটি মানুষের ভাবমূর্তি ভেসে আসছে।

“ডক্টর নওশের মেহতাব”

এটা কি সম্ভব? অনুভূতির নামগুলো ভালোবাসা নয়তো?সে কি কিছু অনুভব করে?যদি না করে তাহলে বারবার কাছে টেনে নেয় কেনো?তার চোখে অনেক কথা।মুখ নিঃশব্দ।কোনো স্বীকারোক্তি নেই।এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে জীবনের সাথে।তাকে এড়িয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব।প্রতি মুহূর্ত নিজেকে অনুভব করায়।তাদের মধ্যে যা আছে?তার কি কোনো নাম পরিচয় আছে?কেনো মনে হয় সে আমার হয়েও নেই।সে কি তার জীবনে আমাকে জায়গা দিবে? আমিতো বিশেষ কিছু নই।তার অযোগ্য।আমি কোনটা বিশ্বাস করবো?তার চোখের ভাষা নাকি মুখের ভাষা?তাকে প্রশ্ন করার সাধ্য নেই।আর নাই সে উত্তর দিবে।

“আপনাকে কখনোই কিছু বলতে পারবো না।আপনি অনেক খারাপ একজন লোক।আমাকে জালে ফাঁসিয়ে নিজে দিব্যি আছেন”

__

“তোমার মেয়ে কথাটা এড়িয়ে গেলো না?” আশরাফ মাহমুদ এর পায়ের মালিশ করতে করতে জোহরা খাতুন বললেন।

“কোন কথাটা?”

“এইযে পছন্দ আছে কিনা?”

“ওতো সময় চাইলো।”

“বিয়ের ব্যাপারে সময় চেয়েছে।কিন্তু পছন্দ আছে কিনা সেটা বলেনি।মাত্র দেখে আসলাম একা বারান্দায় লাইট নিভিয়ে বসে ভাবছে।আমি যে ওর সাথে এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম ওর কোনো খেয়ালই ছিলো না। এমনতো না আমাদের মেয়ে।”

আশরাফ মাহমুদ স্মিথ হেসে বললেন, “হয়তো ভাবছে কি করবে।তুমি ওকে ভাবতে দাও।কোনো প্রশ্ন করো না।নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেক”

“হুম”

_____

মেহতাব এর সাথে থাকতে থাকতে তার স্বভাব চরিত্র অনেকটা আদরের মধ্যে পরিলক্ষিত।তারই মতন আঙ্গুলের ফাঁকে পেন্সিল গুজে ভাবনা চিন্তার সাগরে ডুব দিয়েছে।ভাবুক ভাবভঙ্গি।এখনো অতটা ভাবার মতন কিছু না হলেও আদরের মাথা নিজের কাছেই বোঝা লাগতে শুরু করলো। ম্যাথিও তার পায়ের সামনে এসে বসে আছে তাতেও আদরের হেলদোল নেই।সামনে বসে থাকা মানুষটি অনেকক্ষন যাবৎ আদরকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।কখনো বেশি,কখনো কম কথা বলে সে।আজ দেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ। দুঘন্টা হলো এসেছে।এড়িয়ে চলছে মেহতাবকে।যতোটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কথা বলে। একবারের জন্যও চোখ তুলে তাকায়নি।না কোনো অজুহাত দিয়েছে। এতটাই অন্যমনস্ক ম্যাথিও যে তার এতোটা কাছে ভয় টুকু পাচ্ছে না।হয়তো আচও পায়নি।

অনেকক্ষন দেখেছে।আদরের এমন আনমনা হয়ে থাকা সহ্য হচ্ছে না মেহতাবের।নিজের চেয়ার টেনে আদরের ডেস্কর সামনে আনলো। ম্যাথিওকে কোলে তুলে নিয়েছে।মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে আদরের ধ্যান ভাঙলো আর বললো,

“প্রশ্ন করবো।ঠিকঠাক উত্তর দিবে।কোনো অতিরিক্ত কথা না কোনো মিথ্যে কথা না।এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করা যাবে না।ওকে?”

আদর জোরে নিঃশ্বাস টেনে ছেড়ে দিলো।কেননা একপ্রকার বাধ্য সে মেহতাবের কাছে।

“বলেন”

“মন খারাপ?”

“আপনি জেনে কি করবেন?”

আদরের বেখেয়ালি উত্তর।আগেই ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছিল উল্টোপাল্টা উত্তর গ্রহণযোগ্য নয়।ঘুরে ফিরে ঠিক সেই কাজটাই করে বসলো।প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন নয় উত্তর চেয়েছে সে।মেহতাবের বিরক্তিকর চাহনি দেখে অনিচ্ছাকৃত উত্তর দিলো,

“হ্যা খারাপ”

“কেনো?”

“জানি না।…আর হ্যা এভাবে তাকাবেন না।আমি সত্যিই জানি না কেনো মন খারাপ।কোনো মিথ্যে বলছি না, এরিয়েও যাচ্ছি না।কিসের আশায় মন খারাপ আমার আমি নিজেই বুঝতে পারছি না।আপনাকে কি বলবো?”

মেহতাব তার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে স্থির।আদরের জবাব মন মতন হয়নি।এটা মুখের ভাবসানেই স্পষ্ট।দৃশ্যমান।

আদর সাহস করে বললো,

“হ্যা একটু বেশি বলে ফেলেছি।আপনার কাছেতো আবার একবাক্যের উত্তর বেশি গ্রহণযোগ্য।”

মেহতাব মুখ স্বাভাবিক করে তাকালো।কিছু বলতে মুখ খুলেছিলো।হয়তো ধমকে দিত?নয়তো বিস্তারিত জানতে চেতো।স্বর নামিয়ে প্রশ্ন করলো,

“এভাবে কথা বলছো কেনো?”

“আমি সবসময় এভাবেই কথা বলি”

“সবসময় এভাবে বলো সেটা ঠিক।আজ অনেক ভিন্নতা আছে এর মধ্যে।”

“আমি এভাবেই বলি।কোনো ভিন্নতা নেই।আর এইযে আমার কথার টোন।এটা আসলে ঠিক না।আপনার সাথে এভাবে কথা বলা একদমই ঠিক না।আপনি কই আর আমি কই?”

“রাগ উঠাবে না”

“আপনি শুধু রাগই দেখাবেন, ধমকাবেন,জোর খাটাবেন” মলিন মুখে উত্তর দিল আদর।

মেহতাব সময় নিয়ে বললো, “তুমি কি চাও?এসব বাদ দিয়ে দেই?তোমাকে তোমার মতন থাকতে দেই?”

বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো আদর।মানুষ নিজের ভালোলাগাগুলো নিজের কাছ থেকেই আড়াল করে রাখতে চায়।কিভাবে বলবে কিছুই যেনো না বন্ধ না করে সে।রাগ দেখাক,জোর খাটাক,ধমকে দেক ভুল করলে।সেতো এক কথার মানুষ।নিজের সিদ্ধান্তের উপর অটল।রেগে গিয়ে সবকিছু বন্ধ কর দিবে?দিতেও পারে!আহত দৃষ্টির মাধ্যমে বোঝাতে চাচ্ছে কিছু যেনো বন্ধ না হয়।যা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক।ঠোঁট উল্টে গেলো আদরের।মুহুর্তেই চোখ বেয়ে পড়তে লাগলো জ্বল।

মেহতাবকে বিচলিত দেখালো।কান্না বেগ পেতে শুরু করেছে আদরের। গড়গড় করে ঝরছে অশ্রুদানা।দ্রুত আদরের গালে হাত রেখে বলল,

“এসব কান্নাকাটি বন্ধ করো।”

আদর মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তার কান্নার মধ্যে তার অভিমান পরিষ্কার।কিন্তু মেহতাব কি করবে?অভিমান ভাঙ্গাবে কি করে?অভিমান ভাঙ্গাতে গিয়ে তার গড়ে রাখা ভাবমূর্তি না ভেঙে যায়?নিজেকে বেশি প্রকাশ না করে ফেলে?এমনেতেই নিজের কর্মকাণ্ডগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে ইদানিং।নিজেকে কারো সামনে দুর্বল দেখাতে নারাজ সে।এরমধ্যে আদরের কান্না।বুকে গিয়ে বিধছে।

আদর কান্নাকে একটু সাইডে রেখে নাক টেনে বলে উঠলো,

“আপনি আমার মাথার সার্জারি করে সব ভাবনা চিন্তা বের করে দেন”

উদ্ভট কথায় না হেসে পারলো না মেহতাব।সামান্য হেসেছে। তরপর বললো,

“মাথায় বারি দিলে স্মৃতিশক্তি চলে যাবে।সেটা করি?”

“না আমি আমার স্মৃতিশক্তি হারাতে চাই না।সবকিছু মনে রাখতে চাই”

“আচ্ছা বুঝলাম।কেনো এমন আচরণ করছো যখন ইচ্ছে হবে বলে দিও।আমি অপেক্ষায় থাকবো”

“আপনি অপেক্ষায় থাকবেন?”

“পেশেন্ট আসবে। ম্যাথিও ঘুমিয়ে গেছে ওকে ক্যারিয়ারে রেখে এসো যাও”

আবার এড়িয়ে গেলো।উত্তর দিলো না।আদর নাক মুখ কুচকে ফেলেছে।সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাখবে না ম্যাথিওকে ক্যারিয়ারে।এখানেই বসে থাকবে মূর্তি হয়ে। নড়বেও না চরবেও না!সে রাগী হলে আদরও কম একরোখা নয়। তারও জেদ আছে।

মেহতাব উঠে গিয়েও পেছন ঘুরে চাইলো।আদরের কোনো নড়চড় না দেখে কপাল কুঁচকে নিয়েছে।পকেটে হাত গুজে প্রশ্ন করলো,

“কি হলো?কিছু বলেছি আমি?”

আদর এমনভাবে এড়িয়ে গেলো যেনো সে শুনতেই পায়নি। মেহতাব এর কোনো অস্তিত্বই নেই। মেহতাব মাথা বেকিয়ে আদরকে দেখে নিচ্ছে।দু কদম আগ বাড়িয়ে হাত টেনে দাঁড় করালো।আদর কিছু বলার আগেই কোমর টেনে কাছে এনেছে।চুলের গভীরে হাত ডুবিয়ে বললো,

“কথা শুনবে না?”

মেহতাব এর চোখ আর মুখের ধরন মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়েছে।সাথে কন্ঠস্বরও।

আদর ভীত কণ্ঠে আমতা আমতা করে বলল,

“শুনবো।”

“গুড।সবসময় কথা শুনবে।নাহলে জানোইতো আমার আবার ক্যারেকটারে সমস্যা আছে।”

“ছাড়েন আমাকে!”

“ছেড়ে দিবো?”

ধাধানো কথাবার্তা।কখন কি বোঝায় সেটা আদরের ছোট্ট মাথায় ঢুকে না।এসব কথার জবাব দেওয়া যায় না। নির্বিকার চেয়ে থাকা লাগে তার চোখের গহীনে।

হাতের বাধন হালকা করে দিতেই এক প্রকার ছুটে পালালো আদর।দম ছাড়তে গিয়েও আটকে গেলো টেবিলের উপর আরামে শুয়ে থাকা জনাবকে দেখে।বেশ নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন।এখন আরো একটি যুদ্ধ করা লাগবে। মেহতাব এর ম্যাথিওকে তুলে তার সিংহাসনে শুইয়ে দিতে হবে।যেনো মহাশয়ের ঘুম না ভাঙ্গে সেখানেও বিশেষ নজরদারি দরকার।ঘুম ভাঙলেই লাফালাফি শুরু করে দিবে। ব্যাঙের মতন করে।

মেহতাব আদরের বাচ্চা চেহারার দিকে চেয়ে মনে মনে ভালো,

“আমি জানি তুমি কি চাও।কি ইচ্ছে তোমার।আমার সমস্যাগুলোও তোমার মতনই।প্রকাশ করতে পারছি না।নিজের মধ্যে চেপে আছি।মন খুলে কথা বলার মানুষ আমার কখনোই ছিল না।নিজেকেও গুটিয়ে রেখেছি সবসময়।হয়তো এই কারণেই আমার মুখ ফুটে কিছু বলার ক্ষমতা নেই।নিজের কাছ থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।এর চিকিৎসা কি আদর?আমি মানুষের চিকিৎসা করি।আমার চিকিৎসা কে করবে?”

___

দেখতে দেখতে আদরের পরীক্ষা শেষ হয়ে এসেছে। তৃতীয় বর্ষের ইতি টানলো।আজ শেষ পরীক্ষা ছিলো।ভালো খারাপ মিলিয়ে এতদিন পাড় হলো।পরীক্ষার চাপে মেহতাব আর বাবার কথা ভাবার সুযোগ পায়নি।অনেকটা ক্লান্তি ভর করেছে সারাদেহে।সাথে মনেও।অনেকটা বুঝিয়ে মেহতাব থেকে ছুটি নিয়েছে।দুইদিন নিজেকে নিয়ে ভাবার আর নিজেকে রেস্ট দেওয়ার জন্য।তবে ছুটি নিয়েও বিপাকে।যেখানে এক মুহুর্ত কাজ করা দমবন্ধকর লাগতো সেই জায়গাটাকে ভীষণ মিস করতে শুরু করেছে এখনই।ছুটির দিনের অর্ধেক ভাগও পার হয়নি এখনও।কাজের জায়গাকে মিস করছে নাকি মেহতাবের সান্নিধ্যকে সেটা নিয়েই যত দ্বন্দ্ব।একবার মনে হয় ছুটি নিয়ে ভালই হয়েছে।আবার অনুভব হয় এটা মস্ত বড় একটা ভুল।

ইনিয়ে বিনিয়ে একটা মেসেজ করেই ফেললো মেহতাবকে।আদর জানে মেহতাব এখন ডিউটিতে।তারপরও নিজের মনের শান্তনা।

“শুনলাম কিছুদিন পর নাকি ঢাকার বাহিরে আরেকটা ক্যাম্প আছে?”

আদর অপেক্ষায়।উত্তর আসেনি এখনও। দশ মিনিট পার হয়ে গেলো।পনেরো মিনিট অতিবাহিত করে মেহতাব উত্তর দিলো,

“ব্যস্ত।ফ্রি হয়ে কথা বলছি এই ব্যাপারে”

কিছুটা বিরক্ত বোধ করলো আদর।কাজ করাটাও ইম্পর্ট্যান্ট।সেতো কাজ রিলেটেডই প্রশ্ন করেছে।এটার উত্তর দেওয়া যেত না?ব্যস্ত বলে এড়িয়ে যাবে কেনো? গালে হাত রেখে জানালার বাইরে চেয়ে আছে।উদাস মনে।ভাবছে নিজেকে নিয়ে?কেনো এসব করছে? মেহতাবের মনোযোগ চায়?

পরক্ষনেই মনোযোগ আহরণকারীর কল।হ্যালো বলতেই মেহতাব বলে উঠলো,

“আপনি কেনো জিজ্ঞেস করলেন ঢাকার বাইরের ক্যাম্প এর কথা?”

“এমনেই”

“যেতে চাচ্ছেন সাথে?”

ধরা পড়ার ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আদরের।তারপরও নিজেকে ডিফেন্ড করতেই হবে।কোনোভাবে পরাজয় মেনে নেওয়া হবে না।

“আরেহ নাহ।আমিতো এমনেতেই প্রশ্ন করলাম।”

“নিয়ে যেতাম।কিন্তু মেয়ে মানুষ দুইদিনের জন্য ঢাকার বাহিরে থাকবে। সিকিউরিটি এর ব্যাপার আছে। ফ্যামিলিগত একটা ব্যাপারও থাকে।”

“অন্য মেয়ে স্টাফরাও যাচ্ছে।আপনি শুধু আমাকে নিতে চান না।তাদের সিকিউরিটির জন্যেতো আলাদা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করেছেন। আমি সব জানি”

“কিভাবে জানেন?”

ফোনের ওপর পাশ থেকে মেহতাব দেখবে না।তারপরও মুখ ভেংচিয়ে আদর উত্তর দিল,

“দেলাওয়ার চাচা বলেছে।উনি আমাকে সব খবর দেন।সব বলেন কোথায় কি ঘটছে”

“গোয়েন্দা বিভাগ খুলেছেন দুজন মিলে?”

“জ্বি না।আমার যা জানার দরকার ওইসব ইনফরমেশন দেন আমাকে।আরেকটা কথা।আমার ফ্যামিলিও প্রবলেম নেই।”

“আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি যাওয়ার জন্য এত উৎসুক কেনো।আমরা কাজে যাচ্ছি ঘুরতে না।এসব ঝাড়েন মাথা থেকে।আমি আপনাকে এতদূর একা কোনোদিন নিবো না”

আদর জোর গলায় বলে উঠলো, “আমি যাবো!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here