চিত্তসন্ধি পর্ব ৩৪ লেখা: #Azyah

0
2

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩৪
লেখা: #Azyah

“জানিস দোস্ত আমি না একটা শাড়িও এনেছিলাম।ভাবলাম শাড়ি পড়ে সমুদ্র তীরে নাইকার মতন ঘুরে বেড়াবো।ছবি তুলবো।আমার আশা মনে হয় আশাই রয়ে যাবে।”

মেসেঞ্জারের ভিডিও কলে চারভাগে বিভক্ত আদর, শান্তা,রোহিত আর রুবি।ডান পাশের একভাগে আদর তার দুঃখের কথা বলছে।

রুবি বলল,

“কেনো?কাজ যখন না থাকবে পড়ে ঘুরে বেড়াবি।আর ওখানে ফোটোগ্রাফার আছে।টেনশন কিসের?”

“ভাই!আমি মানুষের মেলে নেই।এখানে সবাই রোবট।আর মিষ্টার ডক্টর নওশের মেহতাব যদি এটা ভ্রুনাক্ষুরেও টের পায়।আমাকে জোয়ারে ভাসিয়ে দিবে”

“লুকিয়ে যাবি” রোহিত বললো।

“না বাবা। কাল যা হয়েছে এরপর একা যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না”

সবাই একসাথে বলে উঠল,চিন্তিত ভঙ্গিতে,

“কি হয়েছে?”

আদর সব বললো তাদের।সবার মুখের ভঙ্গি এক।অবাক!তার চেয়ে বিস্মিত।মেহতাব এর কথা শুনে।রুবি বলল,

“বাবাহ্! ডাক্টার সাহেব আমাদের আদর রানীর জন্য মারামারি পর্যন্ত এসে পড়েছে!”

“শুধু কি তাই?”

মধ্যে শান্তা প্রশ্ন করলো, “আর কি?”

আদর লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়েছে।এবার রোহিত,রুবি, শান্তা অবাকের চরম সীমায়।

রোহিত বললো, “আদর লজ্জা পাচ্ছে!!”

রুবি এই কথার প্রেক্ষিতে আদরের দিকে চতুর দৃষ্টি স্থাপন করে বলে,

“আমার কিন্তু মতিগতি মোটেও সুবিধের মনে হচ্ছে না”

শান্তা চেচিয়ে উঠলো,

“মিষ্টার অ্যান্ড মিসেস প্রেডিকশনিস্ট আপনারা থামেন।এই আদর কি কাহিনী খুলে বল দেখি?”

ঠোঁট কামড়ে আদর বললো,

“সব বলবো তোদের।একটা প্ল্যান করেছি।যদি সাকসেস হয়।তবেই সব জানাবো”

তৎখনাৎ ফোন কেটে দিয়েছে আদর।কারণ সে জানে তার বন্ধুরা ছেড়ে দেওয়ার মতন না। হাজারটা প্রশ্ন জুড়ে দিবে।প্রত্যেকটা জিনিসের ডিটেইলস জানাতে হবে তাদের।নাহয় রেহাই নেই। ডাটা অফ করে আরামে শুয়ে পড়লো। রোজিনা আপা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন।এভাবে কিছুতেই ঘুমোনো সম্ভব না।আদর জানালার পাশে গিয়ে মুচকি হাসলো।কালকের প্ল্যানের ছক একে নিচ্ছে।বড়সড় একটা ধামাকা না করলেই নয়।ভেবে হার্ট বিট ক্রমশ উঠা নামা করছে।সামনে কেউই নেই তারপরও এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।লজ্জায়!

___

আজকে শেষদিন। কাল ফিরে যাবে ঢাকায়।সবকিছুর মধ্যে অদ্ভুত এক বিষয় আদর।তার চাল চলন মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না আজ।একবার চোখ তুলে তাকায়ওনি তার দিকে।কানের পেছনে বারবার চুল গুজে মুচকি হাসছে।কাজ ঠিকঠাক মত করলেও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে মেহতাবকে।তার ষষ্ট ইন্দ্রিয় বললো ঝামেলা আছে এখানে।আদরের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি স্থাপন করে মেহতাব।আজকে কেনো তার মনের ভাষা পড়তে পারছে না মেহতাব?আগেতো মুখ দেখেই বোঝা হয়ে যেত এই ছোট্ট মাথায় কি চলছে?আজ ধরাই দিচ্ছে না।মেহতাব ভাবলো দেখে নিবে একে পড়ে!তারপরও মন মানলো না।

সবার চোখের আড়ালে আদরকে প্রশ্ন করে বসলো, “কি সমস্যা?এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছেন কেনো?”

আদর চোখ গোলগোল করে অবোধ চেহারা বানিয়ে বললো, “কোথায় অদ্ভুত ব্যবহার করছি স্যার?”

স্যার ডাকটা বিষের মতন লাগলো।তাছারাও তার ভিন্ন মুখোভঙ্গি। তেতিয়ে তুলছে।চোয়াল শক্ত করে বললো,

“কি খিচুড়ি পাকাচ্ছেন মাথায়?”

ভাব দেখিয়ে আদর বললো, “আমি খিচুড়ি টিচুরি রান্না করতে জানি না। হেহ!”

“আচ্ছা তো কি জানেন?”

“পোলাও, ভাত,মুরগি,গরু,খাসি,মাছ,সবজি এসব জানি।ওয়েট!আপনাকে কেনো বলছি?না না আপনাকে মোটেও বলবো না।মাত্র যা যা বলেছি ভুলে যান ”

আশ্চর্যবোধের চরম সীমানায় থেকে মেহতাব আবার বললো,

“কোনো কুবুদ্ধি যদি এটেছেন মাথায়?কালকের ঘটনা মনে আছে না?”

“ভুলে গেছি!” এক কথায় মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে উত্তর দিল আদর।

“ঝামেলা করলে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে ঢাকা চলে যাবো”

খুশির ঝলক মুখে নিয়ে আদর বললো,

“প্লিজ ভাসিয়ে দিয়েন।আমি একটা জলপরী…উম!নাহ! আমিতো মেয়ে জলপরী দিয়ে কি করবো?একটা জলপড়া খুঁজে নিয়ে সমুদ্রে সাঁতরে বেরাবো”

ফোনটা ঠাস করে হাত থেকে পড়ে গেলো।আদর আর মেহতাবের চোখ মাটিতে।আদরের কথা শুনে মেহতাবের ফোনও বিষম খেয়েছে।সহ্য করতে না পেরে নিচে পরে গেলো। কি হলো এই মেয়ের?পাগল টাগল হয়ে গেলো নাতো?নাকি নেশা করেছে?

দাতে দাত চেপে মেহতাব বললো,

“আমি তোমাকে দেখে নিবো পড়ে।সব ভুত নামাবো।কাজে আছি বলে বেচে গেলে।”

আদর বিড়বিড় করে বললো, “আমিও আপনাকে দেখে নিবো ”

তারমধ্যে ফোন বেজে উঠেছে।সেটা আদরের।মা কল করেছে।দ্রুত রিসিভ করে বললো,

“হ্যালো আম্মু কি করো?”

“কিছু নারে।তোর বাবা আর আমি খাবার খেলাম মাত্র।তুই খেয়েছিস বলতো?”

“এখন খাবো কাজে ছিলামতো”

“হ্যা জলদি খেয়ে নে।অনেক বেলা হলোতো।”

“খাবো।আচ্ছা তোমরা ঠিক আছোতো?আব্বু আর খালামনি?”

“সবাই ঠিক আছে।তুই ঠিক আছিসতো মা?” চিন্তিত স্বরে বললেন জোহরা খাতুন।

“আচ্ছা আম্মু তোমার জন্য কি আনবো?আর আব্বুর জন্য। খালাতো আমাকে লিস্ট আগেই দিয়েছে।”

“তুই ঠিকঠাক ফিরে আয়।আর কিছু লাগবে না।”

আদর জোর খাটিয়ে বললো, “তুমি বললেই হলো কিছু লাগবে না?আমি কিন্তু আনবো।তোমাদের ছাড়া প্রথম একা এতদূর এসেছি।বড় হয়েছি।এই দায়িত্বটাও পালন করেই ফেলি।”

জোহরা খাতুন হেসে হেসে বললেন, “ডক্টর মেহতাব তোর সাথে আছে না?”

“হ্যা কেনো?”

“নাহ এমনেই।তুই যা খেয়ে নে।তারপর কল দিস”

“ওকে আম্মু।টেক কেয়ার”

__

“তোমার ভাই যে প্রেমে পরে হিরোগিরি শুরু করেছে সেটা জানো?”

ভিডিও কলে বিচিত্র মুখ বানিয়ে রায়হান মিশাকে বললো।

“কি করেছে আবার?”

“এক হ্যাংলা পাতলা ছেলেকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলেছে”

মিশা আশ্চর্য্য! বীমুঢ়! অসম্ভব এক বাণী শুনছে রায়হানের মুখে।এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।সে তার ভাইকে চেনে।

“তুমি কি মদ টদ খেয়েছো?ভাইয়া আর মারামারি? ইম্পসিবল ”

“পসিবল সোনা।এখন তোমার ভাই যেই পাল্লায় পড়েছে। এখন তার দ্বারা সব সম্ভব!”

“আমি একদম বিশ্বাস করি না তোমার কথা!”

“তোমার ভাইরে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।কি তেজ বাবা!”

“কেনো মেরেছে?”

“তোমার হিরো ভাইয়ের হিরোইনের সাথে ছেলেটা অসভ্যতামো করছিলো ”

মিশা জোরে শ্বাস টেনে বললো, “যা করেছে একদম ঠিক করছে।ওরে মেরে চাঁদের দেশে পাঠিয়ে দেয়নি এটাই অনেক!”

“তোমার ভাইকে লাইনে আনার জন্য মানুষ এসে পড়েছে পাখি।তুমিও উড়াল দিয়ে আমার কাছে চলে এসো।চারজন একসাথে বিয়ের পিরিতে বসে পড়ি ”

মিশা বাঁকা হেসে বললো, “তোমার এই ইচ্ছাটা খুব শীগ্রই পূরণ হচ্ছে।কারণ কয়েকদিন পর ভেকেশন শুরু আমার”

রায়হান খুশিতে আটখানা। ভেকেশন শব্দটা তার কানে মধুর মতন লাগছে। ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো ফোনের স্ক্রিনে।আর কয়টা দিনের অপেক্ষা।মনে মনে ভেবে নিলো এবার সব নিয়মনীতি মেনে তাকে নিজের খাচায় বন্দী করবে।বেধে নিবে এক বন্ধনে।তারপর উড়ো যত ইচ্ছে।দিনশেষে তার নীড়েই ফিরতে হবে।

__

বিশাল হলুদাকৃতির চাঁদ সমুদ্র জ্বলের ঠিক ওপরে নিজের অবস্থান নিয়ে।আভা ছড়াচ্ছে সমুদ্রের বিশাল অংশজুড়ে। চিকচিক করছে জ্বলধারা। শো শো বাতাসের ধ্বনি।বিশাল আকারের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে।চারিদিকে অন্ধকার,পায়ের নিচে ঠান্ডা সোনালী বালু।খোলা আকাশ। মেঘমুক্ত।তারার মেলা চলছে অম্বরে।সামনে বিশাল সমুদ্র। বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের মহিমা। উচ্ছাসিত এক নারীর নেত্রযুগল সেখানেই আবদ্ধ।বাতাসে নীলাভ শাড়ির আঁচল উড়ছে।আজ বাসনা জেগেছে রূপা সাজতে।রাতের সমুদ্রের তটে নিজের জীবনের এক নতুন ইচ্ছের পূর্ণতা দিতে।তার প্রতীক্ষার অবসান কি ঘটবে?তারপরও অনিশ্চিত এক উমেদ নিয়ে দাড়িয়ে অনেকক্ষন যাবৎ।

“রাত্রীর ট্রেন
করুণ শঙ্খের মতো
মায়ের মুখে প্রথম শোনা গান
জন্মাবধি একটা অন্ধ নদী
ডুকরে কাঁদা মুক্তি দিল গান
এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে?
এ হাওয়া, আমি এখানে
এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে?
এ হাওয়া, আমি এখানে
কোথায় ছিলাম?
কোন শব্দের ভেতর
অক্ষরগুলো চূর্ণ আলো
কোন আবেগে, কোন নৈঃশব্দ্যে
ধরব তারে আমার প্রথম গান
এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে?”

দূর আকাশ সৌন্দর্যে বিমোহিত।গানটি পূর্ণ হলো না। আঁধার রজনীতে মনের সুখে গান ধরা গলার স্বর নেমে গেছে।দৃষ্টি এগিয়ে যাচ্ছে সুদূরে সমুদ্র তীরে নারীর দিকে।সময় দিলো নিজেকে।দেখতে,ভাবতে।তারপর চিত্ত আর পা কোনোটাই থামলো না।চুম্বকের মতন টেনে নিয়ে গেলো অস্থির পুরুষ মানুষটিকে। ক্ষ্যান্ত হলো নারীটিকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। ঘাড়ে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে নিজের জন্য জায়গা করে নিচ্ছে।থুতনি ঠেকিয়েছে কাধে।

আতকে উঠলো ক্ষণিকের জন্য।শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অনায়াসে।চিনতে ভুল করলো না।মেহতাবের উষ্ণ দেহের সংস্পর্শে এসে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ।কানের ঠিক কাছটায় এলোমেলো অস্থির নিঃশ্বাসের মেলা।শীতলতা শির দ্বারা বেয়ে চলেছে।খালি করে দিচ্ছে মস্তিস্ক।যেনো মেহতাব ঘনিষ্ট হয়ে হৃদয়ের আর মস্তিষ্কের সকল ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

গভীর শব্দে আওড়ালো, “এই কুবুদ্ধিটাই মাথায় ঘুরছিলো বুঝি?”

আদরের কাধে কপাল ঠেকিয়ে আবেশে পড়ে আছে মেহতাব। উদ্মাদ হতে চলেছে।মেয়েটি তাকে পাগলপ্রায় বানিয়ে ছাড়ে বারবার।আদর বলে উঠলো,

“আমি জানতাম আপনি আসবেন।”

“এটা যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ হতো?”

“উহু!আমি আপনাকে চিনিতো ”

“সেটা কিভাবে?”

“আপনার নিঃশ্বাস আমার পরিচিত,আপনার শরীরের ঘ্রাণ আর এই আবছা অন্ধকারে আপনার হাতের দাগটাও ”

বুঝে থাকা চোখ খুলে তাকালো মেহতাব।পেছন থেকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজেছে।মাতাল করা সুবাস।আদরের চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বললো,

“আমাকে বাধা দিলে না যে?”

নিজেকে ছাড়িয়ে আদর বললো, “দেই নি। এখন দিবো ”

মেহতাব শাড়ির আঁচল টেনে তাকে পুনরায় একই ভঙ্গীতে দাড় করিয়েছে। আদরের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিলো সাথেসাথে।তার দুইহাতের উপর নিজের হাত দ্বারা। আবদ্ধ করে রেখেছে।আদর সমস্ত জোর খাটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায়।মেহতাব গাঢ় স্বরে বললো,

“সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতন আমাকে অশান্ত করে পালানো বারণ।”

ঘাড়ে মেহতাবের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।কয়েকবার আলতো ওষ্ঠ ছুঁয়েছে কাধে।কেপে কেপে উঠছে আদর।শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো তার বাহুডোরে।আজ দূর্বল হয়ে পড়লে চলবে না।নিজের ইচ্ছেকে পূর্ণতা দিতেই হবে।নিজেকে সামলে প্রশ্ন করলো,

“হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগকে আপনার ভাষায় কি বলে ডাক্তার সাহেব?”

নির্বিঘ্নে উত্তর দিলো মেহতাব, “আমার ভাষায় হৃদয় অর্থ চিত্ত।আর তার যোগবন্ধন হচ্ছে চিত্তসন্ধী”

“আমাকে নির্লজ্জ্ব ভাবেন?”

“নাহ!”

“খারাপ ভাবেন?”

“মোটেও না”

বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে আশ্বস্ত করছে।বেশখানিকটা শক্তি প্রয়োগ করে মেহতাব থেকে ছাড়া নিলো। উল্টোঘুরে মেহতাবের উদোম পায়ে ভর করে জড়িয়ে ধরেছে।গলায় হাত বেধে বললো,

“আমি যদি বলি আমি আপনাকে অনুভব করতে শুরু করেছি?আপনার হৃদয়ের সাথে আমার হৃদয়ের যোগ হচ্ছে!”

মেহতাব থমকে।কিংকর্তব্যবিমুঢ়।আদর কি তাকে মনের কথা বলছে?সময় নিয়ে আদরকে জড়িয়ে ধরেছে।কাধে ঝড় নিঃশ্বাস ছাড়লো।আদর ঠোঁট চেপে হেসে ফেললো।উত্তর পেয়েছে সে।তার এই ভারী নিঃশ্বাস তার জবাব।এটা তার স্বস্তির নিঃশ্বাস।আদর জানে।তাকে জড়িয়ে ধরে থাকলে ঠিক এভাবেই নিঃশ্বাস ছেড়ে মুক্ত করে নিজেকে।

এক হাত মেহতানের ঘাড়ের পেছনে রেখে বলল, “আপনি কিছু বলবেন না?”

দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিলো মেহতাব।আদর খানিকটা রেগে বললো,

“আমি জানতাম আপনি কিছুই বলবেন না।আপনি ভালো না যে।অনেক খারাপ আপনি।অনেক!”

মেহতাব হাসলো।তার হাসির আভাস পেয়েছে আদর।ঠোঁট উল্টে মিশে রইলো মেহতাবের বাহুতে।বেশ কিছু সময় পর মুখ খুললো মেহতাব।বললো,

“আদর?”

“হুম?”

“এভাবে সারারাত এখানে থেকে গেলে হয় না?”

“জ্বি না।নিজের ঘরে যান”

“নাহ!”

ঘোরে আছে।মাতাল হয়ে গেছে যেনো।বাতাস আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে হিলেডুলে যাচ্ছে তারা দুজনও।আদর বললো,

“কেউ দেখে ফেলবে”

“দেখুক!”

“আপনার তিলেতিলে গড়ে তোলা রেপুটেশন ধুলোয় মিশে যাবে ডাক্টার সাহেব।মাস্তানের সাথেসাথে চরিত্রহীনের উপাধিটাও পেয়ে বসবেন”

“আমাকে চরিত্রহীন উপাধি আগেই দেওয়া হয়েছে”

বেসামাল হাওয়ায় আদরের পিঠ সমান চুলগুলো মেহতাবের গলায় লেপ্টে যাচ্ছে।অজানা সস্তিতে, নির্দ্বিধায় মেহতাবের সাথে লেপ্টে।তারপরও লোকলজ্জার ভয়।

“ছেড়ে দেন এবার।”

“একটু পর” মেহতাবের কণ্ঠের গভীরতা মাত্রাতিরিক্ত।

“না এখনই ছাড়বেন”

“তুমি সেচ্ছায় কাছে এসেছো।”

“এখন সরে যাচ্ছিতো?”

“আমিতো ছাড়ছি না!”

আদর সরে যাওয়ার জন্য পিছু হটেছে।হাত নামিয়েছে কাধ থেকে। মেহতাবকে অস্থির দেখালো। পূনরায় আদরের হাত টেনে নিজের কাধে বেধে কাতর কন্ঠে বললো,

“পাঁচটা মিনিট থাকো আর।প্লিজ!… প্লিজজ!”

“আপনি ভাঙবেন কিন্তু মচকাবেন না!”

আদরের কথার তোয়াক্কাই করা হলো না।নিজের অনুভূতির ঝড়কে থামাতে ব্যস্ত সে।আদরের মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলোকে চিত্তে আর মগজে ধারণ করতে ব্যস্ত।নিজের খুশির জোয়ারকে লুকাতে ব্যস্ত।চোখে চোখ রাখার সাহস আজ বোধহয় চিরতরে হারিয়ে ফেললো।পাগলামো তার গতি বাড়িয়ে ফেলার প্রস্তুতিতে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।একটু আধটু ভিজে আধ ঘণ্টা সেখানেই পার করে দিয়েছে দুজনে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here