চিত্তসন্ধি পর্ব ১১ লেখা: #Azyah

0
189

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ১১
লেখা: #Azyah

একা বিকেলের রাস্তায় হাটছে আদর। দেলাওয়ার হোসেন গাড়িতে উঠিয়ে দিতে চাইলে সে ওঠেনি। বরং একাই ফুটপাতে অন্যমনস্ক হয়ে হাটছে।বিষণ্ণ মন নিয়ে।এতটা খারাপ কখনো লাগেনি।তার মাও তাকে ভুলের জন্য বকে।তবে এভাবে না।সেতো ইচ্ছে করে করেনি কিছু।কান্না চেপে আছে নিজের মধ্যেই।নিজের ভুলে কেদে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাচ্ছে না।নিজেকে সান্তনা দিলো এই ভেবে যে হয়তো পরিস্থিতির চাপে পড়ে রাগ ঝেড়ে ফেলেছে।তারপরও মন খারাপেরা ভিড় করেই যাচ্ছে বারবার।

দুর্বল পায়ে ক্লিনিক থেকে বাড়ির চল্লিশ মিনিটের রাস্তা হেঁটেই পার করলো।এসব ভাবতে ভাবতে কখন এত দূরের পথ পার করেছে খেয়ালই করেনি।হুশ ফিরল পায়ের ব্যথায়।এখনও অনেকটা দুর্বল সে।প্রচন্ড রকমের পায়ের জ্বালাপোড়া নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।কোনো হইচই ছাড়াই।জোহরা খাতুন এগিয়ে এসে বললেন,

“এত জলদি চলে এলি যে?তোর না সন্ধায় আসার কথা”

আদর মার দিকে একপলক চেয়ে বললো, “কাজ শেষ আম্মু”

“ওহ আচ্ছা ঘেমে গেছিস।গোসল সেরে আয় খাবার দিচ্ছি”

“আমি খাবো না আম্মু।”

জোহরা খাতুন আবার কিছু বলতে নিলে আদর বলে উঠে,” আম্মু প্লিজ।আজকে জোর করো না।আমি অনেক ক্লান্ত”

জোহরা খাতুন চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলেন, “কিছু হয়েছে?”

“না আম্মু। বললামতো ক্লান্ত”

“আচ্ছা”

___

গাইনোলজিস্ট ফারিহা শেইখ ব্রেকে মেহতাব আর রায়হানের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন।বিকেল গড়িয়ে লাঞ্চের টাইম পেলো তারা।সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা অনেক আগেই ধামাচাপা পড়ে গেছে। দেলাওয়ার সাহেব ঠিক সময়ে মেডিসিনের বক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে এখন।এত এত কাজ আর সেই ঘটনা বিষিয়ে তুলেছে মেহতাবকে।

ফারিহা শেইখ বলে উঠলেন, “এতটা কেয়ারলেস একজন মানুষ কি করে হয় বুঝি না।আপনি কত যত্নের সাথে আপনার কাজ করেন আর আপনার অ্যাসিস্টেন্ট!”

রায়হান উত্তর দিল, “ম্যাম ভুল মানুষের দ্বারাই হয়।”

“তারপরও এসব বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত।ঠিক টাইমে মেডিসিন না আসলে কি হতো বলেন।আমাদের সবার আলাদা ডিপার্টমেন্ট। ডক্টর মেহতাব এর দিকে রোগীর সংখ্যা বেশি।তবে যাই হোক ধমকে দিয়েছেন ভালো হয়েছে।নেক্সটে কেয়ারফুল থাকবে।”

“ধমকে দিয়ে মোটেও ভালো হয়নি।সে নতুন জয়েন করেছে।এখনও অনেককিছু জানা আর বোঝার বাকি। নার্ভাসনেসে ভুল করে ফেলেছে হয়তো!”

মেহতাব তাদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে উঠে পড়ল আর বলল,

“আমার কাজ শেষ এখানে।কাল দেখা হবে।আসি।”

ফারিহা শেইখ বললেন, “আমাদের সাথেই যেতেন নাহয়?”

“জ্বি না।”

মেহতাব সবকিছু গুছিয়ে গাড়ীর দিকে ছুটেছে।পেছন পেছন দেলাওয়ার হোসেন।ইকবাল চাচাকে ২ঘণ্টা আগেই আসতে বলেছিলো।শার্টের সামনের কয়েকটা বোতাম খুলে নিল। গোটানো হাটা ছড়িয়ে নিয়েছে।চুলগুলো কপালের দিকে ঝুঁকে আছে।চশমা খুলে বাঁকা হয়ে গা এলিয়ে দিয়েছে সিটে।চোখ বন্ধ করে আছে সে।পাশে দেলাওয়ার হোসেন বসে তাকে দেখছেন।

“স্যার পানি খাবেন?”

এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চোখ বুজেই উল্টো প্রশ্ন করে বসলো,

“মিস আদরকে ঠিক মত পৌঁছে দিয়েছেন?”

“ক্লিনিকের সামনে পৌঁছে দিয়েছি স্যার।পড়ে বললাম একটা গাড়ি করে দেই?উনি না বলে হেঁটে চলে গেলো।”

তৎক্ষনাৎ চোখ খুললো মেহতাব।কিছু সময় গাড়ীর হলুদ বাতির দিকে চেয়ে পূনরায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।

_____

নতুন সকাল।মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতেই উঠে বসলো আদর।মা বারবার তাগাদা দিচ্ছে। চট জলদি উঠে রেডি হয়ে নিতে।কাজে যেতে হবে।কাজে যেতে হবে শুনে আবারো মন ভার হতে শুরু করলো।গতকালকের কথা ভেবে।আবার মুখোমুখি হওয়া লাগবে?যদি আবার ধমকায়?আজ কোনোভাবে কাজটা মিস দেওয়া যায় না? দিলে হয়তো আরো রেগে যাবে।কালকের মেহতাবের রাগী রূপ দেখে আদরের মনের কোণে ভয় আরো বেশি দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দোটানায় ভুগে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলো যাবে।যা হওয়ার পরে দেখা যাবে।আজ এড়িয়ে গেলেও কোনো না কোনোদিন মুখোমুখি হওয়াই লাগবে তার সাথে।সে শুধু তার অ্যাসিস্টেন্টই না পেশেন্টও।সেই কারণে হলেও মেহতাবের সঙ্গে তার দেখা হবে।

গতদিনের ক্লান্তি শেষ করে ক্লিনিকে এসেছে মেহতাব। ক্যাবিনে প্রবেশ করে আদরকে দেখতে পেলো।আজ আদর তার আগেই উপস্থিত।দেখেও না দেখার ভান করে ড্রয়ার থেকে ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেলো রাউন্ডে।অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে মনে পড়লো আজ কি কোনো সার্জারি আছে? দেলাওয়ার হোসেনকে সামনে পেয়ে বললো,

“দেলাওয়ার চাচা আমি রাউন্ডে যাবো।আপনি কেবিনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন আজকে কোনো সার্জারির ডেট আছে কিনা?আর যদি না থাকে কবে আছে সেটা একটু জেনে আসবেন। চার তলায় আছি আমি”

দেলোয়ার হোসেন নিচে চলে এলেন।কেবিনে ঢুকে আদরকে জিজ্ঞেস করলেন,

“স্যারের আজকে কোনো অপারেশন আছে নাকি স্যার জিজ্ঞেস করছে।আর না থাকলে কবে আছে সেটা বলতে বলছে”

“একটি দাড়ান আমি চেক করে জানাচ্ছি।”

“ঠিক আছে”

“উম না চাচা।আজকে নেই কালকে আছে”

“আইচ্ছা”

প্রায় ঘন্টাখানেক সময় অতিহাবিত করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পেশেন্টের চেকআপ করছে মেহতাব।এখানে তার আদরকে দরকার ছিলো।কিন্তু আনেনি ইচ্ছে করে।পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের শেষ পেশেন্টকে দেখে ওয়ার্ড থেকে বের হতে নিলে রায়হান এসে দাড়ায় সামনে।

হাপাতে হাপাতে বলে,

“কিরে তোর ওটি আজকে!এখানে কি করিস?”

“মানে কিসের ওটি?”

“ডেলিভারি পেশেন্ট জানিস না তুই? সিজার করতে হবে।পেশেন্টকে থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।তোকে পুরো হসপিটাল খুঁজছি আমি।দ্রুত আয়।পনেরো মিনিট পর শুরু করবে।পেশেন্ট সিরিয়াস”

রায়হান চলে গেছে।মেহতাব এর রাগ একজন সপ্তম আসমানে।পরপর দুবার ভুল।এই ভুলটা ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়াতে পারতো যদি রায়হান ঠিক সময় না আসলো।রাগে কপালের নীল রগ ফুটে উঠেছে।জোরে ধাক্কা দিয়ে ক্যাবিনের গেট খুলে ভেতরে চলে আসলো মেহতাব।আদর নোটবুকে অযথা কলম চালাচ্ছে গালে হাত রেখে।

শব্দ করে হাত রাখলো আদরের ডেস্কে রেখে বললো,

“আপনাকে নোটবুক আকাঝুকি করার জন্য দেওয়া হয়েছে?”

“মা.. মানে?” ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে মেহতাব এর দিকে আদর।

“আজকে কি বার!”

“মঙ্গলবার”

“আজকে বুধবার!আজকে আমার অটি আছে।আপনি ভাবতেও পারছেন না আপনি কি ভুল করেছেন।দিন ক্ষণের ঠিক নেই আপনার।এসেছেন কাজ করতে!”

“আমি খেয়াল করিনি সরি”

“আপনার খেয়াল না করার কারণে আজকে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত কোনো পেশেন্টের।”

মেহতাব এর আওয়াজ উচ্চ থেকে উচ্চতর হয়ে উঠছে।তার কন্ঠ শুনে দেলাওয়ার হোসেনও রুমে ঢুকে পড়লেন।

মেহতাব একটু ঝুঁকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“যেসব কাজ,দিন মিসম্যাচ করেছেন সব ঠিক করবেন আমি আসার আগে।আমি যেনো সব কাজ একদম পারফেক্ট দেখি।গট ইট!”

ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে আদর।মেহতাব বেরিয়ে যাওয়ার সাথেসাথে চোখ বেয়ে জ্বল গড়িয়ে পড়লো। ঠোঁট কামড়ে কাদঁছে আদর। দেলাওয়ার হোসেনের মায়া হলো। টিসু এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“কান্না করিয়েন না। বুঝেনইতো একটা জীবন মরণের ব্যাপার”

কোনো সান্তনাই আদরের কানে গেলো না।সে কেদেই যাচ্ছে।কেদে কেদে সব কিছু রিচেক করে নিলো।ভুলগুলো শুধরে দিয়েছে।কাজ শেষে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে দেলোয়ার হোসেনকে বললো,

“চাচা আমার অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসি?”

“স্যাররে বলবেন না?”

কেদে কেদে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আদরের। নাক টেনে বললো,

“আপনি বলে দিয়েন। সন্ধ্যার পর আর আমাদের বাড়ির রোডে বাস যায় না”

“আচ্ছা সাবধানে যাইয়েন”

অপারেশন সাকসেফুল।আদরের চলে যাওয়ার আরো আধ ঘণ্টা পর শেষ হয়েছে।যায় ডেলিভারি ছিলো তিনি যমজ দুটো সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। বাচ্চা দুটোর নিষ্পাপ চেহারা দেখে মেহতাবের সকল রাগ উধাও হয়ে গেলো।সার্জিকাল মাস্কের আড়ালে মৃদু হেসে সামান্য হাত ছুঁয়েছে বাচ্চাদের গালে।এত সময় পর একটু রিলিফ পাচ্ছে।বাচ্চা দুটোকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে কেবিনে ফিরে এলো।কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করতে খালি ক্যাবিন দেখে আকষ্মিক বুকটা ধ্বক করে উঠলো।সামনে এগিয়ে চারপাশে ভালোমত নজর বুলিয়ে নিয়েছে। নাহ!আদর নেই কোথাও।কোমরে হাত রেখে ডাক দিল দেলাওয়ার হোসেনকে,

“দেলাওয়ার চাচা!”

“জ্বি স্যার?”

“উনি কই?”

“স্যার উনিতো বাড়ি চলে গেছে।আপনাকে জানায় দিতে বলছে।বললো সন্ধ্যার পর নাকি তাদের বাড়ির ওদিকে বাস যায় না।আর…”

“আর?” সামান্য মাথা ঘুরিয়ে মেহতাব প্রশ্ন করলো।

“অনেক কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলায় ফেলছে।আমিও আর আটকাই নাই।আপনি রাগ কইরেন না স্যার”

____

আজ এক অশান্তির রাত। শরীরটা কোনোভাবে বিছনায় ঠেকছে না। ক্লিনিক থেকে ফিরে বুকের ভেতরে অজানা হাহাকার চলছে।রুম থেকে বারান্দা,বারান্দা থেকে রুমে পায়চারি করছে মেহতাব।বুকের বামপাশে হাত দিয়ে বারবার নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায়।তবে ব্যর্থ। আধ ঘন্টায় পাঁচ গ্লাস পানি খেয়ে শেষ করে নিয়েছে।নিজেকে দমিয়ে বিছনায় গিয়ে বসলো।ফোন হাতে নিয়েছে।বেশি রাত হয় নি।এখন কি একটা ফোন দিবে আদরকে?দিলেও কেনো দিবে?কোন অধিকারে দিবে?সে নিজেইতো মেয়েটাকে বকেছে।রাগ দেখিয়েছে। কাল সবার সামনে চিৎকার করেছে তার সাথে।আজও ঠিক একই।ভুল করেছে সেটা ঠান্ডা মাথায় সামলে নেওয়া যেতো!দেলাওয়ার চাচা বললো আদর নাকি কেদেছে অনেক।মানুষ কতটা খারাপ লাগলে কাদে? প্রথম দিন থেকেই মেয়েটির উপর জোর চালিয়ে যাচ্ছে সে।কখনো পেশেন্ট হিসেবে কখনো এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।এসবের কারন মেহতাব নিজেও জানে না।কেনো রাগ দেখাতে ইচ্ছে হয় তার উপর?কেনো ইচ্ছে হয় আদর সেই সব কাজ করুক যা মেহতাব চায়!তার ভুল উল্টোপাল্টা কাজে কেনো মাথা ঠিক থাকে না? সেতো তার জীবনে তেমন কেউই না।সামান্য একজন অ্যাসিস্টেন্ট মাত্র।

জোরে জোরে দুটো নিঃশ্বাস নিয়ে ফোন দিলো আদরকে।নাহয় তার মন মস্তিষ্ক কিছুতেই ঠান্ডা হবে না।ফোন কানে নিয়ে ভেসে আসলো এক ভদ্র মহিলার কন্ঠ,

“আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটিতে এখন সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না”

একবার কল করলো,দুইবার,তিনবার।ফোন দিতে দিতে পঞ্চমবারে এসে ঠেকেছে।না ফোনটা আসলেই বন্ধ। হৃদপিণ্ড তার লাফানোর গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।পা দুটো আসাঢ় হয়ে আসছে মুহূর্তের মধ্যে।উল্টোপাল্টা চিন্তারা সুযোগ পেয়ে মস্তিষ্কে ভিড় জমাতে শুরু করলো।অন্তত রেগে গিয়ে ফোন ওফ করবে না!ফোন বন্ধ থাকার পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে।কোনো বিপদ হলো নাতো তার!

ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে তিনটে। নিস্তব্ধ রাতে বিছনায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে মেহতাব।ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই চোখে। দমবন্ধ লাগছে।রাত একটায় ঘুমিয়ে পড়ে মেহতাব আবার সকালে আটটায় উঠে ক্লিনিকে দৌড় লাগায়।আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

____

আজ ভোর থেকেই আকাশটা কালো মেঘে ঢাকা। সুর্যের দেখা নেই।মাঝেমধ্যে দু একফোঁটা ছিটকে বৃষ্টি পড়ছে।আবার থেমে যাচ্ছে।প্রকৃতি আকাশ তার মন মোতাবেক বারিধারা ঝরাবে।অল্প বৃষ্টির ছিটে মানব সমাজকে জানান দিচ্ছে আজ হয়তো বছরের প্রথম বৃষ্টি ঝরার সম্ভাবনা আছে।আগে থেকেই তাগাদা দিচ্ছে।দমকা হাওয়া বইছে চারিদিকে।ঠান্ডা বাতাস মেহতাবের দেহে এসে বারি খেলো। হাওয়া মুখে আছড়ে পড়ায় চুলগুলো দোল খাচ্ছে।সারারাত বিছানায় শুয়ে সস্তি পায়নি।শেষ রাতে এসে বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিলো।ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে নিলো সকাল সাতটা বাজে।সারারাত জেগে থাকায় মাথাটা ভার লাগছে।উঠে গিয়ে এক কাপ কড়া করে কফি তৈরি করে খেয়ে নিলো।আজ একটু জলদি যাবে ক্লিনিকে।বাড়িতে মন টিকছে না।

“আজকে এত জলদি এলেন যে?”

ফারিহা শেইখ এর কথায় দাড়িয়ে পড়লো মেহতাব।বললো,

“ইচ্ছে হলো তাই”

“এখন কোনো কাজ আছে?”

“নাহ তেমন কিছুই নেই”

“আসুন তাহলে এক কাপ করে কফি হয়ে যাক ক্যান্টিনে”

“আমি খেয়ে এসেছি”

“ওহহো!আচ্ছা ঠিক আছে যান আপনি”

দেলাওয়ার হোসেন আটটা ত্রিশে আসেন।মেহতাব আজ আটটায় ক্লিনিকে।ব্যাগ কেবিনে রেখে নিচে চলে গেলো।আজ ম্যানেজমেন্টের সাথে একটা ছোটখাটো মিটিং আছে।তারা খুব সকালেই আসে তাই এখনই মিটিং সেরে নেওয়ার চিন্তা করলো।

ঝড় হাওয়া বইছে বাহিরে।বৃষ্টি নামছে।আকাশটা এখনও কালো মেঘে ঢাকা।আজ নিজেকে সম্পূর্ণ কাজে মগ্ন রেখেছে মেহতাব।কেবিনের দিকে যায়নি।সেখানে গেলেই একটা শুন্যতা অনুভব হয়।সব কাজ শেষ করে না পারতে বিকেলে এসে ক্যাবিনে বসলো।আরেকবার আশাহত হয়েছে।আদর নেই।আজ আসেনি সে।দেলাওয়ার হোসেনকে ডেকে বললো,

“আজ মিস আদরের ডিউটি ছিলো না?”

“ছিলতো স্যার।”

“কোথায় উনি?”

“আসেনি”

“আপনি জানেন কেনো আসেনি?”

“স্যার হয়তো বাহিরে বৃষ্টি তাই”

“ফোন করে জানেন কেনো আসেনি”

“করেছিলাম স্যার ফোন বন্ধ”

এরমানে আদর এখনো ফোন অন করেনি। কাল রাত থেকে অফ করে বসে আছে। কিছুসময় ভেবে দেলাওয়ার সাহেবকে বললো,

“ঠিক আছে আপনি যান”

ঠিক সেই মুহূর্তে মেহতাব এর ফোন বেজে উঠলো।রিসিভ করে বললো,

“হ্যালো”

“হ্যালো,ডক্টর আমি আদরের আম্মু”

“জ্বি”

“আসলে আদরের শরীরটা খারাপ তাই কাজে আসতে পারেনি। ফোনটাও রাস্তায় পড়ে ভেঙে গেছে।”

“নো প্রবলেম” বলে ফোন কেটে দিলো মেহতাব।

জোহরা খাতুন ফোন রেখে মেয়ের দিকে তাকালেন।মেয়েটাকে কাল থেকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে।তেমন কথা বলছে না।শুয়ে আছে সারারাত দিন।এখনও তাই।আদরের কথামতই কল করেছে জোহরা খাতুন।আদরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“তোর জন্য মিথ্যে কথা বলতে হলো আমার।তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস চাকরিটা করবি না?”

কোলবালিশে মুখ গুজে আদর বললো,

“না”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here