চিত্তসন্ধি পর্ব ১৪ লেখা: #Azyah

0
1

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ১৪
লেখা: #Azyah

ডক্টর খলিল এক ঘন্টা পর এলেন মেহতাবকে দেখতে। সেলাইন শেষ পর্যায়ে।আর দশ মিনিট পরই খুলে ফেলবেন। প্রেশার মাপছেন।সাথে জ্বরটাও দেখে নিলেন।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। দেলাওয়ার হোসেনকে বললেন রুমাল ভিজিয়ে কপালে রাখতে।এসি আরো বাড়িয়ে দিতে।যে করেই হোক টেমপ্রেচার কমাতে হবে। জ্বর মাথায় উঠে গেলে সমস্যা।ততক্ষনে আদর চলে এলো।ভয়ে ভয়ে রুমে প্রবেশ করলো।এসেই দেখে একজন ডাক্তার আর দেলাওয়ার হোসেন দাড়িয়ে আছেন। মেহতাব বেডে শুয়ে।সেলাইন ঝুলানো। অসস্তি নিয়ে ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে আসলো।

ডক্টর খলিল সেলাইন খুলতে খুলতে আদেশের সুরে বললেন,

“মেহতাব এর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করুন। ও খেতে না চাইলেও খাওয়াতে হবে।অ্যান্ড দ্যাটস মায় অর্ডার!”

তিনি আদরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

“আপনি কে?”

“আমি..আমি আদর।স্যারের অ্যাসিস্ট্যান্ট”

আদরের কন্ঠ কানে পৌছাতেই চমকে উঠলো মেহতাব।সঙ্গেসঙ্গে বন্ধ করা চোখগুলো খুলে নেয়।কিন্তু তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। অগ্যতা তাকে এড়িয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো।কন্ঠস্বর নয় একেকটা আগুনের গোলা বর্ষণ হচ্ছে বক্ষস্থলে। জ্বলসে উঠছে।

ডক্টর খলিল বললেন,

“ওহ আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট।আপনার স্যারের খেয়াল রাখেন যতক্ষন ডিউটিতে আছেন।এই মেডিসিনগুলো দিবেন।আর খাবার ঠিকঠাক খেয়েছে কিনা সেটাও জানাবেন আমাকে”

আদরও মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিয়ে বললো, “ঠিক আছে স্যার”

“দেলাওয়ার খাবার আনেন আপনি” ডক্টর খলিল বলে বেরিয়ে গেলো।

“আপনি বসেন আমি খাবারটা নিয়ে আসি” আদরকে বললো দেলাওয়ার হোসেন।

“না চাচা!আমার ভয় করে।এমনেই কাজে আসিনি এতদিন।আপনার স্যার রাগ করবে”

“উনি অসুস্থ।রাগ করবে না”

বলে বেরিয়ে গেলেন দেলাওয়ার চাচা।অন্যদিকে মেহতাব সব কথা কান পেতে শুনছে।চোখ বন্ধ করে দাতে দাঁত চেপে আছে।কেনো এসেছে এতদিন পর সে? অসুস্থ শুনে সহানুভূতি দেখাতে এসেছে?এতদিন কাজে আসার খেয়াল ছিলনা!কেনো এতো বিরক্ত করলো! জ্বলিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে নিজে মলম লাগাতে এসেছে?নাকি আরো শেষ করতে এসেছে।ইচ্ছে হচ্ছে হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া সকল প্রশ্নের উত্তর চাক।জোর করে জেনে নিক এতদিন পরে মনে কেনো পড়লো?

পা দুটো উচিয়ে মেহতাবকে একবার দেখে নিল আদর।বাচ্চাদের মতন পা মুড়িয়ে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে আছে।শার্ট কুচকে আছে।কথা বলবে?জিজ্ঞেস করবে ঠিক আছে নাকি?আবার যদি বকে?অবশ্যই রেগে আছে।তার বলার পরও আসেনি আদর।হাত কচলে একটু সামনে গিয়ে বললো,

“স্যার”

মেহতাব শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।উত্তর দিতে ইচ্ছুক নয়।যে হাতে সেলাইন লাগানো ছিল সেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করায় রক্ত বেরিয়ে গেছে।

আদর আবার বললো,

“আপনি একটু উঠে বসেন। দেলাওয়ার চাচা খাবার আনছেন”

“কেনো এসেছেন আপনি?”

মেহতাবের এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আদর।এইতো কয়দিন আগে ফোন করে বললো চাকরীটা তার করতে হবে। এখন এমন কথা কেনো?

“আপনিইতো বলেছেন আসতে।”

ডক্টর খলিল আবার এসে দরজায় দাড়িয়ে কড়া গলায় বললেন,

“মেহতাব ওঠে নি! ওনাকে উঠে বসতে বলেন আদর”

একদিকে মেহতাব আরেকদিকে ডক্টর খলিল। ডক্টর খলিল চলে গেলে আদর আবার ডাকতে গেলে উঠে বসে মেহতাব। মেহতাব এর চেহারা চোখের সামনে আসতেই ভরকে উঠে। একি অবস্থা!চেহারাটা একদম রংহীন হয়ে গেছে। সবসময ফিট থাকা ডাক্তারের চোখ গর্তে চলে গেছে।অল্প কয়দিনে চোখের নিচে কালো দাগও পরে গেলো?হাতের দিকে চোখ যেতেই দেখলো গড়গড় করে রক্ত পড়ছে।রক্ত দেখে চোখ বড়বড় করে নিলো আদর।

বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“আপনার হাত থেকেতো রক্ত বের হচ্ছে স্যার!”

মেহতাব নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার।অন্যহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে রক্ত মুছে নিয়ে বললো,

“হোক!”

কি হলো জানি না।আদরের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে।রক্ত বের হওয়া মোটেও হেয়ালি পড়ার মতন জিনিস না।নিজের অজান্তেই একটু উচ্চস্বরে বলে ফেললো,

“হোক মানে?এগুলা কোনো কথা!”

বলে এক সেকেন্ডও থামেনি। ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স এনে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ এগিয়ে হাতে লাগিয়ে দিতে চাইলে হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিয়েছে মেহতাব।

“আপনি কেমন মানুষ বলেনতো?রক্ত বেরোচ্ছে এই ব্যান্ডেজটা লাগিয়ে নিন”

“আমার শরীরে রক্তের অভাব নেই।একটু আকটু ঝরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না”

গলার স্বরে ব্যাপক পরিবর্তন। অসুস্থতাটা কণ্ঠের মাধ্যমেও জাহির হচ্ছে।আদর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।কি করবে? এমনেতো রক্ত পড়া থামবে না।সে আরো হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে যার কারণে রক্তের বেগ বাড়লো।মেহতাব তার হাত বেডে রেখে পাশে ফিরে তাকিয়ে আছে। এতক্ষন যে সুযোগের খোঁজে ছিলো সেটা পেয়ে গেলো।এক দৌড়ে মেহতাব এর একহাত চেপে অন্য হাতে তুলে দিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সরে গেছে।এত দ্রুত ঘটে গেছে মেহতাব প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সুযোগটাও পায়নি।যখন আচ পেলো তখন আদরের দিকে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে।কি করলো সে?ঝড়ের বেগে এসে হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে চলেও গেছে?তার চেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয়।আদর মেহতাবকে স্পর্শ করেছে।হাত চেপে ধরেছে তার।

___

দেলাওয়ার হোসেন স্যুপ আর ব্রেড এনেছেন।আদর বেডের সাইডের ছোট্ট টেবিলটা বেডের উপর সামনে সেট করে দিলো। তাড়াহুড়ো করছে সবকিছুতে।যা মেহতাব এর চক্ষুগোচর হয়নি।তাকিয়ে তার সব কর্মকাণ্ড দেখছে।সামনে খাবার এনে রেখে বললো,

“খান”

সেখানে তোয়াক্কা না করে মোবাইল হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।আদরের ভ্রু দ্বয়ের মধ্যভাগে গাঢ় ভাজ পড়েছে। তৎক্ষনাৎ বললো,

“খাচ্ছেন না কেনো?”

“আপনাকে কে বলেছে আমি খাবো এখন?”

“ওমা!আমি খাবার সাজালাম আর আপনি এখন বলছেন খাবেন না?”

“আমি আপনাকে খাবার সাজাতে বলেছি?আপনি নিজেই সাজালেন।আমি খাবো না”

আদর চোঁখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিলো।সাহসটা আজ বেজায় বেড়েছে।সাথে তাকে ধমক দেওয়ার রাগটাও মনের কোনায় পুষে রাখা আবার এখন খাবার নিয়ে ঢং!সব মিলিয়ে বলে উঠলো,

“আপনি আমার খাবার নিয়ে জোর করেন। দায়িত্ত্ব দায়িত্ত্ব বলে চালিয়ে দেন।এখন আমাকে ডক্টর আমাকে দায়িত্ত্ব দিয়ে গেছেন আপনার টেক কেয়ার করতে।আপনি খাওয়া শুরু করেন।”

“একবার বলেছি কথা কানে যায় না!আমি যেহেতু বলেছি খাবো না এর মানে খাবো না”

“স্যার আপনি বাচ্চাদের মতন করছেন!এগুলা কোনো কথা?অসুস্থ আবার খাবারও খাবেন না।সমস্যা কোথায় আপনার? অন্ন ত্যাগ করেছেন?”

“আপনার কোনো সমস্যা?আমি যা ইচ্ছে করি এতে আপনার এত ভাবার কি আছে?”

“যদি বলি এবার এটা আমার দায়িত্ব?”

“অনেক আগেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। রেজিকনেশন দিয়ে”

দেলাওয়ার হোসেন এর মাথায় বুদ্ধি খেললো তাদের তর্ক দেখে।তিনি বললেন,

“খলিল স্যার ১০ মিনিটে আবার আসবেন আপনাকে দেখতে।খেয়ে নিন স্যার।আমাদের না হয় বোকা শুনতে হবে।”

খলিল স্যারের নাম শুনে দমে গেলো মেহতাব।সে তার শিক্ষক এর পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্টারও।তার কথা ফেলে দেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না।তাই দু চামচ স্যুপ আর ব্রেডের এক কোণা ভেঙে খেয়ে নিল।দেলাওয়ার হোসেন প্লেট নিয়ে চলে গেছেন।আদর এক কোনায় মূর্তির মতন দাড়িয়ে।

হুট করে উঠে দাড়ালো মেহতাব।দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে গেছে।বমি করছে।মুখ ধুয়ে ফিরে একে আবার ব্যালেন্স হারায়।পড়ে যেতে দেখে আদর এগিয়ে গেলে হাত তুলে থামিয়ে দেয় তাকে।টেবিলে হাত রেখে বলে,

“কাজ করতে ইচ্ছে না করলে চলে যান”

আদরের এই মুহূর্তে ভীষণ খারাপ লাগছে।নিজের সিদ্ধান্তের উপর রাগ জন্মালো।কেনো এলো সে?অপমানিত হতে?

“ঠিক আছে” মাথা নামিয়ে বললো আদর।

ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যেতে চাইলো।ফিরে এসেছে,তার সেবা করছে,তার ত্যাড়া ত্যাড়া কথাও শুনছে।তারপরও তার মন ভরে না।আদর সিদ্ধান্ত নীল চলে যাবে।ঠিক সেই মুহূর্তে হাতে হেচকা টান পড়লো।তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়লো মেহতাব এর বুকে। মেহতাব দুই হাতের সাহায্যে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।পুরো শরীর আগুন গরম তার।হাত ঠেকে আছে বুকের বামপাশে।মনে হচ্ছে কোনো উত্তপ্ত অগ্নিশিখার সংস্পর্শে এসে লেপ্টে।প্রবল গতিতে ওঠানামা করা হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছে আদর। মেহতাব এর দেহ থেকে ভেসে আসছে পুরুষালি ঘ্রাণ। ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে মেহতাব।যা চুল ভেদ করে আদরের ঘাড়ে পড়ছে।আদর কেপে

উঠতেই মেহতাব আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ধীরোগভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

“একদম জ্বালাবে না আমাকে!”

আদর হতভম্ব।যা হচ্ছে তার কোনোটাই মাথায় ঢুকছে না।নিজেকে বিশ্বাসই করতে পারছে না সে মেহতাবের এতটা কাছাকাছি।তার চেয়ে বড় ব্যাপার মেহতাব তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে? আকুতি ভরা কণ্ঠে জ্বালাতে না করছে?সে কিভাবে জ্বালালো? এতোদিনতো কাজেই আসেনি।নাই কোনো ভুল করেছে।তাহলে? মেহতাব এর উষ্ণ দেহের সংস্পর্শে এসেও হাতপা কাপছে। মস্তিস্ক শীতল হয়ে যাচ্ছে।এতটা গভীর সংস্পর্শে এসে কিংকর্তব্যবিমুর বনে আছে।জীবনে বাবা ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের এতটা কাছে সে!

বেশকিছু সময় আবেশে পড়ে আছে মেহতাব। চোখদুটো খিচে বন্ধ করে।সস্তি পাচ্ছে।আদরকে নড়াচড়া করার সুযোগটুকু দেয়নি।নিজের ভেতরের অশান্তিগুলো দুর করতে ব্যস্ত।

হুশ ফিরতেই ছিটকে সরে গেলো মেহতাব।হুট করে ছেড়ে দেওয়ায় একটু পেছনে সরে গেলো আদর। নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে।যেন কোনো আসামি।চোখ তুলে তাকালেই উপড়ে ফেলা হবে। বেডের দুইপাশে দুইহাত আটকে মাথা নিচু করে বসে আছে মেহতাবও।বারবার কপালের ঘামগুলো ঘষে ঘষে মুছতে লাগলো।মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে সে!নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।আদর সামনে দাড়িয়ে। কিন্তু কিভাবে মুখোমুখি হবে তার?

মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে মেহতাব বললো,

“আম সরি!”

আদর নির্লিপ্ত।একটু আগে যা ঘটে গেলো সেটা এখনও মস্তিষ্ককে থামিয়ে রেখেছে।কোনো কথাই যেনো তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।আদরকে চুপ থাকতে দেখে মেহতাব আবার প্রশ্ন করলো

“কি হলো!”

এবারও আদর নিরুত্তর।মাথা নত।চোখ তার জমিনের সাদা টাইলসের দিকে।

মেহতাব উঠে এসে বললো,

“আমি সরি বলেছি শুনেছেন!”

কোনো উত্তর না পেয়ে রেগে যাচ্ছে মেহতাব। চিৎকার করে বলল,

“স্পিক আপ ড্যাম ইট!”

এবার ভয়ে কেপে উঠলো আদর। নেত্র যুগল ছলছল করছে।মেহতাব সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।ভয়ে মাথা তোলার সাহস নেই।

ভাঙ্গা শব্দে উত্তর দিলো,

“ক…কি বলবো?”

মেহতাব এর চোখ আদরের কাপতে থাকা ঠোঁটের দিকে গেলো।সাথেসাথে চোঁখ সরিয়ে অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিয়েছে।ভয়ে দেয়ালের সাথে লেগে আছে আদর।চোখ বেয়ে একফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পড়তে নাক টানলো। মেহরাব পূনরায় ঘুরে তাকালো।আদরকে থরথর কাপতে দেখে আবারো বুকটা সেদিনের মতন কেপে উঠছে।

কন্ঠ শীতল করে বললো,

“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আদর!আমি..আমি আর ধমক দিবো না।আম সরি…রিয়েলী সরি!কান্না করবেন না প্লিজ।”

“আমি বাসায় যাবো”

কাতর কন্ঠে মেহতাব ঝট করে প্রশ্ন করে বসলো,

“আবার চলে যাবেন?”

বারবার কথায় কথায় চুপ হয়ে যাওয়া মেহতাবের সহ্য হচ্ছে না।এই প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি সে।চোয়াল শক্ত করে বললো,

“কাজকে ছেলে খেলা পেয়েছেন?ইচ্ছে হলে আসবেন ইচ্ছে হলে চলে যাবেন? কোথাও যাচ্ছেন না আপনি!চুপচাপ ডেস্কএ গিয়ে বসুন।”
____

“মাথা ঠাণ্ডা হলো ডাক্তার সাহেব?”

রায়হানের এমন প্রশ্নে মেহতাব আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে।চোখ দিয়ে তার কাছে জানতে চাইছে এর মানে কি?

“আমার কথার মানে বুঝেননি?”

“ইচ্ছুক নই মানে বুঝতে”

“ঘাড় ত্যাড়ামি কমান এবার”

“কথা শেষ হলে আসতে পারেন।”

“আমি কি তোর জন্য এসেছি? দেলাওয়ার চাচা বললো মিস আদর এসেছেন আজকে।তাকেই দেখতে এলাম।কিন্তু মেয়েটা এমন তব্দা খেয়ে বসে আছে কেন?তুই কি কিছু বলেছিস? ধমকেছিস?”

“ইচ্ছে হলে ধমকাবো ইচ্ছে না হলেও ধমকাবো। আপনার কোনো সমস্যা?”

“অবশ্যই সমস্যা এত্ত কিউট মেয়েকে কেউ ধমকায়?অযথা ধমকাবি কেনো?”

“আমার ইচ্ছে”

“কোন অধিকারে?তুই শুধুই একজন ডাক্তার আর বস।বিনা দোষে তুই তাকে বকতে পারিস না”

“আমি এখন বাড়ি যাবো।”

রায়হান হাসতে হাসতে বললো, “ঠিক আছে”

রায়হান বেরিয়ে গেলো।মেহতাব পরনের শার্ট ঠিক করে নিচ্ছে।তার শরীর আগের থেকে তুলনামূলক ভালো। আদরকে কাছে পেয়ে শরীর খারাপেরা ঘন্টাখানেক এর মধ্যে ছুটি নিয়েছে।সুস্থ আছে মোটামুটি।সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ি যাবে।তিনদিন যাবৎ ঘরে ফেরে না।হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে আদরের সামনে গিয়ে অন্যদিকে চেয়ে বললো,

“ব্যাগপত্র যা আছে গোছান”

“কেনো?”

“বাড়ি যাবেন না?”

“ওহ”

“আমার পেছন পেছন আসেন।”

ফোন করে ইকবাল রহমানকে গাড়ি বের করতে বলে বেরিয়ে পড়লো হাতে ব্যাগ নিয়ে।আজকে অন্যান্য দিনের তুলনায় ধীরে হাঁটছে।শরীরে দুর্বলতা হয়তো।আদর গুটিসুটি হয়ে তার পেছনে।পার্কিং এ এসে অনেকক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে। মেহতাব একহাত কোমরে রেখে অন্যহাতে ফোন করেই যাচ্ছেন ইকবাল রহমানকে।মনে সাহস জুগিয়ে বললো,

“আমি এখানে দাড়িয়ে কি করবো।আমি বরং চলে….”

মুখের কথা মুখেই আটকে গেলো।মেহতাব ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মুখের কথাগুলোকে গিলে নেয় আদর তার চাহনি দেখে।মাথায় একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে।এমন কেন করলো সে?আমাকে অন্যকেউ ভেবে হয়তো জড়িয়ে ধরেছে!নাকি?কিন্তু এখন আবার রাগ দেখাচ্ছে কেনো?কি করেছি আমি? কথায় কথায় অর্ডার চালিয়ে যাচ্ছে।না শুনলেই রাগী দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয়।

গাড়ি চলে এসেছে।আদরকে অন্যমনস্ক দেখে মেহতাব বললো,

“উঠে বসুন!”

মেহতাব গাড়ীর পেছনে গিয়ে বসলো।আদরকে সামনের সিটে এগোতে দেখে ঝাঁঝালো কণ্ঠে আরেকদফা বলে উঠলো,

“পেছনে বসুন”

আদর একদম দরজার সাথে লেগে বসে আছে।যেনো একচুল পরিমাণ স্পর্শ না লাগে মেহতাবের সাথে।তার গায়ের বাতাসও যেনো না লাগে।মাথা জানালার বাইরে ঘোরানো।গাড়ীর গতির সাথে গাছ আর গাড়িগুলো পেছনে পরে যাচ্ছে। সাইসাই বাতাসে চুল লেপ্টে যাচ্ছে সারামুখে।হাত দিয়ে সামলেও নিলো আদর এই অবাধ্য চুলগুলোকে।আড়চোখে তাকিয়ে থাকা মেহতাবের মনে নিষিদ্ধ ইচ্ছে জাগছে। সে যদি পারতো চুলগুলো সরিয়ে দিতে?মেহতাব নিজের ইচ্ছের লাগাম টানলো।তাতেও কাজ হয়নি।মন এখন নতুন বাক্য আওরাচ্ছে,

“দিবার প্রহর আরো একটু দৈর্ঘ্য হলে পারতো।সময় তার গতি আজ মন্থর হলেও পারতো।আর কিছু সেকেন্ড সাথে রয়ে যেতে পারতাম না?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here